Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

“সূর্যালোক যেমন মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করে না, উন্নয়নের আলোও সেইভাবেই পৌঁছে যায় ধনীর প্রাসাদ থেকে দরিদ্রের কুটিরে”

“সূর্যালোক যেমন মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করে না, উন্নয়নের আলোও সেইভাবেই পৌঁছে যায় ধনীর প্রাসাদ থেকে দরিদ্রের কুটিরে”


নয়াদিল্লি, ৯ অক্টোবর ২০২২

গুজরাটের মোধেরা গ্রামটিকে ‘২৪ ঘন্টাই সৌরশক্তি চালিত একটি গ্রাম’ বলে ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ গুজরাটের মেহসানার মোধেরায় ৩,৯০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন, মোধেরা, মেহসানা এবং গুজরাটের সমগ্র উত্তরাংশে আজ এক নতুন শক্তির সূচনা হল। বিদ্যুৎ থেকে জল সরবরাহ, রেলপথ থেকে সড়কপথ, দুধ উৎপাদন থেকে দক্ষতা বিকাশ এবং সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রসারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের আজ এখানে শিলান্যাস ও উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রকল্প রূপায়ণের পথ অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটবে, অন্যদিকে তেমনই কৃষকদের আয় ও উপার্জনও বৃদ্ধি পাবে। পশুপালনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরাও আর্থিক দিক দিয়ে এই প্রকল্পগুলি থেকে লাভবান হবেন। শুধু তাই নয়, সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ‘ঐতিহ্য পর্যটন’-এরও বিকাশ ঘটবে।

শরৎ পূর্ণিমা এবং বাল্মিকী জয়ন্তী উপলক্ষে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, মহর্ষি বাল্মিকী ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের কর্মকাণ্ডকে আমাদের কাছে তুলে ধরেছিলেন। একইসঙ্গে মানুষে মানুষে সমতার পাঠও দিয়ে গেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোধেরা এক সময় সূর্য মন্দিরের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু বর্তমানে সূর্য মন্দির থেকে সৌর গ্রাম গড়ে তোলার প্রেরণা সঞ্চারিত হয়েছে এই অঞ্চলটিতে। এর ফলে, বিশ্বের পরিবেশ তথা জ্বালানি শক্তির মানচিত্রে এই অঞ্চলটি এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। মোধেরাকে এক সময় বেশ কয়েক শতক ধরেই ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মোধেরা গ্রামটি প্রাচীনত্ব ও আধুনিকতার এক মেলবন্ধনের নজির হয়ে উঠেছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যখনই সৌরশক্তি প্রসঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়ের অবকাশ ঘটবে, তখনই মোধেরার নামটি অবিসংবাদিতভাবেই উঠে আসবে। কেন্দ্র ও গুজরাট সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের জন্যই এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। নিষ্ঠা, সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা এবং সদিচ্ছা থাকলে যে কোনকিছুই অসম্ভব নয়, একথা বিশেষ জোরের সঙ্গে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শ্রী মোদী বলেন, সৌরশক্তির সাহায্যে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি যেমন আলোকিত হবে, তেমনই কৃষি ও যানবাহনের ক্ষেত্রেও তা জ্বালানির কাজ করবে। একুশ শতকে আত্মনির্ভর ভারত গঠনের লক্ষ্যে শক্তির চাহিদা মেটাতে আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদক এবং বিদ্যুতের গ্রাহক – দুটির মধ্যেই রয়েছে সাধারণ মানুষের এক বিশেষ ভূমিকা। “শক্তির যেটুকু অংশ আপনাদের প্রয়োজন তা আপনারা ব্যবহার করুন, উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ আপনারা বিক্রি করুন সরকারের কাছে” – এই আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ খাতে বিলের খরচ মেটানোর থেকে অব্যাহতি পাওয়া যাবে, অন্যদিকে তেমনই অতিরিক্ত আয়ের রাস্তাও খুলে যাবে।

শ্রী মোদী বলেন, প্রচলিত সাধারণ নীতি হল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভূমিকা হল সরকারের এবং বিদ্যুতের গ্রাহক হল সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুতের ক্রেতা। কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার এই ধারণাটিই বদলে দিতে চলেছে। সরকার এমন এক নীতি রূপায়ণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে যেখানে সৌর প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ দেওয়া হবে। কৃষকরাও তাঁদের খেত-খামারে সৌরশক্তি চালিত পাম্প ও জলসেচের সুবিধা লাভ করতে পারবেন।

