Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ

সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীরভাষণ


মায়ানমারেরসিতাগু আন্তর্জাতিক বৌদ্ধঅ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতাতথা আচার্য পরম শ্রদ্ধাভাজনডঃ আসিন ন্যানিসারা,

শ্রীলঙ্কারভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি মাননীয়াশ্রীমতী চন্দ্রিকা বন্দরনায়েককুমারতুঙ্গা,

জাপানেরবিদেশ মন্ত্রী মিঃ মিনোরুকিউচি,

পূজ্যশ্রী শ্রী রবিশঙ্করজি,

মন্ত্রিসভায়আমার সহকর্মী ডঃ মহেশ শর্মাও কিরেন রিজিজু,

বিবেকানন্দআন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশনেরঅধিকর্তা জেনারেল এন.সি. ভিজ,

জাপানেরদ্য টোকিও ফাউন্ডেশনের সভাপতিমিঃ মাসাহিরো আকিয়ামা,

লামালোবজাঙ্গ,

বিশিষ্টধর্মগুরু ও আধ্যাত্মিকনেতৃবৃন্দ, মহাসঙ্ঘেরবিশিষ্ট জন এবং ধর্মগুরুজন,
সংঘাতপরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতারওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধসম্মেলনে আজ আমি উপস্থিত থাকতেপেরে আনন্দিত।

বৌদ্ধধর্মই যেখানে জীবনের মূলঅনুপ্রেরণা সেখানকার কয়েকটিদেশের আধ্যাত্মিক নেতৃবৃন্দএবং বিদ্বজ্জনের এটি একটিবিশেষ মহাসম্মেলন।

আরওখুশি ও আনন্দের বিষয় যে, ভারতেবুদ্ধগয়ার মতো একটি স্থানেএই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।এই ধরণেরআলোচনাসভা অনুষ্ঠানেরআদর্শ একটি স্থানই হল ভারত।আমরা ভারতবাসীরা আরও গর্বিতযে, এইদেশ থেকেই গৌতম বুদ্ধেরবৌদ্ধবাদের বাণী ও আদর্শপ্রসার লাভ করেছে সমগ্র বিশ্বে।

গৌতমবুদ্ধের জীবন সেবা, সহমর্মিতাএবং নিঃসন্দেহে ত্যাগ ওআত্মোৎসর্গের এক অমোঘ শিক্ষা।সম্পন্ন পরিবারেই তাঁর জন্মহয়েছিল, দুঃখ-কষ্টবলতে কিছুই ছিল না। কিন্তু, সময়েরসঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, অসুস্থতা, জরাএবং মৃত্যু সম্পর্কে তাঁর একচেতনাবোধের উন্মেষ ঘটে।

পার্থিবসম্পদই যে জীবনের একমাত্রলক্ষ্য নয়, এইবিশ্বাসে তিনি ছিলেন স্থিরও অবিচল। মানুষে মানুষে সংঘাততাঁকে বিষন্ন করে তুলতো।অবশেষে, শান্তিও সহমর্মিতার এক সমাজ গঠনেরপথে তিনি ব্রতী হলেন। তখনকারদিনে সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলেধরার মতো সাহস ও আত্মপ্রত্যয়তাঁর ছিল। অবমাননাকর রীতিনীতিও ব্যবস্থার বাইরে বেরিয়েআসার জন্য তিনি ছিলেন উদগ্রীব।

গৌতমবুদ্ধ ছিলেন, একবৈপ্লবিক মানসিকতার অধিকারী।এমন এক বিশ্বাস তিনি মনে-প্রাণেলালন করতেন যেখানে মানুষইছিল মূল, অন্যআর কিছু নয়। মানুষের অন্তর্নিহিতঅস্তিত্ব ঐশ্বরিকতাকেই সূচিতকরে। আর এইভাবেই তিনি ঈশ্বরছাড়াই এমন এক ধর্মবিশ্বাসেরজন্ম দিলেন যেখানে ঐশ্বরিকতারসন্ধান বাইরে নয়, তাঅনুসন্ধান করতে হয় মানুষেরঅন্তরেই।’অপ্পদীপো ভবঃ’ (নিজেরআলো নিজেই জ্বালাও) – এইতিনটি মাত্র শব্দে গৌতম বুদ্ধমানুষকে জীবনে চলার পথে একবড় শিক্ষা দিয়ে গেছেন। মানুষেরদুঃখ-দুর্দশারমূলে যে নিষ্ঠুর দ্বন্দ্ব ওসংঘাত তা তাঁকে আঘাত দিত সবচেয়েবেশি। তাঁর বিশ্ব দর্শনেরঅবিচ্ছেদ্য অঙ্গই ছিল অহিংসা।

