Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

সিঙ্গাপুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সিঙ্গাপুর বক্তৃতা‘

সিঙ্গাপুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সিঙ্গাপুর বক্তৃতা‘

সিঙ্গাপুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সিঙ্গাপুর বক্তৃতা‘

সিঙ্গাপুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সিঙ্গাপুর বক্তৃতা‘

সিঙ্গাপুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সিঙ্গাপুর বক্তৃতা‘

সিঙ্গাপুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সিঙ্গাপুর বক্তৃতা‘

সিঙ্গাপুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সিঙ্গাপুর বক্তৃতা‘


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং,

মাননীয় উপ-প্রধানমন্ত্রী থরমান সন্মুগরতনম,

মাননীয় অন্যান্য মন্ত্রী মহোদয়গণ,

অধ্যাপক তান তাই ইয়ং, এবং

বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ,

সিঙ্গাপুর বক্তৃতার সুযোগ ও সম্মান দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।

রাষ্ট্রপতি শ্রী এ পি জে আব্দুল কালাম, প্রধানমন্ত্রী শ্রী পি ভি নরসীমা রাও এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজেপেয়ীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমি যাত্রা শুরু করেছি। তাঁরা সকলেই ছিলেন আধুনিক ভারতের রূপকার এবং এই অঞ্চলে আমাদের সম্পর্কের মূল হোতা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আজ আমাদের সঙ্গে এখানে মিলিত হয়েছেন, সেজন্য আমি নিজেকে খুব বেশি সম্মানিত বোধ করছি।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একইসঙ্গে আমরা এগিয়ে চলেছি একই পথে – জি-২০, আসিয়ান এবং পূর্ব এশিয়া বৈঠকের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে।
এ থেকেই প্রমাণিত যে আমাদের ভাগ্যলিপি পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

৫০-তম স্বাধীনতা বার্ষিকীতে ভারতের ১২৫ কোটি বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই সিঙ্গাপুরের জনসাধারণকে।
মানবজাতি তথা রাষ্ট্রের জীবনে সময় খুব স্বাভাবিকভাবেই ছাপ ফেলে যায়।

কিন্তু, সিঙ্গাপুর যেভাবে গর্ব ও সন্তুষ্টির সঙ্গে তাদের ৫০-তম বার্ষিকী পালন করছে পৃথিবীতে তার নজির খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়।

আধুনিক সিঙ্গাপুরের স্থপতি এবং সমসাময়িককালের এক মহান নেতা লি কুয়ান ইউ-এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপিত করবো।

তাঁর স্বপ্নকে সফল রূপ দিতে, সফল সিঙ্গাপুর গড়ে তুলতে তিনি নিজের জীবন নিয়োজিত করেছেন।

এইভাবেই তাঁর সংকল্পের মধ্য দিয়ে তিনি সিঙ্গাপুর’কে পৌঁছে দিয়েছেন সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে।

তাঁর প্রভাব ছিল বিশ্বব্যাপী। একজন প্রকৃত বন্ধুর মতোই তিনি কথাবার্তা বলতেন সততার সঙ্গে। তাঁর মধ্যে ভারত খুঁজে পেয়েছিল একজন শুভানুধ্যায়ীকে। দেশে বিদেশে ভারতের সম্ভাবনা ও অবদানে তিনি এতটাই বিশ্বাস করতেন যে, কোনও ভারতবাসীর পক্ষেও তা সম্ভব ছিল না।

আমার কাছে তিনি ব্যক্তিগতভাবে এক অনুপ্রেরণা। তাঁর সিঙ্গাপুর ভাষণ থেকে আমি অনেক বিষয়েই শিক্ষালাভ করেছি।

তাঁর মধ্যে সবচেয়ে গভীর অথচ সরল বিষয়টি হল – পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি জাতির রূপান্তর। বর্তমানে আমরা এই পথেই এগোচ্ছি। আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, আপনার শহর ও পারিপার্শ্বিকতাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও তেমনই সমানভাবে জরুরি।

