Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাব নিয়ে রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর জবাবী ভাষণ


নয়াদিল্লি, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাব নিয়ে জবাবী ভাষণ দেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে ভারতের সাফল্য, ভারতের কাছে বিশ্বের প্রত্যাশা এবং উন্নত ভারত গড়া নিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থার সামগ্রিক দিকটি ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুপ্রেরণামূলক, প্রভাবী এবং ভবিষ্যতের কাজের এক পথনির্দেশ। তিনি রাষ্ট্রপতিকে তাঁর ভাষণের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

শ্রী মোদী বলেন, ধন্যবাদজ্ঞাপক এই প্রস্তাব ৭০ জনেরও বেশি মাননীয় সাংসদের মূল্যবান বক্তব্যে সমৃদ্ধ হয়েছে। উভয় পক্ষই তাঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণ নিয়ে তাঁরা তাঁদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে জটিলতার কি বিষয় জড়িত রয়েছে, তা বোঝা কঠিন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ আমাদের যৌথ দায়িত্ব। এই উদ্দেশ্য পূরণে দেশ সকলের সামনে সুযোগ করে দিয়েছে। 

২০১৪ সাল থেকে লাগাতার দেশের সেবা করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, উন্নয়নের এই মডেল সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছে, তাঁদের তা বোধগম্য হয়েছে এবং তা পরীক্ষিত প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘দেশ সর্বাগ্রে’ – উন্নয়নের এই মডেল নীতিগত, প্রকল্পগত এবং সরকারের কাজকে তুলে ধরেছে। স্বাধীনতার ৫-৬ দশকের বিরতির পর পরিচালনার একটি বিকল্প মডেল প্রয়োজন ছিল। দেশ ২০১৪ সাল থেকে উন্নয়নের এই যে নতুন মডেলটি প্রত্যক্ষ করছে তা তুষ্টিকরণের ঊর্ধ্বে সন্তুষ্টিকরণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সম্পদের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার সুনিশ্চিত করাই আমাদের ঐকান্তিক প্রয়াস। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণে ভারতের সময় যাতে নষ্ট না হয়, বরং তার যথাযথ সদ্ব্যবহার যাতে হয়, তা সুনিশ্চিত করা দরকার। আমরা ১০০ শতাংশ লক্ষ্য পূরণের অভিমুখ গ্রহণ করেছি। এর উদ্দেশ্য হল, প্রকল্পের প্রকৃত সুবিধাপ্রাপকদের ১০০ শতাংশ সুবিধা যাতে পৌঁছয়, তা সুনিশ্চিত করা। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ – এই ভাবধারা বিগত এক দশকে বাস্তব ক্ষেত্রে রূপায়িত হয়েছে। তিনি বলেন, এখন স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে এই প্রয়াস দেশের প্রগতি এবং অগ্রগতির ক্ষেত্রে ফলদায়ক হয়ে উঠেছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ আমাদের সরকারের মূলমন্ত্র। তিনি বলেন, তপশিলি জাতি এবং আদিবাসী আইনকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে সরকার তার দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে যা গরিব মানুষ এবং আদিবাসীদের ক্ষমতায়নকে সুনিশ্চিত করবে, তাঁদের সামাজিক মর্যাদা এবং সুরক্ষা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।

জাতিভেদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার আজ এক প্রয়াস দেখা দিয়েছে বলে আক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত তিন দশকে বিভিন্ন দলের অনগ্রসর শ্রেণীর সাংসদেরা সংসদের উভয় কক্ষেই ওবিসি কমিশনের সাংবিধানিক মর্যাদা দাবি করে এসেছেন। তিনি বলেন, তাঁদের সরকার এই ওবিসি কমিশনকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিয়েছে। সেইসঙ্গে শ্রী মোদী আরও বলেন, তাঁর সরকার যেহেতু ১৪০ কোটি ভারতবাসীর সেবা করছে, তাই অনগ্রসর শ্রেণীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

দেশে যখনই সংরক্ষণের প্রশ্ন উঠেছে, তখন সেই সমস্যা নিরসনের বৃহদায়তন কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই দেশকে ভাগ করা, উত্তেজনা তৈরি করা এবং পরস্পরের সঙ্গে পরস্পরের সম্পর্কের বিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা দেখা গেছে। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতার পর অনুরূপ পন্থাই প্রত্যক্ষ করা গেছে। তিনি বলেন, এই প্রথম তাঁর সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ – এই মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে কোনরকম উত্তেজনা এবং প্রবঞ্চনা ছাড়াই আর্থিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য প্রায় ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করেছে। এই সিদ্ধান্তকে তপশিলি জাতি, আদিবাসী এবং অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায় সাধুবাদ জানিয়েছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর এই রূপায়ণ পদ্ধতি স্বাস্থ্যকর এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্পন্ন হয়েছে যা দেশজুড়ে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। 

