Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

২০১৮-১৯ – এর সাধারণ বাজেট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীরবিবৃতি


আমি অর্থমন্ত্রী মাননীয় অরুণ জেটলি’কে এই বাজেটের জন্য শুভেচ্ছা জানাই। এইবাজেট নতুন ভারতের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করবে।

এই বাজেটে দেশের কৃষি থেকে শুরু করে পরিকাঠামো নির্মাণ পর্যন্ত লক্ষ্য রাখাহয়েছে। এই বাজেটে গরিব ও মধ্যবিত্তের দুশ্চিন্তা নিরসনকারী স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলিযেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ছোট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের সম্পদ বৃদ্ধির প্রকল্পসমূহ।খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে ফাইবার অপ্টিক্‌স, সড়ক থেকে জাহাজ সঞ্চালনা,নবীন থেকে শুরু করে প্রবীণ নাগরিক, গ্রামীণ ভারত থেকে আয়ুষ্মান ভারত, ডিজিটালইন্ডিয়া থেকে স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া; এই বাজেট দেশের ১২৫ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্খাপূরণ সুনিশ্চিত করবে। এই বাজেট দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। এই বাজেটকৃষক-বান্ধব, সাধারণ মানুষের অনুকূল, বাণিজ্য পরিবেশ-বান্ধব, আর পাশাপাশিউন্নয়ন-বান্ধবও। এতে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর পাশাপাশি ‘ইজ অফ লিভিং’কে গুরুত্বদেওয়া হয়েছে। মধ্যবিত্ত যাতে অধিক সঞ্চয় করতে পারেন, একবিংশ শতাব্দীর ভারতের জন্যনবীন প্রজন্মের পরিকাঠামো আর উন্নত স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা – এসব কিছুই জীবনধারণকে সহজ করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আমাদের দেশের কৃষকরা খাদ্যশস্য আর ফল-সব্জির রেকর্ড উৎপাদন করে দেশেরউন্নয়নে রেকর্ড অবদান রেখেছেন। কৃষকের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই বাজেটে বেশ কিছুপদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গ্রাম এবং কৃষির ক্ষেত্রে প্রায় সাড়ে ১৪ লক্ষকোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৫১ লক্ষ নতুন বাড়ি, ৩ লক্ষ কিলোমিটারের বেশি সড়কপথ,প্রায় ২ কোটি শৌচালয়, ১ কোটি ৭৫ লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ – এসবের মাধ্যমে দলিত,পীড়িত, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের প্রত্যক্ষ লাভ হবে। এ এমন সব পদক্ষেপ, যা বিশেষ করেগ্রামীণ ক্ষেত্রে নিজেদের সঙ্গে নতুন রোজগারের সুযোগ তৈরি করবে। কৃষকদের বিনিয়োগেরদেড় গুণ মূল্য পাইয়ে দেওয়ার ঘোষণাকে আমি প্রশংসা করি। কৃষকরা যাতে এই সিদ্ধান্তথেকে সম্পূর্ণ লাভবান হন, তা সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির সঙ্গেআলোচনার মাধ্যমে একটি পাকা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। সবজি এবং ফল উৎপাদনকারী কৃষকদেরজন্য ‘অপারেশন গ্রিনস্‌’ একটি কার্যকরি পদক্ষেপ রূপে প্রমাণিত হবে। আমরা দেখেছি,কিভাবে দুধের ক্ষেত্রে আমূল দুগ্ধ উৎপাদক কৃষকদের উপযুক্ত মূল্য পাইয়ে দিয়েছে!আমাদের দেশে আমরা শিল্পোন্নয়নে ক্লাস্টার-ভিত্তিক উদ্যোগের সঙ্গে পরিচিত। এখনদেশের ভিন্ন ভিন্ন জেলায় উৎপন্ন কৃষি উৎপাদনের কথা মাথায় রেখে, সেই জেলাগুলিকেচিহ্নিত করে, সেই বিশেষ উৎপাদনের উপযোগী সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বাজারীকরণেরব্যবস্থা বিকশিত করার প্রকল্পকে আমি স্বাগত জানাই। আমাদের দেশে সমবায় সমিতিগুলিআয়করে ছাড় পায়। কিন্তু কৃষক-উৎপাদক সংস্থা বা এফপিও-গুলি একই রকম কাজ করলেও আয়করেছাড় পায় না। কৃষকদের সহায়তাকল্পে এবার বাজেটে এই এফপিও-দেরও সমবায় সমিতিগুলির মতোআয়করে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। মহিলা স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীগুলিওএই কৃষক উৎপাদক সংস্থাগুলির সঙ্গে জৈব, সুরভি এবং ওষধি বৃক্ষগুল্মাদির চাষকে যুক্তকরার প্রকল্প কৃষকদের আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে প্রমাণিত হবে।এভাবে, গোবরধন যোজনা, গ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি কৃষক এবং পশুপালকদের আয়বাড়াতে সাহায্য করবে। আমাদের কৃষকরা মৎস্যচাষ, পশুপালন, হাঁস-মুরগী পালন ওমৌপালনের সঙ্গে যুক্ত। এই অতিরিক্ত কাজের জন্য তাঁদের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে সমস্যাহয়। সেজন্য কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এখন থেকে এসব চাষের ক্ষেত্রে ঋণদানেরব্যবস্থা চালু করা একটি কার্যকরি পদক্ষেপ। ভারতের ৭০০-রও বেশি জেলায় প্রায় ৭ হাজারব্লক রয়েছে। এই ব্লকগুলির মাধ্যমে প্রায় ২২ হাজার গ্রামীণ বাণিজ্য কেন্দ্রেরপরিকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিকীকরণ, নবনির্মাণ এবং গ্রামের সঙ্গে সেগুলির যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে এই কেন্দ্রগুলি কৃষকদেরআয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৃষি-ভিত্তিক গ্রামীণ এবং কৃষি অর্থ ব্যবস্থার নতুন শক্তিকেন্দ্র হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার মাধ্যমে এখন গ্রামের হাটগুলিরসঙ্গে উচ্চ শিক্ষা কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলির মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থা স্থাপন করাহবে। ফলে, গ্রামের মানুষের জীবন আরও সহজ হবে।

