Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

রোজগার মেলায় বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী

রোজগার মেলায় বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী


নতুন দিল্লি, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ রোজগার মেলায় ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ৫১ হাজারেরও বেশি সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র নবনিযুক্ত যুবক যুবতীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তারই অঙ্গ হিসেবে এই রোজগার মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন হবে এবং তারা দেশ গঠনের কাজে অর্থপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ পাবেন। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ধনতেরাসের পবিত্র লগ্নের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং এই উপলক্ষ্যে তাঁর শুভেচ্ছা জানান। এবারের দীপাবলিকে বিশেষ দীপাবলি হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫০০ বছর পরে ভগবান শ্রী রাম তাঁর জমকালো মন্দিরে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরে এটাই প্রথম দীপাবলি। বহু প্রজন্ম ধরে মানুষ এই দীপাবলির জন্য অপেক্ষা করেছে। অনেকে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, বহু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন। বর্তমান প্রজন্ম অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে তারা এই উদযাপনের সাক্ষী হতে পারছে। এই উৎসবের পরিবেশেই ৫১ হাজার যুবক যুবতীকে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হলো। নবনিযুক্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লক্ষ লক্ষ যুবককে স্থায়ী সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রথা ধারাবাহিকভাবে চলছে। বিজেপি এবং এনডিএ-র শরিক দলগুলি শাসিত রাজ্যেও এই প্রথা অনুসরণ করা হচ্ছে। হরিয়ানায় নবগঠিত সরকার ২৬০০০ যুবক যুবতীকে সরকারি চাকরি দিয়েছে, সেখানে চাকরি পাওয়ার জন্য কোনো সুপারিশ বা অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হয়নি। 

দেশের যুব সম্প্রদায় যাতে কর্মসংস্থানের সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা পায় সেই লক্ষ্যে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক্সপ্রেসওয়ে, মহাসড়ক, সড়ক, রেল, বন্দর, বিমানবন্দর, ফাইবার কেবল্ স্থাপন, মোবাইল টাওয়ার স্থাপন এবং নতুন শিল্পের প্রসারে দেশজুড়ে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। জল ও গ্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ, নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং পরিকাঠামোগত বিকাশের ফলে লজিস্টিক খরচ কমেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শ্রী মোদী বলেন, এতে নাগরিকরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। 

গুজরাটের ভদোদরায় তাঁর গতকালের সফরের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিমান নির্মাণ কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়েছে। এতে হাজার হাজার নাগরিকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান তো হবেই, পাশাপাশি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অণুশিল্পগুলি সহায়ক সরঞ্জাম উৎপাদনের বরাত পাবে, সরবরাহ শৃঙ্খলের এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। মাত্র একটি বিমানের জন্য ১৫ থেকে ২৫ হাজার যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয় বলে জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, এই বিশাল কারখানায় নির্মিত বিমানগুলির যন্ত্রাংশ সরবরাহে হাজার হাজার ছোট কারখানা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে, ভারতের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অণুশিল্প ক্ষেত্র উপকৃত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো প্রকল্প শুরু করার সময়ে নাগরিকরা তার থেকে কী উপকার পাবেন, শুধু সেইটুকুই দেখা হয়না, সেইসঙ্গে বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই প্রকল্প কিভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির একটি সার্বিক পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে পারে, তাও মাথায় রাখা হয়। উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিএম সূর্যঘর মুফত বিজলি যোজনায় গত ছয় মাসে প্রায় ২ কোটি গ্রাহক তাদের নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন, ৯ হাজারেরও বেশি বিক্রেতা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, ৫ লক্ষ বাড়িতে ইতোমধ্যেই সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে এবং আগামী দিনে এই প্রকল্পের আওতায় ৮০০টি সৌর গ্রামকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। ৩০ হাজারজনকে রুফটপ সোলার প্যানেল বসানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই একটি যোজনা উৎপাদক, বিক্রেতা, সমন্বয়কারী ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের জন্য দেশজুড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। 

গত ১০ বছরে সরকারের নীতির সুবাদে খাদি শিল্পের রূপান্তরের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদি গ্রামোদ্যোগের ব্যবসার পরিমাণ বর্তমানে দেড় লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ১০ বছরে খাদির বিক্রি বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। এর ফলে কারিগর, তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়েছেন, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। লাখপতি দিদি প্রকল্পের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ কোটিরও বেশি মহিলা গত এক দশকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যোগদান করেছেন। এরা এখন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। সরকারের লক্ষ্য ৩ কোটি লাখপতি দিদি তৈরি করা। এপর্যন্ত ১.২৫ কোটি মহিলা লাখপতি দিদি হয়েছেন, তাঁদের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠার দিকে এগোচ্ছে। দেশের যুব সমাজ এখন জানতে চাইছে, উন্নয়নের এই গতি আগে ছিল না কেন? এর জন্য পূর্ববর্তী সরকারগুলির স্বচ্ছ নীতি ও সদিচ্ছার অভাব দায়ী বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আগে ভারত নতুন প্রযুক্তির জন্য পশ্চিমের দিকে চেয়ে অপেক্ষা করতো। যেসব প্রযুক্তি পশ্চিমী দুনিয়ায় বাতিল হয়ে যেতো, সেগুলি ভারতে এসে পৌঁছতো। ভারত যে আধুনিক প্রযুক্তি তৈরি করতে পারে, তা কেউ বিশ্বাসই করতো না। এতে ভারতের বিকাশ যেমন ব্যাহত হয়েছে, তেমনি দেশের মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। 