দেশে দিব্যাঙ্গ অথবা ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিবর্গ তাঁদের প্রাপ্য সম্মান পাননি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর এই মন্ত্র তাঁর সরকার অন্যভাবে সক্ষম এই শ্রেণীর মানুষদের জন্য সংরক্ষণ প্রসারিত করেছে এবং তাঁদের কাছে যাতে সুবিধা পৌঁছতে পারে, সে ব্যাপারে একেবারে লক্ষ্য ধরে এগিয়েছে। এই শ্রেণীর মানুষদের জন্য বিবিধ কল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আইনি অধিকার দেওয়ারও প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে, বিস্তৃত আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে তাঁদের দাবির নিশ্চয়তা প্রদানে সরকার দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে। সমাজের প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জন্য সহমর্মীসুলভ মানসিকতা দেখিয়েছে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর এই অভিমুখ। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের অগ্রগতি নারীশক্তি দ্বারা চালিত। মহিলাদেরকে যদি সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা নীতি নির্ণায়কের অংশ হয়ে উঠতে পারেন। তাতে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। তিনি বলেন, এই কারণেই নতুন সংসদ ভবনে সরকারের প্রথম সিদ্ধান্তই ছিল নারীশক্তিকে সম্মান জানিয়ে তাঁদের ক্ষমতায়নকে সুনিশ্চিত করা। তিনি বলেন, নতুন সংসদ ভবন কেবল তার দৃষ্টিগত নান্দনিকতার জন্য নয়, নারীশক্তিকে সম্মান জানাতে তার প্রথম সিদ্ধান্তের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন প্রশস্তি পেতে অন্যভাবেও শুরু করা যেতে পারত। কিন্তু তা না করে, নারীদের সম্মানে সেই উদ্বোধন নিবেদিত ছিল। অর্থাৎ, নারীশক্তির আশীর্বাদ নিয়েই নতুন সংসদ ভবনের পথ চলা শুরু হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে কোনো সরকার ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকরকে ভারতরত্নের জন্য যোগ্য মনে করেনি। তা সত্ত্বেও দেশের মানুষ ডঃ আম্বেদকরকে তাঁর আদর্শ ও ভাবধারার জন্য চিরকাল সম্মান জানিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, এই কারণেই সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ, এমনকি সমস্ত রাজনৈতিক দলই যত দ্বিধার সঙ্গেই হোক না কেন, ‘জয় ভীম’ বলতে বাধ্য হয়।

শ্রী মোদী বলেন, তপশিলি জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামনে মূলগত চ্যালেঞ্জ বুঝতে পেরেছিলেন বুঝতে পেরেছিলেন ডঃ আম্বেদকর। তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের দুঃখ-কষ্টকে অনুভব করেছেন। এই সমস্ত সম্প্রদায়ের সামাজিক উন্নয়নকল্পে তিনি একটা পরিষ্কার নকশা উপহার দিয়ে গেছেন। আম্বেদকরের বক্তব্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত কৃষি-প্রধান দেশ হলেও দলিতদের কাছে কৃষি প্রধান জীবিকা হয়ে ওঠেনি। আম্বেদকর এর দুটি কারণ নির্দেশ করেছিলেন। প্রথমত, জমি ক্রয়ে তাঁদের অক্ষমতা এবং দ্বিতীয়ত, অর্থ থাকলেও জমি ক্রয়ের সুযোগ না থাকা। ফলে, ডঃ আম্বেদকর এর সমাধানসূত্র হিসেবে এবং দলিত, আদিবাসী ও প্রান্তিক বর্গের মানুষদের প্রতি অবিচার দূর করতে শিল্পায়নকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে তিনি তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধির কাজ এবং আর্থিক স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে উদ্যোগ প্রসারের প্রতিও জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডঃ আম্বেদকরের সেই দৃষ্টিভঙ্গী কখনও বিবেচিত হয়নি। স্বাধীনতার পর দশকের পর দশক ধরে তা সম্পূর্ণ উপেক্ষিত থেকে গেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ডঃ আম্বেদকরের লক্ষ্য ছিল তপশিলি জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের আর্থিক কষ্টকে দূর করা। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে তাঁর সরকার ক্ষমতায় এসে দক্ষতা উন্নয়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং শিল্পের অগ্রগতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা’ কুম্ভকার, কর্মকারের মতো প্রথাগত শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের দিকে লক্ষ্য রেখে চালু করা হয়েছে, যাঁরা সমস্ত গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সমাজের এক ভিত্তিস্বরূপ। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, এই প্রথম সমাজের এই শ্রেণীর কথা অনুভব করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, কারিগরি মানোন্নয়ন ঘটানো, নতুন যন্ত্রপাতি, নকশা সহায়তা, আর্থিক সহায়তা ও বাজারের সুযোগ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই অবহেলিত শ্রেণীর ওপর আলোকপাত করে সমাজ গঠনে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে তুলে ধরে তাঁর সরকার বিশেষ প্রচারাভিযান শুরু করে। 