ভারতে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ আমাদের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কর্মসূচি মাত্র নয়, বরং আমাদের চিন্তাভাবনা, জীবনযাত্রা এবং কর্মপ্রচেষ্টার এক রূপান্তরের উদ্যোগ।
গুণ, দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা প্রযুক্তিগত উপায়মাত্র নয়, এর সঙ্গে যোগ রয়েছে মানসিকতা ও জীবনশৈলীর।

এ বছর মার্চ মাসে আমার সিঙ্গাপুর সফর এবং ভারতে একদিনের শোক পালনের মধ্য দিয়ে আমরা চেয়েছি এক প্রকৃত বন্ধু ও এক বিশেষ সম্পর্ককে সম্মান জানাতে।
সিঙ্গাপুর হল এমন একটি দেশ, যা শুধু স্বপ্নই দেখায় না, স্বপ্নকে সত্যিও করে তোলে।

সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে আমাদের শিখে নেওয়ার অনেক কিছুই রয়েছে।

একটি রাষ্ট্রের আয়তন দিয়ে তার সাফল্যের মাত্রা বা উচ্চতাকে বিচার করা যায় না।

একইভাবে, সম্পদের অপ্রতুলতা প্রেরণা, কল্পনা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠতে পারে না।

কোনও জাতি যখন বৈচিত্র্যকে সাদরে গ্রহণ করে, তখন অনেক কিছুর মধ্যেই ঐক্যসাধনের এক ইচ্ছা তার মধ্যে কাজ করে।

আন্তর্জাতিক স্তরে নেতৃত্বের জন্ম দেয় চিন্তাশক্তি। সংস্কার বা ব্যবহারিক ক্ষমতা নয়।

মাত্র এক প্রজন্মের মধ্যে একটি জাতিকে সমৃদ্ধির উচ্চতম মাত্রায় পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও সিঙ্গাপুরের সাফল্যের ঝুলিতে রয়ছে আরও অনেক কিছু।

সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে উৎসাহদান ছাড়াও তাকে সংহত করতেও এই দেশটির অবদান কম নয়।

এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে আমাদের নিজেদের মধ্যেই। তা এক অলীক কল্পনা বা অদৃষ্টের মর্জি নয়। আমাদের এই বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে সিঙ্গাপুর’কে দেখেই।
সিঙ্গাপুরের সাফল্য কোনও গড় সংখ্যাতত্ত্ব বা বিনিয়োগের আকার-আয়তন এনে দেয়নি।

সাফল্যের যে মূল চাবিকাঠি – উন্নতমানের মানবসম্পদ, জনসাধারণের আস্থা ও বিশ্বাস এবং একটি জাতির সংকল্পই এই সাফল্য সম্ভব করে তুলেছে।

বিশিষ্ট ও মাননীয় শ্রোতৃমণ্ডলী,

এই দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করেই আমরা ভারতে রূপান্তরের পথ অনুসরণ করছি।

আমাদের প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য দেশের জনসাধারণ। পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছেন তাঁরাই।

সংখ্যার শীতল পরিসংখ্যান দিয়ে নয়, মানুষের মুখে খুশি ও আনন্দের হাসি দিয়েই আমি বিচার করবো আমাদের সাফল্যকে।

তাই, আমাদের বেশ কিছু নীতির মূল লক্ষ্য হল – সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন।

আবার, এমন কিছু কিছু নীতিও আমরা গ্রহণ করেছি যা রূপায়ণের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে নতুন শিল্পোদ্যোগ এবং সম্প্রসারিত হবে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। দেশের নাগরিকদের মধ্যে নিহিত রয়েছে অনন্ত সম্ভাবনার বীজ।

