মাননীয়ভাইস প্রেসিডেন্ট,
মার্কিন কংগ্রেসের বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ
মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ সভায় ভাষণ দেওয়ার জন্যআমাকে আমন্ত্রণ জানানোয় আমি নিজেকে বিশেষভাবে সম্মানিত বোধ করছি।
এক বিশাল সৌন্দর্যের ক্যাপিটল-এর দ্বার আমার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় ধন্যবাদ জানাই স্পিকার মহোদয়কে।
গণতন্ত্রের এই পবিত্র স্থানটি থেকে বিশ্বের অন্যত্র গণতন্ত্রকে উৎসাহদান এবং তার ক্ষমতায়নেরলক্ষ্যে বিশেষ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
এই স্থানটি এক মহান জাতির শক্তি ও মানসিকতারই পরিচয় বহন করে। আব্রাহাম লিঙ্কনের কথায়, “মুক্তি ও স্বাধীনতার ধারণা থেকেই গড়ে তোলা হয়েছে এই বিশেষ স্থানটিকে। জন্মসূত্রে সকল মানুষই যে সমান – এই কথাটিকে সম্মান জানাতে উৎসর্গ করা হয়েছে এটিকে।”
আমাকে এখানে ভাষণ দেওয়ার সুযোগদানের মাধ্যমে বিশ্বের এক বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং সেখানকার ১২৫ কোটি নাগরিককেই সম্মান জানিয়েছেন আপনারা।
বিশ্বের এক বৃহত্তম গণতন্ত্রের একজন প্রতিনিধি হিসেবে প্রাচীনতম এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দের সামনে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পাওয়া নিঃসন্দেহে এক ঘটনা বিশেষ।
স্পিকার মহোদয়,
দু’দিন আগে আমি আমার যাত্রা শুরু করেছিলাম আর্লিংটনের জাতীয় সমাধি ক্ষেত্র পরিদর্শনের মাধ্যমে। বিশাল এই দেশের বীর সৈনিকদের অনেকেই অন্তিম শয়নে রয়েছেন সেখানে।
মুক্তি ও গণতন্ত্রের আদর্শ সেনানীদের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়েছি আমি।
এই বিশাল দেশের হাজার হাজার মানুষ স্বাধীনতা রক্ষার কাজে নিযুক্ত ছিলেন অজানা এক উপকূলে অঞ্চলে।
বিশ্বের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাঁরা।
মানবজাতির সেবায় স্বাধীন ও নির্ভীক এক দেশের মানুষের এই আত্মোৎসর্গকে আমি সম্মান জানাই। আমার সঙ্গে একসাথেই সম্মান জানায় সমগ্র ভারতও।
এই ঘটনা যে কতটা অর্থবহ তা ভারতের কাছে অজানা নয়। কারণ একই আদর্শের জন্য লড়াই করে দূর-দূরান্তের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন আমাদের সেনানীরাও।
আর ঠিক এই কারণেই মুক্তি ও স্বাধীনতার এক শক্তিশালী বন্ধনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমাদের এই দুটি গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে।
স্পিকার মহোদয়,
আমাদের দুটি জাতির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস, সংস্কৃতি, মত ও বিশ্বাস।
তা সত্ত্বেও দেশের গণতন্ত্র এবং দেশবাসীর স্বাধীনতায় আমরা বিশ্বাস করি সমানভাবেই।
আমাদের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষরাও ছিলেন এই বিশ্বাসেরই অংশীদার। ভারতীয় নাগরিকদের ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রবক্তা ছিলেন তাঁরাও।
জন্মগতভাবে সমস্ত নাগরিকই যে সমান, এই মত ও বিশ্বাস আমেরিকার সংবিধানের একটি মূল স্তম্ভ।
একটি নতুন স্বাধীন জাতি হিসেবে যখন ভারতের উত্থান ঘটেছিল, তখন সংশয় ছিল অনেকের মনেই। কিন্তু গণতন্ত্রে আমাদের বিশ্বাস ছিল অটুট।
দেশের প্রতিষ্ঠাতারা ভা রতকে এক আধুনিক জাতি হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। ভারতাত্মার মূল আদর্শ হিসেবে তাঁরা চিহ্নিত করেছিলেন মুক্তি, গণতন্ত্র ও ভেদাভেদহীনতাকে।
দেশের সুপ্রাচীন বৈচিত্র্যকে অনুসরণ করেছিলেন তাঁরা।
আজ ভারতের পথে-ঘাটে, গ্রামে-শহরে, বিভিন্ন সংস্থায় ও প্রতিষ্ঠানে সকল মত ও বিশ্বাসের প্রতি সমান শ্রদ্ধা জানানোর রীতি রয়েছে। বিভিন্ন ভাষা ও উপ-ভাষার মধ্য দিয়ে এর প্রকাশ ঘটে।
