Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

শ্রীলঙ্কায় সংবাদমাধ্যম’কে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি


s2015031363041 [ PM India 188KB ]

s2015031363042 (1) [ PM India 220KB ]

s2015031363043 [ PM India 256KB ]

নয়াদিল্লি, ১৩ মার্চ, ২০১৫ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মিঃ মৈত্রিপালা সিরিসেনা এবং সংবাদমাধ্যমকে সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বলেন, তিনি কলম্বোর মতো সুন্দর শহরে সফর করতে পেরে আনন্দিত। তিনি এও বলেন, ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী দ্বীপ সফরের জন্য তিনি যথার্থই উদ্গ্রীব ছিলেন। কারণ দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে একই রকমের বহু দিক রয়েছে যেগুলি একে অপরের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সে দেশের উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং বন্ধুত্বে সম্মানিত। প্রসঙ্গত, এবারেও এই সফরের গুরুত্ব যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ১৯৮৭ সালের পর এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক দ্বিপাক্ষিক সফর। কথা প্রসঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী জানান, গত মাসে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ভারতে সফরকালে ভারতবর্ষকে সম্মানিত করেছেন এবং এই প্রেক্ষিতে তিনি শ্রীলঙ্কায় আসতে পেরে পুলকিত । তাঁর অভিমত এই সফর একে অপরকে ভালোভাবে বোঝবার অবকাশ, পারস্পরিক সমস্যার সমাধানের উপায় বের করারও এক অসাধারণ সুযোগ এবং সর্বোপরি দু’দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপযোগী। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার সঙ্গে সাক্ষাতে এটিই প্রাপ্তি। অর্থনৈতিক যোগাযোগ দু’দেশের সম্পর্কের মূল স্তম্ভ বলে মতও ব্যক্ত করেন শ্রী মোদী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, দু’দেশের অগ্রগতি, দু’দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ভাগাভাগি করে নেওয়ার যথার্থ প্রতিফলন। বাণিজ্য ক্ষেত্রের বিকাশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে বিগত দশকে। তিনি কথা প্রসঙ্গে এও জানান, ভারতবর্ষের সঙ্গে বাণিজ্য পরিচালনার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার চিন্তাভাবনা সম্পর্কে তিনি সচেতন এবং এ বিষয়ে সমস্যা থাকলে তার নিরসন করার চেষ্টাও করা হবে। দু’দেশের শুল্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে যে চুক্তি হয়েছে আজ তাতে বাণিজ্য ব্যবস্থা আরও সরল হয়ে যাবে এবং উভয় দেশের ক্ষেত্রেই শুল্ক বিহীন বাধা আরও সরল হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। আমাদের দু’দেশের লক্ষ্য কেবল সমস্যার সমাধান নয়, দুটি দেশই নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার ওপর গুরুত্ব দেবে বলে শ্রী মোদী অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই আজ শ্রীলঙ্কাস্থিত ভারতের পেট্রোলিয়াম সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আই.ও.সি.) এবং সিলোন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন যৌথভাবে ত্রিঙ্কোমালিতে একটি তৈলাধার গড়ে তোলার ব্যাপারে ঐকমত্যে এসেছে। এ বিষয়ে একটি যৌথ কর্মীগোষ্ঠী গঠন করা হবে অচিরেই এবং ভারতবর্ষ ত্রিঙ্কোমালিতে একটি আঞ্চলিক পেট্রোলিয়াম হাব গড়ে তোলায় সর্বতোভাবে সাহায্য করবে। কথা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, সামপুরে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করার ব্যাপারেও তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই প্রকল্প শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ চাহিদা অনেকাংশে মেটানো সম্ভব হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। শ্রী মোদী সংবাদমাধ্যমকে আরও জানান, দু’দেশের মধ্যে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক প্রসারের ক্ষেত্রে। দু’দেশের কাছেই এটি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে যৌথ কর্মীগোষ্ঠী গঠনের দু’দেশের মধ্যে সিদ্ধান্তটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশেষ করে, দু’দেশের নৈকট্যের ভিত্তিতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’দেশের সম্পর্কের