শ্রী মোদী বলেন, আমাদের সরকার প্রথম শ্রেণীর উদ্যোগপতিদের উৎসাহিত করতে ‘মুদ্রা’ প্রকল্পের সূচনা করে। কোনরকম গ্যারান্টি ছাড়াই তাঁদেরকে ঋণদান তাঁদের স্বনির্ভরতার স্বপ্ন পূরণে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া’ প্রকল্প কোনরকম গ্যারান্টি ছাড়াই তপশিলি জাতি, আদিবাসী এবং যে কোন সম্প্রদায়ের মহিলাদের জন্য ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের সংস্থান রাখে। তিনি বলেন, এ বছরের বাজেটে এই প্রকল্প খাতে অর্থ বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রান্তিক বর্গের লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণী ‘মুদ্রা’ যোজনায় তাঁদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেছে। এতে তাঁরা কেবল যে নিজেদের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করেছে তাই নয়, অন্যদেরও কর্মসংস্থান যোগাচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের, প্রত্যেকটি কারিগরের ক্ষমতায়ন ‘মুদ্রা’ যোজনার মাধ্যমে বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্বপ্ন পূরণ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে চর্ম এবং পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িত ক্ষেত্রগুলিতে জোর দেওয়া হয়েছে যাতে গরিব ও প্রান্তিক বর্গ উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, খেলনা শিল্পের সঙ্গে প্রান্তিক গোষ্ঠীর বহু মানুষ জড়িত রয়েছেন। গরিব ও প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষদের কল্যাণে এই প্রকল্পে বিভিন্ন রকম সুবিধা-সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে খেলনা শিল্পে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসার লাভ করেছে। ফলে, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষরা উপকৃত হচ্ছেন।

ভারতে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কল্যাণে সরকার একটি পৃথক মন্ত্রক তৈরি করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান এবং মৎস্যজীবীদের জন্য কিষাণ ক্রেডিট কার্ড-এর সুযোগ এঁদের ক্ষেত্রে প্রসারিত করা হয়েছে। মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকাকে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে, মৎস্য উৎপাদন ও রপ্তানি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইসঙ্গে রপ্তানিও প্রসার লাভ করেছে।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিগত বিভাজনের যে বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে, তাতে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় প্রভাবিত হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের ২০০-৩০০ এমন জায়গা রয়েছে যেখানে ক্ষুদ্র জনসংখ্যার কিছু মানুষ বসবাস করেন। তাঁরা ভীষণভাবে অবহেলিত। রাষ্ট্রপতির এই সম্প্রদায় সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞান থাকায় তিনি এক্ষেত্রে একটি দিশানির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিলুপ্তপ্রায় শ্রেণীর মানুষদের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে তাঁদের বিশেষ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ‘পিএম জনমন যোজনা’ চালুর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ২৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যাতে এই সম্প্রদায়ের মানুষদের উন্নয়ন এবং জীবনধারণের স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করা যায়। সমাজের অন্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে যাতে উন্নয়নের একই পংক্তিতে নিয়ে আসা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়েই সরকার এগিয়ে চলেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। 