তাই, দেশের জনসাধারণের শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই আমাদের বিনিয়োগ প্রচেষ্টা। কন্যাসন্তান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, মাথার ওপর স্থায়ী ছাদ, নদী সংস্কার এবং স্মার্ট নগরী গড়ে তোলার দিকে আমরা নজর দিয়েছি। জল ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জ্বালানি শক্তি ও আবাসন সমস্ত রকম সুযোগই আমরা পৌঁছে দিতে চাই দেশের নাগরিকদের কাছে।

আমরা গড়ে তুলতে চাই এবং রক্ষা করতে চাই এমনই এক পরিবেশ ও বাতাবরন, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকই সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে পারেন। তাঁদের অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠে নিরাপত্তাবোধ ও আত্মবিশ্বাস।

আইন সংশোধন, বিধিনিয়ম ও নীতির সংস্কার, প্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিকতার পরিবর্তন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে আমরা সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে চলেছি। আমাদের শাসন ব্যবস্থা এবং রাজ্যগুলির সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে এগিয়ে চলার নীতি আমরা গ্রহণ করেছি।

এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার পরিবর্তন, পরবর্তী প্রজন্মের উপযোগী পরিকাঠামো, নির্মাণ শিল্পের পুনরুত্থান, উন্নত কৃষি ব্যবস্থা, সহজতর ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দক্ষ পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।

আর এইভাবেই একই সময়ে বিভিন্ন দিকে আমাদের কর্মপ্রচেষ্টাকে ছড়িয়ে দিয়েছি। সব কিছুর মধ্যেই একটি নির্দিষ্ট কৌশলসূত্র হিসেবে আমরা সংযোগ ও সমন্বয়ের ব্যবস্থা করেছি।

বহুদিন আগে থেকেই আমি জানি, সিঙ্গাপুরবাসীরা ভারত সম্পর্কে ভালো রকমভাবে খোঁজখবর রাখেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো ভারত থেকেও এদেশে পর্যটক সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

আমি মনে করি, বিশ্বের একটি প্রধান এবং দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসেবে ভারতের উত্থান ও আবির্ভাব ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ আগামীদিনের সাফল্য ও রূপান্তর। পরিবর্তনের চাকায় সঞ্চারিত হয়েছে গতি, আত্মবিশ্বাস হয়ে উঠেছে দৃঢ়, সংকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এসেছে দৃঢ় মানসিকতা। আমাদের যাত্রাপথ ও লক্ষ্য এখন পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট।

এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে সারা দেশ জুড়েই। প্রত্যন্ত গ্রাম এবং দূরদূরান্তের নাগরিকসকলেই এখন যুক্ত হতে প্রস্তুত জাতীয় অর্থনীতির মূলস্রোতের সঙ্গে।

বিশিষ্ট অতিথিবর্গ,

সময়ের বহু সন্ধিক্ষণেই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ভারত ও সিঙ্গাপুর।

ইতিহাসের পাতায়, সাংস্কৃতিক পদচিহ্নে, আত্মীয়তার ঘনিষ্ঠতায় এবং সুপ্রাচীন বাণিজ্যিক যোগাযোগের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে আমাদের সম্পর্কের ইতিহাস।

স্বাধীনতার প্রত্যুষকালে আমরা একে অপরের পাশে বন্ধুর মতোই দাঁড়িয়েছি। আশা-আকাঙ্খাকে সমানভাবে ভাগ করে নিতে আমরা পৌঁছে গেছি একে অপরের কাছে।

সিঙ্গাপুরের সাফল্য ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্খার স্বপ্ন দেখিয়েছে। বিনিময়ে শান্তি, স্থিতাবস্থা ও ভারসাম্য রক্ষার মধ্য দিয়ে বিশ্ব জগৎ গড়ে তোলার কাজে ভারত প্রজ্জ্বলিত করেছে আশার প্রদীপ।

ভারত উদার মানসিকতার দেশ। সিঙ্গাপুরের মধ্যে ভারত দেখেছে বিশ্বকে ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন এবং পূর্বে পৌঁছে যাওয়ার হাতছানি।

