Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

হেরাটে আফগানিস্তান-ভারত মৈত্রী বাঁধ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

হেরাটে আফগানিস্তান-ভারত মৈত্রী বাঁধ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


আফগানিস্তানে আরও একবার আসার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। সেইসঙ্গে, আমি সম্মানিত বোধ করছি সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী একটি দেশের জনসাধারণের মধ্যে উপস্থিত থাকতে পেরে। ভারত প্রেমের এই মহাসমুদ্রের উচ্ছ্বসিত তরঙ্গে আমি উদ্বেলিত। অগ্রগতির লক্ষ্যেএটি হল আফগানিস্তানের আরেক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আবেগ ও গরিমার এ হল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য এবং এই বাঁধটিকে আফগানিস্তান-ভারত মৈত্রী বাঁধ নামকরণের জন্য মিঃ প্রেসিডেন্ট, ধন্যবাদ আপনাকে। আফগান মানসিকতার ঔদার্যে আমরা সত্যিই অভিভূত। বিশ্বের মহান সভ্যতাগুলির ধারক ও বাহক হল নদ-নদী। মানব প্রগতির গতি আবর্তিত হয় নদীর বহমান স্রোতোধারার সঙ্গে। পবিত্র কোরানে নদীকেই স্বর্গের মূল বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ভারতের প্রাচীন শাস্ত্র ও পুঁথিপত্রে নদীকেই আমাদের প্রাণের উৎস এবং জাতির ধারক বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আফগান প্রবাদবাক্যে কথিত আছে, ‘কাবুল বি হার বাশা বি বর্ক নে’। অর্থাৎ, সোনা নয়, কাবুলের প্রয়োজন তুষার। কারণ, গলিত তুষারই নদীকে পুষ্ট করে, যা থেকে প্রাণ ও কৃষিকর্মের উত্থান, উদ্ভব। সুতরাং, আজ আমরা যে প্রকল্পটির সূচনা করতে চলেছি, তা শুধুমাত্র কৃষিভূমিকে সেচ-উর্বর বা গৃণকোণকে আলোকোজ্জ্বল-ই করে তুলবে না; আজ আমাদের এই উদ্যোগ একটি অঞ্চলকে আবার পুনরুজ্জীবিত করে তুলবে, আশা-আকাঙ্খাকে আবার নতুন করে জাগিয়ে তুলবে, পুনর্নিধারণ করবে আফাগানিস্তানের ভবিষ্যৎকে। এই বাঁধ শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনই করবে না, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে এক নতুন আশা ও বিশ্বাসের বাতাবরণও সৃষ্টি করবে।

এই প্রকল্প থেকে চিস্ত, ওবে, পাশতুন জারঘান, কারোখ, গোজারা, ইঞ্জিল, জিন্দজাঁ, কোহ্‌সান এবং ঘোবিয়ানের ৬৪০টির মতো গ্রামের কৃষিক্ষেত্রে সেচের সুযোগই পৌঁছে দেবে না, এই অঞ্চলের ২৫০টিরও বেশি গৃহকোণকে আলোকিতও করে তুলবে। গত ডিসেম্বরে কাবুলে আফগান সংসদ ভবন উদ্বোধনের সম্মান লাভ করে আমি অভিভূত বোধ করেছিলাম। কারণ, ঐ বিশেষ মুহূর্ত ও ঘটনাটি ছিল হিংসা ও অস্ত্র দিয়ে নয়, বরং নির্বাচন ও আলোচনা, বিতর্কের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আফগান জনসাধারণের মহাকাব্যিক সংগ্রামের প্রতি এক বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য। আজ আবার এই হেরাটের নিদাঘতপ্ত এক দুপুরে সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আফগান সংকল্পকে ঘিরে উৎসব পালনের একটি মুহূর্ত আমাদের সামনে উপস্থিত। ১৯৭০-এর দশকেই এই প্রকল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিল ভারত ও আফগানিস্তান। কিন্তু, বিগত দশকগুলি সংঘর্ষ ও ধ্বংসের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘ সংগ্রামের কথাই এখন আমাদের মনে করিয়ে দেয়। কারণ, আফগানিস্তানকে গড়ে তোলার জন্য সেই যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়নি, সেই যুদ্ধের অভিমুখ ছিল আফগান জনসাধারণের একটি সমগ্র প্রজন্মের ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দেওয়ার দিকে। অবশেষে, ২০০১ সালে যখন আফগানিস্তানে আবার এক নতুন যুগের সূচনা হল, তখনই আমরা পুনরায় শুরু করলাম এই প্রকল্পকে ঘিরে চিন্তাভাবনার কাজ।

