নতুন দিল্লি, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪
সোনাল মাতার জন্মশতবার্ষিকী কর্মসূচিতে ভিডিও-র মঞ্চে অংশগ্রহণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে ভাষণদানকালে তিনি বলেন যে সোনাল মাতার জন্মশতবর্ষ উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র পৌষ মাসে। এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত থাকার অর্থ হল সোনাল মাতার আশীর্বাদ গ্রহণের সুযোগ লাভ। এই উপলক্ষে সমগ্র চারণ সমাজকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চারণ সম্প্রদায়ের কাছে মাতাধাম হল শক্তি, সম্ভ্রম, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যের এক কেন্দ্রভূমি। সোনাল মাতার শ্রীচরণে আমি প্রণাম জানাই।
সোনাল মাতার জন্মশতবর্ষ উৎসবের তিন দিন ব্যাপী কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন যে ভগবতী স্বরূপা সোনাল মাতা ভারতাত্মার এক সজীব দৃষ্টান্ত। গুজরাট ও সৌরাষ্ট্র হল মহান সাধুসন্ত ও ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ ভূমি। বহু মহাপ্রাণ ব্যক্তি ও সাধুসন্ত এই অঞ্চলের মানুষকে আলোর পথে চালনা করেছেন। সৌরাষ্ট্রের এই শাশ্বত ঐতিহ্যের এক বিশেষ অংশ হিসেবে শ্রী সোনাল মাতা ছিলেন আধুনিক যুগের মানুষের কাছে এক আলোকবর্তিকা স্বরূপ। তাঁর আধ্যত্মিক শক্তি ও মানবতাবাদী শিক্ষাদর্শ তাঁর মধ্যে এক অপূর্ব এবং ঐশ্বরিক আকর্ষণ এনে দিয়েছিল যা আমরা জুনাগড় ও মাধদার সোনাল ধামে উপলব্ধি করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোনাল মাতার সমগ্র জীবন ছিল জনকল্যাণে নিবেদিত। ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসরণ করার পাশাপাশি দেশের প্রতি তিনি একনিষ্ঠ সেবারও আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। ভগৎ বাপু, বিনোবা ভাবে, রবিশঙ্কর মহারাজ, কানভাই লাহেড়ি এবং কল্যাণ শেঠের মতো মহান ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে তিনি এসেছিলেন। চারণ সম্প্রদায়ের বিদগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি এক বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছিলেন। বহু তরুণ ও যুবককে সঠিক পথ দেখিয়ে তাঁদের জীবনে এক আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি, শিক্ষার প্রসারে এবং সমাজকে নেশামুক্ত করার কাজেও তাঁর অবদান ছিল অনন্য। কুপ্রথা থেকে সমাজকে রক্ষা করার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে পৌঁছোনো সম্ভব, একথাও প্রচার করে গেছেন তিনি। এমনকি, জীবজন্তু সহ সমগ্র প্রাণীকুলকে রক্ষা করার বাণীও তিনি সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক কাজকর্মের পাশাপাশি দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার কাজেও সোনাল মাতার অবদান ছিল অপরিসীম। দেশ বিভাজনের সময় জুনাগড়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির যে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধেও দেবী চন্ডীর মতো তিনি সংগ্রাম করে গেছেন।
শ্রী সোনাল মাতাকে চারণ সম্প্রদায়ের এক মহান প্রতীক বলে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে ভারতের পুঁথিপত্রেও চারণ সমাজের অবদানের বিশেষ উল্লেখ রয়েছে। ভাগবত পুরাণের মতো পবিত্র গ্রন্থেও উল্লেখ রয়েছে চারণ সম্প্রদায়ের। সেখানে বলা হয়েছে যে চারণ সম্প্রদায়ের মানুষ হলেন স্বয়ং শ্রীহরির উত্তরসূরী তথা বংশধর। এই সমাজের ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হয়েছিল মা সরস্বতীরও। পূ্জ্য তরণবাপী, ঈশ্বর দাস, পিঙ্গালশ্রী বাপু, কাগ বাপু, মেরুভা বাপু, শঙ্করদান বাপু, শম্ভুদান জী, ভজনিক নারায়ণস্বামী, হেমুভাই গাধভি, পদ্মশ্রী কবি দাদ এবং পদ্মশ্রী ভিখুদান গাদভি সহ চারণ সমাজের বিভিন্ন বিদগ্ধ ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চারণ সাহিত্যের যে বিশাল সম্ভার রয়েছে তা তাঁদের ঐতিহ্যকে প্রমাণ করে। দেশাত্মবোধক সঙ্গীত বা আধ্যাত্মিক গীত সর্বত্রই বহু শতাব্দী ধরে চারণ সাহিত্য একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে এসেছে। শ্রী সোনাল মাতার বলিষ্ঠ ভাষণও এর আর একটি দৃষ্টান্ত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোনাল মাতা প্রথাগত শিক্ষা লাভের সুযোগ না পেলেও সংস্কৃত সহ বিভিন্ন ভাষায় তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল অসাধারণ। বিভিন্ন গ্রন্থ ও পুঁথিপত্র সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানও ছিল অগাধ। তাঁর মুখে রামায়ণের কাহিনী একবার যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা কখনই তা বিস্মৃত হতে পারেননি। আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার শ্রীরাম মন্দিরে যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে তা জানলে সোনাল মাতার নিশ্চই আনন্দের সীমা থাকতো না। দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শ্রী মোদী বলেন, এই লক্ষ্যে আমাদের সকলকে মিলিত ভাবে কাজ করে যেতে হবে এবং এই ভাবেই শ্রী সোনাল মাতার প্রতি আমাদের অন্তরের শ্রদ্ধা আমরা নিবেদন করতে পারব।
পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে সোনাল মাতার অনুপ্রেরণা দেশের প্রতি কর্তব্য পালনে আমাদের নতুন শক্তি জুগিয়েছে। কারণ, আমরা এখন ব্রতী হয়েছি এক স্বনির্ভর ভারত গঠনের লক্ষ্যে।
PG/SKD/AS
My message for birth centenary celebrations of Aai Shree Sonal Ma in Junagadh. https://t.co/mrbCOGkx73
— Narendra Modi (@narendramodi) January 13, 2024