শ্রী মোদী বলেন, আমাদের সরকার দেশের সীমান্ত গ্রামগুলির প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে যেখানে পশ্চাৎপদতা গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। এঁদের মানসিক উত্তরণ ঘটাতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিকে সরকার অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে। এই সমস্ত গ্রামগুলিকে বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনার আধারে নিয়ে এসে ‘প্রথম গ্রাম’ হিসেবে মর্যাদাদান করা হয়েছে। এই সমস্ত প্রান্তিক গ্রামগুলি যেখানে প্রথম ও শেষ সূর্যের আলো পৌঁছয়, চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বসবাসকারী গ্রামবাসীদের সমস্যা বুঝতে সেই সমস্ত গ্রামে পাঠানো হয়েছে। এ জাতীয় কিছু কিছু গ্রামে তাপমাত্রা -১৫ ডিগ্রির নিচে নেমে যায় বলে উল্লেখ করেন শ্রী মোদী। তিনি বলেন, এই সমস্ত সীমান্ত এলাকার গ্রামের নেতৃত্বকে স্বাধীনতা দিবস বা সাধারণতন্ত্র দিবসের মতো জাতীয় উদযাপন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর প্রতি সরকারি দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি অবহেলিত সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছনোই হচ্ছে সরকারের লক্ষ্য। দেশের সুরক্ষার দিকে তাকিয়ে ‘উজ্জীবিত গ্রাম কর্মসূচি’র গুরুত্ব ও উপযোগীতার ওপর সরকার নজর দিয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণতন্ত্র দিবসের ৭৫তম বর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে সংবিধানের রূপকারদের থেকে সকলকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা সংবিধান সভার বিতর্ক পড়েছেন, তাঁরা বুঝবেন যে এই মনোভাব গড়ে তোলারই প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে কারোর কারোর রাজনৈতিক বিরোধিতা ছিল স্বীকার করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সঙ্কল্প পূরণে সরকার সাহস ও নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে যেতে দায়বদ্ধ। সংবিধানের রূপকারদের থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণের ওপর আলোকপাত করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সঙ্গে বলেন যে স্বাধীনতার পরেও এঁরা কিন্তু চিরদিন উপেক্ষিত থেকে গেছেন। তিনি বলেন, সেই সময় নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা না করেই একটি অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানে সংশোধন এনেছিল। তিনি বলেন যে গণতন্ত্রকে তুলে ধরার নামে তৎকালীন সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে খর্ব করেছিল, খর্ব করেছিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে, যা সংবিধানের মূল ভাবাদর্শের বিরোধী। 

শ্রী মোদী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে স্বাধীন ভারতের প্রথম সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার অনেক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল। সেই সময় মুম্বাই শ্রমিক হরতালে প্রথিতযশা কবি মজরু সুলতানপুরী কমনওয়েলথ-এর সমালোচনা করে কবিতা বলেছিলেন যার জন্য তাঁর কারাবাস হয়েছিল। বলরাজ সাহনির মতো স্বনামধন্য অভিনেতাকে প্রতিবাদে পা মেলানোয় জেল খাটতে হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, লতা মঙ্গেশকরের ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে বীর সাভারকারের একটি কবিতা পাঠের পরিকল্পনা করায় তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল। কেবলমাত্র এই কারণবশতই অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে চিরদিনের মতো তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। 

দেশে জরুরি অবস্থার সময়কালের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে সংবিধানকে পদদলিত করা হয়েছিল। এই জরুরি অবস্থার সময় স্বনামধন্য অভিনেতা দেব আনন্দকে জরুরি অবস্থার সমর্থনে প্রচারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু, তিনি সাহসের সঙ্গে সেই অনুরোধ প্রত্যাখান করেছিলেন। এর ফলে, দূরদর্শনে তাঁর সব ছবির প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংবিধান নিয়ে যাঁরা সব সময় বড় বড় কথা বলেন তাঁদের সমালোচনা করে শ্রী মোদী বলেন, তাঁরা চিরদিন নিজেদের পকেটেই সংবিধানকে রেখে দিয়েছেন, কখনও তার প্রতি সম্মান দেখাননি। কিশোর কুমারের মত গায়ক শাসক দলের হয়ে গান গাইতে না চাওয়ায় অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে তাঁর গান বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরি অবস্থার দিনগুলিকে তিনি ভুলতে পারবেন না। যাঁরা গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কথা বলেন, জরুরি অবস্থার সময়কালে সেই সমস্ত মানুষগুলি জর্জ ফার্নান্ডেজ সহ দেশের বরেণ্য মানুষদের হাতকড়া পরিয়েছিলেন। সংসদ সদস্য, এমনকি জাতীয় স্তরের নেতাদেরকেও এই সময়কালে হাতকড়ার শৃঙ্খলে বাঁধা হয়েছিল বলে তিনি জানান। সংবিধান শব্দের ব্যবহার তাঁদের মুখে মানায় না বলে প্রধানমন্ত্রী কটাক্ষ করেন।