ভারত এক ও অভিন্ন। এক অভিন্ন রাষ্ট্র হিসেবেই ভারতের অগ্রগতি। ভারতের মুক্তি ও স্বাধীনতা উদযাপিত হয় একটি অভিন্ন দেশ হিসেবেই।
স্পিকার মহোদয়,
আধুনিক ভারত এখন ৭০তম বর্ষে উপনীত।
আমার সরকারের কাছে দেশের সংবিধানই হল প্রকৃত অর্থে এক ধর্মগ্রন্থ।
ঐ পবিত্র গ্রন্থে ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতা, বাক্-স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, নাগরিকদের সমানাধিকার – এ সমস্ত কিছুকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে মৌলিক অধিকার হিসেবে।
প্রতি পাঁচ বছর অন্তর আমাদের নাগরিকদের মধ্যে ৮০ কোটির মতো মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
কিন্তু আমাদের ১২৫ কোটি নাগরিকদের প্রত্যেকেরই রয়েছে ভয়-ভীতি থেকে মুক্তির স্বাধীনতা। তাঁদের জীবনযাত্রার প্রতিটি মুহূর্তেই এই স্বাধীনতা ভোগ করেন তাঁরা।
বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,
আমাদের দু’দেশের চিন্তা-নায়করা যেভাবে পরস্পরের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং সমাজের গতিপথ নির্ধারণ করেন, তার মধ্য দিয়েই আমাদের এই দুটি গণতান্ত্রিক দেশের মিল ও সংযোগকে আমরা খুঁজে পাই।
সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে আমাদের দেশের মহান সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ চিকাগোয় দিয়েছিলেন তাঁর সেই বিখ্যাত ভাষণ।
আবার, থোরু-র সত্যাগ্রহের মতবাদ প্রভাবিত করেছে আমাদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাকে।
গান্ধীজি অহিংস আন্দোলনের যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা অনুপ্রাণিত করেছিল মার্টিন লুথার কিং-কে।
টাইডাল বেসিনে অবস্থিত মার্টিন লুথার কিং-এর স্মৃতিসৌধ ম্যাসাচুসেট্স অ্যাভিনিউতে অবস্থিত গান্ধীজির মূর্তির অবস্থান থেকে মাত্র ৩ মাইল দূরে।
ওয়াশিংটনে এত কাছাকাছি এই দুটি স্মৃতি-স্মারক গড়ে তোলার মধ্যে তাঁদেরআদর্শ ও মূল্যবোধইপ্রতিফলিত হয়েছে।
ডঃ বি আর আম্বেদকরের মেধা ও প্রতিভার স্ফূরণ ঘটে আজ থেকে ১০০ বছর আগে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পঠন-পাঠনকালে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান তাঁকে প্রভাবিত করেছিল মাত্র তিন দশক পরেই ভারতীয় সংবিধানের খসড়া রচনার কাজে।
যে আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আপনারা স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্ভুদ্ধ হয়েছিলেন, তা প্রজ্জ্বলিত করে আমাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা-দীপকে।
সুতরাং, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যে ‘স্বাভাবিক মিত্র’ বলে বর্ণনা করেছিলেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
আবার, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই এই ঘটনাতেও যে স্বাধীনতার এক সাধারণ দর্শন ও আদর্শের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক।
সমানভাবেই আমাদের দুটি দেশের সম্পর্ককে একুশ শতকের এক বিশেষ অংশীদারিত্ব বলে প্রেসিডেন্ট ওবামার ঘোষণাতেও আশ্চর্য বা বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
স্পিকার মহোদয়,
আজ থেকে ১৫ বছর আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি এখানে দাঁড়িয়েই আহ্বান জানিয়েছিলেন, অতীতের যাবতীয় দ্বিধা-দ্বন্দ্বকেঅতিক্রম করে যাওয়ার।
তখন থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের ইতিহাস এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও কাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