ধৈর্য ও সংকল্প এবং বিশ্বাস ও সাহসিকতাকে সম্বল করে যাবতীয় হিংসা, হুমকি ও বাধার প্রাচীর আমরা অতিক্রম করেছি একসঙ্গে। মৃত্যু ও ধ্বংসলীলা, দমনপীড়ন ও বঞ্চনার কোনও শক্তিকেই যে আর গ্রাহ্য করা হবে না – এই বার্তা আজ বহন করে চলেছে অকুতোভয় আফগান জনসাধারণ। আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খার স্বপ্ন পূরণের পথে কোনও কিছুই আজ আজ বাধা হয়ে থাকতে পারে না। যে বিস্তীর্ণ কৃষিক্ষেত্র জন্ম দেয় সুস্বাদু ফলমূল ও জাফরানের তা আবার প্রাণের স্পর্শ খুঁজে পাবে নদীর স্বচ্ছ জলধারায়। যে গৃহকোণ নিমজ্জিত ছিল তমসাময় রাত্রির ঘন কালো ছায়ায়, তা আবার, আলোকিত হয়ে উঠবে আশার ‘শক্তি’র মাধ্যমে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই আবার নেমে পড়বেন কৃষিকর্মে এবং কঠোর শ্রম, শান্তি ও নিরাপত্তার আনন্দে মেতে উঠবেন তাঁদের দৈনন্দিন কাজকর্মে। আগ্নেয়াস্ত্রের ভারে যে বৃষস্কন্ধ একদা ন্যুব্জ হয়ে পড়েছিল, তা আবার লাঙ্গল তুলে নেবে সবুজায়নের লক্ষ্যে। শিক্ষা ও সুযোগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আবার আশাবাদী হয়ে উঠবেন তরুণ ও যুবকরা।

আর কোনও তরুণ মহিলা কবিকে এখন থেকে আশা-আকাঙ্খার অচরিতার্থতায় ক্লেশ ও যন্ত্রণাবিদ্ধ এক জীবন অতিবাহিত করতে হবে না, সম্ভাবনা ও প্রতিশ্রুতিময় এক জীবনের অবক্ষয় তাঁকে আ্র স্বীকার করে নিতে হবে না। মহান গৌরব ও দুঃখজনক পরিণতির একাধিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে হেরাট। যে শহরটিকে একদা জালালউদ্দিন রুমি সুচারুতম করে গড়ে তুলেছিলেন, তার উত্থান ঘটবে আরও একবার। যে শহরটি ছিল একসময় দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার তোরণদ্বার, তা আবার সমৃদ্ধির শান্তিপূর্ণ উপায় অণ্বেষণের মধ্য দিয়ে যুক্ত করবে সমগ্র অঞ্চলকে। হেরাট ও আফগানিস্তানের সরকারকে তাই আমি অকুন্ঠ সাধুবাদ জানাই তাদের ধৈর্য, সমর্থন ও সমঝোতা এবং সর্বোপরি আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস ন্যস্ত করার জন্য।

শুধুমাত্র ইঁট আর মর্টার দিয়েই গড়ে তোলা হয়নি বাঁধটিকে। তা নির্মিত হয়েছে, আমাদের পারস্পরিক মৈত্রী সম্পর্কের আস্থা এবং ভারত ও আফগানিস্তানের জনসাধারণের সাহস ও নির্ভীকতার মধ্য দিয়েও। গর্বের এই মুহূর্তে ব্যথাতুর হৃদয়ে কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁদেরও, যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন নানা সময়ে। আফগান জনসাধারণ এ ধরণেরই এক ভবিষ্যত সঙ্গোপনে পোষণ করে রেখেছিলেন তাঁদের হৃদয়কোণে। এই ভবিষ্যতের যোগ্য উত্তরসূরী হলেন তাঁরাই। এই মাটির সঙ্গে মিশে রয়েছে আমাদের জনসাধারণের কান্না, ঘাম ও রক্ত এবং এর মধ্য দিয়েই অটুট এক সম্পর্কের চিরন্তন বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি আমরা। এই দেশের মাটিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে আমাদের এই গাথা কাহিনী। আমাদের এই পারস্পরিক বন্ধন স্মরণ করিয়ে দেয় এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সুপ্রাচীন যোগাযোগের কথা। বৈদিক যুগপ্রাচীনআমাদের যুক্ত ইতিহাসে হারিরুদ নদীর বিশেষ স্থানটির কথা অনেকেই হয়তো বিস্মৃত হননি। এই নদীটি যে প্রগতির ভবিষ্যৎ গঠনে আমাদের এক উজ্জ্বল প্রতীক চিহ্ন হয়ে থাকবে তা প্রত্যক্ষ করবে সমগ্র বিশ্ব। বহু শতক পূর্বে চিস্তি শরিফ যে শক্তি দিয়ে আমদের দুটি জাতিকে যুক্ত করেছিলেন, এই মৈত্রী বাঁধ সেরকমই এক সংহতির মধ্য দিয়ে আবার যুক্ত করে তুলবে আমাদের।