এই লক্ষ্যে এমেরিটাস সিনিয়র মিনিস্টার গো চোক টং-এর কষ্টসাধ্য কৃতিত্ব ও অবদানের মাত্রা অন্য কেউ এখনও স্পর্শ করতে পারেন নি। তিনি পুনর্মিলন ঘটিয়েছেন সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারতের এবং এই অঞ্চলের অবশিষ্ট অঞ্চলেরও।

এই বিরাট সম্ভাবনার দিকে আমার দৃষ্টিকে জাগিয়ে তুলেছেন তিনিই।

বর্তমানকালে সিঙ্গাপুর হল আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের অন্যতম। এই সম্পর্ক শুধুমাত্র কৌশলগত দিক থেকেই নয়, সুদূরপ্রসারী প্রভাবের দিক থেকেও এই সম্পর্কঅতুলনীয়।

আমাদের রয়েছে এক সুনির্দিষ্ট প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্ক। পারস্পরিক স্বার্থ এবং এক সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্য দিয়েই তা রূপ লাভ করেছে। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারতের সংযোগ ও যোগাযোগ রয়েছে নিয়মিত।

ভারতে বৃহত্তম বিনিয়োগের উৎস হল সিঙ্গাপুর। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সিঙ্গাপুরের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হল এই দেশটি। শুধুমাত্র ভারতের নয়, অন্যান্য দেশের পর্যটক ও ছাত্রছাত্রীদের কাছে সিঙ্গাপুর হল এক জনপ্রিয় গন্তব্য স্থান।

স্বপ্নের ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের যে কর্মপ্রচেষ্টা তাতে এক প্রধান সহযোগী দেশ হল সিঙ্গাপুর। বিশ্বমানের মানবসম্পদ, স্মার্ট নগরী, দূষণমুক্ত নদ-নদী, বিশুদ্ধ জ্বালানি এবং পরবর্তী প্রজন্মের উপযোগী পরিকাঠামো – আমাদের কর্মপ্রচেষ্টার সবকটি ক্ষেত্রেই যুক্ত হয়েছে এই দেশটি।

বেঙ্গালুরু’তে প্রথম তথ্য প্রযুক্তি পার্ক গড়ে তোলা থেকে শুরু করে ভারতের নবীন রাজধানী এবং অন্ধ্রপ্রদেশের অমরাবতী সৃষ্টির পেছনে সিঙ্গাপুরের অবদান অনস্বীকার্য।

আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাণিজ্যিক বিনিয়োগের ক্ষেত্র উন্নত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এই অংশীদারিত্বের সম্পর্কও উত্তরোত্তর প্রসার লাভ করবে।

কিন্তু, আমি সিঙ্গাপুরকে দেখি তার থেকেও বেশি কিছুর এক দেশ হিসেবে।

সিঙ্গাপুর যেভাবে তার চলার পথে সমস্ত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এসেছে তা থেকে ২১ শতকের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার কাজে আমি এই দেশটিকে আমাদের অংশীদার হিসেবে পেতে ইচ্ছুক। জল ও খাদ্য থেকে শুরু করে বিশুদ্ধ জ্বালানি ও স্থায়ী বাসস্থান সমস্ত ক্ষেত্রেই আমি সিঙ্গাপুর’কে দেখতে চাই আমাদের এক সহযোগী দেশ হিসেবে।

আমাদের এই অঞ্চলের অনেক কাজকর্মই বর্তমান শতকে প্রভাবিত হবে সিঙ্গাপুরের সাফল্যের নিরিখে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,

এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চল জুড়ে সুবিস্তৃত আমাদের এই এলাকা। আমরা এই অঞ্চলের এক নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে চলেছি, যার মধ্যে থাকবে মিলন ইতিহাস এবং পরস্পর সংযুক্ত ভাগ্যলিপি।

আমাদের এই অঞ্চল হল – স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির এক প্রসারিত এলাকা। দুটি সর্বাপেক্ষা জনবহুল দেশের অবস্থান এই অঞ্চলেই। আবার এই এলাকাতেই রয়েছে বিশ্বের বেশ কিছু বৃহত্তম অর্থনীতি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মেধা, বুদ্ধি, প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের মানুষের খোঁজ মেলে এই অঞ্চলেই।