আর আজ আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ইতিহাসের যাবতীয় দ্বিধা ও সংশয়ের ঊর্ধ্বে।
আজ আমরা পরস্পরের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হই যথেষ্ট স্বাচ্ছ্বন্দ্যের সঙ্গে। আমাদের মত ও ধারণার মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট সাদৃশ্য। আর আমরা সমস্ত বিষয়েই পরস্পরের কাছে অকপট।
বিভিন্ন নির্বাচন পর্ব এবং প্রশাসনিক রদবদল সত্ত্বেও আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
আমাদের এই যাত্রাপথে দিক নির্দেশকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে মার্কিন কংগ্রেস।
যাত্রাপথের যাবতীয় বাধা-বিঘ্নের মধ্য দিয়ে সম্পর্কের সেতুবন্ধনে আমাদের সাহায্য করেছেন আপনারা।
২০০৮-এর শেষে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অসামরিক পরমাণু চুক্তিটি যখন অনুমোদিত হয় মার্কিন কংগ্রেসে তখন থেকেই আমাদের মৈত্রী সম্পর্ক এক নতুন দিকে মোড় নিতে শুরু করে।
আমাদের প্রয়োজনের মুহূর্তে আপনারা পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই আপনাদের।
আমাদের দুর্দিনেরও সঙ্গী হয়েছেন আপনারা।
২০০৮-এর নভেম্বরে সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরা যখন মুম্বাইয়ে হামলা চালিয়েছিল, তখন মার্কিন কংগ্রেস সমর্থন জানিয়েছে ভারতকে। এই ঘটনার কথা আমাদের দেশ কখনই বিস্মৃত হবে না।
আর এ সমস্ত কিছুর জন্যই আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে।
স্পিকার মহোদয়,
মার্কিন কংগ্রেসের কাজকর্মের মধ্যে যে সমন্বয়ের অভাব নেইসে সম্পর্কে আমরা অবগত।
আমরাও একই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি ভারতের সংসদেও, বিশেষ করে, রাজ্যসভায়।
সুতরাং, আপনাদের সঙ্গে আমাদের মিল রয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই।
স্পিকার মহোদয়,
প্রত্যেক যাত্রাপথেরই কেউ না কেউ পথিকৃত। এদেশের ক্ষেত্রে একথা বিশেষভাবে সত্য।
অনেক আগে যখন যোগাযোগ ও বৈঠকের সুযোগ-সুবিধা ছিল অপ্রতুল, তখন থেকেই এ দেশে শুরু হয়েছিল উন্নয়নের লক্ষ্যে সহযোগিতা প্রসারের কাজ।
নর্ম্যান বোরল্যাগের প্রতিভা খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিল ভারতে।
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ঔৎকর্ষ ও শ্রেষ্ঠত্ব ভারতের প্রযুক্তি ও পরিচালন সংক্রান্ত সংস্থাগুলিকে নানাভাবে উৎসাহ যুগিয়েছে।
আজ পর্যন্ত এ ধরনের দৃষ্টান্তের কোন শেষ নেই।
অতল সমুদ্র থেকে বিশাল মহাকাশ পর্যন্ত মানব প্রচেষ্টার সমস্ত ক্ষেত্রেই ব্যাপ্তি ও প্রসার ঘটেছে আমাদের অংশীদারিত্বের।
জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য এবং কৃষির মতো ক্ষেত্রগুলিতে বহুদিনের নানা সমস্যা মেটাতে সাহায্য করেছে দু’দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও আমাদের সম্পর্ক উত্তরোত্তর প্রসার লাভ করছে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই আমাদের বাণিজ্যিক লেনদেন ঘটে সবথেকে বেশি।
আমাদের দুটি দেশের মধ্যে পণ্য, পরিষেবা ও মূলধন বিনিয়োগের যে কর্মসূচি রয়েছে, তা থেকে আমাদের দুটি দেশেই কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও একথা সমানভাবে প্রযোজ্য। মাত্র এক দশকের মধ্যে আমাদের প্রতিরক্ষা বাণিজ্য মাত্র শূণ্য থেকে শুরু করে দশ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে।
জঙ্গিদের হাত থেকে আমাদের শহর ও নাগরিকদের রক্ষা করছে আমাদের সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব। সাইবার হুমকির হাত থেকে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোগুলিও সুরক্ষিত রয়েছে এই অংশীদারিত্বের সুবাদে।
স্পিকার মহোদয়,