রাজকীয় একটি পরিবার তাদের ঔদ্ধত্য এবং ক্ষমতাবলে দেশের লক্ষ লক্ষ পরিবারকে বঞ্চনার শিকার করেছে। সমগ্র দেশ তাদের সৌজন্যে একটি কারাগারে রূপান্তরিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, দীর্ঘ সংগ্রামের ফলশ্রুতি হিসেবে মানুষের শক্তির কাছে তারা মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছে। ভারতের মানুষের তন্ত্রিতে গণতান্ত্রিক চেতনা এবং অদম্য মানসিকতা জরুরি অবস্থাকে তুলে নিতে বাধ্য করে। জনসেবায় নিযুক্ত থাকায় বর্ষীয়ান নেতৃবর্গকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী দেবেগৌড়ার কথা উল্লেখ করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের আগে দরিদ্র সম্প্রদায়ের সামাজিক উত্থান নিয়ে এত বিস্তৃত কার্যক্রম আগে কখনও ছিল না। দারিদ্র্য থেকে তাঁদের মুক্তির জন্য এবং দরিদ্র মানুষদের ক্ষমতায়নে সরকার নানাবিধ প্রকল্প রচনা করেছে। শ্রী মোদী বলেন, সুযোগ দিলে দেশের গরিব মানুষরা যে কোন চ্যালেঞ্জকে জয় করতে পারেন। দেশের ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপর তুলে আনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা তাঁর সরকারের গর্ব। তিনি বলেন, দারিদ্র্য তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন নিজেদের কঠোর পরিশ্রমে, সরকারের প্রতি আস্থা রাখায় এবং সরকারের আজকের এই সমস্ত প্রকল্পগুলির সৌজন্যে। সমাজে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে তুলেছেন তাঁরা।

এই নব-মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় এবং মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারের কঠোর দায়বদ্ধতার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অগ্রগতির চালিকাশক্তি তাঁরা। জাতীয় উন্নয়নের ভিত্তিভূমি গড়ে তুলছে তাঁদের এই নবোদিত শক্তি। তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে চলতি বাজেটে করের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড়ের সীমা থাকলেও তা বাড়িয়ে ১২ লক্ষ টাকা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন সমাজ ও সম্প্রদায়ের সত্তরোর্ধ ব্যক্তিরা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাগরিকদের কল্যাণে আমরা ৪ কোটি গৃহ নির্মাণ করেছি। এর মধ্যে ১ কোটি শহরে নির্মিত হয়েছে। বাড়ির ক্রেতাদের বিভিন্ন রকম জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচাতে আইনি রক্ষাকবচ নিয়ে আসা হয়েছে। এক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্থাৎ, রেরা আইন চালু মধ্যবিত্তের নিজস্ব গৃহের স্বপ্ন সাকার করতে এবং সেক্ষেত্রে সমস্ত বাধা দূর করতে এক নির্ণায়ক হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, চলতি বাজেটে ‘স্বামীহ’ উদ্যোগ নিয়ে আসা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল, যে সমস্ত আবাসন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছিল, মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মানুষের টাকা ও উদ্যম যেখানে জড়িত ছিল, সেইসব বন্ধ প্রকল্পগুলিকে চালু করতে এই উদ্যোগ মারফৎ ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। 

স্টার্ট-আপ বিপ্লবের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে তা বিশ্ব স্বীকৃতি লাভ করেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যুব সম্প্রদায় এই স্টার্ট-আপ-এর মূল চালিকাশক্তি। তিনি বলেন, বিশ্ব ক্রমেই ভারতের এই স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রে আকর্ষিত হচ্ছে। দিল্লি, মুম্বাই এবং বেঙ্গালুরুর বাইরেও ভারতের বৃহত্তর প্রসার রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় পর্যটনের বৈশ্বিক উৎসাহ মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে আর্থিক উপার্জনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে অভূতপূর্ব আস্থাভাব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে, যা রাষ্ট্রকে শক্তি যোগানোর এক বৃহত্তম উপাদান। উন্নত ভারতের স্বপ্নকে সাকার করতে ভারতের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি তাঁর পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করেন।

