Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল জাতীয় পুলিশ অ্যাকাডেমীতে আইপিএস শিক্ষানবিশদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল জাতীয় পুলিশ অ্যাকাডেমীতে আইপিএস শিক্ষানবিশদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়


নয়াদিল্লি, ৩১ জুলাই, ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল জাতীয় পুলিশ অ্যাকাডেমীতে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) –এর শিক্ষানবিশদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। এই উপলক্ষে তিনি শিক্ষানবিশ পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ ও বিভাগীয় প্রতিমন্ত্রী শ্রী নিত্যানন্দ রাই যোগ দেন।
শিক্ষানবিশ আধিকারিকদের সঙ্গে মতবিনিময় :
প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত খোসমেজাজে আইপিএস শিক্ষানবিশদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে শিক্ষানবিশদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পেশার বাইরে গিয়ে নতুন প্রজন্মের এই পুলিশ আধিকারিকদের প্রত্যাশা ও স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চান।
হরিয়ানায় আইআইটি রুড়কি থেকে উত্তীর্ণ অনুজ পালিওয়াল, যাঁকে কেরল ক্যাডারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত খোলা মনে কথা বলেন। শিক্ষানবিশ এই আধিকারিক প্রধানমন্ত্রীকে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বা অপরাধ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে জৈব প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বিকল্প বিষয়, সমাজ বিজ্ঞান সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, কেন এই পেশাকে সে বেছে নিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সঙ্গীতের বিষয়ে পালিওয়ালের যে আগ্রহ রয়েছে, তা তাঁকে পুলিশের কাজের বাইরে প্রেরণা যোগাতে পারে। এমনকি, সঙ্গীত তাঁকে আধিকারিক হিসাবে আরও ভালো কাজ করতেও প্রেরিত করতে পারে।
রাষ্ট্র বিজ্ঞান সহ আইন স্নাতক এবং সিভিল সার্ভিস অধ্যয়নে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বিষয় হিসাবে নেওয়া রোহন জগদীশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের কাজে ফিটনেসের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। রোহন বিগত বছরগুলিতে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে, সে সম্পর্কেও আলোচনা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তাঁর বাবাও কর্ণাটকে রাজ্য সরকারের আধিকারিক ছিলেন। আজ এই রাজ্য থেকেই আইপিএস অফিসার হতে চলেছেন।
মহারাষ্ট্র থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার গৌরব রামপ্রবেশ রাই-এর মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর দাবায় আগ্রহ সম্পর্কে কথা বলেন। তাঁর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, কিভাবে এই খেলা বাস্তবের মাটিতেও তাঁকে রণকৌশল স্থির করতে সাহায্য করে। গৌরবকে ছত্তিশগড় ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে উগ্র বাম প্রভাবিত অঞ্চল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে অভিনব চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি, আদিবাসী অঞ্চলগুলির সামাজিক উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গৌরবের মতো তরুণ আধিকারিকরা যুবসম্প্রদায়কে হিংসার পথে চালিত হওয়া থেকে দূরে রাখতে বড় ভূমিকা নিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মাওবাদী হিংসা কমানোর চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে, আদিবাসী এলাকাগুলিতে উন্নয়ন ও আস্থার নতুন সেতু সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে।
