Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

রিপাবলিক প্লেনারি সামিট, ২০২৫-এ ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

রিপাবলিক প্লেনারি সামিট, ২০২৫-এ ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী


নয়াদিল্লি, ৬ মার্চ, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন দিল্লির ভারত মণ্ডপমে আজ রিপাবলিক প্লেনারি সামিটে অংশ নেন। তিনি রিপাবলিক টিভিকে হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা আয়োজনে তৃণমূল স্তরের যুব সম্প্রদায়কে যুক্ত করার উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যুব সম্প্রদায় যখন জাতীয় কর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন সমগ্র বাতাবরণ এক নবশক্তিতে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। তিনি আরও বলেন, যুব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ সমস্ত বাধা ভেঙে, সীমানা অতিক্রম করে, প্রতিটি লক্ষ্যকে সম্ভব এবং প্রতিটি গন্তব্যে পৌঁছনোকে সফল করে তোলে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব এই শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং ভারতের সাফল্য বিশ্বজুড়ে নতুন আশার স্পন্দন জাগিয়েছে। এক সময় বলা হত যে ভারত নিজেকেও, সেইসঙ্গে অন্যদেরও ডোবাবে – এরকম একটা মনোভাব এই দেশ সম্বন্ধে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু এখন বিশ্বের অগ্রগতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে এই দেশ। স্বাধীনতার ৬৫ বছর পরেও বিশ্বের একাদশ বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে যে দেশ পরিচিত ছিল, বিগত এক দশকে তা পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে এবং এখন তা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠার লক্ষ্যে এগোচ্ছে। 

১৮ বছর আগের কথা স্মরণ করে শ্রী মোদী বলেন, ২০০৭-এ ভারতের বার্ষিক জিডিপি ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। তিনি বলেন, এখন সারা বছরের মধ্যে চার মাসেই এই ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাজকর্ম হচ্ছে। এথেকেই বোঝা যায়, কি তীব্র গতিতে দেশের অগ্রগতি ঘটে চলেছে। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে ভারত সাফল্যের সঙ্গে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপর তুলে এনেছে, যা অনেক দেশের জনসংখ্যার থেকেও বেশি। শ্রোতাদের তিনি মনে করিয়ে দেন, সরকারের দেওয়া প্রতি টাকার ১৫ পয়সা মাত্র গরিবদের কাছে আগে পৌঁছত। বাকি ৮৫ পয়সা দুর্নীতি গ্রাস করত। সেই তুলনায় গত এক দশকে ৪২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি গরিবদের আমানতে প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছে। ১০ বছর আগে সৌরশক্তিতে ভারত পিছিয়ে ছিল, আর আজ ভারত বিশ্বের সৌরশক্তি সমৃদ্ধ প্রথম পাঁচটি দেশের অন্যতম। দেশে সোলার মডিউল নির্মাণের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে হোলি খেলার শিশুদের জল বন্দুক পর্যন্ত আমদানি করতে হত। আর আজ ভারতের খেলনা রপ্তানি তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ বছর আগে সেনাবাহিনীর জন্য রাইফেল আমদানি করতে হত ভারতকে। বিগত এক দশকে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ গুণ। 