আমরা উজ্জ্বলা যোজনাতেও ‘ইজ অফ লিভিং’-এর ভাবনার ছাপ লক্ষ্য করেছি। এইপ্রকল্প দেশের দরিদ্র মহিলাদের শুধু নৈমিত্তিক রান্নার ধোঁয়া থেকে মুক্ত করছে না,তাঁদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমও হয়ে উঠেছে। আমি খুশি যে, এই প্রকল্প বিস্তারের মাধ্যমেএখন এর লক্ষ্য ৫ কোটি পরিবার থেকে বাড়িয়ে ৮ কোটি পরিবার করে দেওয়া হয়েছে। দেশেরঅধিকাংশ দলিত, আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া মানুষেরা এর দ্বারা লাভবান হচ্ছেন। তপশিলিজাতি এবং জনজাতির উন্নয়নে এই বাজেটে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র মানুষের জীবনে নানা রোগের চিকিৎসা সর্বদাইদুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে থাকে। এবারের বাজেটে তাঁদের চিন্তামুক্ত করার জন্য ‘আয়ুষ্মানভারত’ নামক নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ১০ কোটি দরিদ্র ওনিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার উপকৃত হবেন। অর্থাৎ, প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ কোটি মানুষ এর আওতায়আসবেন। এই পরিবারগুলির সদস্যরা চিহ্নিত হাসপাতালগুলিতে বছরে ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসাকরাতে পারবেন। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বে সরকারি খরচে সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসুনিশ্চিতকরণ প্রকল্প। দেশের সকল বৃহৎ পঞ্চায়েতগুলিতে প্রায় দেড় লক্ষ লক্ষ ‘হেলথ ওয়েলনেসসেন্টার’ স্থাপনের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এরফলে, গ্রামীণ মানুষেরস্বাস্থ্য পরিষেবা সুলভ হবে। সারা দেশে ২৪টি নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মাধ্যমেচিকিৎসা পরিষেবা যেমন উন্নত হবে, তেমনই আরও বেশি সংখ্যক মেধাবী ছাত্রছাত্রীডাক্তারি পড়তে পারবেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে, দেশের প্রত্যেক তিনটি সংসদীয়ক্ষেত্রে ন্যূনতম একটি মেডিকেল কলেজ থাকে।