বর্তমান যুগের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এশিয়ার পুনরুত্থান।

গত শতাব্দীর মধ্যভাগের অন্ধকার থেকে এশিয়াকে আলোয় উত্তরণের পথ দেখিয়েছিল জাপান। পরে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, কোরিয়া এবং চিনেও আমরা তার উদাহরণ লক্ষ্য করেছি।
এশিয়ার গতিময় সমৃদ্ধির আশাকে বর্তমানে জাগিয়ে রেখেছে ভারত।

অথচ, আমাদের এই অঞ্চলেই রয়েছে অমীমাংসিত বহু বিরোধ এবং বিবাদ-বিসংবাদ। দাবি ও প্রতিযোগিতার ঢেউ-ও উঠেছে সময়ে সময়ে। দেখা গেছে সেনাবাহিনীর শক্তি ও সন্ত্রাসবাদের কার্যকলাপ ব্যবহারের প্রবণতা। সমুদ্র এলাকায় অস্থিরতা এবং সাইবার জগতে অনিশ্চয়তা সংশয়ের ছায়া সময়ে সময়ে করে তুলেছে ঘনীভূত।

এই অঞ্চলটি এক বিশাল মহাসাগরের বুকে এক দ্বীপ মাত্র নয়, তার সীমানা ছাড়িয়ে প্রভাব ও যোগাযোগের মধ্য দিয়ে তা বিশ্বের অন্যত্রও বিস্তৃত।

আমাদের এই অঞ্চলে বহু দেশের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে নানা ধরণের বিরোধ ও বিপত্তি। এই অঞ্চলে জল, খাদ্য ও বাসস্থান সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলির পূর্ণ মোকাবিলা এখনও রয়ে গেছে অধরা। আবার এই অঞ্চলেই রয়ছে প্রকৃতির অনবদ্যদান এবং ঐতিহ্যের অতুলনীয় সম্পদ, যানিরন্তর বহন করে চলেছে দ্রুত উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাপ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব পড়েছে আমাদের কৃষি ব্যবস্থা ও দ্বীপগুলির পরিবেশের ওপরও।

ইতিহাসের বিভিন্ন কালে ও নানা সময়ে এশিয়া এর সমস্ত কিছুরই সাক্ষী থেকেছে। এশিয়া এখনও নানা রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এক স্থায়ী, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ অন্বেষণ করে বেড়াচ্ছে।

এই যাত্রাকে সফল করে তুলতেই হবে।

আর এই লক্ষ্যে ভারত ও সিঙ্গাপুর’কে কাজ করে যেতে হবে এক জোট হয়ে।

ভারতের ইতিহাস এশিয়ার সাথে এমনই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে, যা এক কথায় অবিচ্ছেদ্য।

অতীতে এমনও সময় গেছে, যখন আমরা অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছিলাম।

বর্তমানে আমরা ইতিহাসের সঙ্গে আবার নতুন করে যুক্ত হয়ে পড়েছি। আমরা ফিরে যাচ্ছি আবার ইতিহাসের দিকে। আমাদের সুপ্রাচীন স্থল ও জলপথের খোঁজে আমরা নিয়োজিত রয়েছি। সুপ্রাচীন সম্পর্কের স্বাভাবিক টানেই আমরা এই কাজে উৎসাহিত বোধ করেছি।

গত ১৮ মাসের সময়কালে আমার সরকার পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের তুলনায় এই অঞ্চলের দিকেই ফিরে তাকিয়েছে সবচেয়ে বেশি করে।

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ, অস্ট্রেলিয়া ও মঙ্গোলিয়া থেকে শুরু করে চিন, জাপান, কোরিয়া এবং আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গেআমরা নতুন করে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ভাগ করে নিতে চেয়েছি।

