Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

শান্তি, সমৃদ্ধি ও জনসাধারণের জন্য ভারত-ভিয়েতনাম যৌথ প্রস্তাবনা

শান্তি, সমৃদ্ধি ও জনসাধারণের জন্য ভারত-ভিয়েতনাম যৌথ প্রস্তাবনা


নয়াদিল্লি, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০
 
ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী মিঃ নগুয়েন সুয়ান ফুক-এর মধ্যে ২১শে ডিসেম্বর ভার্চ্যুয়াল শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে তাঁরা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন এবং শান্তি, সমৃদ্ধি ও জনসাধারণের জন্য একটি যৌথ প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে ভারত-ভিয়েতনাম সর্বাঙ্গীণ কৌশলগত অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।  
 
শান্তি
 
১) তাঁদের সর্বাঙ্গীণ কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও মজবুত করার আগ্রহ প্রকাশ করে দুই নেতা উচ্চ পর্যায়ের এবং প্রাতিষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা নিয়মিত বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দুটি দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক যোগসূত্র, অভিন্ন মূল্যবোধ, স্বার্থ, পারস্পরিক কৌশলগত আস্থা ও বোঝাপড়া এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারের ওপর ভিত্তি করে এই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তাঁরা নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন যার ফলে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, নিরাপদ, মুক্ত, সমন্বিত ও আইনের অনুশাসন মেনে চলা একটি অঞ্চলে দুটি দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি পাবে।
 
২) উদ্ভূত ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে এই অঞ্চলে দুটি দেশের সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উভয় নেতা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ভারত এবং ভিয়েতনামের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সহমত পোষণ করেছেন যা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর জন্য তাঁরা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি তিনটি বাহিনী ও  উপকূলরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আদান-প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে, ভারতের প্রতিরক্ষা ঋণ ব্যবস্থা, যেটি ভিয়েতনামের জন্য প্রযোজ্য, সেটি আরও মজবুত হবে। তাঁরা প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়মিত রণতরীর সফর, যৌথ মহড়া, প্রতিরক্ষা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আদান-প্রদান, তথ্য বিনিময় এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তি বাহিনীতে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উভয় পক্ষই নিবিড়ভাবে কাজ করবে। এর ফলে, প্রথাগত এবং প্রথা-বহির্ভূত সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা ছাড়াও সাইবার জগতে এবং সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে জঙ্গি মোকাবিলায়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে, স্বাস্থ্য সুরক্ষায়, জল সুরক্ষায় এবং অন্যান্য নানাবিধ অপরাধ দমনে সুবিধা হবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে আইন ও বিচার ব্যবস্থার সহযোগিতা বাড়ানো হবে।   
 
৩) সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে উভয় নেতা দক্ষিণ চিন সাগরে শান্তি, স্থিতাবস্থা, নিরাপত্তা এবং অবাধ জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছেন। এর জন্য ১৯৮২ সালের রাষ্ট্রসঙ্ঘের সমুদ্র সংক্রান্ত আইন – ইউএনসিএলওএস সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন মেনে নানা বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা হবে। এক্ষেত্রে সামরিক শক্তির ব্যবহারের ঝুঁকি কমানো যাবে। শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য কোনও পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সেদিক বিবেচনা করে উভয় নেতাই সামরিক বাহিনীর ব্যবহার না করা এবং আত্মসংযমের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইউএনসিএলওএস-এর নিয়ম অনুসারে, মহাসাগরে ও সাগরে সবরকমের কর্মতৎপরতা বজায় রাখার ওপর তাঁরা গুরুত্ব দিয়েছেন। সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, সার্বভৌমত্বের অধিকার, সমুদ্র আইনানুগ স্বার্থ বজায় রাখার মতো বিষয়ে ইউএনসিএলওএস-কে মেনে চলা হবে। উভয় নেতাই দক্ষিণ চিন সাগরে সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে নিয়ম মেনে চলা সংক্রান্ত ঘোষণাটিকে যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষত ইউএনসিএলওএস অনুযায়ী সবরকমের আলোচনা করতে হবে এবং এক্ষেত্রে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর সময় সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্র এবং যাঁরা এই আলোচনায় অংশীদার নন, তাঁদের সকলের স্বার্থই বিবেচনা করা হবে।   
 
