সঠিক প্রকল্পের মাধ্যমে শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল এই বাজেট। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে শ্রমিক পর্যন্ত, কৃষকদের উন্নতি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের উন্নতি পর্যন্ত, আয়কর ছাড় থেকে শুরু করে পরিকাঠামো উন্নয়ন পর্যন্ত, নির্মাণ শিল্প থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পক্ষেত্র পর্যন্ত, গৃহ নির্মাণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিষেবা পর্যন্ত, অর্থনীতিকে নতুন গতি প্রদান থেকে শুরু করে ‘নতুন ভারত’ নির্মাণ পর্যন্ত এই বাজেটের প্রতিটি দিকের ওপর লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
বন্ধুগণ, আমাদের সরকারি প্রকল্পগুলি দেশের প্রত্যেক মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ কোটি গরিবের চিকিৎসা সুনিশ্চিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি যোজনা এবং সুরক্ষা বিমা যোজনা দ্বারা ২১ কোটি গরিব মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। স্বচ্ছ ভারত মিশনের মাধ্যমে ৯ কোটিরও বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছেন। উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে ৬ কোটিরও বেশি পরিবার বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে ১ কোটি ৫০ লক্ষ পরিবার নিজস্ব বাড়ি পেয়েছেন। এবার এই বাজেটে ১২ কোটিরও বেশি কৃষক এবং ৩ কোটিরও বেশি মধ্যবিত্ত করদাতা পরিবার এবং ৩০-৪০ কোটি শ্রমিক সরাসরি উপকৃত হবেন। বন্ধুগণ, সরকারের প্রচেষ্টায় দেশে দারিদ্র্য রেকর্ড গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। লক্ষ কোটি মানুষ দারিদ্র্যকে পরাস্ত করে ‘নতুন মধ্যবিত্ত’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছেন। এই বিশাল সংখ্যাক মানুষ আজ নিজেদের স্বপ্ন সফল করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছেন। এহেন সময়ে এই ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা, কোন কিছুর করে দেখানোর উদ্দীপনাকে সমর্থন জানাতে সরকার নিজের দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করেছে। আমি দেশের মধ্যবিত্তদের, বেতনভোগী মধ্যবিত্তদের আয়করে ছাড়ের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
এই মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তরা আইন মেনে নিয়মিত আয়কর দেন। তাঁদের সততা ও দায়বদ্ধতার ফলেই দেশে নানা প্রকল্প গড়ে ওঠে, বাস্তবায়িত হয়, গরিবরা লাভবান হন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের দাবি ছিল যে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত করা হোক। আমাদের সরকার এবার এই দাবি পূরণ করেছে।
বন্ধুগণ, কৃষকদের জন্য আমাদের পূর্ববর্তী বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গড়েছে। কিন্তু সেগুলির মাধ্যমে ২-৩ কোটি সম্পন্ন কৃষকই লাভবান হয়েছে। আমরা যে ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি’ বা ‘পিএম-কিষাণ’ যোজনা চালু করেছি, তার মাধ্যমে ৫ একর বা তার থেকে কম আয়তনের জমির মালিক ১২ কোটিরও বেশি কৃষক লাভবান হবেন। বলা যায় যে এটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কৃষকদের জন্য সর্ববৃহৎ প্রকল্প।
আমাদের সরকার কৃষকদের জন্য একের পর এক কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এবারের বাজেটে পশুপালন, গো-পালন ও মৎস্যচাষের মতো গ্রামীণ জীবন ও কৃষি সংক্রান্ত সকল বিষয়ের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগ এবং সরকারের মৎস্যচাষ বিভাগ কোটি কোটি কৃষকের আয়ের পরিধি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। মৎস্যচাষীরাও উপকৃত হবেন। এভাবে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাঁদের আয় দ্বিগুণ করতে পারবে। আজকের এই সিদ্ধান্ত এই মিশনকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে।
বন্ধুগণ, আজ ভারতে অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, মজুর, গৃহভৃত্য ও পরিচারিকা এবং ভূমিহীন কৃষকদের কথা কেউ ভাবেনি। তাঁদেরকে নিজেদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে রাখা হয়েছিল। অথচ আমাদের দেশে এমন মানুষের সংখ্যাই প্রায় ৪০-৪২ কোটি। তাঁদের কল্যাণে আমরা ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মানধন যোজনা’, তাঁদের ৬০ বছর বয়সের পর জীবনের জন্য অনেক বড় সম্বল হবে। তাছাড়া তাঁরা আয়ুষ্মান ভারত যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি যোজনা, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো অনেক প্রকল্প দ্বারা উপকৃত তো হবেনই। বৃদ্ধাবস্থায় দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য পেনশনও পাবেন।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের সরকার দেশের তেমন প্রত্যেক অংশের নাগরিকদের উন্নয়নের মুখ্য ধারার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সমাজের শেষ পংক্তিতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি পর্যন্ত পৌঁছতে সরকার মাদারি, সাঁপুড়ে, বাঞ্জারা, গাড়িয়া-লোহারদের মতো যাযাবর মানুষদের কল্যাণে একটি ওয়েলফেয়ার বোর্ড গড়ে তোলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার আশা যে দ্রুত তাঁদেরকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে এই প্রকল্পগুলির পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে। তাঁদেরকেও যুক্ত করে নেওয়া হবে।
বন্ধুগণ, ব্যবসায়ীদের কল্যাণের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রক গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। ব্যবসায়ী ও তাঁদের কর্মচারীদের প্রয়োজন বুঝে তাঁদের সমস্যা সমাধানের জন্য ডিআইপিপি-কে পুনর্গঠন করে তাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন এই বিভাগ ‘ডিপার্টমেন্ট ফর প্রোমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড ইন্টারনাল ট্রেড’ নামে পরিচিত হবে। আমি আনন্দিত যে আগামী দশকের শেষ পর্যন্ত সময়ের প্রয়োজনীয়তা ও লক্ষ্যগুলি মাথায় রেখে এই বাজেটের প্রকল্পগুলিকে রচনা করা হয়েছে। এই বাজেট গরিবদের শক্তি দেবে, কৃষকদের ক্ষমতায়িত করবে, শ্রমিকদের সম্মান দেবে, মধ্যবিত্তের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়িত করবে, সৎ করদাতাদের গৌরব গান করবে, ব্যবসায়ীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, পরিকাঠামো নির্মাণকে গতি প্রদান করবে, অর্থ ব্যবস্থাকে নতুন শক্তি দেবে। দেশে আস্থার আবহ গড়ে তুলবে। এই বাজেট ‘নতুন ভারত’-এর লক্ষ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেশের ১৩০ কোটি মানুষকে নতুন করে প্রাণশক্তি যোগাবে। এই বাজেট সর্বব্যাপী, সর্বস্পর্শী, সমস্ত দিককে ছুঁয়ে যাওয়া সর্বোৎকৃষ্ট বাজেট।
আমি আরেকবার আমার বন্ধু অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, পীযূষ গোয়েল এবং তাঁদের টিমকে এই সুন্দর বাজেটের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
ধন্যবাদ।
***
CG/SB/DM/