সংঘাতপরিহার, পরিবেশসচেতনতার প্রসার এবং মুক্তও আন্তরিক আলাপ-আলোচনা- মহাসম্মেলনেরএই তিনটি মূল বিষয় গৌতম বুদ্ধেরশিক্ষা ও বাণীরই সোচ্চার ঘোষণামাত্র।

এইতিনটি বিষয় পৃথক পৃথক মনে হলেওতা কোনওটিই কিন্তু অন্যেরথেকে বিচ্ছিন্ন নয় বরং তা হলপরস্পর নির্ভরশীল ও সম্পৃক্ত।

প্রথমবিষয়টিতে যে সংঘাত বা দ্বন্দ্বেরকথা বলা হয়েছে তা রয়েছে মানুষেমানুষে, বিভিন্নধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যেএবং জাতিতে জাতিতে। শুধু তাইনয়, দেশেরসঙ্গে বিদেশ এমনকি সমগ্রবিশ্বও সংঘাত ও দ্বন্দ্বদীর্ণ।অসহিষ্ণু বহিঃশত্রুরা একবিশাল ভূখন্ড অধিকার করেনিরপরাধ মানুষের ওপর বর্বরোচিতআক্রমণ চালায়।

দ্বিতীয়সংঘাত রয়েছে মানুষের সঙ্গেপ্রকৃতির, প্রকৃতিরসঙ্গে উন্নয়নের, এমনকিউন্নয়নের সঙ্গে বিজ্ঞানেরও।এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাত পরিহারকরতে প্রয়োজন আলাপ-আলোচনা।তবে, তাযেন কোনওভাবেই দেওয়া-নেওয়ারকোনও প্রস্তাবের মধ্যে আবদ্ধথাকে না।

ভোগেরক্ষেত্রে ব্যক্তির নৈতিকসংযম এবং পরিবেশ সচেতনতাসম্পর্কে মূল্যবোধ এশিয়ারদার্শনিক ঐতিহ্যের মধ্যেইনিহিত, বিশেষতহিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যেইতার মূল প্রোথিত।

কনফুসিয়াসবাদ, তাওবাদ ইত্যাদির মতোই বৌদ্ধবাদেওপরিবেশ রক্ষায় দায়িত্বশীলতারওপর জোর দেওয়া হয়েছে। মাতৃবসুন্ধরা সম্পর্কে হিন্দুও বৌদ্ধবাদে যে সুস্পষ্ট মতরয়েছে তার পথ অনুসরণ করেইপ্রয়োজনীয় পরিবর্তনের বিষয়টিসম্পর্কে চিন্তাভাবনা করাযেতে পারে।

জলবায়ুপরিবর্তন সমগ্র বিশ্বের কাছেইএকটি বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্যপ্রয়োজন মানুষের সমষ্টিগতউদ্যোগ এবং সুনির্দিষ্টপদক্ষেপ। ভারতে মানুষেরবিশ্বাস ও প্রকৃতির মধ্যেসেই প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছেএক গভীর সম্পর্ক। পরিবেশ ওবৌদ্ধবাদ নিবিড়ভাবেই পরস্পরেরসঙ্গে সম্পর্কিত।

বৌদ্ধঐতিহ্যের যে ঐতিহাসিক ওসাংস্কৃতিক বহিঃপ্রকাশ দেখাযায়, তাপ্রকৃতির সঙ্গে একাত্মবোধেরইনামান্তর মাত্র। কারণ, বৌদ্ধধর্মমত অনুসারে, কোনওকিছুরই অস্তিত্ব পৃথক নয়।পরিবেশের মধ্যে অপবিত্রতাথাকলে তা মানুষের মনকেও কলুষিতকরে। একইভাবে মানুষের অশুদ্ধমন পরিবেশ দূষণের কারণ ঘটায়।তাই, পরিবেশকেদূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনআত্মশুদ্ধি।