উন্নত ভারত গঠনে দেশের যুব সম্প্রদায় এক নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনবিভাজন সত্ত্বেও স্কুল এবং কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এখন উন্নত ভারতের প্রাথমিক সুবিধাপ্রাপক হয়ে উঠছে। উন্নত ভারতের যাত্রাপথে তারুণ্য এক প্রধান শক্তি বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত এক দশক ধরে বিদ্যালয় এবং কলেজ স্তরে তারুণ্যের ভিত্তিকে শক্তিশালী করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিগত ৩০ বছরে একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষা নিয়ে কোনরকম নতুন দিকপাত করা হয়নি। তিনি বলেন, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আসা হয়েছে। এই নীতির অধীন বিভিন্ন রকম উদ্যোগ যেমন, পিএম শ্রী বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার এক বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটিয়ে দেবে। তিনি বলেন, প্রায় ১০-১২ হাজার পিএম শ্রী বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তা আরও করা হবে। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষায় শিক্ষা ও পরীক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ঔপনিবেশিক মানসিকতার ফলেই ভাষাগত ব্যবধানের জন্য দরিদ্র, দলিত, আদিবাসী এবং প্রান্তিক বর্গের শিশুরা অবিচারের শিকার হয়েছিল। মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা ব্যতিরেকেই ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে মাতৃভাষা ব্যবহার করতে পারবেন। সমস্ত সামাজিক শ্রেণীর শিশুরাই যাতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে, সেই লক্ষ্যেই শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে আসা হয়েছে। আদিবাসী যুব সম্প্রদায়ের জন্য একলব্য মডেল আবাসিক স্কুলের প্রসার ঘটানো হচ্ছে। এক দশকে এর সংখ্যা ১৫০ থেকে বেড়ে ৪৭০-এ দাঁড়িয়েছে। আরও ২০০টি গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষা সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৈনিক বিদ্যালয়গুলিতেও এক বৃহৎ সংস্কার ঘটানো হয়েছে। সেখানে এখন ছাত্রী ভর্তির সংস্থান চালু হয়েছে। তিনি বলেন, কয়েকশ’ ছাত্রী এখন এইসব বিদ্যালয়গুলিতে দেশাত্মবোধের বাতাবরণে বড় হয়ে উঠছে। স্বাভাবিকভাবেই এটি দেশের প্রতি তাদের অঙ্গীকারকে আরও বেশি সুদৃঢ় করে তুলবে। 

যুব সম্প্রদায়কে গড়ে তুলতে জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনী (এনসিসি)-র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে যাঁরা জড়িত তাঁরা জানেন যে নিজেদের আত্মবিকাশের পথকে প্রসারিত করতে এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এনসিসি-র আরও প্রসার ঘটানো হয়েছে। ২০১৪ সালে এর সদস্য সংখ্যা ১৪ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আজ ২০ লক্ষতে দাঁড়িয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। 

শ্রী মোদী তাঁর ভাষণে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের যুব সম্প্রদায় নিজস্ব উদ্যোগে এখন এই প্রচারাভিযানের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বস্তি এলাকাগুলিতে শিক্ষা প্রসারে কিছু তরুণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী ‘MY Bharat’ অথবা মেরা যুব ভারত আন্দোলন যুব সম্প্রদায়ের সামনে সুযোগের ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করছে। প্রায় ১.৫ কোটি যুবক-যুবতী সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এতে সক্রিয়ভাবে যোগদান করছেন, সমাজ সচেতনতা গড়ে তুলছেন এবং নিজস্ব দক্ষতাবলে তাঁরা বিভিন্ন কর্ম সম্পাদন করছেন। 

ক্রীড়াক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রীড়াসুলভ মানসিকতা গড়ে তুলতে প্রতিভাধর খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁদেরকে পরিকাঠামোগত এবং আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে যা পূর্বে ভাবা যেত না। ‘টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম প্রকল্প’ বা টপস এবং ‘খেলো ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ দেশের ক্রীড়া পরিমণ্ডলে এক রূপান্তরকারী শক্তির ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, বিগত এক দশকে ভারতের তরুণ-তরুণীরা ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশ্বমঞ্চে ভারতের শক্তিকে তুলে ধরেছেন। 

