Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

সিভিল সার্ভিসেস দিবসে প্রধানমন্ত্রী জনপ্রশাসনে উৎকর্ষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার প্রদান করলেন

সিভিল সার্ভিসেস দিবসে প্রধানমন্ত্রী জনপ্রশাসনে উৎকর্ষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার প্রদান করলেন


নতুন দিল্লি, ২১ এপ্রিল, ২০২২
 
সিভিল সার্ভিসেস দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে জনপ্রশাসনে উৎকর্ষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার প্রদান করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী জিতেন্দ্র সিং, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শ্রী পি কে মিশ্র, মন্ত্রিসভার সচিব শ্রী রাজীব গৌবা প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
 
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী সিভিল সার্ভিসেস দিবস উপলক্ষে সব ‘কর্মযোগী’কে অভিনন্দন জানান। শাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জ্ঞান বিনিময়ের উপর জোর দিয়ে শুরুতেই তিনি দুটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেন। তিনি বলেন প্রথমত, সিভিল সার্ভিসের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে পুরস্কার বিজয়ীদের অভিজ্ঞতা ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তুলে ধরতে পারে। দ্বিতীয়ত, পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলি থেকে, একেকটি প্রকল্প বেছে নিয়ে কয়েকটি জেলায় তার রূপায়ণ ঘটানো যেতে পারে এবং পরের বছরের সিভিল সার্ভিসেস দিবসে সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। 
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ২০-২২ বছর ধরে তিনি সিভিল সার্ভেন্টদের সংস্পর্শে আসছেন, প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। পুরো সময়টা জুড়েই পারস্পরিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আজাদি কা অমৃত মহোৎসব চলায় তিনি এই বছরের সিভিল সার্ভিসেস দিবস উদযাপনের বিশেষ তাৎপর্যের উপর গুরুত্ব দেন। এই বিশেষ বছরে প্রাক্তন জেলাশাসকদের জেলায় ডাকার জন্য বর্তমান প্রশাসকদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে সমৃদ্ধ হয়ে জেলা প্রশাসনে নতুন গতির সঞ্চার হবে। একইভাবে রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা এই বছরে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব এবং মন্ত্রিসভার সচিবদের ডাকতে পারেন। যেসব প্রাক্তন আমলা স্বাধীন ভারতের যাত্রাপথে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার হাল ধরে রেখেছিলেন, তাদের কাছ থেকে পরামর্শ পেলে রাজ্যগুলি তার সুফল ভোগ করবে এবং একই সঙ্গে আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের বছরে সিভিল সার্ভিসকে সম্মান জানানোর এটি একটি উপযুক্ত উপায় হবে। 
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অমৃত কাল কেবল উদযাপনের বা অতীতের দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকার সময় নয়। “স্বাধীনতার শতবর্ষের দিকে যাত্রা রুটিন মাফিক হতে পারে না। এই ২৫ বছরের সময়কালকে একটি একক হিসেবে গণ্য করে আমাদের এখন থেকেই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া উচিত। এই বছরের উদযাপনকে একটি যুগান্তকারী ঘটনা করে তুলতে হবে।” প্রতিটি জেলাকেই এই চেতনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এই প্রয়াসে কোনো খামতি থাকা চলবে না। ১৯৪৭ সালের এই দিনে সর্দার প্যাটেল যে দিশা নির্দেশ দিয়েছিলেন, আজ আমাদের আরও একবার সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলার জন্য অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে। 
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তিনটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগতে হবে। প্রথম লক্ষ্য হলো – দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা। তাদের জীবনযাত্রা যাতে সহজ হয় এবং তারা যাতে সেই স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের সঙ্গে কাজকর্মে সাধারণ মানুষকে যেন প্রতিপদে লড়াই করতে না হয়, তারা যেন সমস্ত সুযোগ সুবিধে এবং পরিষেবা বিনা ঝঞ্ঝাটে পান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের স্বপ্নকে সংকল্পে পরিণত করা এবং সেই সংকল্পকে সিদ্ধিতে নিয়ে যাওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব হওয়া উচিত। স্বপ্ন থেকে সংকল্প এবং সংকল্প থেকে সিদ্ধির এই যাত্রাপথের প্রতিটি পর্যায়ে আমাদের সাধারণ মানুষের হাত ধরে থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বমঞ্চে ভারতের স্থান ও ভাবমূর্তি ক্রমশই আরও বিকশিত হচ্ছে। তাই আমরা যা কিছু করি না কেন, তা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে করতে হবে। “বিশ্বে যা কিছু ঘটে চলেছে তার উপর নজর না রাখলে আমাদের অগ্রাধিকার এবং মনোযোগের ক্ষেত্রগুলি নির্ধারণ করা খুব কঠিন হবে। বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতকে মাথায় রেখে আমাদের নিজেদের প্রকল্প এবং শাসন মডেলগুলি তৈরি করতে হবে।” এই সব মডেল ও পদ্ধতিগুলির নিয়মিত সংস্কারসাধনের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত শতাব্দীর প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে আজকের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তৃতীয় লক্ষ্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা সবার উপরে, তার সঙ্গে কোনো সমঝোতা করা সম্ভব নয়। স্থানীয় স্তরের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও এই কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তের পিছনে যেন ‘জাতি প্রথম’ এই ধারণাটি থাকে। 
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজকীয় ব্যবস্থা ও রাজ সিংহাসন দিয়ে ভারতের মহান সংস্কৃতি তৈরি হয়নি। আমাদের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের শক্তির উপর ভিত্তি করে। সেজন্যই আমরা একদিকে যেমন আমাদের সুপ্রাচীন জ্ঞানকে যত্নে সংরক্ষণ করি, তেমনি পরিবর্তন ও আধুনিকতাকে গ্রহণ করার মধ্যেও আমাদের কোনো কুণ্ঠা থাকে না। তিনি বলেন, সরকারি ব্যবস্থার কর্তব্য হলো সমাজের সক্ষমতার লালন করা, তার প্রকাশ করা এবং তাকে সহায়তা দেওয়া। এই প্রসঙ্গে তিনি স্টার্ট-আপ এবং কৃষি ক্ষেত্রের উদ্ভাবনের উদাহরণ দিয়ে প্রশাসকদের এগুলি লালনে ও সহায়তায় সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
 