পরিবেশগতসমস্যা প্রকৃতপক্ষে মানুষেরমনের ভারসাম্যহীনতারই একধরণের প্রতিফলন। ভগবান বুদ্ধএই কারণে প্রাকৃতিক সম্পদসংরক্ষণের বিষয়টিতে বিশেষগুরুত্ব দিয়েছিলেন। জল সংরক্ষণেরউপায় তিনি নির্দেশ করেছিলেনএবং জলসম্পদ দূষিত না করারউপদেশ দিয়েছিলেন ধর্মগুরুদের।প্রকৃতি, অরণ্য, গাছপালাএবং সব কিছুই ভালো রাখা ও ভালোথাকার এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছেভগবান বুদ্ধের শিক্ষাদর্শে।

আমি’Convenient Action’ নামেএকটিবই লিখেছিলাম, যেটিপ্রকাশ করেন ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতিডঃ এ.পি.জে. আব্দুলকালাম। ঐ গ্রন্থে মুখ্যমন্ত্রীহিসেবে প্রকৃতি সম্পর্কেআমার কাজকর্মের অভিজ্ঞতারকথা লিপিবদ্ধ করেছিলাম।

ব্যক্তিগতভাবেবেদ সাহিত্য থেকেই মানুষ ওপ্রকৃতির ঘনিষ্ঠ বন্ধন সম্পর্কেআমি শিক্ষালাভ করি। মহাত্মাগান্ধীর’Doctrine of Trusteeship’ সম্পর্কেআমরা সকলেই সুবিদিত। এই আলোচনারপরিপ্রেক্ষিতে আমার মনে হয়সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদকেভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যসুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব রয়েছেবর্তমান প্রজন্মেরই। বিষয়টিতাই শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনেরমধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এটিকেবলা চলে প্রকৃতির প্রতিন্যায়বিচার। আর একথা আমি বলবোবারে বারেই।

আমারমতে, জলবায়ুপরিবর্তনের ফলে দরিদ্র ওঅবহেলিত মানুষই ক্ষতিগ্রস্তহয়েছে সবেচেয়ে বেশি। যখনপ্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়, এইধরণের মানুষরাই তার শিকারহয়ে পড়ে। বন্যার সময় তারা হয়গৃহহীন, ভূমিকম্পেতারা হয় নিরাশ্রয়, খরামরশুমে তারা থাকে অভুক্ত এবংপ্রচন্ড শীত ও ঠান্ডায় তারাকষ্ট ভোগ করে সবচেয়ে বেশি।

জলবায়ুপরিবর্তনের ফলে মানুষ যেভাবেদুর্দশার সম্মুখীন হয়ে পড়ছেতাতে আমরা চুপ করে বসে থাকতেপারি না। সেই কারণেই আমি বিশ্বাসকরি যে, আমাদেরদৃষ্টিভঙ্গী জলবায়ু পরিবর্তনেরথেকেও জলবায়ু সম্পর্কিতন্যায়-বিচারেরদিকে আবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।

মহাসম্মেলনেতৃতীয় বিষয়টি হল, আলাপ-আলোচনারপ্রসার ও অগ্রগতি। এজন্যআদর্শবাদের থেকেও বেশি প্রয়োজনদার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির।উপযুক্ত আলাপ-আলোচনারপথ প্রশস্ত না হলে সংঘাতপরিহারের দুটি বিষয়ের কোনওটিইসম্ভব হবে না।

সংঘাতপরিহারের জন্য আমরা যে সমস্তপ্রস্তাব গ্রহণ করে থাকি তারসীমাবদ্ধতা দিনদিনই প্রকটহয়ে পড়ছে। হিংসা ও রক্তপাতবন্ধে আমাদের প্রয়োজন সমবেতভাবেএক কৌশলগত প্রচেষ্টা চালিয়েযাওয়া। তাই, বিশ্বযে আজ বৌদ্ধবাদের প্রতি বেশিকরে আগ্রহী হয়ে উঠছে, তাতেঅবাক হওয়ার কিছুই নেই, বরংএশিয়ার ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ওমূল্যবোধেরই তা এক ধরণেরস্বীকৃতি এবং এই পথ ধরেই সংঘাতপরিহার তথা আদর্শবাদ থেকেদার্শনিকতায় উত্তরণ সম্ভব।