হরিয়ানা থেকে রাজস্থান ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া শিক্ষানবিশ রঞ্জিতা শর্মার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, প্রশিক্ষণের সময় তাঁর সাফল্য সম্পর্কে। উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রশিক্ষণপর্বে রঞ্জিতা সেরা শিক্ষানবিশী হওয়ার সম্মান পেয়েছেন। মাস কম্যুনিকেশনে তাঁর সাফল্য কিভাবে তাঁকে তাঁর কাজকর্মে সাহায্য করেছে, সে ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী জানতে চান। শ্রী মোদী বলেন, হরিয়ানা ও রাজস্থানে শিশুকন্যাদের সামাজিক কল্যাণে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি শিক্ষানবিশ এই আধিকারিককে যেখানে তাঁর পোস্টিং হবে, সেখানে প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা সময় কন্যাশিশুদেরকে দেওয়ার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশু কন্যাদের সঙ্গে কথা বলার ফলে তাদের মনেও আস্থার সঞ্চার হবে এবং তারা যাতে পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করা যাবে।
শিক্ষানবিশ আধিকারিক মিথিরাজ পি-কে তাঁর নিজের রাজ্য কেরল ক্যাডারেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ফটোগ্রাফিতে তাঁর যে আগ্রহ রয়েছে, তা অটুট রাখার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে আলোকচিত্র এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
পাঞ্জাব থেকে দন্ত চিকিৎসক নবজত সিমি’কে বিহার ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষানবিশ এই পুলিশ আধিকারিককে সংবেদনশীলতা ও করুণার সঙ্গে কোনও ভয়ের কাছে মাথা নত না করে তাঁর কর্তব্য পালনের পরামর্শ দেন। শ্রী মোদী আরও বলেন, তাঁর অন্তর্ভুক্তির ফলে অন্যান্য মহিলা আধিকারিকদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। এ প্রসঙ্গে শ্রী মোদী আরও বলেন, আমাদের কন্যাদের অংশগ্রহণ বাড়লে আখেরে পুলিশ বাহিনী আরও শক্তিশালী হবে।
আইআইটি খড়্গপুর থেকে এমটেক করা কোম্মি প্রতাপ শিবকিশোর’কে তাঁর নিজ রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে আর্থিক কারচুপি দমনে তাঁর অভিনব চিন্তাভাবনা নিয়ে কথা বলেন। তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগের ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত থাকার পরামর্শ দেন। তরুণ শিক্ষানবিশ আধিকারিকদের প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল সচেতনতা বাড়াতে ব্যক্তিগত পরামর্শ পাঠানোর পরামর্শ দেন।
মালদ্বীপ থেকে শিক্ষানবিশ আধিকারিক মহম্মদ নাজিমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন। মালদ্বীপবাসীর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার কথা প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে বিনিময় করেন। শ্রী মোদী বলেন, মালদ্বীপ কেবল ভারতের প্রতিবেশীই নয়, অত্যন্ত ভালো বন্ধু। ভারত এই দ্বীপরাষ্ট্রটিকে একটি পুলিশ অ্যাকাডেমী গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। প্রধানমন্ত্রী ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে সামাজিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথাও এই সূত্রে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ :
এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীর সূচনা হবে। গত ৭৫ বছরে পুলিশ সার্ভিসের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পুলিশ প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত পরিকাঠামোয় লক্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণা স্মরণে রাখার জন্য শিক্ষানবিশ আধিকারিকদের পরামর্শ দেন। শ্রী মোদী বলেন, ১৯৩০-১৯৪৭ পর্যন্ত সময়ে তরুণ প্রজন্ম সমবেতভাবে একটি উদ্দেশ্যকে অর্জন করতেই বদ্ধপরিকর হয়ে উঠেছিল। বর্তমান যুবসম্প্রদায়ের কাছ থেকেও ঐ একই অঙ্গীকার আশা করা হচ্ছে। সেই সময় তরুণরা ‘স্বরাজ’-এর জন্য লড়াই করেছিলেন; বর্তমান যুবাদেরকেও ‘সুরাজ্য’ প্রতিষ্ঠার জন্য অগ্রসর হতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষানবিশ আধিকারিকদের বলেন, যে সময়টিতে তাঁরা পেশায় প্রবেশ করছেন, সেই সময়ের গুরুত্বের কথা স্মরণে রাখতে বলেন। এ প্রসঙ্গে শ্রী মোদী আরও বলেন, ভারতে প্রায় প্রতিটি স্তরেই ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে বর্তমান সময়ের অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষানবিশ আধিকারিকদের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ২৫ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। কারণ, এই ২৫ বছরে ভারত স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ থেকে শতবর্ষে প্রবেশ করবে।