এই মানসিকতা থেকে দেশকে বের করে আনতে মহাকাশ, সেমিকনডাকটর, ইলেক্ট্রনিক্স, ইলেক্ট্রিক যানবাহনের মতো ক্ষেত্রে মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের প্রসার ঘটানো হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নতুন প্রযুক্তি এবং প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ ভারতে আকর্ষণের জন্য উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহদান প্রকল্প – পিএলআই চালু করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশের যুব সমাজ নতুন নতুন সুযোগ পাচ্ছেন। গত ৮ বছরে দেড় লক্ষেরও বেশি স্টার্টআপ চালু হয়েছে, ভারত আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ পরিমণ্ডলে পরিণত হয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলি দেশের যুব সমাজকে বিকাশ ও কর্মসংস্থানের নতুন পথ দেখাচ্ছে। 

সরকার দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য স্কিল ইন্ডিয়ার মতো মিশন চালু করা হয়েছে। দেশের যুব সমাজকে বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তারা যাতে অভিজ্ঞতা ও সুযোগের অভাববোধ না করে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, ভারতের শীর্ষস্থানীয় ৫০০টি কোম্পানীতে যুব সমাজের জন্য ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক বছর ধরে ইন্টার্নশিপ চলার সময়ে ইন্টার্নরা মাসিক ৫০০০ টাকা করে পাবেন। আগামী ৫ বছরে ১ কোটি যুবক যুবতীর কাছে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পৌঁছে দেওয়া সরকারের লক্ষ্য। এর ফলে, দেশের যুব সমাজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তব ব্যবসায়িক পরিবেশের অভিজ্ঞতা লাভ করবে, তাদের জীবিকার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা বিশেষ ফলদায়ী হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।

দেশের যুবক যুবতীরা যাতে বিদেশেও সহজে কাজ পান তার জন্য সরকার নতুন সুযোগের সৃষ্টি করছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। ভারতের ক্ষেত্রে জার্মানির সদ্য প্রকাশিত স্কিলড লেবার স্ট্র্যাটেজির উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, জার্মানি দক্ষ ভারতীয় শ্রমিকদের ভিসার সংখ্যা বার্ষিক ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৯০ হাজার করেছে। এতে দেশের যুব সমাজ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। সাম্প্রতিক কালে ভারত – জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, মরিশাস, ইজরায়েল, ব্রিটেন, ইতালির মতো ২১টি দেশের সঙ্গে অভিবাসন ও কর্মসংস্থান সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। উপসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গেও ভারতের এই চুক্তি রয়েছে। প্রতি বছর ৩ হাজার ভারতীয় ব্রিটেনে পড়াশোনা ও কাজের জন্য ২ বছরের ভিসা পাবেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৩ হাজার। ভারতীয়দের প্রতিভা শুধু ভারতকেই নয়, সারা বিশ্বের অগ্রগতির ক্ষেত্রে দিশা দিশা দেখাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের লক্ষ্য হলো এমন এক আধুনিক ব্যবস্থা স্থাপন করা, যাতে প্রতিটি যুবক যুবতী সুযোগ পান এবং নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেন। দেশের যুব সমাজ ও নাগরিকরা যাতে সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা পান তা সুনিশ্চিত করতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য নবনিযুক্ত সরকারি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে করদাতা ও নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নাগরিকদের জন্যই সরকার রয়েছে, সরকারের কাজ হলো তাঁদের সেবা করা। একজন ব্যক্তি পোস্টম্যান হোন বা প্রফেসর, তাঁর প্রাথমিক কর্তব্য হলো জাতির সেবা করা। নবনিযুক্ত কর্মীরা এমন এক সময়ে সরকারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, যখন দেশ এক উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সংকল্প নিয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে বিকাশ সুনিশ্চিত করতে হবে এবং সেজন্য সবাইকে সর্বতো প্রয়াস চালাতে হবে। সরকারি কর্মচারিদের তিনি সমগ্র বিশ্বের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মচারিদের কাছে দেশের প্রত্যাশা বিপুল, কাজের মাধ্যমে সেই প্রত্যাশা তাদের পূরণ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিতে নবনিযুক্তরা এক নতুন যাত্রা শুরু করছেন। তাদের সবসময়ে বিনয়ী থাকতে হবে, সমগ্র কর্মজীবন জুড়ে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আইগট কর্মযোগী প্ল্যাটফর্মের উল্লেখ করে বলেন, এই ডিজিটাল প্রশিক্ষণ মডিউলে সরকারি কর্মচারিদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তারা তাদের সুবিধা মতো এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। নবনিযুক্ত কর্মচারিদের আরও একবার অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

 

PG/SD/SKD