এইসম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্যসংঘাত পরিহার ও পরিবেশ সচেতনতাএই দুটি বিষয় রয়েছে আলাপ-আলোচনারমূল কেন্দ্রে। অন্যের সাথেআমাদের আদর্শগত ফারাক- এরমধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ নারেখে বরং দার্শনিকতায় বেশিউত্তরণই আমাদের প্রয়োজন।ধর্মীয় বা ধর্মনিরপেক্ষ যেকোনও ধরণের আদর্শবাদ থেকেইদার্শনিকতার দিকে আমাদেরদৃষ্টি ফেরানো কেন প্রয়োজনতা আমাদের বোঝাতে হবে সমগ্রবিশ্ববাসীকে। গত বছর রাষ্ট্রসঙ্ঘেভাষণ দান কালে একথা সংক্ষেপেউল্লেখও করেছিলাম। একদিন পরেবৈদেশিক সম্পর্ক পরিষদে আমিযখন বক্তব্য পেশ করছিলাম, তখনএই বিষয়টি বিশদভাবে ব্যাখ্যাওকরেছিলাম। আদর্শবাদ একদিকথেকে সীমাবদ্ধ, কিন্তুদার্শনিকতার কোনও সীমা নেই।দর্শন তাই শুধুমাত্র মুক্তআলোচনার পথই প্রশস্থ করে দেয়না বরং আলাপ-আলোচনারমাধ্যমে এক শাশ্বত সত্যকে তাখুঁজে পেতে চায়। সমগ্র উপনিষদসাহিত্যই এই আলোচনার একআকরগ্রন্থ। আদর্শবাদ অপ্রশমিতসত্যেই বিশ্বাসী। ফলে, আলাপ-আলোচনারদ্বার সেখানে রুদ্ধ হয়ে পড়ে।আর এর ফলে, হিংসারপথ উন্মুক্ত হওয়ার আশঙ্কাথেকে যায়। অন্যদিকে, আলাপ-আলোচনারমাধ্যমে সেই পথ পরিহারেরচেষ্টা করে দার্শনিকতা বাদর্শনবাদ।

সুতরাং, হিন্দুও বৌদ্ধ ধর্ম শুধুমাত্রবিশ্বাসের মধ্যেই আবদ্ধ নয়, বরংদার্শনিকতার মধ্য দিয়ে তাক্রমপ্রসারিত।

আমিদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আলাপ-আলোচনারমাধ্যমেই সমস্ত সমস্যার সমাধানসম্ভব। আগে মানুষ বিশ্বাসকরতো যে, যারজোর বেশি, সেইবেশি ক্ষমতাশালী। কিন্তুআজকের দিনে চিন্তাভাবনা এবংফলপ্রসূ আলাপ-আলোচনাইহল ক্ষমতার মূল উৎস। যুদ্ধেরবিরূপ প্রতিক্রিয়া ও ক্ষয়ক্ষতিআমরা লক্ষ্য করেছি। বিংশশতাব্দীর প্রথমার্ধে দুটিবিশ্ব যুদ্ধের ভয়ঙ্করতা মানুষলক্ষ্য করেছে।

বর্তমানে, যুদ্ধবিগ্রহের প্রকৃতি ক্রমশ বদলেযাচ্ছে এবং বিপদের আশঙ্কাওউত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।বহু সৈন্য-সামন্তনিয়ে যে যুদ্ধ চলতো দিনের পরদিন এখন মুহূর্তের মধ্যে একটিমাত্র বোতাম টিপেই সেই যুদ্ধযে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে।

আমাদেরসকলেরই আশু কর্তব্য হল, ভবিষ্যতপ্রজন্মের জন্য শান্তি, মর্যাদাএবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধারভিত্তিতে গড়ে ওঠা এক জীবনসুনিশ্চিত করা। সংঘাতমুক্তএক বিশ্ব গড়ে তোলার কাজ শুরুকরা উচিত আমাদেরই। এই লক্ষ্যেবৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের অবদানঅনস্বীকার্য।

