Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

TV9 সামিট ২০২৫-এ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ


নয়াদিল্লি, ২৮ মার্চ, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লির ভারত মণ্ডপমে TV9 সামিট ২০২৫-এ ভাষণ দেন। শ্রী মোদী বলেন, আজ গোটা বিশ্বের নজর ভারতের দিকে। স্বাধীনতার পর ৭০ বছরে ভারত বিশ্বে একাদশ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠলেও, গত ৭-৮ বছরের মধ্যে বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, দেশের ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র সীমার ওপরে তুলে আনা হয়েছে এবং নতুন এক মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এই নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন জীবনের সূচনা করেছে এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে। 

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ সর্বাগ্রে’ ভারতের বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে মন্ত্র হয়ে উঠেছে। তাঁর কথায়, ভারত এক সময় সমস্ত দেশ থেকে সমদূরত্বের নীতি বজায় রাখত, কিন্তু বর্তমান সরকার সকলের সঙ্গে সমান ঘনিষ্ঠতার নীতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, গোটা বিশ্ব আজ ভারতের মতামত, উদ্ভাবন এবং প্রয়াসকে মূল্য দেয়, যা আগে কখনও ঘটেনি। 

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় ভারত শুধুমাত্র অংশীদার নয়, সেইসঙ্গে একে বিশেষ রূপদান এবং ভবিষ্যৎ সুরক্ষার ক্ষেত্রে সক্রিয় অবদান রেখে চলেছে। কোভিড মহামারীর সময় ভারতের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, সেই সময় ১৫০টির বেশি দেশে ভারত ওষুধ সরবরাহ করেছিল। 

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কয়েকটি দেশের একাধিপত্যের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং বলেন যে, ভারত সবসময়ই একাধিপত্যের চেয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে বিশ্বজুড়ে পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন তিনি। সেতু, রাস্তা, বাড়ি নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ গ্রিড সহ বিপর্যয়-প্রতিরোধী পরিকাঠামো গড়ে তোলার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। 

 

ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন শ্রী মোদী। এক্ষেত্রে বিদ্যুতের কথা তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সৌর জোট (আইএসএ) গড়ার ক্ষেত্রে ভারতের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, ১০০টির বেশি দেশ এই উদ্যোগে সামিল হয়েছে। বাণিজ্যিক অসাম্য ও লজিস্টিক সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গ টেনে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপীয় আর্থিক করিডর তৈরির ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতামূলক উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, এই করিডর তৈরি হলে, এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি পরস্পরের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত হবে, আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে ও বিকল্প বাণিজ্যপথ গড়ে উঠবে। 

 

শ্রী মোদী বলেন, ২১ শতকের প্রথম ২৫ বছর কেটে গিয়েছে, যার মধ্যে ১১ বছর ধরে তাঁর সরকার দেশের সেবা করে চলেছে। স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দশক আগে গ্রামগুলিতে শৌচাগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য সীমিত ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু স্বচ্ছ ভারত মিশনের মাধ্যমে সেই সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষ কম খরচে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা, জনধন যোজনা, হর ঘর নল সে জল যোজনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, ভারত এখন শুধুমাত্র একটি দেশ নয়, এটি হল ‘স্বপ্নের দেশ’, যে ‘দেশ সম্পাদন করে’। 

 

পাসপোর্টের ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, দেশে পাসপোর্ট পরিষেবা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ করা হয়েছে। আগে যেখানে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য ৫০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত, এখন তা কমে ৫-৬ দিনে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যাঙ্কিং পরিকাঠামোর ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৫০-৬০ বছর আগে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করা হলেও লক্ষ লক্ষ গ্রামে পরিষেবার ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এখন বদলেছে। এখন অনলাইন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সুবিধা প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে। অনুৎপাদক সম্পদের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবং ব্যাঙ্কগুলির লাভ ১.৪ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ২২,০০০ কোটি টাকার বেশি উদ্ধার করেছে এবং সেগুলি উপযু্ক্ত প্রাপককে আইন মেনে ফেরত দেওয়া হয়েছে। 

 

বিভিন্ন সরকারি নিয়মনীতির জটিলতা কমানোর কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, প্রায় ১৫০০ পুরনো আইনকে বাতিল করা হয়েছে এবং প্রায় ৪০,০০০-এর মতো সরকারি নিয়মনীতিকে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে জিএসটি-র কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর ফলে ৩০ ধরনের করকে একটিমাত্র কর ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। 

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর (ডিবিটি) প্রক্রিয়া চালুর ফলে করদাতাদের ৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি অর্থ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। আয়কর ব্যবস্থায় আগের তুলনায় অনেক বেশি সরলীকরণের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এখন আয়করদাতারা নিজেরাই অনলাইনে অল্প সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। 

 

বিগত ১০-১১ বছরে প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর মানসিকতায় এখন পরিবর্তন এসেছে। এখন ব্যবসায়ীরা ভারতে তৈরি পণ্যকেই বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন। শ্রী মোদী বলেন, ২০১৪-১৫-তে মোবাইল রপ্তানি থেকে ভারতের আয় হত ১ বিলিয়ন ডলারেরও কম, যা এক দশকের মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। গাড়ি শিল্পেও ভারতের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন তিনি। ভারতে তৈরি গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং জামার্নির মতো দেশেও পৌঁছে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, গত এক দশকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রপ্তানি ২১ গুণ বেড়েছে। 

 

২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ার স্বপ্নের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকশিত ভারতে সবচেয়ে বেশি সুবিধাপ্রাপক হবেন তরুণরাই।  

 

SC/MP/NS