আপনাদের সবাইকে গুরু পরবের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। হয়তো গুরু নানক দেবজির আশীর্বাদ, মহান গুরু পরম্পরার আশীর্বাদেই আমার মতো একজন সাধারণ মানুষের হাতে কিছু পবিত্র দায়িত্ব সম্পাদনের সৌভাগ্য হয়েছে। যা কিছু ভাল হচ্ছে সবই গুরুজনদের, সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদের ফলেই হচ্ছে। আমরা কিছুই না, সেজন্যে সম্মানের যোগ্যও নয়, সম্মানের যোগ্য সেই সব মহাপুরুষ, সেই সমস্ত গুরুজন যাঁরা শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে ত্যাগ, তপস্যার মহান পরম্পরায় দেশকে গড়ে তুলেছেন, দেশকে রক্ষা করেছেন।
আমার সৌভাগ্য যে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আর তার আগে যখন গুজরাটে ভয়ংকর ভূমিকম্প হয়েছিল তা কচ্ছের লখপতে যেখানে একসময় গুরুনানক দেবজি ছিলেন এবং আজও সেখানে গুরুনানক দেবজির পাদুকা রাখা আছে। ভূমিকম্পের সময় সেই গুরুদ্বার ভেঙ্গে পড়েছিল। আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর, আমার প্রথম কাজ ছিল ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া কচ্ছের পুনঃ নির্মান। সেই বিধ্বস্ত গুরুদ্বারও সেই তালিকায় ছিল। আর সেই সময় হয়তো এই গুরু-পরম্পরার আশীর্বাদে আমি আদিষ্ট হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আগে যেরকম ছিল, যেরকম মাটি ও অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করা হয়েছিল সেরকম উপাদান দিয়েই পুনঃনির্মানের কাজ করাবো, সেরকম দক্ষ বাস্তুকার ও রাজমিস্ত্রীদের খুঁজে এনে নিয়োগ করে কাজ করিয়েছি। আজ সেই গুরুদ্বার বিশ্ব-মানচিত্রে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ রূপে স্থান করে নিয়েছে। আমরা যখন উড়ান যোজনা … উড়ান যোজনার মাধ্যমে দেশে বিমান যাত্রা সুলভ করার জন্যে প্রকল্প গড়ে তুলছি, তখন আরেকবার আদিষ্ট হলাম, আর সিদ্ধান্ত নিলাম যে ওই উড়ান যোজনার সূত্রপাত যে দুটি শহর থেকে করবো, তার মধ্যে একটি নান্দেড সাহিব। আমার সৌভাগ্য যে নান্দেড সাহিবের আশীর্বাদ আজও আমার উপর বর্ষিত হয়ে চলেছে। আমি অনেক বছর ধরে পাঞ্জাবে সংগঠনের কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেজন্যে গুজরাটে থেকে গেলে যা জানতে পারতাম না, আপনাদের মধ্যে থেকে, বাদল সাহেবের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্টতার ফলে অনেক কিছু জেনেছি, বুঝেছি! আমি সবসময়ই অনুভব করতাম যে গুজরাটের সঙ্গে পাঞ্জাবের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে, কারণ ‘পাঁচ প্যায়ারে’র মধ্যে একজন ছিলেন গুজরাটের দ্বারকার মানুষ। সেজন্য দ্বারকা যে জেলার মধ্যে পড়ে সেই জেলার জামনগরে আমরা গুরু গোবিন্দ সিংহের নামে একটি বড় হাসপাতাল গড়ে তুলেছি। আমি মনে করি, দেশের প্রত্যেক প্রান্তে মহাপুরুষেরা দেশকে একতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে গেছেন, বিশেষ করে গুরু নানক দেবজির বাণীতে আমাদের দেশের সম্পূর্ণ সাংস্কৃতিক পরম্পরার সারসংক্ষেপ পাওয়া যায়। গুরুবাণী আমাদের মনকে যে অনুভবে সিক্ত করে তা সরলভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে। আমাদের পরস্পরকে আপন ভাবতে শেখায়। সমাজে উঁচুনিচু ভেদভাবের যে সমস্যা ছিল, কুসংস্কার ছিল, সেগুলিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে সরলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যাতে সমাজে সবরকম ভেদভাব দূর হয়। একসূত্রে সকলকে বেঁধে সকলের মনে ইশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আজও দেশের ঐক্য ও সংহতির জন্যে গুরুবাণী, গুরু নানকদেবজির বাণী থেকে বড় কিছু আমাদের কাছে নেই।