৪) এই অঞ্চলে শান্তি, সুরক্ষা ও সমৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য আসিয়ান-ভারতের সহযোগিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে উভয় নেতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আসিয়ান জোটের সঙ্গে ভারতের বাস্তবসম্মত সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপর বিভিন্ন সুযোগ কাজে লাগানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। আসিয়ানের আউটলুক অন ইন্দো-প্যাসিফিক এবং ভারতের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগের নীতিগুলির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই অঞ্চলে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করা হবে। উভয় পক্ষ নীল অর্থনীতি, সামুদ্রিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, সামুদ্রিক পরিবেশ, সামুদ্রিক সম্পদের স্থিতিশীল ব্যবহার ও সামুদ্রিক যোগাযোগের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা ও উন্নয়নের সুফল যাতে এই অঞ্চল জুড়ে পাওয়া যায়, তার জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। 
 
৫) আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে দুটি দেশের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং আন্তর্জাতিক ও আইন মেনে চলার বিষয়ে দুটি রাষ্ট্রের সহমতের কারণে উভয় পক্ষ রাষ্ট্রসঙ্ঘ, আসিয়ান এবং মেকং সাব-রিজিওনাল কো-অপারেশনের মতো বহুস্তরীয় ও আঞ্চলিক সংগঠনে তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টিতে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। দু’পক্ষ রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সংস্কার আনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে এবং সক্রিয়ভাবে এই সংস্কারের পক্ষে তারা সওয়াল করবে। কোভিড-১৯ মহামারীর মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া এবং সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপর তাঁরা জোর দিয়েছেন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ, টিকা উদ্ভাবনে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা, সরবরাহ শৃঙ্খলকে সাহায্য করা, সীমান্তের অন্য পারে থাকা মানুষদের মধ্যে প্রয়োজন-ভিত্তিক যাতায়াত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিতে সহযোগিতা বজায় রাখার জন্য পারস্পরিক যোগাযোগ নিবিড় করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
 
৬) জঙ্গীতৎপরতা, হিংসা, চরমপন্থা ও মৌলবাদের মোকাবিলা করার জন্য বিশ্বজুড়ে শান্তি ও মানবতা রক্ষায় তাঁরা সীমান্তের অন্য পারের সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদীদের আর্থিক সাহায্য এবং সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয় স্থলের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করবেন। এর জন্য দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্যোগ গড়ে তুলতে আরও নিবিড় সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কম্প্রিহেনসিভ কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিজম (সিসিআইটি)-এর বিষয়ে দ্রুত সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর ওপরে উভয় পক্ষ যৌথভাবে কাজ করবে।  
 
সমৃদ্ধি
 
৭) কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় যেসব সুযোগ তৈরি হয়েছে সেগুলির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উভয় পক্ষ নির্ভরযোগ্য, দক্ষ ও প্রাণবন্ত সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করার জন্য একযোগে কাজ করবে এবং মানব-কেন্দ্রিক বিশ্বায়নের লক্ষ্যে সক্রিয় হবে। ১,৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং নিজ নিজ দেশে নতুন নতুন সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তুলবে। 
 
৮) ভারতের বৃহৎ বাজার এবং আত্মনির্ভরতা একদিকে যেমন রয়েছে, অন্যদিকে ভিয়েতনামের ক্রমবর্ধমান আর্থিক সমৃদ্ধি ও ক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করে উভয় পক্ষ তাদের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক যোগাযোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এর জন্য একে অন্যের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, যৌথ উদ্যোগ এবং নতুন আন্তর্জাতিক শৃঙ্খল গড়ে তোলার পাশাপাশি, বাস্তব ও ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা, ই-কমার্স, আঞ্চলিক বাণিজ্যিক কাঠামো সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অন্যের বাজার যাতে ব্যবহার করতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল অর্থনীতিতে পরিণত করার ভারতের উদ্যোগ এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে ভিয়েতনামকে উচ্চ আয়ের অর্থনীতিতে পরিণত করার জন্য অংশীদারিত্বের নতুন স্তর গড়ে তোলা হবে যেখানে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ এবং কৃষক সম্প্রদায় সহ দুটি দেশের অর্থনীতির সব স্তরকে কাজে লাগানো হবে।  
 
