রবিবার সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ায় ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে মিলিত হন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। উপস্থিত সকলকে প্রীতি সম্ভাষণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া সফরে আসতে পেরে এবং সেখানকার ভারতীয়দের সঙ্গে এইভাবে মিলিত হতে পেরে তিনি বিশেষভাবে আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত শুধুমাত্র তার ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ একটি দেশ নয়। ভারতের অস্তিত্ব ও উপস্থিতি বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বসবাসকারী ভারতীয়ের মধ্যেই। ভারত ও মালয়েশিয়ার মৈত্রীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র মুখের হাসি দিয়েই বন্ধুকে চেনা যায় না। হৃদয়ের মধ্যে যখন হাসি ও আনন্দ খেলা করে তখন তার মধ্যেই চিনে নিতে হয় বন্ধুত্বকে। এই ধরনের মৈত্রী ও বন্ধুত্বের সম্পর্কই তিনি মালয়েশিয়ায় খুঁজে পেয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় ভারতীয়দের মৈত্রী ও ভালবাসা তিনি সবসময়ই তাঁর হৃদয়ে লালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে বার্ষিক প্রবাসী ভারতীয় দিবসের উদ্যোগ, আয়োজন ও অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার ভারতীয়দের উপস্থিতি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। ভারত ও মালয়েশিয়া এই দুটি দেশই এক সময় একই ঔপনিবেশিকতার শিকার হয়ে পড়েছিল। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে আমরা দুটি দেশই অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়দের কাছে স্বাধীন ভারত অনেক দিক দিয়েই ঋণী। বিভিন্ন সময়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম রচিত হয়েছে মালয়েশিয়ার ভারতীয়দের সংগ্রাম ও উৎসর্গের মধ্য দিয়ে। এখানকার বর্তমান ভারতীয়দের পূর্ব পুরুষরা দলে দলে যোগ দিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে। মহিলারা বিপুল সংখ্যায় স্বচ্ছন্দ গৃহকোণ থেকে বেরিয়ে এসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে গেছেন সুভাষ চন্দ্র বোসের সঙ্গে। কুয়ালালামপুরে ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের নামে নামাঙ্কিত করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের স্বাধীনতার লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার যে সমস্ত ভারতীয় তাঁদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, তাঁদের উদ্দেশে তিনি গভীরভাবে শ্রদ্ধাবনত। তিনি বলেন, ৭০ বছর আগে এক ভয়ঙ্কর ও করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে বিশ্ব যুদ্ধের অবসান ঘটেছে। মালয়েশিয়ার রণক্ষেত্রে যে অসংখ্য ভারতীয় সেনা তাঁদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন উৎসর্গকারী সেনানীদের অনেকেই ছিলেন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ যাঁদের মধ্যে মিশে ছিল মালয়েশিয়ার মাটির প্রতি টান। তাই, এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে ভারত ও মালয়েশিয়া দুটি দেশের ওপরই। মালয়েশিয়ার মাটি সিক্ত হয়েছে এই বীর সেনানীদের রক্তে। আর এভাবেই দু’দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক নিবিড় ও অটুট বন্ধন যা কোন সময়ই ছিন্ন হওয়ার নয়। পেরাক-এ কাম্পারের যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত সৈনিকদের সম্মানে এক স্মারক সৌধ গড়ে তুলতে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ভারত প্রস্তুত বলেও প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতাজির আহ্বানে মালয়েশিয়ার ভারতীয়রা যেমন সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তেমনভাবেই তাঁরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও দর্শনে। গান্ধীজি মালয়েশিয়া সফরের সুযোগ পাননি, কিন্তু মালয়েশিয়ার হৃদয় তিনি স্পর্শ করতে পেরেছিলেন। গান্ধী মেমোরিয়াল হল-এ গান্ধীজির একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার ভারতীয়দের কর্মপ্রচেষ্টার মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভারতের অন্তরাত্মার আকুতি ও আহ্বান। ভারতের ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে যে বৈচিত্র্য রয়েছে তার এক সফল প্রতিফলন ঘটেছে এখানকার ভারতীয়দের মধ্যে। তাঁদের সাফল্য