আমি মনে করি, করতারপুর নিয়ে এই সিদ্ধান্ত, ১৯৪৭সালে দেশবিভাগের ফলে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, বা পরবর্তী সময়ে উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যে শত্রুতা তৈরি হয়েছে, …এর সমাধান কবে হবে তা সময় বলবে। কিন্তু মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক একটি বড় শক্তি। কে ভেবেছিল যে একদিন বার্লিনের দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলা যাবে! হয়তো গুরুনানক দেবজির আশীর্বাদে এই করতারপুর করিডোর, নিছকই করিডোর না থেকে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় করার একটি বড় উপায় হয়ে উঠবে। গুরুবাণীর একেকটি ‘শবদ’(শবদ = স্তোত্র) সেক্ষেত্রে আমাদের শক্তিপ্রদান করবে। আমরা তো ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ মন্ত্র মেনে চলা মানুষ, গোটা বিশ্বকে একটি পরিবার মনে করা আদর্শ মেনে বড় হয়ে ওঠা মানুষ, আমরা কারও খারাপ চাই না! আর কল্পনা করুন, সাড়ে পাঁচশো বছর আগে যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল না, সেই সময়ে গুরুনানক দেবজি ভারতের সমস্ত প্রান্তে পদব্রজে গিয়েছেন; কোথায় আসাম আর কোথায় কচ্ছ! পদযাত্রার মাধ্যমে তিনি একরকম গোটা ভারতকে নিজের মধ্যে সমাহিত করে নিয়েছিলেন। এহেন সাধনা, এহেন তপস্যা এবং আজকের এই গুরুপরব আমাদের সকলের জন্য একটি নতুন প্রেরণা, নতুন প্রাণশক্তি, নতুন উৎসাহ জোগাবে যা দেশের একতা ও অখণ্ডতার জন্যে আমাদের শক্তি জোগাবে। আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করলে, ‘সঙ্গত’ (সামূহিক উপাসনা)-এর একটি নিজস্ব শক্তি রয়েছে, এই মহান পরম্পরা, এই ‘লঙ্গর’(সামূহিক আহার) সাধারণ খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা নয়। লঙ্গর একটি সংস্কার, লঙ্গর একটি ঐতিহ্য। কোনও ভেদভাব না রেখে সরল পদ্ধতিতে সমাজে স্মতা বজায় রাখার কত বড় প্রচেষ্টা! আজ এই পবিত্র উৎসবের দিনে, এই পবিত্র আবহে, গুরু গ্রন্থসাহিবের উপস্থিতিতে, আমি এই মহান পরম্পরাকে প্রণাম জানিয়ে গুরুদের মহান ত্যাগ ও তপস্যাকে প্রণাম জানাই। আপনাকে আমাকে যে সম্মান জানিয়েছেন তা আমার সম্মান নয়, এই মহান পরম্পরারই সম্মান। আমরা যা করতে পেরেছি তা নিতান্তই সামান্য। ঈশ্বর আমাদের শক্তি দিন, আমরা আরও কাজ করতে চাই! আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে অন্তর থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
CG/SB/DM
Today, on the auspicious occasion of Shri Guru Nanak Dev Ji’ Jayanti, attended a programme at my colleague, Smt. @HarsimratBadal_ Ji’s residence.
— Narendra Modi (@narendramodi) November 23, 2018
Over Kirtans, we all remembered the noble ideals and message of Shri Guru Nanak Dev Ji. pic.twitter.com/Qm9vd7eQLz