ভারত ও চিন-এর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত এবং পাঁচ সহস্রাব্দেরও বেশি নিরন্তর যোগাযোগ। সাধু-সন্ত এবং বাণিজ্যিক প্রতিনিধিরা আমাদের এই সম্পর্ককে লালন করে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন পারস্পরের সমাজ ব্যবস্থাকে।

সপ্তম শতাব্দীতে জুয়ানজাং-এর সফর থেকে শুরু করে ইতিহাসের যোগসূত্র আমি খুঁজে পেয়েছি। আমার জন্মস্থান গুজরাট থেকে চিনের জিয়ান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যোগাযোগের এই সেতু। সেখানেই গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট জি আমাকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।

সংস্কৃত, পালি এবং চিনা ভাষায় লিখিত ধর্মগ্রন্থে বিধৃত রয়েছে এক সুপ্রাচীন ইতিহাস। অতীতের বর্ণলিপি’তে খুঁজে পাওয়া যায় মহত্ত্ব ও উষ্ণতার মূল্যবান স্পর্শ। এরই ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে ভারতের বিখ্যাত তাঞ্চই শাড়িতে এবং সিনাপাত্তায়। অর্থাৎ, রেশমের সংস্কৃত প্রতিশব্দে।

বর্তমানে মানবজাতির দুই-পঞ্চমাংশ স্থান অধিকার করে রয়েছি আমরা। এই অঞ্চলেই রয়েছে বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল দুটি প্রধান অর্থনীতি। চিনের অর্থনৈতিক রূপান্তর আমাদের কাছে এক প্রেরণা-স্বরূপ।

ঐ দেশ যেভাবে তার অর্থনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে এবং ভারত যেভাবে নিজের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় যুক্ত করেছে গতি তাতে দুটি দেশই পরস্পরের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে শক্তি যোগাতে পারে। সেইসঙ্গে, এই অঞ্চলে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার রথচক্রকে।

একইসঙ্গে, এইভাবে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাণিজ্য থেকে জলবায়ু পরিবর্তন – সবকটি সাধারণ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারি সাফল্যের সঙ্গে।

সীমান্ত সমস্যা সহ অনেক বিতর্কিত বিষয় রয়েছেআমাদের মধ্যে। তা সত্ত্বেও আমাদের সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা রক্ষার কাজে আমরা সাফল্য অর্জন করেছি। কৌশলগত যোগাযোগকে আরও জোরদার করে তুলতে এবং আমাদের আলাপ-আলোচনা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা সম্মত হয়েছি। সন্ত্রাসবাদের হুমকির মোকাবিলায় আমরা পরস্পরের সঙ্গে যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, অন্যদিকে তেমনই অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভাগ করে নেওয়ার উপায় উদ্ভাবনের কাজে আমরা সচেষ্ট থেকেছি।

দুটি আত্মবিশ্বাসী জাতি হিসেবে চিন ও ভারত তাদের সম্পর্কের আপাতজটিলতা সত্ত্বেও গঠনমূলক কাজে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। পারস্পরিক স্বার্থ ও দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ দুটি দেশই।

চিনের উত্থান বিশ্ব অর্থনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে, বিশ্ব পর্যায়ে এবং আঞ্চলিক ক্ষেত্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বহির্বিশ্ব এখন তাকিয়ে রয়েছে চিনের দিকে।

ভারত ও জাপান পরস্পরকে আবিষ্কার করেছে পরবর্তীকালে। কিন্তু, আমার বন্ধুস্থানীয় প্রধানমন্ত্রী আবে কিওটো’র অপূর্ব তীর্থস্থানটিতে আমাদের সুপ্রাচীন আধ্যাত্মিক সম্পর্কের প্রতীকগুলি আমাকে দেখিয়েছিলেন।

১০০ বছরেরও বেশি আগে স্বামী বিবেকানন্দ গিয়ে পৌঁছেছিলেন জাপানের উপকূলে। ভারতীয় যুবসমাজকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন জাপানে যাওয়ার জন্য।