প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের সময় পুলিশ কর্মীদের সমস্ত বিষয়ে প্রস্তুত থাকার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, নতুন ধরনের অপরাধ দমনে আরও বেশি উদ্ভাবনমূলক পন্থা-পদ্ধতি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে শ্রী মোদী সাইবার নিরাপত্তার জন্য অভিনব প্রয়োগ রীতি, গবেষণা ও পন্থা-পদ্ধতি অবলম্বনের কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষানবিশ আধিকারিকদের বলেন, সাধারণ মানুষ তাঁদের থেকে সৎ আচরণ প্রত্যাশা করেন। তিনি শিক্ষানবিশ আধিকারিকদের তাঁদের সেবা ও কর্তব্যের মর্যাদার প্রতি না কেবল কার্যালয় বা সদর দপ্তরে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে বলেন, কাজের বাইরেও সেবার প্রতি সমান শ্রদ্ধা ও মর্যাদা অটুট রাখতে হবে। সমাজে আপনাদের ভূমিকা সম্পর্কে সদা সচেতন থাকতে হবে, আপনাদের মানুষের প্রতি বন্ধু মনোভাবাপন্ন মানসিকতা নিয়ে চলতে হবে। এমনকি, আপনাদের পোশাকের প্রতিও সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতে হবে, বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন।
এক ভারত – শ্রেষ্ঠ ভারতের পতাকা বাহক হিসাবে শিক্ষানবিশীদের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ সর্বাগ্রে – এই মন্ত্র সর্বদাই তাঁদের স্মরণে রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, তাঁদের সমস্ত কাজকর্মেও এই মানসিকতার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। প্রতিটি কাজকর্মে তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় প্রত্যাশার বিষয়গুলি স্মরণে রাখতে হবে।
শ্রী মোদী নতুন প্রজন্মের তরুণ মহিলা আধিকারিকের কথা উল্লেখ করে বলেন, পুলিশ বাহিনীতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে সবরকম প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পুলিশের সেবায় আমাদের কন্যারা কর্মদক্ষতা ও দায়বদ্ধতার এমন নিদর্শন রাখবেন, যা সমাজে করুণা ও সংবেদনশীলতার বিষয়গুলিকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে। তিনি জানান, ১০ লক্ষেরও বেশি জন সংখ্যাবিশিষ্ট শহরগুলিতে রাজ্যগুলি কমিশনার সিস্টেম পদ্ধতি চালু করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ইতিমধ্যেই ১৬টি শহরে এই পদ্ধতি চালু হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে আরও সুদক্ষ ও ভবিষ্যতমুখী করে তুলতে সংবেদনশীল হয়ে একযোগে কাজ করা প্রয়োজন।
মহামারীর সময় কর্তব্যরত অবস্থায় যে সমস্ত পুলিশ আধিকারিকরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কথা স্মরণ করে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। মহামারীর বিরুদ্ধে তাঁদের অবদানের কথাও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আসা পুলিশ আধিকারিক, যাঁরা এই পুলিশ অ্যাকাডেমীতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তা থেকে সেই দেশগুলির সঙ্গে ভারতের নৈকট্য ও গভীর সম্পর্কের কথাই প্রতিফলিত হয়। শ্রী মোদী বলেন, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ বা মরিশাস, প্রতিবেশী যে দেশই হোক না কেন, আমরা সকলের সঙ্গেই একই ধরনের সামাজিক মূল্যবোধ ভাগ করে নিই। আমরা একে-অপরের কঠিন সময়ে প্রয়োজনীয়তার সময় পাশে দাঁড়িয়েছি এবং যে কোনও ধরনের বিপর্যয় বা জটিল পরিস্থিতিতে সবার প্রথমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। করোনা মহামারীর সময়েও একই মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

CG/BD/SB