Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’, ৯১ তম পর্ব অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ


আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাতের এটা একানব্বইতম পর্ব। আমরা এর আগে কত কথা বলেছি, বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের কথা ভাগ করে নিয়েছি, কিন্তু এবার মন কি বাতের অন্য এক বিশেষত্ব আছে। এর কারণ হল এবারের স্বাধীনতা দিবসে ভারত নিজের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ করবে। আমরা সবাই এক অভূতপূর্ব আর ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে চলেছি। এ এক বড় সৌভাগ্য ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন। আপনারাও ভাবুন, যদি আমরা দাসত্বের পর্বে জন্ম নিতাম, তাহলে এই দিনের কল্পনা আমাদের জন্য কেমন হত? দাসত্ব থেকে মুক্তির সেই আকুলতা, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য সেই আকুলতা – কতটা ব্যাপ্ত ছিল। সেই দিন, যখন আমরা, লক্ষ লক্ষ দেশবাসীকে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে, সংগ্রাম করতে, আত্মবলিদান দিতে দেখতাম। যখন আমরা, প্রত্যেক দিন সকালে এই স্বপ্ন নিয়ে জেগে উঠতাম, যে আমার হিন্দুস্থান কবে স্বাধীন হবে আর হতেও পারে যে আমাদের জীবনে সেই দিনও আসত যখন বন্দেমাতরম আর ‘ভারত মা কি জয়’ ধ্বনি দিয়ে, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য নিজেদের জীবন সমর্পণ করতাম, যৌবন বিলিয়ে দিতাম।

বন্ধুরা, ৩১শে জুলাই অর্থাৎ আজকের দিনে, আমরা সকল দেশবাসী উধম সিংয়ের শহীদ হওয়ার ঘটনাকে প্রণাম জানাই। এমন অন্যান্য সংগ্রামীদের আমি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই যাঁরা দেশের জন্য নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন। বন্ধুরা, এটা দেখে আমার খুব আনন্দ হয় যে, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব এক জন-আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। সব ক্ষেত্র আর সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ এটার সঙ্গে যুক্ত ভিন্ন ভিন্ন কাজে অংশ নিচ্ছে। এমনই এক অনুষ্ঠান এই মাসের শুরুতে মেঘালয়ে হল। মেঘালয়ের বীর যোদ্ধা ইউ টিরোত সিংয়ের পুণ্যতিথিতে মানুষজন তাঁকে শ্রদ্ধা জানালেন। খাসি পাহাড়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আর সেখানকার সংস্কৃতির উপর আক্রমণ নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ইংরেজদের চেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেন টিরোত সিংজী। এই অনুষ্ঠানে বহু শিল্পী সুন্দর উপস্থাপনা করেন।

এঁরা ইতিহাস কে জীবন্ত করে তুলেছে। এখানে একটা কার্নিভালের আয়োজনও করা হয়, যেখানে, মেঘালয়ের মহান সংস্কৃতিকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। আজ থেকে কিছু সপ্তাহ আগে, কর্ণাটকে, অমৃতা ভারতী কন্নডার্থী নামের একটি অভিনব অভিযান চালানো হয়েছিল। সেখানে রাজ্যের ৭৫টি জায়গায় স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যার মধ্যে কর্নাটকের মহান প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনীকে স্মরণ করার পাশাপাশি স্থানীয় সাহিত্যি উপলব্ধিকেও সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল।

বন্ধুরা, এই জুলাই মাসে একটি অত্যন্ত আনন্দদায়ক প্রচেষ্টা হয়েছে যার নাম স্বাধীনতার  রেলগাড়ি আর রেলওয়ে স্টেশন। এই প্রয়াসের লক্ষ্য হলো যে, সাধারণ মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতীয় রেলের ভূমিকা সম্পর্কে জানুন। আমাদের দেশে এমন অনেক রেলস্টেশন আছে যা স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। আপনিও, এইসব রেলস্টেশনের সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন। ঝাড়খণ্ডের গোমো জংশনকে, বর্তমানে, সরকারি ভাবে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস জংশন গোমো হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। জানেন কেন? আসলে, এই স্টেশন থেকেই কালকা মেলে চেপে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে পালাতে সফল হয়েছিলেন। আপনারা সবাই লখনৌর কাছে কাকোরি রেলস্টেশনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। এই স্টেশনের সঙ্গে রামপ্রসাদ বিসমিল এবং আশফাক উল্লাহ খানের মতো অকুতোভয় সংগ্রামীদের নাম জড়িয়ে আছে। এখানে চলন্ত ট্রেন থেকে ইংরেজদের ধন-সম্পত্তি লুট করে বীর সংগ্রামীরা ইংরেজদের কাছে নিজেদের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন। আপনি যখনই তামিলনাড়ুর মানুষদের সঙ্গে কথা বলবেন তখন আপনি থুথুকুড়ি জেলার বাঞ্চি মনিয়াচ্চি জংশন সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই স্টেশন তামিল স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিক বাঞ্চিনাথন জীর নামানুসারে রাখা হয়েছে। এই স্থানেই ২৫ বছরের যুবক বাঞ্চি ব্রিটিশ কালেক্টরকে তার কৃতকর্মের শাস্তি দিয়েছিলেন।