মূলে রয়েছে মানুষ। দু’দেশই অনেকগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানো সম্ভব হয়, সম্প্রসারণ করা যায় পর্যটনের সুযোগও। এ প্রসঙ্গে, আগামী সিনহালা এবং তামিল নববর্ষে (১৪ এপ্রিল, ২০১৫) শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের জন্য আগমনের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটক ভিসা প্রদান তথা বৈদ্যুতিন সফর প্রাধিকরণ সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের আশ্বাস দেন তিনি। তিনি জানান, এয়ার ইন্ডিয়া অচিরেই নয়াদিল্লি এবং কলম্বোর মধ্যে উড়ান চালু করবে। শ্রীলঙ্কায় রামায়ণ কাহিনীর ধ্বংসাবশেষ এবং ভারতের বৌদ্ধ বলয়ের বিকাশের জন্য দুটি দেশই সহযোগিতা করবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এ প্রসঙ্গেই এ বছরের শেষাশেষি নাগাদ, ভারতবর্ষ শ্রীলঙ্কায় ‘ভারত উৎসব’ আয়োজন করবে। শ্রীলঙ্কাতেই বৌদ্ধধর্ম স্থায়ীত্ব পেয়েছে। কাজেই ভারতবর্ষ এই উৎসবে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করবে ভারতের বৌদ্ধ ঐতিহ্য’কে প্রাধান্য দিয়ে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ভারত – শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগের বিষয়ে মউ স্বাক্ষরিত হওয়া তথা ভারত – শ্রীলঙ্কা উন্নয়নমূলক প্রক্রিয়ায় ভাগীদার হওয়ায় দুটি দেশই মহিমান্বিত বলে কথা প্রসঙ্গে জানান প্রধানমন্ত্রী। শ্রীলঙ্কায় রেল সম্প্রসারণে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ ৩১ কোটি ৮০ লক্ষ মার্কিন ডলার ঋণ প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে ভারতবর্ষ। ঐ দেশে চলতি রেলপথের মেরামত-সহ রেল ক্ষেত্রের বিভিন্ন দিকে এই অর্থ কাজে লাগানো হবে বলে শ্রী মোদী আশা প্রকাশ করেন। শ্রীলঙ্কার মাতারাতে রুহালা বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণেও সহায়তা যোগাবে ভারতবর্ষ। আগামীকাল আরও কিছু প্রকল্প দেখতে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর। সেগুলি ভারতের অর্থ-দাক্ষিণ্যেই নির্মাণ করা হচ্ছে। তার মধ্যে আবাসন প্রকল্পও রয়েছে। শ্রী মোদী সন্তোষ প্রকাশ করেন এই তথ্য জেনে যে ইতিমধ্যে ২৭ হাজার বাড়ি এই প্রকল্পে নির্মিত হয়েছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক মুদ্রা সংক্রান্ত ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের একটি চুক্তিতে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে। এর ফলে, শ্রীলঙ্কার টাকা স্থায়ী হবে বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। সাংবাদিকদের শ্রী মোদী জানান, জেলেদের বিষয়ে যে সমস্যা দেখা দেয় তা নিরসনেও দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। দু’দেশের জেলেদের জীবিকাই জড়িত এক্ষেত্রে। অতএব, দু’দেশের ক্ষেত্রেই মানবিক দিক থেকে বিচার করা উচিত এদের সমস্যা বলে প্রধানমন্ত্রী মত ব্যক্ত করেন। এই ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, দু’দেশের জেলেদের সমিতির-ই এ বিষয়ে বৈঠক করে একটি পারস্পরিক বোঝাপড়ায় আসা প্রয়োজন। শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করতে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার প্রয়াসকে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী সাধুবাদ জানান। শান্তি সমৃদ্ধি, অগ্রগতির ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার নয়া সফরকেও তিনি শুভেচ্ছা জানান। শ্রীলঙ্কার তামিল সমাজ-সহ সেখানকার সমাজের প্রত্যেক শাখার মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণের চাহিদা মেটানোয় শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রয়াসে ভারতবর্ষ সামিল হবে বলে আশ্বাস দেন শ্রী মোদী। তাঁর আশা ১৩-তম সংশোধনীর সম্পূর্ণ রূপায়ণ এই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট সাহায্য করবে। পরিশেষে তিনি বলেন, আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধি তথা নৌ-সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা প্রসারের ক্ষেত্রে ভারতের অংশীদারিত্ব যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। তিনি ফের একবার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, তাঁকে উষ্ণ স্বাগত জানানোয়। প্রধানমন্ত্রীর মতে, তাঁদের আজকের বৈঠক যথেষ্ট উৎপাদনশীল এবং আশাব্যঞ্জক।