নয়াদিল্লি, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪
মাননীয় সুধীবৃন্দ,
আজকের বৈঠকের সফল আয়োজনের জন্য রাষ্ট্রপতি পুতিনকে আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে পরিবর্ধিত ব্রিকস পরিবারে এই প্রথম আমরা বৈঠক করছি। ব্রিকস পরিবারের নতুন সদস্যদের আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই।
বিগত এক বছর ব্রিকস-এর সফল পৌরোহিত্যের জন্য আমি অভিনন্দন জানাই রাষ্ট্রপতি পুতিনকে।
বন্ধুরা,
আমাদের বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সারা বিশ্ব নানান সংঘাত, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সন্ত্রাসবাদের সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে। উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিম বিভাজন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সারা বিশ্বে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং খাদ্য, শক্তি, স্বাস্থ্য ও জল সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিশ্বের প্রতিটি দেশের সামনেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
প্রযুক্তির এই যুগে সাইবার ডিপফেক কিংবা ভুয়ো তথ্য বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে ব্রিকস-এর তরফে বিশেষ উদ্যোগ প্রার্থনীয়। আমি বিশ্বাস করি, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক এই মঞ্চ এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে সক্ষম হবে।
আমাদের উদ্যোগ মানব-কেন্দ্রিক হওয়া দরকার। বিশ্বের সামনে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে ব্রিকস বিভেদদীর্ণ কোনো সংগঠন নয়, তা কাজ করে মানবতার স্বার্থে।
আমরা আলোচনা ও কূটনীতির পক্ষে, যুদ্ধের পক্ষে নয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা যেভাবে কোভিডের সমস্যার মোকাবিলা করেছি, ঠিক সেভাবেই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ তৈরি করে যেতে পারব। সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিদের তথ্য যোগানের মোকাবিলায় আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে দ্বিচারিতার কোনো জায়গা নেই। প্রতিটি দেশেই যুবাদের মৌলবাদের জাঁতাকলে পড়া আটকানো জরুরি।
রাষ্ট্রসঙ্ঘে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা সংক্রান্ত একটি সার্বিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলায় কাজ করতে হবে একযোগে।
ঠিক একইভাবে সাইবার নিরাপত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিরাপদ প্রয়োগ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিধির প্রশ্নেও কাজ করতে হবে একযোগে।
বন্ধুরা,
ব্রিকস-এ নতুন অংশীদার দেশগুলিকে স্বাগত জানাতে ভারত প্রস্তুত।
সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে সহমতের ভিত্তিতে এবং ব্রিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মতামতকে মর্যাদা দিতে হবে। জোহানেসবার্গ শিখর সম্মেলনে গৃহীত প্রণালী ও মানের বিষয়ে সব সদস্য ও অংশীদার দেশগুলির দায়বদ্ধ থাকা জরুরি।
বন্ধুরা,
ব্রিকস এমনই একটি সংগঠন যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হতে চায়। সারা বিশ্বের সামনে এক্ষেত্রে উদাহরণ তুলে ধরে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কারের দাবিতে একযোগে আওয়াজ তুলতে হবে আমাদের।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ, বিভিন্ন বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্ক এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংস্কারে সময়-নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগোতে হবে।
ব্রিকস-এর কাজকর্ম এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে এই ধারণা না গড়ে ওঠে যে এই মঞ্চ আন্তর্জাতিক নানা সংগঠনের পরিবর্ত হতে চায়, বরং এই বার্তা দিতে হবে যে ব্রিকস আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সংস্কারের পক্ষে।
দক্ষিণ বিশ্বের দেশগুলির আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা মনে রাখতে হবে আমাদের। ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিট কিংবা জি-২০-র সভাপতিত্বের সময় ভারত এইসব দেশের কন্ঠস্বর পৌঁছে দিয়েছে আন্তর্জাতিক আঙিনায়। ব্রিকস-এর মঞ্চেও এই ধরনের উদ্যোগ আমাকে আনন্দিত করেছে। গত বছর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ব্রিকস-এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।
এই বছরেও দক্ষিণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে রাশিয়া।
বন্ধুরা,
বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী ও মতাদর্শের সম্মিলনে গঠিত ব্রিকস সারা বিশ্বের সামনে ইতিবাচক প্রেরণার এক বড় উৎস।
আমাদের বৈচিত্র্য, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহমতের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ হল আমাদের সহযোগিতার ভিত্তি। সেইজন্যই অন্য দেশগুলিও ব্রিকস-এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। আমি প্রত্যয়ী যে, আগামীদিনে এই অসাধারণ মঞ্চকে আমরা আলোচনা, সহযোগিতা ও সমন্বয়ের উল্লেখযোগ্য এক মাধ্যম করে তুলতে পারব।
এক্ষেত্রে ব্রিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ভারত সব সময়েই তার দায়িত্ব পালন করে যাবে।
আরও একবার আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে
PG/AC/DM