নয়াদিল্লি, ১১ মার্চ, ২০১৫ সেশেলসের প্রেসিডেন্ট মিঃ জেম্স মিশেলের স্বাগত ভাষণের প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর জবাবি ভাষণে সেশেলসবাসীর উষ্ণতায় সন্তোষজ্ঞাপন করে বলেন, তাঁর এই সফর ছোট হলেও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতবর্ষ মনে করে, ভারত মহাসাগরের এই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। দু’দেশের মধ্যে বিশেষ এবং অনন্য সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের ভিত্তিতে রয়েছে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মান, সাম্যতা ও মঙ্গলকামনা। এই সম্পর্ক দু’দেশের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ভাগাভাগি করে নেওয়ার এবং সবাইকে নিয়ে থাকার প্রয়াসে নিহিত। দু’দেশের একই লক্ষ্য – মানুষের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি। সেশলস-এ অগ্রগতি হয়েছে অসাধারণ। এই দেশ দেখিয়ে দিয়েছে আয়তন কোনও সমস্যাই নয় সাফল্যের ক্ষেত্রে। প্রেসিডেন্ট মিশেলের সঙ্গে কথোপকথনে দু’দেশের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণতা আরও মজবুত হয়েছে। ভারতবর্ষ ও সেশেলসের মধ্যে নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের ভীতও হয়েছে মজবুত। এই অঞ্চলের নৌ-ক্ষেত্রের নিরাপত্তায় দু’দেশের দায়িত্ব সম্পাদন করার প্রয়াস এই যৌথ অংশীদারিত্বে যথেষ্ট সাহায্য করবে। সেশেলসের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিকাশে ভারতবর্ষের অংশীদার হওয়ার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সেশেলস’কে আরও একটি ডর্নিয়ার উড়ান উপহার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেশেলসের উপকূলের নিরাপত্তায় নজরদারি দৃঢ়তর করার লক্ষ্যে একটি রাডার প্রকল্প উদ্বোধন করার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতায় এও এক নিদর্শন। এই রাডার প্রকল্প নীলাভ পরিবেশের মাঝখানে রূপসী সেশেলসের নিরাপত্তা আরও মজবুত করবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা মজবুত করার লক্ষ্যে সেশেলস্ – এর অবদান যথেষ্ট মর্যাদা পাবে। জলসম্পদ সংক্রান্ত সমীক্ষা দু’দেশের চুক্তিবদ্ধতা ও নৌ-সংক্রান্ত সহযোগিতায় নতুন মাত্রা সংযোজন করবে। প্রধানমন্ত্রী এরই পাশাপাশি আশা করেন যে, অচিরেই ভারত নৌ সংক্রান্ত নিরাপত্তায় সম্পূর্ণ ভাগিদার হয়ে উঠবে সেশেলসের, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রেসিডেন্ট মিশেল ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুসংহত সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। দু’দেশের উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব ও ভারত মহাসাগরীয় বলয়ভুক্ত দেশগুলির সমিতির উৎপাদনমূলক সহযোগিতায় বিশ্বাসী যে দু’দেশই তাও জানান কথা প্রসঙ্গে। দু’দেশের সম্পর্কে উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব একটি শক্তিশালী স্তম্ভ বলে মতপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এই অংশীদারিত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আজ পরিকাঠামোমূলক উন্নয়ন সংক্রান্ত চুক্তির মাধ্যমে। সেশেলসের ক্ষমতার বিকাশ ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ভারতবর্ষ ভাগীদার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতীয় সহায়তার সব থেকে বেশি ভাগিদার হল সেশেলস। শ্রী মোদী এই সহায়তার আরও সম্প্রসারণের আশ্বাস দেন তাঁর বার্তায়। তিনি বলেন, নীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি)-র বিষয়টি আরও সম্প্রসারণ করার ব্যাপারে সেশেলস এখনও পর্যন্ত সর্বাগ্রে রয়েছে। ভারতবর্ষ বিশ্বাস করে, মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি ভবিষ্যতের সমস্যাগুলি মেটানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতি বিষয়ক সহযোগিতায় দু’দেশই একটি যৌথ কর্মীগোষ্ঠী স্থাপনে ঐকমত্যে এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এই সহযোগিতায় সামুদ্রিক পরিবেশ এবং সম্পদ বিষয়ক বোঝাপড়া অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেবে। ভারসাম্য বজায় রেখে মহাসাগরকে আরও কিভাবে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে ভাবনা-চিন্তার আরও বিকাশ ঘটবে দু’দেশের এই সহযোগিতার ফলে, বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী। এই সহযোগিতা দু’দেশের বিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক বোঝাপড়াও মজবুত করবে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। শ্রী মোদী বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সম্পর্ক সম্প্রসারণ করার ব্যাপারে দু’দেশই তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস সেশেলসের তথ্য প্রযুক্তি এবং পরিষেবা আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। গুরুত্ব অনুযায়ী, ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার অনুদান ও ঋণ কোন্ খাতে ব্যবহার করবে তা সেশেলস অচিরেই চিহ্নিত করতে পারবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দু’দেশের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় ভারত। শ্রী মোদী গত বছরে চালু হওয়া এয়ার সেশেলসের উড়ান পরিষেবাকেও স্বাগত জানান। এই প্রসঙ্গে তিনি সেশেলসের নাগরিকদের জন্য তিন মাসের জন্য বিনামূল্যে ভিসা প্রদানের কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি, আগমনের পরে ভিসা প্রদানের সুবিধা সম্প্রসারণের কথাও জানান। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেশেলস যেভাবে ভারত’কে সহযোগিতা করেছে তার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পর্ষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ অধিকার করার বিষয়টিতেও সেশেলস যে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে তা তাঁর বক্তব্যে জানান। তিনি বলেন, আবহ পরিবর্তনের বিষয়েও দু’দেশ ঐকমত্যে এসেছে। জাতীয় কার্যবিধিতে অংশীদার হওয়ার বিষয়ে দু’দেশ একমত। আবহ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলির থেকেও মজবুত মতামত আশা করে দু’দেশ। ক্ষুদ্র দ্বীপ উন্নয়ন বিষয়ক রাষ্ট্রগুলির অবস্থানে ভারতবর্ষ তার সহায়তা প্রদানে বদ্ধপরিকর বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। পাশাপাশি, আফ্রিকার সঙ্গেও ভারতবর্ষের অংশীদারিত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। পরিশেষে, শ্রী মোদী বলেন, ভারত ও সেশেলসের সম্পর্ক উষ্ণ সৌভ্রাতৃত্বের পরিচায়ক। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর সেশেলস সফর এই সৌভ্রাতৃত্বকে সুদৃঢ় করবে।