শ্রী মোদী বলেন, বিগত ১০ বছরে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পোৎপাদক দেশ হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে, দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল নির্মাণ কেন্দ্রও হয়ে উঠেছে। তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট-আপ পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে ভারতে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ভারতের মূলধনী খরচ পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে বিমানবন্দরের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে, এইমস-এর সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। দেশে বিগত এক দশকে মেডিকেল কলেজ এবং মেডিকেল আসন সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের ভারত বৃহৎ চিন্তা করতে পারে, উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যকে সামনে রাখে এবং উল্লেখযোগ্য ফল অর্জন করে। এর কারণ দেশের মানসিকতা বদলেছে। দেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, স্থিতাবস্থাকে স্বীকার করে নাও, এমন একটা মনোভাব আগে বিরাজমান ছিল। আর আজকের মানুষ ফলে বিশ্বাস করে। পরিবর্তনটা এমনই হয়েছে যে খরায় ত্রাণ সাহায্যের আবেদনের জায়গায় এখন বন্দে ভারতে যোগাযোগ এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়ে তোলার দাবি তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতের ব্যবস্থা মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে পদানত করেছে। তাঁদের প্রত্যাশাকে নিম্নগামী করেছে। আর আজ মানসিকতার দ্রুত বদল ঘটছে, তাঁরা বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো সমাজ বা দেশ তখনই এগিয়ে যেতে পারে যখন বাধা ভেঙে মানুষ এগিয়ে যায়। নাগরিকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আকাশসীমাকেও তখন তাঁদের ছোট বলে মনে হয়। তিনি বলেন, তাঁর সরকার অতীতের প্রশাসনিক ব্যবস্থার সমস্ত বাধা-বিঘ্নকে ক্রমশ দূর করে নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি মহাকাশ ক্ষেত্রের উল্লেখ করেন। ইসরোর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, মহাকাশ ক্ষেত্রের সম্ভাবনা এবং তাকে ঘিরে উদ্যোগের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার এক সময় করা হয়নি। মহাকাশ ক্ষেত্র এখন তরুণ উদ্ভাবকদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। এর ফলশ্রুতি হিসেবে দেশজুড়ে ২৫০টিরও বেশি স্টার্ট-আপ তৈরি হয়েছে। এই স্টার্ট-আপগুলিই এখন ‘বিক্রম-এস’ ‘অগ্নিবাণ’-এর মতো রকেট নির্মাণ করছে। ম্যাপিং ক্ষেত্রের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে মানচিত্র তৈরি করতে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হত। সেই বিধিনিষেধ দূর করা হয়েছে। আজ ভূ-সমলয় ম্যাপিং পরিসংখ্যান নতুন স্টার্ট-আপ-এর জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতে পরমাণু শক্তি সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল এবং হাজারো নিষেধাজ্ঞার ঘেরাটোপের মধ্যে ছিল। তিনি বলেন, এ বছরের বাজেটে এই ক্ষেত্রকে বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে পরমাণু শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা আরও ১০০ গিগাওয়াট বৃদ্ধির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের গ্রামগুলিতে ১০০ লক্ষ কোটি টাকার অব্যবহৃত আর্থিক সম্ভাবনা লুকিয়ে ছিল এবং তা ছিল গ্রামের বাড়িগুলির মধ্যে নিহিত। প্রকৃত নথি এবং যথাযথ ম্যাপিং-এর অভাবে গ্রামবাসীরা ব্যাঙ্ক ঋণ নিতে পারতেন না। তিনি বলেন যে এই ইস্যুটি শুধু ভারতেই নয়, অনেক দেশ রয়েছে যেখানে নাগরিকদের সম্পত্তির অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে শৈথিল্য রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি দেখিয়েছে, যে সমস্ত দেশগুলি তাদের নাগরিকদের সম্পত্তির অধিকার প্রদান করেছে, জিডিপি-র ক্ষেত্রে তাদের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। তিনি বলেন, স্বামীত্ব প্রকল্প দেশের গ্রামবাসীদের তাঁদের অধিকার প্রদানের একটি অভিনব উদ্যোগ। ড্রোনের মাধ্যমে সমীক্ষা করে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির ম্যাপ নির্দিষ্ট হচ্ছে। দেশজুড়ে সম্পত্তি কার্ড বিতরণের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই ২ কোটিরও বেশি সম্পত্তি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই সম্পত্তি কার্ডের অভাবে বিভিন্ন রকমের বিবাদের সূত্রপাত হত এবং তা মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়াত। গ্রামবাসীরা এখন সম্পত্তি কার্ড দেখিয়ে ঋণ নিতে পারছেন। ফলে, তাঁরা তাঁদের নিজেদের ব্যবসা চালু করে নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলছেন। 