আমাদের দুটি দেশের মানুষে-মানুষে সংযোগ ও সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত। দুটি সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক যোগাযোগ।
সিরি-র সূত্রে আমরা জেনেছি যে ভারতে যোগাভ্যাসের যে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে, তা অনুসরণ করে চলেছে ৩ কোটি মার্কিন নাগরিক।
এ দেশের নাগরিকরা যে আরও বেশি মাত্রায় যোগাভ্যাসের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন একথাও আমাদের অজানা নয়।
কিন্তু তা সত্ত্বেও স্পিকার মহোদয়, যোগাভ্যাসের ওপর আমরা কোনরকম মেধাস্বত্ত্বের অধিকার দাবি করিনি।
এ দেশে যে ৩০ লক্ষ ভারতীয় বসবাস করেন তাঁরা গড়ে তুলেছেন দু’দেশের মধ্যে এক অপূর্ব সংযোগ-সেতু।
তাঁদের মধ্যে অনেকেই আজ আপনাদের দেশের নামকরা সিইও। তাঁদের মধ্যেই আবার অনেকে এ দেশে রয়েছেন শিক্ষাবিদ, মহাকাশ বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ ও চিকিৎসক হিসেবে।
তাঁরা কিন্তু আপনাদের শক্তি। তাঁরা আবার ভারতের গর্বও বটে। দুটি সমাজের যা কিছু সেরা ও শ্রেষ্ঠ তারই প্রতিফলন ঘটে এই ভারতীয়দের মধ্যে।
স্পিকার মহোদয়,
জনজীবনে প্রবেশের অনেক আগেই আপনাদের এই দেশ সম্পর্কে আমি অবহিত।
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণের অনেক আগেই আমেরিকার ২৫টি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সফর করেছি আমি।
তখনই আমি অনুভব ও উপলব্ধি করেছিলাম যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল শক্তি হল এখানকার জনসাধারণের স্বপ্ন ও বলিষ্ঠ আশা-আকাঙ্ক্ষা।
স্পিকার মহোদয়, এই শক্তি ও মানসিকতা প্রতিফলিত হয়েছে বর্তমান ভারতেও।
আমাদের ৮০ কোটি যুবশক্তির মধ্যে রয়েছে উৎসাহ ও কর্মচাঞ্চল্য।
এক বিরাট আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন ঘটে চলেছে ভারতবর্ষে।
ভারতের কোটি কোটি নাগরিকের ক্ষমতায়ন ঘটেছে রাজনৈতিকভাবে।
আমার স্বপ্ন হল তাঁদের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্ভব করে তোলা। আর্থ-সামাজিক রূপান্তরের মধ্য দিয়েই এই কাজ সফল করে তোলা সম্ভব।
দেশের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তিতে, অর্থাৎ, আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এই কাজ সম্পূর্ণভাবে রূপায়িত হবে বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাসী।
আমার আশা-আকাঙ্ক্ষার তালিকা দীর্ঘ। আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও অনেক। আমি জানি, আপনারা সকলেই তা উপলব্ধি করবেন।
আমার লক্ষ্য হল :
• এক শক্তিশালী কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করে তোলা;
• প্রতিটি পরিবারের জন্য বাসস্থান ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা;
• কোটি কোটি যুবককে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা;
• সারা দেশে ১০০টির মতো স্মার্ট নগরী স্থাপন;
• ব্রডব্যান্ডের সুযোগকে দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া, ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করা দেশের সবক’টি গ্রামকে;
• এবং একুশ শতকের উপযোগী রেল, সড়ক ও বন্দর পরিকাঠামো গড়ে তোলা।
এ সমস্ত কিছু সম্ভব করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে কার্বন নির্গমনের মাত্রাও আমরা কমিয়ে আনতে চাই এবং জোর দিতে চাই পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির উৎসের ওপর।
স্পিকার মহোদয়,
ভারতের এই আগামীদিনের যাত্রাপথের প্রতিটি ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা দেখতে চাই আমাদের এক অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হিসেবে।
