Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

মুম্বাইয়ের বোম্বে আর্ট সোসাইটিতে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

মুম্বাইয়ের বোম্বে আর্ট সোসাইটিতে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

মুম্বাইয়ের বোম্বে আর্ট সোসাইটিতে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ


কলা ও সংস্কৃতিপ্রেমী ভাই ও বোনেরা,

কিছুদিন আগে বাসুদেবজি আমার বাসায় এসেছিলেন এবং অধিকার দেখিয়ে আমাকে এখানে আসার আদেশ করেছিলেন। ফলস্বরূপ আজ আমি আপনাদের মাঝে এসেছি।

এরকম খুব কম প্রতিষ্ঠানই থাকে যা তিনটি শতাব্দীকে প্রভাবিত করে, আপনাদের বোম্বে আর্ট সোসাইটি তিন শতাব্দীকালকে প্রভাবিত করেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এর গোড়াপত্তন আর এখন একবিংশ শতাব্দী চলছে। এর মূল করণ হল, কলা ও সংস্কৃতির একটি আলাদা শক্তি থাকে, নিজস্ব বার্তা থাকে। কলা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে ইতিহাস নিজের গতিতে এগিয়ে যায়। কলা সংবেদনার অভিব্যক্তি মাত্র। সেজন্যই তিন শতাব্দীব্যাপী তার বিস্তার।

ভারতে, বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে এমন কোনও অভিজাত পরিবার নেই যাদের দেওয়ালে কোনও চিত্রশিল্প শোভা পায় না। অথচ এই শিল্পকৃতির গর্ভাধানের একটি নিজস্ব বাড়ি পেতে ১২৫ বছর পেরিয়ে গেছে।

আর সেজন্য সমাজের স্বার্থে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে যে কলাকৃতিগুলি আমাদের দেওয়ালে শোভা পায়, সেগুলি সমাজের শক্তি। ঐ শিল্পকৃতিগুলিকে নিছকই দেওয়ালের শোভাবর্ধনের উপায় ভাবলে আমরা ভুল করব, কলা ও সংস্কৃতির মূল উদ্দেশ্য থেকে শতাব্দীকাল দূরে সরে যাব। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য ধারাবাহিকশিক্ষা, নিরবচ্ছিন্ন সংস্কারের প্রয়োজন হয়।

এই দেশ এম্ন যার মন্দির স্থাপত্যকলার বৈশিষ্ট্যকে খুঁটিয়ে দেখলে বুঝবো যেখানেই ঈশ্বরের স্থান, অনিবার্যরূপে সেখানে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের স্থান রয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে নৃত্যমণ্ডপ, প্রতিটি মন্দিরের কলাকৃতি সে অঞ্চলের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে সঞ্জীবিত রেখেছে। আমাদের সাংস্কৃতিক যাত্রাপথে শিল্পকৃতির যাত্রাপথ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এই ব্যবস্থার অন্তর্বয়ন থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। অন্যথা, ঈশ্বরের পাশাপাশি কলাকৃতির যাত্রা অব্যাহত থাকতো না। বিশ্বে এমন আর কোনও রূপ রয়েছে কি যাকে শিল্পীরা এত ভাবে অঙ্কন করেছেন ? হ্যাঁ, আমি গণেশের কথা বলছি, যাকে এ দেশের প্রায় প্রত্যেক শিল্পী নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে এঁকেছেন। কোটি কোটি টাকা মূল্যের গণেশের প্রতিকৃতি আমাদের সামনে রয়েছে। অর্থাৎ, শিল্পীরা যেভাবে যে জিনিসকে ভাবেন, যেভাবে তাঁদের মনে অঙ্কুরিত হয়, আর তাঁরা নিজেদের হাতের ছোঁয়ায় সেই ভাবনাকে তিলে তিলে বটবৃক্ষের রূপ দেন। এই প্রসঙ্গে, বাসুদেবজির বক্তব্যের সঙ্গে আমি ভিন্নমত পোষণ করি। তিনি প্রতিটি শিল্পকৃতিকে রাজ্যস্তরে স্বীকৃতির কথা বলেছেন, আমার মতে শুধুই স্বীকৃতি নয়, রাজ্যের উচিত উত্তম চিত্রকলাকে পুরস্কৃত করা। শিল্পকৃতির কোনও সীমা থাকা উচিত নয়, কোনও বন্ধন থাকা উচিত নয়। রাজ্যের দায়িত্ব উত্তম শিল্পকৃতিকে পুরস্কৃত করা। এই বোম্বে আর্ট সোসাইটিকে জমিদানের জন্য আমি শরদজিকে অভিনন্দন জানাই, তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখনই এই জমির ব্যবস্থা করেছিলেন। রাজ্যের উচিত শিল্পকৃতিকে পুরস্কৃত করা। শিল্পকৃতিকে শক্তি হিসেবে ভাবলে তবেই তো পরিণামকারী হয়।