আমরাআলোচনার কথা বলি, যেআলোচনা মানুষের মনে ক্রোধ বাহিংসার জন্ম দেয় না। এই ধরণেরএক আলোচনারই সবচেয়ে বড় উদাহরণহল, আদিশঙ্করাচার্য এবং মন্ডন মিশ্রেরমধ্যে তর্ক ও বিতর্কের এককাহিনী।

আধুনিকযুগে এই ঘটনাটি বলার মতো এবংমনে রাখার মতো। আদি শঙ্করাছিলেন, বেদান্তবিশ্বাসী এক তরুণ, যিনিতুচ্ছ রীতিনীতি বা আচার-আচরণকেগ্রাহ্য করতেন না। অন্যদিকে, মন্ডনমিশ্র ছিলেন, একপ্রবীন বিদগ্ধ পণ্ডিত, যিনিআচার-আচরণও রীতিনীতিতে ছিলেন দৃঢ়বিশ্বাসী। এমনকি, পশুবলিবা প্রাণী হত্যার বিষয়টিওতিনি সমর্থন করতেন। আদি শঙ্করারীতিনীতি ও আচার-আচরণেরপ্রবক্তা এই প্রবীন পণ্ডিতেরসঙ্গে তর্ক ও আলোচনায় প্রতিষ্ঠাকরতে চেয়েছিলেন যে, মুক্তিবা মোক্ষ লাভের জন্য আচার-আচরণেরকোনও প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে, মন্ডনমিশ্র এই যুক্তি ভ্রান্ত বলেপ্রমাণ করতে চেয়েছিলেন।

এইভাবেইপ্রাচীন ভারতে বিদগ্ধ পন্ডিতজনবিতর্কিত স্পর্শকাতর বিষয়গুলিআলাপ-আলোচনারমাধ্যমে নিষ্পত্তি করতেন।আদি শঙ্করা এবং মন্ডন মিশ্রতর্কে মিলিত হলেন এবং শেষপর্যন্ত জয়ী হলেন শঙ্করাই।কিন্তু, গুরুত্বপূর্ণবিষয়টি হল- তর্কনয়, যেপরিবেশে তর্ক অনুষ্ঠিত হলসেটি। এই কাহিনীটি নিঃসন্দেহেচিত্তাকর্ষক। সর্ব যুগে এবংসর্বকালে মানুষের কাছে এইতর্কের ঘটনাটি বিশেষভাবেস্মরণীয়।
স্থিরহয় তর্কে মন্ডন মিশ্র যদিপরাজিত হন তা হলে তিনি গৃহস্থজীবন পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করবেন। অন্যদিকে, আদিশঙ্করা যদি তর্কে পরাভূত হন, তিনিতাঁর সন্ন্যাস জীবন ত্যাগকরবেন এবং বিবাহ করে গৃহস্থেরজীবন যাপন করবেন। মন্ডন মিশ্রআদি শঙ্করা’কেপ্রস্তাব দিলেন, তাঁরইচ্ছা মতো কোনও একজনকে পণ বাবাজি রাখতে। আদি শঙ্করা পণরাখলেন, মন্ডনমিশ্রেরই স্ত্রী’কে, যিনিনিজেও ছিলেন এক বিদূষী মহিলা।স্থির হল, মন্ডনমিশ্র পরাজিত হলে তিনি তাঁরস্ত্রী’কেহারাবেন। কিন্তু, মন্ডনমিশ্রের স্ত্রী দু’জনকেইসদ্য ফোটা ফুলে গাঁথা মালাপরে তর্কে প্রবৃত্ত হওয়ারআহ্বান জানালেন। তিনি বললেন, যাঁরমালা সতেজভাব হারাবে তাঁকেইপরাজয় স্বীকার করে নিতে হবে।কারণ, তর্কেরসময় কেউ যদি ক্রোধের বশবর্তীহয়ে পড়েন তা হলে তাঁর শরীরথেকে তাপের সৃষ্টি হয় ফলে তাঁরগলার মালা তাপে দগ্ধ হয়েতারসজীবতা হারায়। মানুষের মনেক্রোধ জন্ম নেওয়ার অর্থই হলতাঁর পরাজয়। এই যুক্তিতে মন্ডনমিশ্র’কেশেষ পর্যন্ত পরাজয় স্বীকারকরতে হল। তিনি সন্ন্যাস ধর্মগ্রহণ করলেন এবং শঙ্করা’কেতাঁর গুরু বলে স্বীকার করলেন।এই ঘটনাই সেই আলাপ-আলোচনারগুরুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে, যারমধ্যে রাগ বা ক্রোধের কোনওস্থান নেই।