স্বাধীন ভারত তাঁর সেই উপদেশ মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছিল। আমাদের এই দুটি দেশের মধ্যে রয়েছে এমনই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক, যার মধ্যে মিশে রয়েছে পারস্পরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

ভারতের আধুনিকীকরণে জাপানের অবদান সম্ভবত বিশ্বের অন্য কোনও রাষ্ট্রের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। যানবাহন, মেট্রো এবং শিল্প সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে এই অবদানের স্বাক্ষর। ভারতে পরিবর্তন তথা রূপান্তরের কর্মযজ্ঞে জাপানের মতো এত বড় ভূমিকা বোধ হয় পৃথিবীর অন্য কোনও রাষ্ট্রই আর গ্রহণ করেনি।

বর্তমানে আমরা একসঙ্গে আরও অনেক কাজই করছি। এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমাদের এই সহযোগিতা কৌশলগত অংশীদারিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক বলেই আমরা মনে করি।

এক শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গড়ে উঠেছে আমাদের সম্পর্ক। কৌশলগত অংশীদারিত্বের এটিও একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

পূর্বের জন্য কর্মসূচি সম্পর্কে যে নীতি আমরা গ্রহণ করেছি তার মূল পুরোহিত আসিয়ান – এই মঞ্চটি। ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক যোগাযোগের মধ্য দিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ। সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় এবং আশা-আকাঙ্খা রূপায়ণের লক্ষ্যেই আমাদের এই সহযোগিতার প্রসার ও বিস্তৃতি।

এশিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলির সকলের সঙ্গেই আমরা গভীর করে তুলেছি আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার বন্ধনকে। আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি আঞ্চলিক সংহতিসাধনের কাজে নেতৃত্ব দান করছে। আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে আরও গতিশীল করে তোলার কাজে উন্মুখ হয়ে রয়েছে ভারত।

সমগ্র অঞ্চলেই অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসারে রয়েছে ভারতের প্রয়োজনীয় ছক ও কাঠামো। আঞ্চলিক অর্থনীতির সঙ্গে আমরা আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত হতে ইচ্ছুক। আমাদের অংশীদারিত্বের চুক্তির উন্নয়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে আঞ্চলিক পর্যায়ে এক সুসংবদ্ধ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির বিষয়টি দ্রুত সম্পাদন করা যায়।

আমাদের এই যুগ ও কালের পরিবর্তনের মুহূর্তে এই অঞ্চলে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল আমাদের সমবেত কর্মপ্রচেষ্টার আদর্শ ও রীতিনীতি স্থির করা।

এই লক্ষ্যেই পূর্ব এশিয়া শীর্ষ বৈঠক এবং অন্যান্য মঞ্চে আমাদের কাজ করতে হবে একযোগে ও একসঙ্গে। সহযোগিতার ভিত্তিতে সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমাদেরই স্থির করতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ। যার মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু শক্তি বা ক্ষমতা নয়, সকলের মিলিত শক্তি ও সম্মতিই প্রাধান্য পাবে।

শুধু এই অঞ্চলেই নয়, আমেরিকা ও রাশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া শীর্ষ বৈঠকে আমাদের সহযোগী বিভিন্ন দেশ – সকলের সঙ্গেই কাজ করতে ভারত আগ্রহী। মহাসাগর, মহাকাশ এবং সাইবার জগৎ-এ আমাদের সাধারণ স্বার্থগুলি যাতে সুরক্ষিত থাকে সেই লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিযোগিতার হুমকি নয়, সমৃদ্ধি ভাগ করে নেওয়ার আকুতি আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে এই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে।

সকলের কল্যাণের স্বার্থে সমুদ্র এলাকাকে সুরক্ষিত, নিরাপদ ও মুক্ত করে তুলতে ভারত তার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।