দেশের উন্নয়নে পরিকাঠামো এক রূপান্তরমূলক ভূমিকা পালন করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প এবং পরিকাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ সময়ে পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করার ওপর তিনি জোর দিয়ে বলেন, এক্ষেত্রে কোনরকম বিলম্ব করদাতাদের অর্থের অপচয় এবং দেশকে তার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা। যে কোন কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রেই অতীতের সরকারগুলির বিলম্বিত মানসিকতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রগতি’ মঞ্চের মাধ্যমে তিনি নিজে কাজের পর্যালোচনা করেন, যেখানে ড্রোনের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবিতে কাজের অগ্রগতি যেমন তিনি চোখের সামনে দেখতে পান, তেমনই অংশীদারদের সঙ্গে সরাসরি মত বিনিময়ের সুযোগ পান তিনি। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের মধ্যে অথবা বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়ের অভাবে প্রায় ১৯ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প আটকে ছিল বলে তিনি জানান। শ্রী মোদী বলেন যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষা ‘প্রগতি’ মঞ্চের প্রশংসা করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলি এই অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারে বলেও তিনি জানান। উত্তরপ্রদেশের সরযূ ক্যানেল প্রকল্পের উল্লেখ করে তিনি বলে, ১৯৭২ সালে অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্প পাঁচ দশক আটকে থাকার পর ২০২১-এ সম্পন্ন হয়। সেইসঙ্গে তিনি জম্মু-কাশ্মীরে উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেললাইনের উল্লেখ করেন যা ১৯৯৪ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর তিন দশকেরও বেশি সময় আটকে থেকে ২০২৫-এ কাজ সম্পূর্ণ করেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি ওড়িশার হরিদাসপুর-পারাদীপ রেললাইনের উল্লেখ করে বলেন, ১৯৯৬ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর দীর্ঘদিন আটকে থেকে শেষ পর্যন্ত ২০১৯-এ তা সম্পূর্ণ হয়েছে। আসামের বোগিবিল ব্রিজের উল্লেখ করে বলেন, ১৯৯৮ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০১৮-তে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়। এরকম বেশ কিছু প্রকল্পের উল্লেখ করেন তিনি। শ্রী মোদী এ প্রসঙ্গে পিএম গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান-এর সূচনার উল্লেখ করেন। তিনি রাজ্যগুলিকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই মঞ্চ দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রের প্রসারে মূলগত ভিত্তি রচনা করে দিতে পারে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুব সম্প্রদায়ের দিকে তাকিয়ে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সুবিধা প্রসারিত হচ্ছে। সময়মতো কার্যকরি সিদ্ধান্ত সময়ের সঙ্গতি রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। ৫জি প্রযুক্তি বিশ্বের মধ্যে ভারতে দ্রুততম গতিতে প্রসার লাভ করছে। 

শ্রী মোদী বলেন, দেশে অভূতপূর্বভাবে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, এটিএম-এর প্রসার ঘটছে। অনেক দেশেই এ সমস্ত অনেক আগেই পৌঁছেছিল। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গুটিবসন্ত এবং বিসিজি-র টিকা বিশ্বে অনেক আগেই চালু হওয়া সত্ত্বেও ভারত দক্ষতার অভাবে পিছিয়ে ছিল। পরিচালন ক্ষেত্রে নীতিগত সিদ্ধান্তে বিলম্বজনিত কারণে অতীতে ভুগতে হয়েছে বলে জানান তিনি। লাইসেন্স পারমিট রাজের ফলে ক্রিটিক্যাল নলেজ ক্ষেত্রের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে। দেশের অগ্রগতি এর ফলে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কম্পিউটার আমদানিতে অতীতের দিনগুলির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে লাইসেন্স পাওয়া একটি দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল ভারতে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে যা এক বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

অতীতের আমলাতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জের দিকটির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে গৃহ নির্মাণের জন্য সিমেন্ট পেতেও অনুমতির দরকার হত। এমনকি বিয়ের সময় চায়ের জন্য চিনিরও লাইসেন্স পেতে হত। শ্রী মোদী সেইসঙ্গে আরও বলেন যে একটি স্কুটার কিনতে হলে ৮-১০ বছর অপেক্ষা করতে হত এবং স্কুটার বিক্রির জন্য সরকারি অনুমতির দরকার হত। গ্যাস সিলিন্ডারের মতো অত্যাবশ্যক জিনিসের জন্য সাংসদ কুপন বিতরণ করা হত। এই গ্যাস সংযোগ পেতে দীর্ঘ লাইন পড়ত। সেইসঙ্গে টেলিফোন সংযোগ এবং অন্যান্য আরও বহুবিধ চ্যালেঞ্জ তো জড়িয়ে ছিলই। আজকে যাঁরা তাঁদের অতীত সরকার নিয়ে বড় বড় ভাষণ দিচ্ছেন, সেইসব সরকারের আমলে দেশে কতখানি বিরূপ প্রভাব পড়েছিল তা একবার ভেবে দেখুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি এবং লাইসেন্স রাজ ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বক্ষেত্রে শ্লথতম করে তুলেছিল। এই দুর্বল বৃদ্ধির হার ‘হিন্দু গ্রোথ রেট’ নামে পরিচিত যা এক বৃহৎ সম্প্রদায়ের অপমান। এই ব্যর্থতা অক্ষমতাবশত এবং ক্ষমতায় দুর্নীতি, বাস্তব পরিস্থিতি বোঝার মত মানসিকতার অভাব, দেশের অগ্রগতির রথের চাকাকে শ্লথ করে দিয়েছে। 