৯) তরুণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দুটি উদীয়মান অর্থনীতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা পূরণে ভারত ও ভিয়েতনাম আর্থিক ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বকে ক্রমশ শক্তিশালী করবে। এক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে সুপ্রশাসন, জনসাধারণের ক্ষমতায়ন এবং স্থিতিশীল ও সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। ‘ভারতের ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশন’ এবং ভিয়েতনামের ‘ডিজিটাল সোসাইটি ভিশন’কে একযোগে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে, পারমাণবিক ও মহাকাশ প্রযুক্তিকে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সংস্কার, মহাসামুদ্রিক বিজ্ঞান, স্থিতিশীল কৃষিবিদ্যা, জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সর্বাঙ্গীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা, টিকা, ওষুধ প্রস্তুত, স্মার্ট সিটি ও নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিবিড় করা হবে। 
 
১০) স্থিতিশীল উন্নয়নে এবং জলবায়ু সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় দুটি দেশই অঙ্গীকারবদ্ধ। জ্বালানির সুরক্ষা বিকাশশীল রাষ্ট্রগুলির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে উভয় দেশই নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি সংরক্ষণ এবং জলবায়ু সংক্রান্ত প্রাণবন্ত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সৌর জোটে ভিয়েতনামের ভবিষ্যতে অংশগ্রহণের ফলে সৌরশক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে, উভয় পক্ষই তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র এবং তৃতীয় দেশে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের নানা প্রকল্পে একযোগে কাজ করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে। উভয় পক্ষই জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একযোগে কাজ করবে। ভারত এক্ষেত্রে কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ভিয়েতনাম যাতে ভবিষ্যতে অংশগ্রহণ করে, সে বিষয়ে উৎসাহী হবে। 
 
১১) উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে বিভিন্ন সুযোগ পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এইভাবে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া যাবে। ভিয়েতনামে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভারতের সাহায্য মেকং-গঙ্গা কুইক ইম্প্যাক্ট প্রোজেক্ট, আইটিইসি এবং ই-আইটিইসি কর্মসূচিতে প্রসারিত হবে। 
 
জনসাধারণ
 
১২) ভারত ও ভিয়েতনামের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বন্ধনের মধ্যে গুরুত্ব দিয়ে দুটি দেশ অভিন্ন সংস্কৃতি ও সভ্যতার ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করার বিষয়ে  জোর দিয়েছে। এর মধ্যে বৌদ্ধ ও চাম সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক রীতিনীতি এবং প্রাচীন যুগের নানা লিপি নিয়ে গবেষণা স্থান পাবে। উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণে সহযোগিতা করা হবে। স্থিতিশীল উন্নয়নের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় অর্জন করতে দুটি দেশ প্রথাগত  চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে উভয় দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ফলে আয়ুর্বেদ এবং ভিয়েতনামের চিরায়ত ওষুধের বিষয়ে তথ্য বিনিময় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। যোগ শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে উদ্ভাসিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ও প্রশান্তি অর্জিত হয়। দুটি দেশই জনসাধারণের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে প্রথাগত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং তথ্য-নির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতিতে পারস্পরিক সহযোগিতা দৃঢ় করবে। ভারত-ভিয়েতনাম সাংস্কৃতিক ও সভ্যতা সংক্রান্ত সম্পর্কের এনসাইক্লোপিডিয়া প্রকাশ করা হবে। ২০২২ সালে ভারত-ভিয়েতনাম কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে এই কাজ সম্পন্ন হবে।
 