বিদ্যুতের অভাবে কন্যাসন্তানদের পাঠাভ্যাস যে এক সময় কিভাবে ব্যাহত হত, সে প্রসঙ্গের অবতারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেহসানার অধিবাসীরা বিজ্ঞান ও গণিতে বিশেষ ব্যুৎপত্তির অধিকারী। এমনকি আমেরিকাতে গিয়ে উত্তর গুজরাটের মানুষ কিভাবে সেখানে জটিল গণিতের সমাধান করে ফেলতে পারেন, তাও আমরা লক্ষ্য করেছি। কচ্ছ এলাকায় ঘুরে বেড়ালে মেহসানা জেলার নামী শিক্ষকদেরও দেখা মেলে। কিন্তু, বিদ্যুতের অভাবে কাঙ্খিত উচ্চতায় এই অঞ্চলটি এতদিন পৌঁছতে পারেনি।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের জলসঙ্কট মেটাতে পঞ্চায়েত স্তরে কিভাবে সমাধানসূত্র খোঁজা হয়েছিল, তারও একটি চিত্র আজ প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন তাঁর ভাষণে। তিনি বলেন, এক সময় বছরের সাত মাসই গুজরাটের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত, কারণ জলাভাব। কিন্তু তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মাত্র এক হাজার দিনের মধ্যে ‘জ্যোতিগ্রাম’ কর্মসূচি রূপায়ণের মধ্য দিয়ে প্রতিটি গ্রামে ২৪ ঘন্টাই বিদ্যুতের যোগান নিশ্চিত করেছিলেন। ‘সুজলম সুফলম’ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন যে জলসেচের প্রসারে তাঁরা নিজেদের জমিও দান করেছিলেন। আর এইভাবেই সমগ্র উত্তর গুজরাটে ‘সুজলম সুফলম’-এর মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে। জলের যোগান ও সরবরাহ সম্পর্কিত যে প্রকল্পগুলির আজ উদ্বোধন হল তা পরিবারের মা-বোনেদের যথেষ্ট উপকারে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

রেল ও সড়ক সংযোগের প্রসারের দিকে তাঁর সরকার বরাবরই বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। এই কারণে গুজরাটে মেহসানা-অম্বাজি-তরঙ্গ-আবুরোড রেলপথ বরাবর উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আর্থিক সমৃদ্ধিকে দ্রুততর করে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।

‘প্রধানমন্ত্রী জন ওষধি কেন্দ্র’ স্থাপনের মধ্য দিয়ে যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তার উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন যে এই প্রকল্প রূপায়ণের ফলে বিশেষ ভর্তুকিতে ওষুধের যোগান দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠেছে। এই কেন্দ্রগুলি থেকে ওষুধ সংগ্রহের জন্য তিনি সকলকে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, এক সময় যে ওষুধের সংগ্রহ মূল্য ছিল ১ হাজার টাকা, এখন তা ১০০ থেকে ২০০ টাকার বিনিময়েই সংগ্রহ করা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে শিল্প সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেন। গুজরাটের প্রাচীন মন্দির ও শক্তিপীঠগুলির সংস্কার ও পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে নিরলস কর্মপ্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সোমনাথ, চোটিলা, পাওগড়-এর পরিবেশ ও পরিস্থিতি এখন আরও অনেক উন্নত করে তোলা হয়েছে। প্রায় ৫০০ বছর যাবৎ পাওগড়-এ মন্দিরের পতাকা উত্তোলনের ঘটনা চোখে পড়েনি। দীর্ঘ  ৫০০ বছর পরে তাঁর উপস্থিতিতে পাওগড়-এ আবার নতুন করে পতাকা উত্তোলিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস’ – এই হল তাঁর সরকারের কর্মপ্রচেষ্টার মূলমন্ত্র। তিনি বলেন, সূর্যালোক যেমন মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করে না, উন্নয়নের আলোও সেইভাবেই পৌঁছে যায় ধনীর প্রাসাদ থেকে দরিদ্রের কুটিরে।

PG/SKD/DM