এই বাজেটে বরিষ্ঠ নাগরিকদের অনেক চিন্তাকে মাথায় রেখে বেশ কিছু সিদ্ধান্তনেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বয়ঃবন্দনা যোজনার মাধ্যমে এখন বরিষ্ঠ নাগরিকেরা ১৫লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ে ন্যূনতম ৮ শতাংশ সুদ পাবেন। ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে জমা করাতাঁদের ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রাপ্ত সুদে কোনও কর লাগবে না। স্বাস্থ্য বিমার ৫০হাজার টাকা পর্যন্ত কিস্তিতে আয়কর ছাড় দেওয়া হবে। তেমনি কঠিন রোগের চিকিৎসাক্ষেত্রে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচের ক্ষেত্রে আয়কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।

দীর্ঘকাল ধরেই আমাদের দেশে অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অর্থাৎ এমএসএমই-দেরঅধিক দরে কর দিতে হয়। এই বাজেটে সরকার সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পে আয়কর ৫ শতাংশ হ্রাস করেছে। এখন তাদেরকে ৩০ শতাংশ এর স্থানে ২৫ শতাংশ করদিতে হবে। অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপতিরা যাতে সহজে প্রয়োজনীয় পুঁজি পেতেপারেন, সেকথা মাথায় রেখে ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসি’র মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা সহজ করাহয়েছে। এভাবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া মিশন’ও শক্তিশালী হবে। বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে‘এনপিএ’-র ফলে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দুশ্চিন্তায় ছিল। অন্যের অপরাধেরসাজা যেন ছোট শিল্পপতিরা না ভোগেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকার অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে ‘এনপিএ’ এবং ‘স্ট্রেস্‌ড অ্যাকাউন্ট’-এর সমস্যা সমাধানেকার্যকরি পদক্ষেপ ঘোষণা করবে।

কর্মসংস্থানকে উৎসাহ যোগাতে আর কর্মচারীদের সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতেসরকার একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে, ‘ইনফর্মাল’ থেকে‘ফর্মাল’-এর দিকে এগোনোর সুযোগ তৈরি হবে আর কর্মসংস্থানের নতুন নতুন পথ খুলবে। এখনসরকার নতুন শ্রমিকের ইপিএফ-এ তিন বছর পর্যন্ত ১২ শতাংশ অর্থ জমা করবে। তা ছাড়া,মহিলাদের রোজগারের সুযোগ বাড়াতে, তাঁদের হাতে পাওয়া বেতন বৃদ্ধি করতে ইপিএফ-এ জমারাশি ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে মালিক পক্ষকে ১২শতাংশ জমা করে যেতে হবে। কর্মরত মহিলাদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আধুনিক ভারতের স্বপ্ন সাকার করতে, সাধারণ মানুষের ‘ইজ অফ লিভিং’ বৃদ্ধিকরতে আর উন্নয়নকে স্বায়িত্ব প্রদান করতে ভারতে ‘পরবর্তী প্রজন্ম পরিকাঠামো’ গড়েতোলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই বাজেটে রেল-মেট্রো, হাইওয়ে-আইওয়ে, বন্দর-বিমানবন্দর,পাওয়ার গ্রিড-গ্যাস গ্রিড, সাগরমালা-ভারতমালা, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সঙ্গে যুক্তপরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। সেজন্য প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকাবরাদ্দ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এই বরাদ্দ প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা বেশি। এইপ্রকল্পগুলির মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনা গড়ে উঠবে। বেতনভোগী, মধ্যবিত্তদেরপ্রদত্ত করে ছাড় দেওয়ার জন্য আমি অর্থমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই বাজেটপ্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের আশা-আকাঙ্খা পূরণের ক্ষমতা রাখে। এই বাজেটে কৃষকের ফসলেরভালো দাম, নানা কল্যাণকারী প্রকল্পের মাধ্যমে গরিবদের উত্থান সুনিশ্চিতকরণ, করপ্রদানকারী নাগরিকদের সততাকে সম্মান, যথাযথ কর কাঠামোর মাধ্যমে শিল্পপতিদেরপরিশ্রমকে সমর্থন, দেশের জন্য প্রবীণ নাগরিকদের অবদানকে বন্দনার মাধ্যমে ‘ইজ অফলিভিং’ বাড়িয়ে নতুন ভারতের ভিতকে মজবুত করার জন্য আমি আরেকবার অর্থমন্ত্রী এবংতাঁর টিমকে এই বাজেটের জন্য হৃদয় থেকে শুভেচ্ছা জানাই।

PG/S B / SB