অতীতের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্রান্ত নীতি সমস্ত সমাজকে কালিমালিপ্ত করেছে। এই নিয়ন্ত্রণমূলক লাইসেন্স রাজ ভারতের সংস্কৃতির পরিপন্থী কারণ, ভারতীয়রা উদার মানসিকতার এবং তাঁরাই প্রথম মুক্ত বিশ্ব বাণিজ্যে যুক্ত হয়েছিল। কোনরকম নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই ভারতীয় বণিকরা দূরদুরান্তে ব্যবসা করতে গিয়েছিলেন। সেটাই ছিল ভারতের স্বাভাবিক সংস্কৃতি। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ভারতের আর্থিক সম্ভাবনা এবং দ্রুত বিকাশ হার যে স্বীকৃতি পাচ্ছে, তা প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছে গর্বের বিষয়। আজ ভারত বিশ্বের দ্রুততম আর্থিক বৃদ্ধির দেশ এবং দেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হচ্ছে। 

শ্রী মোদী বলেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ ভারতের নির্মাণ ক্ষেত্রের প্রসার ঘটাচ্ছে। উৎপাদন-ভিত্তিক ভর্তুকি প্রকল্প এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ সংস্কারের উল্লেখ করেন তিনি। ভারত আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এতে চিরস্থায়ী আমদানিকারীর তকমা ঘুচিয়ে ভারত এখন মোবাইল ফোনের রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে।

প্রতিরক্ষা নির্মাণ ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত এক দশকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের রপ্তানি দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌর মডিউল নির্মাণ বৃদ্ধি পেয়েছে দশগুণ। ভারত এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদক দেশ। সেইসঙ্গে মেশিনপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক রপ্তানি বিগত দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসার লাভ করেছে। কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় ভারত মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগে তৈরি টিকা এবং ওষুধ ১৫০টিরও বেশি দেশে সরবরাহ করেছে। সেইসঙ্গে আয়ুষ এবং ভেষজ পণ্যের রপ্তানিও দ্রুত প্রসার লাভ করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

খাদির প্রসারে অতীতে সরকারের প্রয়াসগত ঘাটতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এই আন্দোলনের সূচনা ঘটলেও তা প্রসার লাভ করতে পারেনি। তিনি বলেন, খাদি এবং গ্রামীণ শিল্প এই প্রথম ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা করতে পেরেছে। গত এক দশকে এর উৎপাদন চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে এমএসএমই ক্ষেত্র উপকৃত হয়েছে এবং দেশজুড়ে অসংখ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা গেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমস্ত নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের সেবক। এই জনপ্রতিনিধিদের দেশ এবং সমাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং সেবার মানসিকতা নিয়ে তাঁদেরকে কাজ করতে হবে। 

উন্নত ভারত গড়ে তোলা সমস্ত ভারতবাসীর এক যৌথ দায়বদ্ধতা, একথার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি কেবলমাত্র একটি সরকার বা কোনো এক ব্যক্তির সঙ্কল্প নয়, এই দায়বদ্ধতা ১৪০ কোটি দেশবাসীর। যাঁরা এই লক্ষ্যে নিষ্পৃহ, দেশের কাছে তাঁরা পিছিয়ে যাবে বলে সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্যবিত্ত ও যুব সম্প্রদায়ের অবিচল সঙ্কল্প দেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। 

দেশের অগ্রগতিতে এবং তাকে উন্নয়নের নতুন শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে দিতে প্রত্যেকের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের বিরোধিতা খুবই স্বাভাবিক এবং গণতন্ত্রে তা অত্যাবশ্যকও বটে। নীতিগত ক্ষেত্রেও সেই বিরোধিতা থাকে। সেইসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, চূড়ান্ত নেতিবাচক মনোভাব এবং অন্যের অবদানকে তুলে না ধরে বরং তাকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস দেশের অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এই নেতিবাচক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিনিয়ত অন্তর্গত চেতনা এবং অনুধ্যানের মধ্য দিয়ে সকলকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন যে সভার আলোচনা মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তুলুক যা এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রদর্শক হতে পারে। রাষ্ট্রপতির ভাষণ থেকে নিরন্তর অনুপ্রেরণা প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে তিনি রাষ্ট্রপতি এবং সংসদের মাননীয় সদস্যদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। 

 

SC/AB/DM.