আপনাদের মধ্যে অনেকেরই বিশ্বাস, আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থেই ভারতকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে তোলার এই প্রচেষ্টা।
কিন্তু আমার বক্তব্য আমাদের আদর্শ যেখানে এক, সেখানে বাস্তবের মাটিতে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রসার না করার কোন কারণ থাকতে পারে না।
আমাদের এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে দুটি দেশই যে লাভবান হবে বিশেষভাবে একথাও সত্য, সন্দেহাতীতভাবে।
মার্কিন বাণিজ্য জগৎ যখন অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার নতুন নতুন ক্ষেত্রের সন্ধান করে, তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্পর্কে অনুসন্ধান চালায়, দক্ষ সহায়সম্পদের প্রয়োজন অনুভব করে এবং উৎপাদন ও নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান চিহ্নিত করতে চায় তখন ভারত তাদের এক আদর্শ সহযোগী ও অংশীদার হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের রয়েছে এক বলিষ্ঠ অর্থনীতি যেখানে অগ্রগতির হার বছরে ৭.৬ শতাংশ। এই অর্থনীতি দু’দেশের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন সুযোগসুবিধার দ্বার উন্মুক্ত করে চলেছে।
ভারতে রূপান্তরমুখী মার্কিন প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটেছে ভারতে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় সংস্থাগুলির বিনিয়োগের ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তরোত্তর। এ সমস্ত কিছুরই ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের দু’দেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রার ওপরও।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র হিসেবে মার্কিন সংস্থাগুলির পছন্দের তালিকায় রয়েছে এখন ভারতের নাম।
আমেরিকার উদ্ভাবনী শক্তি এবং ভারতের বুদ্ধিদীপ্ত সৃজনশীলতা ভবিষ্যতের শিল্প সম্ভাবনাকে এক নতুন রূপ দিতে চলেছে।
স্পিকার মহোদয়,
একবিংশ শতাব্দী আমাদের সামনে উপস্থিত করেছে অফুরন্ত সুযোগ ও সম্ভাবনা।
কিন্তু সেইসঙ্গে উপস্থিত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও।
তাই, পরস্পর-নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তরোত্তর।
বিশ্বের কোন কোন দেশ যখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে, অন্য প্রান্তের দেশগুলি তখন একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় লিপ্ত।
এশিয়ায় একটি সর্বসম্মত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে।
হামলা ও সন্ত্রাসের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে ক্রমাগত। এমনকি, সাইবার জগৎ ও মহাকাশও আজ এই আশঙ্কা থেকে মুক্ত নয়।
বিংশ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলি এই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার দায়িত্ব নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।
বর্তমান বিশ্বে যখন ক্রমাগত পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার প্রসারের মতো ঘটনা আমরা লক্ষ্য করছি, তখন একইসঙ্গে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক জটিলতা। বৃদ্ধি পাচ্ছে সন্ত্রাসের হুমকি এবং নতুন নতুন ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ। তাই, এই পরিস্থিতিতে আমাদের যৌথ কর্মপ্রচেষ্টার লক্ষ্য হওয়া উচিত :
• আধিপত্য নয়, সহযোগিতা;
• বিচ্ছিন্নতা নয়, পারস্পরিক সংযোগ;
• আন্তর্জাতিক সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলির প্রতি শ্রদ্ধা;
• সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা নয়, বরং সকলের অন্তর্ভুক্তি; এবং সর্বোপরি