আধ্যাত্মিক যাত্রার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা হয়তো একথা সরল ভাষায় বুঝবেন যে শরীরের গতিবিধির আগেই আধ্যাত্মিকতা মন ও হৃদয়ে জায়গা করে নেয় আর তারপর সেই শরীরকে অভিব্যক্তি রূপে, সাধন রূপে উপভোগ করে। শরীর আধ্যাত্মিক অনুভূতির মাধ্যম হতে পারে। এমনিতে শিল্প সেই পাথরে থাকে না, সেই মাটিতে থাকে না, সেই কলমে থাকে না, সেই ক্যানভাসে থাকে না। তা শিল্পীর মন ও মস্তিষ্কে আগে আধ্যাত্মিক ভাবের মতো জন্ম নেয়।

একজন ভাস্করকে পাথর খোদাই করতে দেখে যদি জিজ্ঞাসা করেন, আপনি পাথর খোদাই করছেন কেন ? তিনি বলবেন, পাথর নয়, আমি মূর্তি খোদাই করছি। এখানেই দৃষ্টির পার্থক্য। আমরা যাকে পাথর দেখি, তিনি তাতে মূর্তি দেখেন।

আমাদের সামাজিক চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই শিল্পীদের জীবনের গুরুত্ব বাড়বে। আমাদের বাড়ির বাচ্চারা মুখস্ত করা কবিতা আবৃত্তি করে ‘টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিট্‌ল স্টার !’ যে কোন বাড়িতে যান, মায়েরা সন্তানকে এই মুখস্থ করা কবিতা শোনাতে বলবেন, আর বাচ্চাটি তোতাপাখির মতো তা শোনাবে। খুব কম বাড়িতেই মায়েরা বাচ্চাদের নিজের মন থেকে ছবি এঁকে দেখাতে বলেন। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন চাই। শিশুর মনের বিকাশ মুখস্থ করা শব্দাবলীতে নেই, তারঅন্তর থেকে বেরিয়ে আসা ভাব আর নিজের মন থেকে আঁকা ছবিই ব্যক্তির উন্নয়নসাধন করতে পারে। সে কাগজে নিজে থেকে উল্টোপাল্টা যাই আঁকুক না কেন, সেখানেই তার স্বকীয়তার বিকাশ। প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিত্বের সম্পূর্ণ বিকাশে শিল্পকলার গুরুত্ব অনিবার্য।