ভারতকে গর্বিত করে তুলেছে। প্রায় প্রতিটি প্রজন্মেই রাজনীতি, শাসন ব্যবস্থা, পেশাদারিত্ব এবং জনজীবনে মালয়েশিয়ার ভারতীয়রা গড়ে তুলেছেন সাফল্যের নজির। এমনকি, কৃষি ও বাণিজ্যেও তাঁদের অগ্রগতি উল্লেখ করার মতো। মালয়েশিয়াকে এক আধুনিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অগ্রসর জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে এখানকার ভারতীয়দের অবদান অনস্বীকার্য। সর্বোপরি ভারত ও মালয়েশিয়ার মৈত্রীর সম্পর্ককে দিন দিন নিবিড় ও শক্তিশালী করে তোলার পেছনেও তাঁদের অবদান কম নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুয়ালালামপুরে রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন করে স্বামী বিবেকানন্দের একটি মূর্তিরও আবরণ উন্মোচন করে এসেছেন তিনি। ঐ মুহূর্তটি তাঁর কাছে এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুভূতির মুহূর্ত মাত্র নয়। এক শতাব্দীরও বেশি আগে এই অঞ্চল থেকেই স্বামীজি গিয়ে পৌঁছেছিলেন সুদূর আমেরিকায়। সেখানে তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন ভারতের সুপ্রাচীন প্রজ্ঞা অনুধাবন করে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার। তিনি তুলে ধরেছিলেন এশিয়ার আবেগ ও অনুভূতিকে যার মধ্য দিয়ে সফল হয়ে উঠতে পারে বর্তমান শতককে এশিয়ার শতকে পরিণত করার স্বপ্ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার সাফল্য অপরিসীম। স্বাধীনতার ছ’দশক পরে এখানকার ৩ কোটি নাগরিক এজন্য গর্ববোধ করতে পারেন। এই দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল প্রায়। প্রাথমিক চাহিদা পূরণের বিষয়টি আজ আর স্বপ্ন নয়, সফল হয়ে উঠেছে এখানে। এই দেশ অর্জন করেছে প্রায় ১০০ শতাংশ সাক্ষরতা। আর প্রতিটি মানুষের জন্য রয়েছে রুজি-রোজগার বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। যেকোন দেশের পক্ষেই প্রকৃত অর্থেই এ এক অভাবনীয় সাফল্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া পর্যটনের একটি বিখ্যাত স্লোগান হল – ‘মালয়েশিয়া – প্রকৃত অর্থেই এশিয়া’। কর্মপ্রচেষ্টা ও অর্জিত সাফল্যের মধ্য দিয়েই মালয়েশিয়া তার এই ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে। বৈচিত্র্যের মধ্যেও সহাবস্থান এখানকার বৈশিষ্ট্য। আধুনিকতার সঙ্গে সংমিশ্রণ ঘটেছে ঐতিহ্যের। কঠোর পরিশ্রম আর উদ্ভাবনী শক্তির ঘটেছে মেলবন্ধন। শান্তির প্রচেষ্টায় সততই নিয়োজিত রয়েছে এই দেশটি।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে ভারতের নজিরবিহীন সাফল্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিকতা একটি জাতিকে দুর্বল করে তুলতে চেয়েছিল। স্বাধীনতার প্রত্যুষ লগ্নেই দেশটি হয়ে পড়ে বিভক্ত। অভাবনীয় বৈচিত্র্য এবং সামাজিক তথা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ভারত তখন একটিমাত্র প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিল – এই জাতি আদৌ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে কিনা। কিন্তু গর্ব ও আনন্দের কথা, ভারত আজ শুধু ঐক্যবদ্ধই নয়, তার বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে সে অর্জন করেছে তার সাহস ও শক্তি। পৃথিবীর বহু দেশেরই গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্ক্ষা যখন ম্লান হতে বসেছে, তখন ভারত ১২৫ কোটির দেশ হয়েও উন্নয়ন ও অগ্রগতির এক বলিষ্ঠ স্বাক্ষর রেখেছে। এ দেশের ৮০ কোটি নাগরিক বয়সে তরুণ। তাই, ভারতকে তারুণ্যের দেশ বললেও অত্যুক্তি করা হয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সাফল্য নজিরবিহীন। খাদ্যশস্য, ফলমূল, শাকসব্জি এবং দুগ্ধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত একটি অগ্রণী দেশ। দেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে আমাদের বিজ্ঞানীরা মহাকাশ শক্তিকে ব্যবহারের কাজে যুক্ত রয়েছেন। জ্বালানি শক্তি ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পরমাণু শক্তিকে। আমরা উদ্ভাবন করেছি এমন কিছু প্রতিষেধক ও ওষুধ যা পৌঁছে গেছে দরিদ্রতম মানুষটিরও নাগালের মধ্যে। বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ভারতীয়। আমাদের চিকিৎসক ও প্রযুক্তিবিদরা পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই। আমাদের উৎপাদন পৌঁছেছে এমনই এক গুণমানে যাতে বিশ্ব বাজারে সমাদৃত হচ্ছে ভারতীয় পণ্যসামগ্রী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের মৈত্রী ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলছে শান্তির বাতাবরণ। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার কাজে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। এমনকি, বিশ্বের যেকোন প্রান্তে বিপর্যয় মোকাবিলার কাজেও তাঁরা সদা প্রস্তুত। শুধু তাই নয়, বিশ্বে শান্তি রক্ষার কাজেও তাঁরা এগিয়ে গেছে নির্দ্বিধায়। কিন্তু আমাদের যাত্রাপথ সুবিস্তৃত। তাই, অনেক কিছু করাই এখনও বাকি রয়ে গেছে। যে চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা আমাদের করতে হবে এবং যে লক্ষ্য পূরণের পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে সেগুলিও আমরা স্থির ও চিহ্নিত করে ফেলেছি। আমাদের বর্তমান সরকার এক পরিবর্তন তথা রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। আধুনিক অর্থনীতির সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে দারিদ্র্য নির্মূল করার কাজ আমরা শুরু করেছি। বিশ্বের কোথাও এমন নজির কি রয়েছে যেখানে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই খোলা হয়েছে ১৯ কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ? দেশের নাগরিকদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের ওপর আরও বেশি করে গুরুত্ব দিয়ে আসছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজকেও আমরা আরও সহজতর করে তুলছি। তৈরি করছি এক জাতীয় ডিজিটাল পরিকাঠামো যার মধ্য দিয়ে মতামত, তথ্য, যোগাযোগ, বাণিজ্যিক কাজকর্ম এবং উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা ইন্টারনেট ব্যবস্থায় পৌঁছে যাবে প্রতিটি প্রান্তে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক বিপ্লব সম্ভব করে তুলতে রেল, বন্দর এবং আকাশপথকেও আমরা উন্নয়ন প্রচেষ্টার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছি। দেশের শহরগুলিকে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত করে তুলতে আমরা গ্রহণ করেছি দৃঢ় অঙ্গীকার। গ্রামেও আমরা নিয়ে আসছি পরিবর্তনের জোয়ার। পর্যটন ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা করেছি প্রকৃতি সংরক্ষণের যাতে উপকৃত হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার কাজ সহজ নয়। কিন্তু ভারতীয়দের মেধাশক্তি ও উদ্যমের ওপর আমাদের রয়েছে আশা ও ভরসা। দেশের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির ওপর আমাদের রয়েছে দৃঢ় বিশ্বাস। তাই, আপাত অসম্ভবকেও আমরা সম্ভব করে তুলছি। পরিবর্তনের চাকা এখন শুধু সচল হয়েই ওঠেনি, তার মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে গতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শাসন ব্যবস্থাকে আমরা স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছি। সমস্ত স্তরেই দুর্নীতি উচ্ছেদে আমরা কৃতসঙ্কল্প। সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে আমরা গড়ে তুলছি যোগাযোগের নিবিড় সেতুবন্ধন। আমরা গড়ে তুলেছি এমনই এক পরিবেশ যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি কাজ করতে পারে এক অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে। রাজ্যগুলির মধ্যে গড়ে উঠেছে এক সুস্থ প্রতিযোগিতার বাতাবরণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সবক’টি দেশ এখন পরস্পর নির্ভরশীল। বিশ্বের এক সুদূর প্রান্তে যা ঘটে চলেছে তা বিশ্বের অপর প্রান্তেও নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই, বাজার, বিপণন ও সহায়সম্পদের ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজন ঘনিষ্ট সহযোগিতা গড়ে তোলার। আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের শক্তি ও সাফল্যের ওপরই নির্ভর করে আমাদের জাতীয় অগ্রগতির বিষয়টি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভূখণ্ড ও সমুদ্রের দিক থেকে আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। এই অঞ্চল হল সবচেয়ে গতিশীল ও শান্তিপূর্ণ একটি অঞ্চল। এখানে রয়েছে মেধা, উদ্যম, সংস্কৃতি ও নিরলস প্রচেষ্টার এক চমৎকার সহাবস্থান। গর্বের বিষয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবক’টি দেশের সঙ্গেই রয়েছে ভারতের অটুট মৈত্রীর সম্পর্ক। আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গেও রয়েছে আমাদের এক শক্তিশালী অংশীদারিত্বের সম্পর্ক। তাই, এই অঞ্চলে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক দ্রুততার সঙ্গে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া ভারতের বলিষ্ঠ সহযোগীদের অন্যতম। শুধু তাই নয়, এই দেশটি আমাদের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ মৈত্রীর সম্পর্কে আবদ্ধ। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার সংস্থাগুলি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। ভারতে তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি আমরা সর্বদাই অনুভব করি। একইভাবে ভারতের বহু সংস্থাই যুক্ত রয়েছে মালয়েশিয়ায় নানান উন্নয়ন প্রচেষ্টার মধ্যে। মালয়েশিয়ায় রেল পরিকাঠামোকে আরও উন্নত করে তুলতে কাজ করছে ভারতীয় সংস্থা ইরকন। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে রয়েছে ১৫০-টিরও বেশি ভারতীয় সংস্থা। ৫০-টিরও বেশি ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মালয়েশিয়ায় উন্নয়নের কাজে যুক্ত রয়েছে। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির মধ্যে মালয়েশিয়া হল আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। প্রতি সপ্তাহে ১৭০-টির মতো উড়ান ভারত ও মালয়েশিয়াকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের আরেকটি ক্ষেত্র হল সুপ্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা। আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রসার ঘটেছে মালয়েশিয়াতেও।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ও মালয়েশিয়া দুটি দেশই নাগরিকদের জীবনযাত্রা নিরাপদ করে তুলতে সতত প্রচেষ্ট। আমাদের রয়েছে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সম্পর্ক। ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মীরা মালয়েশিয়ার বিমানবাহিনীর কর্মীদের দু’বছর ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছে। জল, স্থল, অন্তরীক্ষ – সর্বত্রই প্রসারিত আমাদের মৈত্রী ও সহযোগিতার সম্পর্ক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় দু’দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি একযোগে কাজ করে চলেছে। এই ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য মালয়েশিয়া সরকারকে আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। সন্ত্রাসবাদ বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ সন্ত্রাস কোন ভৌগোলিক সীমারেখা মানে না। ধর্মের নামে মানুষকে তা বিপথগামী করতে চায়। মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে সন্ত্রাস হত্যা করতে উদ্যত। তাই, সন্ত্রাস থেকে ধর্মকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করতেই হবে। আর এজন্য এগিয়ে আসা উচিত বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই। গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ে আমরা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি, ব্যবহার করতে পারি আমাদের সামরিক শক্তিকে। সহযোগিতার সম্পর্ককে বলিষ্ঠতর করে তুলতে আমরা গড়ে তুলতে পারি এক আন্তর্জাতিক আইন ব্যবস্থা।
মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়দের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরাই ভারত ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মৈত্রী ও সহযোগিতার সেতুবন্ধন করে চলেছে। তাই তাঁদের অবদান উন্নয়নের সবক’টি ক্ষেত্রেই অপরিসীম গুরুত্বের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম ছিলেন আধুনিক ভারতের রূপকারদের অন্যতম। তিনি মালয়েশিয়া সফরে এসেছিলেন ২০০৮ সালে। তিনি এখানকার ভারতীয়দের সঙ্গে মিলিত হতে চেয়েছিলেন আরও একবার কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর সেই ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে গেছে। কিন্তু তাঁর জীবন, বাণী ও স্বপ্ন চিরদিনই প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
PG/SKD/DM/……23rd November, 2015
Splendid interaction with Malaysia's Indian community. They are the living bonds of India-Malaysia friendship. https://t.co/tffHywHfKz
— Narendra Modi (@narendramodi) November 22, 2015
We appreciate the love of Malaya Indians towards India. Remembered Subhas Babu & the INA, which was strengthened by many Malaya Indians.
— Narendra Modi (@narendramodi) November 22, 2015