এই অঞ্চল থেকেই চিস্তি সিলসিলা বা সুফিদের ঐতিহ্য পৌঁছে গিয়েছিল ভারতে। এই গৌরবময় ঐতিহ্য এবং তাঁর বাণী ও শিক্ষাদর্শ প্রতিধ্বনিত হয়েছে দিল্লি, আজমেঢ় এবং ফতেপুর সিক্রির দর্‌গা ও ইতিহাসে। এর প্রেম, শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তাআপন করে নিয়েছিলসকল ধর্মমতের মানুষকে। যে কোনও মত ও পথে বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে তা সঞ্চারিত করেছিল সম্প্রীতির বাণী। ঈশ্বর সৃষ্ট সকলের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম এবং মানবসেবার বাণীপ্রচার করেছিল সুফি মতবাদ। ভারত ও আফগানিস্তানের জনসাধারণ জানেন যে, এই মূল্যবোধই প্রকৃত সংজ্ঞা নির্ধারণ করে আফগানিস্তানের, হিংসা বা উগ্রবাদ নয়। আফগানিস্তান হল এমন এক জাতি প্রেম ও কাব্যসুষমাই যার আঙ্গিক, শান্তি ও সম্প্রীতির আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের মধ্যেই যার অনুরণন। এই মূল্যবোধই আফগানবাসীদের শক্তি যুগিয়েছে স্থৈর্য ও ধৈর্যের মধ্যে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টায় যুক্ত থাকতে তাদের আপনজনের সঙ্গে যারা হিংসার পথ অবলম্বন করেছে। এমনকি, তাদের সঙ্গেও যারা এই হিংসার পথকে কোনও না কোনওভাবে সমর্থন জানিয়েছে।

স্বাধীনতা রক্ষায় আফগানবাসীদের সমকক্ষ পৃথিবীর আর কোনও দেশেই খুঁজে পাওয়া যাবে না – এই বিশ্বাস সত্ত্বেও আফগানিস্তানের জনসাধারণ অনুসরণ করেছে শান্তি স্থাপনের এই প্রক্রিয়া। আর এই মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে ভারত ও আফগানিস্তান ব্যস্ত থেকেছে একে অপরের অণ্বেষণে, পরস্পরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার বাসনায় নয়। ভারতে প্রথম চিস্তি অর্থাৎ ধর্মগুরু খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তির মতে, সূর্যের মতো স্নেহ ও প্রীতি, নদীর মতো ঔদার্য এবং বসুন্ধরার মতো আপন করে নেওয়ার আতিথেয়তার মানসিকতা থাকা উচিৎ মানবজাতির মধ্যে। তাঁর পিতৃপুরুষের সুন্দর দেশভূমিই শুধু নয়, আফগানিস্তানের জনসাধারণের প্রকৃতিও খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর এই বার্তার মধ্য দিয়ে। ডিসেম্বর মাসে কাবুল সফরের সময়, আপনাদের উষ্ণ আতিথেয়তার মধ্যে আমি অনুভব করেছিলাম আপনাদের এই উদার হৃদয়বৃত্তিকে। আপনাদের উজ্জ্বল চোখগুলির মধ্যে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম ভারতের জন্য এক অফুরন্ত প্রশ্রয় ও ভালোবাসাকে। আপনাদের হাসিতে ফুটে উঠেছিল এই সম্পর্কের এক অনাবিল আনন্দ। আপনাদের দৃঢ় আলিঙ্গনে আমি উপলব্ধি করেছিলাম এই সম্পর্কের গভীরতায় আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাসকে। অবিস্মরণীয় সেই মুহূর্তগুলিতে ভারত আরও একবার প্রত্যক্ষ করেছিল আপনাদের দেশের সাধারণ মানুষের মহত্ত্ব, আফগানভূমির সৌন্দর্য এবং জাতির মৈত্রীপ্রিয় হৃদয়সত্তাকে। আমাদের ১২৫ কোটি দেশবাসীর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা নিয়ে আমি আজ ফিরে যাব। সঙ্গে নিয়ে যাব আমাদের অংশীদারিত্বের এক নতুন সংকল্পবদ্ধতাকে।