একজন টাইপিস্ট ও সেতার বাদকের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন, উৎসাহ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, আমি প্রতিটি মুহূর্ত বাঁচতে চাই, যাতে আমি অন্যের সেবা করতে পারি এবং অন্যদের ভালো থাকতে সাহায্য করতে পারি। আধিকারিকদের নতুন ভাবনা চিন্তা এবং প্রথা বহির্ভূত পথে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময় এবং দেশের চাহিদা অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থার সংস্কার করা দরকার। অপ্রচলিত আইনের বিলোপসাধন এবং হাজারো বিধিনিয়মের সংখ্যা হ্রাস, তার অগ্রাধিকারের একটি প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কেবল চাপের মুখেই নয়, উন্নয়নের প্রয়োজনেও আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। “অভাবের সময় উদ্ভূত নিয়ম ও মানসিকতায় আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়, আমাদের মধ্যে প্রাচুর্যের মনোভাব থাকা উচিত।” কেবল চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করাই নয়, চ্যালেঞ্জ আসার আগেই তার পূর্বাভাস পাওয়া দরকার বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গত ৮ বছরে দেশে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অনেকগুলি মানুষের আচরণগত পরিবর্তন এনেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার রাজনীতির মানসিকতা নেই, তিনি স্বভাবগতভাবেই জননীতির পক্ষে। 
 
বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী আধিকারিকদের নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনেও প্রধান সংস্কারগুলির প্রয়োগ ঘটানোর অনুরোধ জানান। উহাদরণ হিসেবে তিনি স্বচ্ছতা, জিইএম, ইউপিআই প্রভৃতির কথা বলেন।
 
সাধারণ নাগরিকদের কল্যাণে জেলা/ রূপায়ণকারী কেন্দ্র এবং কেন্দ্রীয়/ রাজ্য সংস্থাগুলির অসামান্য ও উদ্ভাবনী কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ জনপ্রশাসনে উৎকর্ষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন চিহ্নিত অগ্রণী কর্মসূচি এবং উদ্ভাবনের কার্যকর বাস্তবায়নের জন্যও এই পুরস্কার দেওয়া হয়। 
 
এবারের সিভিল সার্ভিসেস দিবসে যে পাঁচটি অগ্রণী কর্মসূচিতে অসাধারণ কাজের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল – (১) পোষণ অভিযানে “জন ভাগীদারি” বা সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের প্রচার, (২) খেলো ইন্ডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে খেলাধুলা ও সুস্থতার প্রচার, (৩) পিএম স্বনিধি যোজনার আওতায় ডিজিটাল পেমেন্ট ও সুশাসন, (৪) এক জেলা এক পণ্য প্রকল্পের আওতায় সার্বিক উন্নয়ন, এবং (৫) ব্যক্তি হস্তক্ষেপ ছাড়া শেষ প্রান্ত পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা প্রদান। 
 
এই বছরে ৫টি চিহ্নিত অগ্রণী কর্মসূচি ও উদ্ভাবনে জনপ্রশাসন/ পরিষেবা প্রদানের জন্য ১৬টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
 
 
CG/SD/SKD/