আজকেরএই মহাসম্মেলনে বিভিন্ন জাতিও ভিন্ন জীবনশৈলীর মানুষেরএকত্র সমাবেশ ঘটেছে। কিন্তু, সভ্যতারমূল থেকে গেছে আমাদের সকলেরসম্মিলিত দর্শন, ইতিহাসও ঐতিহ্যের মধ্যে। আর এখানেইআমরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।বৌদ্ধ ধর্ম এবং বৌদ্ধ ঐতিহ্য, বন্ধনও সংহতিকে নিশ্চিত করে।

সকলেইবলেন, বর্তমানশতক হতে চলেছে এশিয়ার শতক।কিন্তু, গৌতমবুদ্ধের পথ ও আদর্শ অনুসরণনা করলে এই শতক কখনই এশিয়ারশতকে পরিণত হতে পারে না।

ভগবানবুদ্ধ আধ্যাত্মিক দিক থেকেআমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবেভালো থাকার পথের সন্ধান দিয়েছেন।ঠিক যেভাবে বিশ্ব বাণিজ্যআমাদের মিলিত অর্থনৈতিকসমৃদ্ধি এবং ডিজিটাল ইন্টারনেটআমাদের মিলিত মেধাশক্তিরপথনির্দেশ করেছে।

একবিংশশতাব্দীতে দেশ, ধর্মবিশ্বাস, রাজনৈতিকআদর্শ সমস্ত কিছুর সীমা অতিক্রমকরে ভগবান বুদ্ধ মানুষের মধ্যেসমঝোতা, ধৈর্য, সহনশীলতাও সহমর্মিতার এক সেতুবন্ধনেরভূমিকা পালন করে চলেছেন।
আপনারাআজ এমন এক দেশে উপস্থিত যা তারবৌদ্ধ ঐতিহ্যের জন্য অত্যন্তগর্বিত। গুজরাটে আমার নিজেরশহর ভাদনগর হল সেই সমস্ত শহরেরইএকটি যেখানে বৌদ্ধ নিদর্শনছড়িয়ে রয়েছে এবং চিনের পরিব্রাজকজুয়াং জাং এখানে ভ্রমণ করেগেছেন।

বৌদ্ধধর্মের পবিত্র স্থান ছড়িয়েরয়েছে আমাদের এই সার্ক অঞ্চলে: লুম্বিনি, বুদ্ধগয়া, সারনাথ, কুশিনগরইত্যাদি ইত্যাদি। এশিয়ারবিভিন্ন দেশ থেকে তীর্থযাত্রীও পরিব্রাজকরা এই স্থানগুলিতেআসেন। চিন, কোরিয়া, জাপান, মঙ্গোলিয়াএবং রাশিয়ার পর্যটকরাওআসেনএই স্থানগুলি দর্শন করতে।

ভারতেবৌদ্ধ ঐতিহ্যের বিকাশ ও উন্নয়নেআমার সরকার সম্ভাব্য সকল রকমপ্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে।এশিয়ায় বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে তুলেধরার কাজে ভারত রয়েছে নেতৃত্বেরভূমিকায়। তিনদিনের এই সম্মেলনএই প্রচেষ্টারই একটি অঙ্গ।আমি আশা করি যে, আগামীতিনটি দিন মূল্যবান ও প্রাণবন্তআলোচনায় মুখর হয়ে উঠবে, যাতেআমরা একত্রে বসে শান্তি, সংঘাতপরিহার এবং দূষণমুক্ত সবুজপৃথিবীর অন্বেষণে সচেষ্টথাকবো।

আগামীদিনে বুদ্ধগয়ায় আপনাদের সকলেরআমন্ত্রণ।

ধন্যবাদ।

PG/SKD/SB/S/