আমাদের পারস্পরিক অংশীদারিত্বের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং গ্রামের জন্য সেচ ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা। আমাদের অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছে নারীর দক্ষতা ও ক্ষমতায়ন এবং যুব-সমাজের শিক্ষা যাতে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার দায়িত্ব তারা বহন করতে পারে। জারাঙ্গ থেকে ডেলারাম পর্যন্ত দূরত্ব কমিয়ে আনতে আমরা হাতে হাত মিলিয়ে নেমে পড়েছি সেতু ও সড়ক নির্মাণের কাজে। স্থাপন করেছি বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন, যাতে আপনাদের বাড়িঘরে পৌঁছে যায় বিদ্যুৎশক্তির সুযোগ। ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতের বিনিয়োগ এখন বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের এক নতুন পথ উন্মুক্ত করবে আফগানিস্তানের জন্য যা হয়ে উঠবে সমৃদ্ধির পথে পৌঁছে যাওয়ার এক নতুন দিশা।

আমাদের এই চিন্তাভাবনার বাস্তবায়নে গত মাসেই আফগানিস্তান, ভারত ও ইরানের মধ্যে চাবাহার বাণিজ্য ও যোগাযোগ চুক্তি সম্পাদনের সময়প্রেসিডেন্ট ঘানি ইরানের প্রেসিডেন্ট রৌহানি এবং আমার সঙ্গে উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনা।

মৈত্রীর সুফল শুধু কাবুল, কান্দাহার, মাজার এবং হেরাটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই এবং তা থাকতেও পারে না। আফগানিস্তানের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে যাবে আমাদের সহযোগিতার হাত। আফগান সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষই উপকৃত হবেন আমাদের এই সহযোগিতার সম্পর্কে। কঠিন ভৌগোলিক অবস্থান, বৈচিত্র্যময় অস্তিত্ব এবং পুশতুন, তাজিক, উজবেক এবং হাজারার মতো হাজারো পৃথক পৃথক গোষ্ঠীর বসবাস ও পরিচিতি সত্ত্বেও সমৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আফগানিস্তান এক ও অভিন্ন। কারণ, আফগান জাতির মধ্যে কোনো রকম বিভেদ দেখা দিলে তাঁর সুযোগ নিতে তৎপর হয়ে উঠবেবহিঃশক্তি যারা দমিয়ে রাখতে চায় সমগ্র আফগান জাতিকে। যখন আমরা একে অপরের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করি, তখন অন্যের ছল বা দুরভিসন্ধি থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে আমাদের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য আপনাদের দৃঢ় অঙ্গীকার আমাদের সাহস ও শক্তি যোগায়।

যখন আমাদের কেউ বিপদে পড়েন বা আক্রমণের শিকার হন, আফগানবাসী আমাদের রক্ষায় এগিয়ে আসেন আপনজনের মতো। তাঁরা নিজেরাই ঝাঁপিয়ে পড়েন জীবন তুচ্ছ করে তাঁদের ভারতীয় বন্ধুদের রক্ষা করার সংকল্প নিয়ে। আপনাদের হৃদয়ের মহত্ত্ব এবং মৈত্রীশক্তির এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকেই এর প্রমাণ আমি পেয়েছি। সেদিন হেরাট শহরে আমাদের দূতাবাসের ওপর সন্ত্রাসবাসীরা যখন বড় ধরণের হামলা চালিয়েছিল তখন আফগান সেনা এবং আমাদের কর্মীদের মিলিত প্রচেষ্টা বহু মানুষের জীবন রক্ষার কাজ নিশ্চিত করে তুলেছিল। আর, এইভাবেই এক বড় ধরণের ট্র্যাজেডির হাত থেকে তাঁরা রক্ষা করেছিলেন আমাদের।