এখন প্রযুক্তির যুগ। সকল শিক্ষা কারিগরি ও প্রযুক্তি দ্বারা প্রভাবিত। জীবনও অনেকাংশে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু আমাদের সচেতনভাবে আগামী প্রজন্মকে মানুষ করে গড়ে তোলার কথা ভাবতে হবে। ভয় হয়, এরা রোবট হয়ে পড়বে না তো ? অমুক স্যুইচ টিপলে তমুক কাজ হবে। একমাত্র শিল্পকলাই ভাবী মানবকে জীবিত রাখতে পারে, জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। এই অর্থে ART– এর ‘A’ মানে Ageless, ‘R’ মানে Race Region Religionless, ‘T’ মানে Timeless। শিল্পকলা অনন্তের অভিব্যক্তিস্বরূপ। সেজন্যই তার মহত্বকে স্বীকার করে নিয়ে তাকে সজ্জিত করে তুলতে হবে। আমি স্কুলগুলিকে অনুরোধ করবো ছাত্রদের জন্য শিক্ষামূলক পর্যটনের কর্মসূচি তৈরি করার সময় বছরে অন্তত একবার প্রত্যেক ছাত্রকে যেন কোন আর্ট গ্যালারি দেখাতে নিয়ে যায়। তেমনই আমি রেল বিভাগকে অনুরোধ করেছি যাতে ব্যস্ত রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মগুলির মাঝের ডিভাইডারগুলিতে চিত্রকলার প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে। স্থানীয় শিল্পীদের চিত্রকলার প্রদর্শনী, রেল স্টেশন সংলগ্ন শহর কিংবা জেলা সদরের উদীয়মান শিল্পীদের আঁকা ছবি। যাতে যাতায়াতের পথে মানুষ সেই ছবিগুলি দেখেন। শিল্পীরা নিজেরাই সবাইকে বলে বেড়াবেন ১৫ দিন পর অমুক স্টেশনের চিত্র প্রদর্শনীতে আমার চিত্রকলা প্রদর্শিত হবে। তাঁরা আরও ভালো কাজের প্রেরণা পাবেন। এভাবে আমরা নিজেদের ব্যবস্থাগুলিকে সহজ করে তুলতে পারি। গত মাসে ‘মন কি বাত’-এ আমি বলেছিলাম যে আমাদের দেশের নবীন শিল্পীরা আজ নিজেদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে রেল স্টেশনগুলিতে দেওয়ালচিত্র আঁকছেন যাতে মানুষ দেওয়ালগুলি নোংরা না করে। এটা কোনও সরকারি কর্মসূচি নয়। এর জন্য বাজেটে কোনও বরাদ্দ নেই। শিল্পীরা নিজে ইচ্ছায় নিজেদের খরচে এসব করছেন। এগুলির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এরা এক রকম সংস্কার করছেন। পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভাষণ দেওয়ার চাইতে এই দেওয়ালচিত্রগুলির প্রভাব অনেক বেশি। মানুষের মনে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে।

আরেকটি কথা এখানে বসে থাকা শিল্পী-বন্ধুদের বলতে চাই। আপনারা এই বক্তব্যকে কেমনভাবে নেবেন জানি না। আমি জানতে চাই আপনাদের কলাকৃতির ডিজিটাল হাইব্রিড ডেভেলপমেন্ট সম্ভব কি না ! যেমন কোনও শিল্পকৃতি সৃষ্টির আগে আপনার মনে কী ভাবনা এসেছিল, সেগুলির প্রাথমিক নকশা কেমন ছিল, তারপরপ তিন মাস থেকে ছ’মাস ধরে ছবিটি ধাপে ধাপে কিভাবে উন্নতি করে বর্তমান অবস্থায় এসেছে সেই প্রক্রিয়ার তিন থেকে চার মিনিটের ডিজিটাল ভার্সন। যে কোনও ব্যক্তি সেই শিল্পকলা দেখার পাশাপাশি সেই ডিজিটাল ভার্সনও দেখবে। মিউজিক্যাল এফেক্টের সঙ্গে দেখবে। আজ অনেকেই ছবি বুঝতে পারেন না, তাদের বোঝার জন্য বোদ্ধা দর্শকের সাহায্য নিতে হয়। এই ছবিটার গোড়ায় এই ভাবনা ছিল, লাল রং এজন্য লাগানো হয়েছে, হলুদ রং এজন্য লাগানো হয়েছে। সেরকম কাউকে না পেলে ছবিটা ভালোভাবে না বুঝেই দর্শককে এগিয়ে যেতে হয়।

এই পরিবর্তনের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে সহযোগী করে নেওয়া যেতে পারে। আমি চাইবো তথ্যপ্রযুক্তি এবং সফ্‌টওয়্যারের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখান। আর শিল্পীর মেধা ও শিল্পের শক্তিকে নতুন যুগের উপযোগী করে সমাজকল্যাণে লাগানো হোক। আমি আরেকবার মহারাষ্ট্র সরকারকে, শ্রদ্ধেয় শরদজিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। বাসুদেব এবং তাঁর শিল্পীদলকে ধন্যবাদ জানাই। এখন এই কলাকৃতিগুলি প্রদর্শনের পরিসর বিস্তৃত হয়েছে। শিল্পের গর্ভাধান প্রশস্ত হয়েছে। এখান থেকে অনেক নতুন ভাবনা মানবসভ্যতাকে পথ দেখাবে।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

PG/SB/DM/S