১৩) উভয় দেশের জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ককে আরও নিবিড় করার জন্য সরাসরি বিমান পরিষেবা, পর্যটনের ক্ষেত্রে নিয়মকানুন শিথিল করা, ভিসা প্রক্রিয়ার সরলীকরণের মধ্য দিয়ে দুই দেশের নাগরিকরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করবেন। সংসদীয় প্রতিনিধিদলের আদান-প্রদান, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং ভিয়েতনামের প্রদেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, সামাজিক সংগঠন, মৈত্রী গোষ্ঠী, যুব সংগঠনের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, যৌথ গবেষণা কর্মসূচি, দুই দেশের নীতি প্রণয়নকারীদের মধ্যে যোগাযোগ এবং সংবাদমাধ্যম, চলচ্চিত্র, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ও খেলাধূলার মাধ্যমে দুটি দেশের নাগরিকরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করবেন। ভারত-ভিয়েতনামের সম্পর্কের উন্নতিতে উভয় দেশের বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ঐতিহাসিক যোগাযোগের কথা স্থান পাবে। 
 
১৪) অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে ভারত-ভিয়েতনাম সর্বাঙ্গীণ কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন যুগের সূচনা হবে বলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ২০২১-২৩ সাল পর্যন্ত উভয় পক্ষ বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা করে সেগুলিকে বাস্তবায়িত করবে।  
 
ফলাফল
 
ক) ২০২১-২৩ সালের মধ্যে যৌথ প্রস্তাবনা গ্রহণ করে উভয় নেতা কর্মপরিকল্পনা রূপায়ণে চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। 
 
খ)  ভিয়েতনাম বর্ডার গার্ড-এর জন্য উচ্চগতির নৌকা নির্মাণের প্রকল্পটির সফল রূপায়ণে দুই প্রধানমন্ত্রীই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভারত ভিয়েতনামকে ১০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সাহায্যের অঙ্গ হিসেবে এই নৌকাগুলি তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। 
 
গ) উভয় নেতা ভারতের সহায়তায় ১৫ লক্ষ মার্কিন ডলারে ভিয়েতনামের নিম থুয়ান প্রদেশে যে সাতটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে, সেগুলির বিষয়ে প্রশংসা করেছেন।
 
ঘ)  পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সমঝোতাপত্র ও চুক্তি স্বাক্ষর এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দুই প্রধানমন্ত্রীই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যেসব ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলি হল : 
 
সমঝোতাপত্র / চুক্তি স্বাক্ষর
 
১) প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতার জন্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন।
 
২) না চাং-এ ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিভার্সিটিতে ভারতের ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার আর্থিক     সহায়তায় আর্মি সফটওয়্যার পার্ক গড়ে তোলা হবে 
 
৩) রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সিইউএনপিএকেও-ভিএনডিপিকেও-র মধ্যে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের বাস্তবায়ন। 
 
৪) ভারতের আণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও ভিয়েতনামের এজেন্সি ফর রেডিয়েশন অ্যান্ড নিউক্লিয়ার সেফটির মধ্যে সমঝোতাপত্র।
 
৫) সিএসআইআর-এর অধীনস্থ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পেট্রোলিয়ামের সঙ্গে ভিয়েতনাম পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট-এর সমঝোতাপত্র।
 
৬) ন্যাশনাল সোলার ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া এবং ভিয়েতনাম ক্লিন এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে সমঝোতাপত্র।
 
৭) টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার ও ভিয়েতনাম ন্যাশনাল ক্যান্সার হসপিটালের মধ্যে সমঝোতাপত্র।
 
ঘোঘণা
 
১) ২০২১-২২ অর্থবর্ষে কুইক ইম্প্যাক্ট প্রোজেক্টের সংখ্যা ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হবে।
 
২) ভিয়েতনামের মাই সন-এ মন্দিরের ‘এফ’ ব্লক, কুয়াং নাম-এ বৌদ্ধ গুম্ফা ডং ডুয়াং এবং ফু ইয়েন-এ নান চ্যাম টাওয়ারের ঐতিহ্য সংরক্ষণে নতুন উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব প্রকল্প।
 
৩) ভারত-ভিয়েতনাম সিভিলাইজেশনাল অ্যান্ড কালচারাল ইন্টার্যানকশনের ওপর তৈরি এনসাইক্লোপিডিয়ার জন্য দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পের সূচনা। 
 
***
 
 
CG/CB/DM