তিনি বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ সুবিধাপ্রাপকরা হলেন যুব সম্প্রদায়। বিকশিত ভারতের তাঁরাই বৃহত্তম অংশীদার এবং আজকের ভারতের তাঁরা এক্স ফ্যাক্টর। শ্রী মোদী বলেন, ‘এক্স’ এখন পরীক্ষানিরীক্ষা, অসাধারণত্ব এবং সম্প্রসারণের চিহ্নস্বরূপ। প্রতি বছর স্মার্ট ইন্ডিয়া হ্যাকাথনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ১০ লক্ষ যুবক-যুবতী এতে অংশ নিয়েছেন। নানা মন্ত্রক ও দপ্তর তাদের বিভিন্ন সমস্যা হ্যাকাথনে অংশগ্রহণকারীদের কাছে রেখেছে এবং তাঁরাও যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে ২,৫০০ সমাধানের পথ দেখিয়েছে। রিপাবলিক টিভি হ্যাকাথন সংস্কৃতির প্রসার ঘটানোয় তিনি আনন্দিত। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে দেশ এক নতুন পরিচালন ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করছে যাতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কমছে। দেশের মানুষই বলছেন যে এই প্রথম আমরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছি। যদিও এই সমস্ত বহু প্রকল্পই অনেক আগে থেকেই ছিল। একেবারে শেষ সীমা পর্যন্ত সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার সরকারের লক্ষ্যের ওপর আলোকপাত করে শ্রী মোদী বলেন, অতীতে খাতায়-কলমে বাড়ি তৈরি হয়েছে বলে দেখানো হত, আর এখন প্রকৃত বাড়ি তৈরি হয়েছে বলেই দেখা যাচ্ছে। এই উদ্যোগ এক সময় ছিল পুরোপুরি সরকার নিয়ন্ত্রিত। নকশা থেকে দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ পর্যন্ত সবই সরকার নিয়ন্ত্রণ করত। এখন সরকার সুবিধাভোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পৌঁছে দিচ্ছে, তাঁরা বাড়ির নকশা নিজেরা তৈরি করছে। দেশজুড়ে এই বাড়ির নকশা তৈরি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে যাতে যোগ দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে গুণগত মানোন্নয়ন ঘটছে এবং গৃহ নির্মাণে গতি সঞ্চারিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকার গরিবের স্বপ্ন পূরণ করছে। বাড়িগুলিতে পানীয় জলের সংযোগ, উজ্জ্বলা যোজনার অধীন রান্নার গ্যাস সংযোগ এবং ‘সৌভাগ্য’ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে কেবলমাত্র চারটি দেওয়াল গড়ে তোলাই নয়, এই গৃহের মধ্যে প্রাণের উন্মাদনের সঞ্চার ঘটছে।

জাতীয় সুরক্ষা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত এক দশকে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে। তিনি বলেন যে একটা সময় সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণ খবরের শিরোনামে থাকত, বিশেষ অনুষ্ঠান তৈরি হত তা নিয়ে। আর আজ তা অতীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মাটিতে এমন কোনো ঘটনাও ঘটছে না, টিভির পর্দাতে তা দেখাও যাচ্ছে না। তিনি বলেন, নকশালবাদ এখন শেষ নিঃশ্বাস ফেলছে। নকশাল প্রভাবিত জেলার সংখ্যা ১০০ থেকে এখন দু’ডজনেরও কমে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশ সর্বাগ্রে’ – এই যে মনোভাব মানুষের মধ্যে জাগ্রত করা গেছে এবং একেবারে তৃণমূলস্তরে প্রশাসনকে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে, তাতেই এই রূপান্তর ঘটছে। তিনি বলেন, হাজার হাজার কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হচ্ছে, স্কুল, হাসপাতাল, ৪জি মোবাইল নেটওয়ার্ক জেলাগুলিতে পৌঁছচ্ছে এবং তার ফল সকলে প্রত্যক্ষ করতে পারছেন। 

শ্রী মোদী বলেন, সরকারের সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা জঙ্গল থেকে নকশালবাদকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। আর এখন শহুরে নকশালের প্রসার ঘটছে। এই শহুরে নকশালদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে সেইসব গান্ধীবাদী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে যারা এক সময় তাদের বিরুদ্ধে ছিল। এই শহুরে নকশালরাই দেশের উন্নয়ন এবং ঐতিহ্যের প্রবল বিরোধী। এই শহুরে নকশালদের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করতে অর্ণব গোস্বামীর উদ্যোগের প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন এবং ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করে তোলা উন্নত ভারতের জন্য অত্যাবশ্যক। সেইসঙ্গে, শহুরে নকশালদের তিনি এককথায় হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষে বলেন, প্রতিটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে ভারত এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে। তিনি বলেন যে রিপাবলিক টিভির সাংবাদিকতা উন্নত ভারতের আকাঙ্ক্ষার পরিপূরক হয়ে উঠুক।

 

SC/AB/DM