মিঃ প্রেসিডেন্ট, বন্ধুগণ,

আফগানিস্তানের সাফল্য প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে এক গভীর আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। আফগানবাসীর জন্য প্রীতি ও প্রশংসার একটি বিশেষ স্থান রয়েছে আমাদের হৃদয়কোণে। আপনাদের গণতন্ত্রের মূল আরও গভীরে প্রোথিত হোক, আপনাদের জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠুন এবং আপনাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধি লাভ করুক, এটাই আমাদের কাম্য। আপনাদের শিল্প, সংস্কৃতি ও কাব্য বিকাশ লাভ করুক এটাই আমাদের বাসনা। আপনাদের দেশের ক্রিকেটাররা টেস্ট খেলোয়াড়ের মর্যাদায় উন্নীত হয়ে আই পি এল-এর গৌরব বৃদ্ধি করুন, এটাই আমরা দেখতে চাই।

একইসঙ্গে, স্বীকার করে নেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে যে, আফগানিস্তান যদি সাফল্য অর্জন করে, তা হলে বিশ্ব হয়ে উঠবে আরও সুন্দর ও নিরাপদ। যে মূল্যবোধ আফগানবাসীদের মধ্যে রয়েছে, তা যদি আবার প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তা হলে হিংসা ও সন্ত্রাস পরাভব শিকার করতে বাধ্য।

কারণ, আমরা জানি যে, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা আপনাদের দেশের সীমান্তেই থেমে নেই, এমনকি আমাদের এই অঞ্চলের শেষ প্রান্তেও তা থেমে থাকতে পারে না।

সুতরাং, বর্তমান সময়কালের এই ক্রমবর্ধমান অশান্তির মুহূর্তে আফগানবাসীরা তাঁদের নিজেদের স্বার্থে এবং বিশ্ব কল্যাণে সাহসের সঙ্গে যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন, বিশ্ববাসী কখনই তা বিস্মৃত হবেন না। ভারতও তা কোনওদিন ভুলবে না কিংবা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে না।

আমি আগে যা বলেছি তারই আবার পুনরাবৃত্তি করতে চাই এখানে। আপনাদের মৈত্রী আমাদের কাছে এক সম্মানের বিষয়। আপনাদের স্বপ্ন মানেই তা আমাদের কাছে এক কর্তব্যবিশেষ। ভারতের সামর্থ্য হয়ত সীমিত। কিন্তু, তার অঙ্গীকার লাগামবিহীন। আমাদের সহায়সম্পদের পরিমাণ সীমিত হতে পারে, কিন্তু আমাদের আকাঙ্খা সীমাহীন। অন্যের কাছে তাঁদের অঙ্গীকারের হয়তো একটা সীমারেখা আছে কিন্তু আমাদের সম্পর্ক যুগযুগান্তের। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক সীমারেখা আমাদের রয়েছে সত্য, কিন্তু উদ্দেশ্যের স্বচ্ছতাই আমাদের পথ নির্দেশ করে। অন্যের মধ্যে আমরা সংশয় ও প্রতিরোধ লক্ষ্য করি, কিন্তু আমাদের সংকল্প খুবই দৃঢ়। আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাসই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

অনেকেই আপনাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সন্দিহান। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে, আফগান জনসাধারণের বেছে নেওয়া ভাগ্য পরিকল্পনাকে কেউ-ই অস্বীকার করতে পারে না, তাঁদের এই যাত্রা যতই কঠিন ও দীর্ঘ হোক না কেন। তাই, আন্তর্জাতিক মঞ্চ এবং আঞ্চলিক ফোরামে আফগানবাসীদের এক সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, ঐক্যবদ্ধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক জাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার অধিকারকে এক বাক্যে সমর্থন করে যাব আমরা। সেই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আফগানিস্তানের গ্রামে, শহরে, খেতে-খামারে একযোগে কাজ করে যাব আমরা।

ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন, হেরাটের মহান সুফি কবি হাকিম জামির উদ্ধৃতির মতোই আমরা উপভোগ করব মৈত্রী সম্পর্কের মুক্ত হাওয়ার সুখ ও সৌন্দর্যকে।

আমাকে এইভাবে আপন করে নেওয়ার জন্য এবং সম্মান জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই আপনাদের এই মৈত্রী সম্পর্কের জন্য।

ধন্যবাদ জানাই আপনাদের সকলকেই।

PG/SKD/SB/S