প্রায় এক বছর আগে এই তাসখন্দ থেকেই শুরু হয়েছিল আমার মধ্যপ্রাচ্য সফর।
যে উদার ও আন্তরিক অভ্যর্থনা আমি লাভ করেছিলাম মাননীয় কারিমভ এবং উজবেকিস্তানের জনসাধারণের কাছ থেকে তা আজও আমার স্মৃতিতে অমলিন রয়েছে।
আজকের এই বৈঠকের চমৎকার উদ্যোগ-আয়োজন এবং আতিথেয়তার জন্য অন্যান্য সকলের সঙ্গে আমিও ধন্যবাদ জানাই মাননীয় কারিমভকে।
গত বছর প্রেসিডেন্ট পুতিন দক্ষতার সঙ্গে যে উফা শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন তাতে ভারতকে পূর্ণ সদস্যরূপে গ্রহণ করেছিলেন এসসিও-র নেতৃবৃন্দ।
এসসিও-র সঙ্গে ভারতের যুক্ত থাকার ক্ষেত্রে এটি ছিল এক বিশেষ দিকচিহ্ন।
আজ কিছুক্ষণ পরে আমরা আমাদের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত স্মারকলিপিটিতে স্বাক্ষরদান করব।
এর সঙ্গে সঙ্গেইআমরা সম্পূর্ণ করবএসসিও-তে ভারতের সদস্যপদে অন্তর্ভুক্তির যাবতীয় প্রক্রিয়া।
এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের।তাই সমগ্র বিশ্ববাসীর এক-ষষ্ঠাংশই অন্তর্ভুক্ত এসসিও পরিবারে।
এসসিও-তে ভারতের সদস্যপদে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্র এবং তাদের নেতৃবৃন্দ যে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছেন সেজন্য আমি তাঁদের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
এসসিও-তে এক নতুন সদস্য হিসেবে পাকিস্তানকে স্বাগত জানাই। স্বাগত জানাই বেলারুসকে এই সংগঠনের প্রথম পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করার জন্য।
মাননীয় নেতৃবৃন্দ,
এই অঞ্চলে ভারত নতুন নয়। শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে আপনাদের সঙ্গে। শুধুমাত্র ভৌগোলিক কারণেই আমরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হইনি। সংস্কৃতি, খাদ্যসম্ভার এবং বাণিজ্যিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে আমাদের পরস্পরের সমাজ ব্যবস্থা।
রাশিয়া, চিন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সঙ্গে আমাদের আধুনিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এইভাবেই।
মাননীয় নেতৃবৃন্দ,
ভারত পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এসসিও-র পরিধি এখন সুবিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ইউরোপ পর্যন্ত এবং উত্তর মেরু অঞ্চল থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত।
সমগ্র মানবজাতির ৪০ শতাংশের প্রতিনিধি হলাম আমরা। বিশ্বের সমগ্র যুবসমাজের ১০০ কোটি রয়েছেন আমাদের এই সদস্য দেশগুলিতে।
এই গোষ্ঠীগুলির কাছে ভারত বহন করে এনেছে এমন কিছু নীতি যা এসসিও-র দর্শনের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সঙ্গতিপূর্ণ।
ভারত বরাবরই ইউরেশিয়ার দেশ ও জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে।
এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে আমরা একে অপরের অংশীদার।
শিল্প, জ্বালানি এবং প্রাকৃতিক সহায়সম্পদের যে ঐশ্বর্য রয়েছে এসসিও-ভুক্ত দেশগুলির তা থেকে নিঃসন্দেহে লাভবান হবে ভারত।
বিনিময়ে, ভারতের বলিষ্ঠ অর্থনীতি এবং বিশাল বিপণন ক্ষেত্র এসসিও অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে আরও শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে।
বাণিজ্য, বিনিয়োগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মহাকাশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগক্ষেত্রে ভারতের শক্তি ও ক্ষমতা এসসিও দেশগুলির কাছে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক সুফল এনে দেবে।
সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মানবসম্পদের বিকাশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বৃদ্ধির কাজে আমরা একে অপরের অংশীদার হয়ে উঠতে পারি।
আমাদের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি যেহেতু পরস্পরের সঙ্গে মিলে যায়, সেই কারণে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদেরঅভিজ্ঞতা আপনাদের জাতীয় চাহিদা পূরণের পক্ষে খুবই প্রাসঙ্গিক।