বর্তমান যুগ পরস্পর নির্ভরশীলতার যুগ। এই শতাব্দীর প্রতিশ্রুতি পূরণে সবকটি দেশকেই একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। যে চ্যালেঞ্জগুলি এখন আমাদের সামনে রয়েছে তা শুধুমাত্র কোনও দেশের নয়, এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী সবকটি দেশই। তাই, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এখন উপস্থিত।

সন্ত্রাসবাদ সমগ্র বিশ্বেই এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এর ছায়া প্রভাব ফেলেছে আমাদের সমাজ তথা সবকটি দেশের ওপরই। সন্ত্রাসের প্রকৃতি ও লক্ষ্য থেকে মুক্ত নয় কোনও দেশই। সন্ত্রাস শুধুমাত্র প্রাণহানিই ঘটায় না, অর্থনীতিকেও বিপর্যস্ত করে তোলে।

সমগ্র বিশ্বকে তাই একজোট হয়ে সোচ্চার হতে হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক, আইনি, সামরিক তথা গোয়েন্দা তৎপরতা – সবকটি ক্ষেত্রেই প্রসারিত করতে হবে আমাদের সহযোগিতাকে। প্রয়োজনে হয়তো আমাদের করতে হবে আরও অনেক, অনেক কিছুই।

সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন, আশ্রয়, অস্ত্রশস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে সাহায্য করলে যে কোনও দেশকেই তার জবাবদিহি করতে হবে।

বিশ্বের সমস্ত জাতিকেই একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে প্রত্যেককেই পৌঁছে যেতে হবে অন্যের কাছে। সন্ত্রাস থেকে ধর্মকে পৃথক করে তুলতে হবে। সমস্ত ধর্ম বিশ্বাসে আস্থা রয়েছে এ ধরণের মূল্যবোধকে আমাদের তুলে ধরা প্রয়োজন।

প্যারিসের শীর্ষ বৈঠক আসন্ন প্রায়। জলবায়ূ পরিবর্তন সম্পর্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নীতি অনুসরণ করে এই বৈঠকে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। এই অঞ্চলের জন্য, বিশেষত, ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির স্বার্থে এই কাজ খুবই জরুরি।

বন্ধুগণ,

আমাদের এই অঞ্চলে রয়েছে প্রবল প্রতিশ্রুতি ও সম্ভাবনা। আমরা জানি যে, শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে উত্তরণ আমাদের ঘটবেই।

তাই, বর্তমান শতককে এশিয়ার শতকে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন আমাদের সফল করে তুলতেই হবে।

সুপ্রাচীন সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রজ্ঞা রয়েছে আমাদের এশিয়ায়। এখানে রয়েছে যুবশক্তির উদ্যম ও উৎসাহ।

এশিয়ার প্রথম নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১০০ বছর আগে এই অঞ্চল সম্পর্কে এক ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। তাই, বর্তমানে সফল হতে চলেছে। কারণ, আত্মোপলব্ধির তাগিদে এশিয়া বর্তমানে দারুনভাবে আত্মসচেতন হয়ে উঠেছে।

সিঙ্গাপুর এমন একটি দেশ যেখানে এই অঞ্চলের সমস্ত স্রোতোধারা এসে মিলিত হয়েছে। সমস্ত বৈচিত্র্যের মিলন ঘটেছে এখানে। চিন্তাভাবনার সমন্বয় ঘটেছে এই দেশটিতেই। মানুষের আশা-আকাঙ্খা পল্লবিত হয়েছে এখানেই। তাই আমি অনুভব করি যে, এই দর্শন আমি উপলব্ধি করতে পারছি আগের থেকে অনেক অনেক গুণ বেশি।

ভারত যখন রূপান্তরের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে এবং স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ এক বিশ্ব সংসার গড়ে তুলতে সচেষ্ট রয়েছে তখন

আমাদের এই যাত্রাপথে এক বড় সঙ্গী হয়ে উঠবে সিঙ্গাপুর।

ধন্যবাদ।

PG/SKD/SB/S