‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ উদ্যোগের সূচনায় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “সর্দার প্যাটেল আমাদের এক ভারত দিয়েছিলেন। এখন ১২৫ কোটি ভারতীয়র আন্তরিক দায়িত্ব হ’ল সমবেতভাবে শ্রেষ্ঠ ভারত গড়ে তোলা”। এই ধারণাই নরেন্দ্র মোদীকে সঠিক দিশা-নির্দেশ করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেও তিনি এই ধারণাই অনুসরণ করেছেন।
দেশের বীর ও সাহসী ব্যক্তিদের যাঁরা দেশের একতা, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং আমাদের প্রিয় রাষ্ট্রের উন্নয়নে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন, নরেন্দ্র মোদী তাঁদের যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদনই বিশ্বাস করেন। তিনি চান, আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য দেশের প্রতি গর্ব ও জাগ্রতবোধের অঙ্গ হয়ে উঠুক।
ডান্ডিতে গড়ে ওঠা জাতীয় লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক অন্যতম একটি দৃষ্টান্ত। এই স্মারক মহাত্মা গান্ধী ও তাঁর ৮০ জন সত্যাগ্রহীর ১৯৩০ সালের ডান্ডি অভিযানের উদ্যমতা ও শারীরিক সক্ষমতাকে যথাযথ সম্মান জানায়।
সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল নামাঙ্কিত ১৮২ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট স্ট্যাচু অফ ইউনিটি বা একতার মূর্তি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতাবিশিষ্ট এই মূর্তিটি নির্মাণের প্রথম পরিকল্পনা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, যখন তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এই মূর্তি ভারতের লৌহমানবের প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে, যিনি এক অখন্ড ভারত গড়ে তুলেছিলেন। শুধু তাই নয়, সুউচ্চ এই সৌধ সমস্ত ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
কয়েক দশক ধরেই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিবার তাঁর জীবনের নানা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ফাইলগুলি জনসমক্ষে আনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। একের পর এক সরকার এই ফাইল প্রকাশের ব্যাপারে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ২০১৫-র অক্টোবরে নরেন্দ্র মোদী, যখন তাঁর বাসভবনে নেতাজীর পারিবারিক সদস্যদের আপ্পায়ন করেছিলেন, তখন বলেছিলেন, ইতিহাসকে দমন করার কোনও কারণ আমি অন্তত দেখছি না। তাঁর অভিমত ছিল, যাঁরা ইতিহাসকে ভুলে যান, তাঁরা ইতিহাস রচনার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। অত্যন্ত সুচারু রূপে নেতাজী সম্পর্কিত ফাইলগুলি প্রকাশ করা হয়েছে এবং সেগুলি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জনসমক্ষে আনা হয়েছে।
গত শতাব্দীর চারের দশকের মাঝামাঝি সময়ে লালকেল্লায় আইএনএ-র বিরুদ্ধে আদালতের বিচার সমগ্র জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। অবশ্য, কয়েক দশক ধরে লালকেল্লার যে কক্ষে বিচারপর্ব চলেছিল, সেই কক্ষটির স্মৃতির অতলে সলিল সমাধি ঘটেছিল। এ বছর সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লার ঐ কক্ষে একটি সংগ্রহালয়ের উদ্বোধন করেন, যেটি নেতাজী ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। চারটি সংগ্রহালয়ের অন্যতম একটি অংশ নেতাজী নামাঙ্কিত এই সংগ্রহালয়টি। এই সংগ্রহালয়গুলিকে ‘ক্রান্তি মন্দির’ হিসাবে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। ১৮৫৭-র স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত নানা ঘটনাও সামগ্রী এই সংগ্রহালয়গুলিতে প্রদর্শিত হয়েছে।
বিপর্যয় মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মীদের যথাযথ সম্মান জানাতে নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু নামাঙ্কিত পুরস্কার প্রদানের কথা ঘোষণা করেছেন।
বিগত চার বছরে আমাদের ইতিহাসের বহু বিখ্যাত ও গুণী ব্যক্তির অসামান্য অবদানকে স্মরণে রেখে একাধিক স্মারক ও সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর প্রতি ৫টি সৌধ ‘পঞ্চতীর্থ’ উৎসর্গ করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর এটি একটি অন্যতম উদ্যোগ। এই সৌধগুলি বাবাসাহেবের জন্মস্থান লন্ডনের মো-তে, নাগপুরে, দিল্লিতে ও মুম্বাইয়ে গড়ে তোলা হয়েছে।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন শ্রী মোদী কচ্ছে শ্যামজী কৃষ্ণ ভার্মার স্মৃতিতে একটি স্মারক উদ্বোধন করেছিলেন।
মহান সমাজ সংস্কারক শ্রী ছোটুরামের স্মৃতিতে শ্রী মোদী হরিয়ানায় একটি মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন। আরব সাগরে মুম্বাই উপকূলে শিবাজীর স্মৃতিতে শ্রী মোদী সম্প্রতি একটি স্মারক গড়ে তোলার শিলান্যাস করেন।
দিল্লিতে জাতীয় বিজ্ঞান কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী সর্দার প্যাটেল গ্যালারির উদ্বোধন করেছেন।
দেশের সেবায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ৩৩ হাজার পুলিশ কর্মীর সাহসিকতা ও আত্মবলিদানকে সম্মান জানাতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পুলিশ স্মারকের উদ্বোধন করেছেন।
এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জাতীয় যুদ্ধ স্মারক তিনি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। স্বাধীনতার পর যে সমস্ত জওয়ান যুদ্ধ ক্ষেত্রে ও অভিযানে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের স্মরণে এই স্মারক গড়ে তোলা হয়েছে।
সমস্ত স্মৃতিসৌধ বা স্মারক সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের সেই সমস্ত ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যাঁরা আমাদের জন্য আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে মহান অবদানের সাক্ষী হয়ে রয়েছেন। এরা সকলেই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস।
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই স্মৃতিসৌধ বা স্মারকগুলি জাতীয়তাবাদের স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে গর্ববোধ ও একতার অনুভূতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে, যার জন্য আমাদের আনন্দিত ও উৎফুল্ল হওয়া প্রয়োজন।
***
CG/BD/SB…