• আন্তর্জাতিক আদর্শ ও নিয়ম-নীতির প্রতি আনুগত্য।
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে এই দায়িত্ব পালনে ভারত ইতিমধ্যেই সচেষ্ট রয়েছে।
ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক বলিষ্ঠ অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এশিয়া থেকে আফ্রিকা এবং ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ করতে পারে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার সাধারণ প্রচেষ্টাগুলিকে।
সমুদ্রপথগুলিতে বাণিজ্য ও পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করে তুলতে পারে এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
আমাদের এই পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক সফল হয়ে উঠতে পারে তখনই যখন বিংশ শতাব্দীর মানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠনগুলি আজকের কঠিন বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।
স্পিকার মহোদয়,
ওয়াশিংটন ডিসি-তে পৌঁছনোর আগে পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাটে আমি গিয়েছিলাম ৪২ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আফগান-ভারত মৈত্রী বাঁধের উদ্বোধন উপলক্ষে। ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতায় গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রকল্পটিকে। গত বছর ক্রিস্টমাসেও আমি উপস্থিত ছিলাম সেখানকার সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে। আমাদের গণতান্ত্রিক সম্পর্কের একটি প্রতীক হল ঐ সংসদ ভবনটি।
আফগানিস্তানবাসীরা খুব স্বাভাবিকভাবেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে আমেরিকার ত্যাগ ও উৎসর্গের মনোভাব এক উন্নততর জীবন সম্ভব করে তুলেছে তাঁদের দেশে।
কিন্তু ঐ অঞ্চলকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে আপনাদের অবদান সেখানে প্রশংসিত হয়েছে গভীরভাবে।
আফগানিস্তানের অধিবাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে অটুট রাখতে ভারতও প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং ঐ দেশের জন্য অবদানের স্বাক্ষর আমাদেরও কম কিছু নয়।
সুতরাং, আমাদের একটি সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল এক সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে আফগানিস্তানের উত্থান ও পুনর্গঠন।
এতকিছু সত্ত্বেও, মাননীয় সদস্যবৃন্দ আপনারা নিশ্চয়ই একমত হবেন যে শুধুমাত্র আফগানিস্তানেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যত্রও, এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমাদের সবচেয়ে বেশি ভয় ও ভীতির কারণ হল সন্ত্রাস ও তার হুমকি।
ভারতের পশ্চিম সীমান্ত থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত সন্ত্রাস কবলিত সমগ্র অঞ্চলই। কোথাও সন্ত্রাসবাদীরা পরিচিত লস্কর-ই-তৈবা, কোথাও বা তালিবান, আবার কোথাও কোথাও আইএসআইএস হিসেবে।
কিন্তু সন্ত্রাসবাদীদের দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু এক ও অভিন্ন : হিংসা, ঘৃণা ও হত্যা।
সন্ত্রাসের কালো ছায়া যদিও বিস্তার লাভ করছে বিশ্বের সর্বত্র, তবুও তার আঁতুরস্থল ভারতেরই প্রতিবেশী অঞ্চলে।
রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির অভিপ্রায়ে যারা সন্ত্রাস প্রচার করে এবং তাতে মদত দেয় তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন কংগ্রেস থেকে যে দ্ব্যর্থহীন সতর্কবার্তার কথা ঘোষণা করা হয়েছে সেজন্য কংগ্রেসের সদস্যদের আমি বিশেষভাবে প্রশংসা জানাই।
সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মের দায় স্বীকারে বাধ্য করতে হবে সন্ত্রাসবাদীদেরই। তাই, তাদের সমর্থন জানানো থেকে বিরত থাকা হবে সকলের প্রথম পদক্ষেপ।
সমস্ত পর্যায়েইএকজোট হতে হবে সন্ত্রাসের মোকাবিলার জন্য।
কিন্তু গতানুগতিক পথে শুধুমাত্র সৈন্য, গোয়েন্দা তথ্য এবং কূটনীতি দিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের রোখা সম্ভব নয়।
স্পিকার মহোদয়,
সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় আমরা হারিয়েছি বহু সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তিকেই। তাই, এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন নিরাপত্তা সম্পর্কিত আমাদের সহযোগিতাকে সুদৃঢ় করে গড়ে তোলা।
এই লক্ষ্যে আমাদের নীতির মূল লক্ষ্যগুলি হওয়া উচিত :
• সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ যারা সমর্থন করে, মদত দেয় এবং অর্থ বা অন্যভাবে তাতে ইন্ধন যোগায়, তাদের পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে তোলা;
• জঙ্গিদের মধ্যে ভালো-মন্দ বলে কিছু নেই। তাই, তাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ করলে চলবে না। সেইসঙ্গে, ধর্মকে সন্ত্রাস থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
এই কাজে সফল হতে গেলে মানবতাবাদে বিশ্বাসী সকলকেই জোটবদ্ধ হতে হবে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে একসঙ্গেই।
সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদকে সম্পূর্ণভাবে বেআইনি তৎপরতা বলে ঘোষণা করতে হবে।
স্পিকার মহোদয়,
আমাদের এই অংশীদারিত্বের সুফল শুধুমাত্র নির্দিষ্ট দুটি জাতি বা অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।
আমাদের মিলিত শক্তির সাহায্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার কাজেও আমাদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বিশ্বের অন্যত্র বিপর্যয়ের মুহূর্তে যখনই ত্রাণ ও সাহায্যের প্রয়োজন হবে, মানবতার তাগিদে আমাদের তখনই পৌঁছে যেতে হবে সেখানে।
আমাদের উপকূল রেখা থেকে অনেক দূরে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষকে আমরা পৌঁছে দিয়েছি বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে। ইয়েমেন, ভারত, আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশের বিপদের মুহূর্তে আমরা পৌঁছে গেছি সেখানে।
এমনকি, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালের ভূমিকম্পের সময়েও আমরা বাড়িয়ে দিয়েছি আমাদের সাহায্যের হাত। মালদ্বীপের জল পরিস্থিতিরমোকাবিলায় এবং শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক ভূমিধ্বসের ঘটনাতেও ত্রাণ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি আমরা।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর মধ্যেও রয়েছে এক বিরাট সংখ্যক ভারতীয় সেনা।
ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা এবং রোগ ও অসুখের মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন ব্যবস্থার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এশিয়া থেকে আফ্রিকা – সর্বত্রই শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের প্রয়োজনে আমাদের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার বাতাবরণ।
সমগ্র বিশ্বের প্রতি সুবিচারের লক্ষ্যে দু’দেশের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার।
মাতা ধরিত্রীর সঙ্গে সম্প্রীতি রক্ষা হল ভারতের এক প্রাচীন ঐতিহ্যগত বিশ্বাস।
আমাদের অংশীদারিত্বের মূল কথাই হল আমাদের ক্ষমতা ও সামর্থ্যের সঙ্গে দায়িত্বশীলতার ভারসাম্য রক্ষা।
পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানিকে সুলভ করে তুলতে এবং তার উৎপাদন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নতুন নতুন উপায় অন্বেষণ আমাদের দুটি দেশের এক সাধারণ ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।
আমাদের এই প্রচেষ্টাগত উদ্যোগের একটি দৃষ্টান্ত হল আন্তর্জাতিক সৌর সমঝোতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা।
আমাদের এই মিলিত প্রচেষ্টার অভিমুখ শুধুমাত্র নিজেদের উন্নততর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের এই পারস্পরিক সহযোগিতা সমগ্র বিশ্বের স্বার্থেই।
জি-২০, পূর্ব এশিয়া শীর্ষ বৈঠক এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত শীর্ষ বৈঠকগুলিতেও এই সাধারণ লক্ষ্য ও প্রচেষ্টার কথা ঘোষণা করেছি আমরা।
মাননীয় স্পিকার এবং বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,
আমাদের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক যত গভীরতর হয়ে উঠবে, আমাদের পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতাও ক্রমশ বদলে যাবে।
কিন্তু আমাদের উদ্বেগ ও স্বার্থ যখন এক ও অভিন্ন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা এবং আমাদের পারিপার্শ্বিকতার বৈচিত্র্য আমাদের অংশীদারিত্বের মূল্যকেই আরও অমূল্য করে তুলবে।
তাই, নতুন যাত্রাপথের সূচনায় এবং নতুন লক্ষ্যের অন্বেষণে আমাদের উচিত শুধুমাত্র গতানুগতিক বিষয়গুলি নিয়েই ব্যস্ত থাকা নয়, বরং, পরিবর্তন ও রূপান্তরমুখী চিন্তাভাবনাগুলিকে আশ্রয় করা।
আমাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে থাকা উচিত :
• শুধুমাত্র সম্পদ সৃষ্টিই নয়, সমাজ ব্যবস্থায় মূল্যবোধ গড়ে তোলা;
• তাৎক্ষণিক লাভই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি সুফল;
• শ্রেষ্ঠ উপায় ও পদ্ধতিগুলি অবলম্বনই শুধুমাত্র নয়, অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে নতুন রূপে দেওয়া; এবং
• আমাদের উত্তরসূরীদের জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতই শুধু গড়ে তোলা নয়, বরং ঐক্যবদ্ধ মানবতাবাদে বিশ্বাসী এক বিশ্ব সংসার গড়ে তোলা।
আমাদের এই অসামান্য অংশীদারিত্বের সম্পর্কের মূল প্রতিশ্রুতিগুলিকে অবশ্যই বাস্তবায়িত করে তোলার প্রয়োজন।
স্পিকার মহোদয়,
পরিশেষে, আমি একথারই পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যৎ সম্ভব করে তোলাই আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
অতীতের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা আমরা পেছনে ফেলে এসেছি। আগামীদিনের এক মজবুত ভিত এখন তৈরি আমাদের জন্য।
ওয়াল্ট হুইটম্যানের উদ্ধৃতি অনুসারে :
“অর্কেস্ট্রার সমস্ত বাদ্যযন্ত্রে এখন ধ্বনিত হয়েছে সুর, সঙ্কেত ও নির্দেশও এসেছে অর্কেস্ট্রার পরিচালকের কাছ থেকে।”
এর সঙ্গে আমি যুক্ত করতে চাই কয়েকটি মাত্র শব্দ। নতুন ঐক্যের সুরের সঙ্কেত ধ্বনি আমরা শুনতে পাচ্ছি।
আমাকে এইভাবে সম্মানিত করার জন্য স্পিকার মহোদয় এবং বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই আপনাদের সকলেই।
PG/SKD/DM/S
Honoured & privileged to address a joint meeting of the US Congress. Here is my speech. https://t.co/rEw8uuhhEk pic.twitter.com/HxiEzX0Jbq
— Narendra Modi (@narendramodi) 8 June 2016
A big thank you to all Congressmen, Congresswomen, Senators and guests who attended the address.
— Narendra Modi (@narendramodi) 8 June 2016
Thanks @SpeakerRyan for the kind words & opportunity to address Congress. Was great meeting you earlier today. pic.twitter.com/ovxtFLGT5E
— Narendra Modi (@narendramodi) 8 June 2016