মাননীয় নেতৃবৃন্দ,
একুশ শতকের বিশ্ব হল পরস্পর নির্ভরশীল। এই বিশ্ব-সমাজে রয়েছে অফুরন্ত অর্থনৈতিক সুযোগ ও সম্ভাবনা।
এই সংযোগ শুধুমাত্র ব্যবহারিক দিক থেকেই নয়।
আমরা আগ্রহী পণ্য, পরিষেবা, মূলধন এবং আমাদের জনগণের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরন্তর বিনিময় প্রচেষ্টায়।
কিন্তু শুধুমাত্র তাও যথেষ্ট নয়।
আমাদের এই অঞ্চলের প্রয়োজন পৃথিবীর অন্যান্য অংশের সঙ্গে রেল, সড়ক ও আকাশপথে যোগাযোগকে আরও নিবিড় করে তোলা।
এসসিও-র দেশগুলির মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্য, পরিবহণ, জ্বালানি, ডিজিটাল শক্তি এবং জনসাধারণের পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেভারত হয়ে উঠতে পারে এক সফল অংশীদার।
আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডর, চাবাহার চুক্তি এবং আশগাবাত চুক্তি সম্পাদনের সিদ্ধান্তের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়েছে আমাদের এই ইচ্ছা ও অভিপ্রায়।
মাননীয় নেতৃবৃন্দ,
এসসিও-র সদস্যপদে ভারতের অন্তর্ভুক্তি এই অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে তুলতে সাহায্য করবে। এর নিরাপত্তাকেও তা আরও জোরদার করে তুলবে। ঘৃণা, হিংসা এবং সন্ত্রাসের উগ্র হুমকির হাত থেকে সমাজ ব্যবস্থাকে রক্ষা করবে আমাদের এই অংশীদারিত্বের সম্পর্ক।
এই লক্ষ্যেই ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবে এসসিও-র সদস্য দেশগুলির সঙ্গে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার সকল স্তরেই আমরা অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গে এক সম্মিলিত উদ্যোগও গ্রহণ করব।
এই একই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এক শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও স্বাধীন আফগানিস্তান গড়ে তোলা শুধুমাত্র প্রতিটি আফগান নাগরিকেরই ঐকান্তিক বাসনা নয়, সমগ্র এসসিও অঞ্চলের বৃহত্তর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যেও তা একান্ত জরুরি।
পরিশেষে, মিঃ চেয়ারম্যান,
আমি বিশেষভাবে আশাবাদী যে এসসিও দেশগুলির সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ আমাদের এমন এক অঞ্চল গড়ে তুলতে সাহায্য করবে :
যেখানে আমাদের মিলিত প্রচেষ্টা হয়ে উঠবে বিশ্বের অর্থনৈতিক অগ্রগতির এক চালিকাশক্তি; যে বিশ্ব হয়ে উঠবে অভ্যন্তরীণ দিক থেকে আরও স্থিতিশীল ও নিরাপদ; এবং ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হবে সদস্য দেশগুলি।
মাননীয় নেতৃবৃন্দ,
আগামী বছর সমান অংশীদার হিসেবেই আমরা অংশগ্রহণ করব আস্তানায় আয়োজিত এসসিও শীর্ষ বৈঠকে।
২০১৭ সালে কাজাখস্তানের নেতৃত্বে এসসিও-র সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি আমি।
যেভাবে আমাদের আতিথ্যের আয়োজন করেছেন সেজন্য উজবেকিস্তানের সরকার ও জনসাধারণকে আমি আরও একবার ধন্যবাদ জানাই। আজকের এই বৈঠককে সফল করে তোলার জন্য আমি অভিনন্দন জানাই মাননীয় কারিমভকে।
ধন্যবাদ।
PG/SKD/DM/S
SCO Summit leaders in Uzbekistan. pic.twitter.com/Ijs7gWUTIl
— PMO India (@PMOIndia) June 24, 2016
My remarks at the SCO Summit focused on the rich potential of what the SCO can achieve & how India will gain from the strengths of the SCO.
— Narendra Modi (@narendramodi) June 24, 2016
Highlighted the need to adopt zero tolerance to terror & the need for a comprehensive approach to fight terrorism at all levels.
— Narendra Modi (@narendramodi) June 24, 2016
India will be a productive partner in building strong trade, transport, energy, digital & people-to-people links. https://t.co/JICun9KRzs
— Narendra Modi (@narendramodi) June 24, 2016