বন্ধুরা, এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। সারা দেশে ২৪টি রাজ্যে ৭৫টি রেল স্টেশনের চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ৭৫টি রেল স্টেশনকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হচ্ছে। আপনারাও সময় বের করে আপনার  আশেপাশের এমন ঐতিহাসিক স্টেশনে যাওয়া উচিত। আপনি, স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সেইসব ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন যে বিষয়ে আপনি অজ্ঞ ছিলেন। আমি আশেপাশের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদন করব, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আবেদন করব যে নিজের স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এই সব স্টেশনে অবশ্যই যাবেন এবং পুরো ঘটনাক্রম সেই বাচ্চাদের বলবেন, বোঝাবেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট একটি বিশেষ আন্দোলন হিসেবে- ‘হর ঘর তিরঙ্গা-হর ঘর তিরঙ্গা’ সংগঠিত হচ্ছে। এই আন্দোলনের অংশ হয়ে, ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট, আপনারা অবশ্যই আপনার বাড়িতে তেরঙ্গা উত্তোলন করুন, বা আপনার বাড়িতে তেরঙ্গা লাগিয়ে রাখুন। তেরঙা আমাদের সংযুক্ত করে, দেশের জন্য কিছু করতে অনুপ্রাণিত করে। আমার একটি পরামর্শও আছে যে ২রা আগস্ট থেকে ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত, আমরা সবাই আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ছবিতে তিরঙ্গা লাগাতে পারি। যাইহোক, আপনি কি জানেন, আমাদের তেরঙ্গার সঙ্গেও ২রা আগস্টের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এই দিনটি পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া জির জন্মবার্ষিকী যিনি আমাদের জাতীয় পতাকার নকশা করেছিলেন। আমি ওঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের জাতীয় পতাকার কথা বলতে গেলে মহান বিপ্লবী মাদাম কামাকেও স্মরণ করব। তেরঙ্গা রূপদানে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বন্ধুগণ, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে আয়োজিত এই সমস্ত অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় বার্তা হল আমরা সকল দেশবাসী যেন আমাদের কর্তব্যকে পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করি। তবেই আমরা সেই অগণিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। তাঁদের স্বপ্নের ভারত গড়তে পারবো। তাই আমাদের আগামী ২৫ বছরের এই অমৃত কাল প্রতিটি দেশবাসীর জন্য একটি কর্তব্যকাল। দেশকে স্বাধীন করার জন্য আমাদের বীর যোদ্ধারা আমাদের এই দায়িত্ব দিয়েছেন, আমাদের তা পুরোপুরি পালন করতে হবে।

আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের এখনো জারি আছে। গোটা বিশ্ব এখনো এর সঙ্গে মোকাবিলা করছে। Holistic Healthcare-এ মানুষজনের রুচি বাড়ছে যা সকলের জন্য মঙ্গলজনক। আমরা সবাই জানি এক্ষেত্রে ভারতীয় পারম্পরিক পদ্ধতি কতখানি উপযোগি। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আয়ুষ, বিশ্বস্তরে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গোটা বিশ্বে আয়ুর্বেদ ও ভারতীয় ঔষধের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এই কারণে Ayush Exports রেকর্ড মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, আরও আনন্দের বিষয় হল, এই ক্ষেত্রে বেশ কয়েকাটি Start upও চোখে পড়ছে। কিছুদিন আগেই একটি Global Ayush Investment ও Innovation Summit অনুষ্ঠিত হয়। আপনারা জেনে অবাক হবেন, এখানে দশ হাজার কোটি টাকার লগ্নির Proposals এসেছে। করোনাকালে আরো একটি  ঘটনা ঘটেছে – ঔষধী (oushadhi) নিয়ে গবেষণা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়ে অনেক Research Study প্রকাশিত হচ্ছে। নিশ্চিত ভাবে এটাকে একটা ভাল সূচনা বলা যায়।

বন্ধুরা, দেশে বিভিন্ন ধরনের ঔষধী ও জড়িবুটি নিয়ে এক প্রশংসনীয় কাজ হয়েছে। সম্প্রতি,  জুলাই মাসেই Indian virtual herbarium-এর উদবোধণ করা হয়। আমরা কিভাবে ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্যে আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যোগস্থাপন করতে পারি, এ তার  উদাহরণ।  Indian  virtual herbarium, Preserved Plants অথবা Plant Parts-এর ডিজিটাল ছবির এক আকর্ষনীয় সংগ্রহ, যা web-এ বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। এই Virtual Herbarium-এ এখন লক্ষাধিক specimenও তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উপলদ্ধ। Virtual Herbarium-এ, ভারতের সমৃদ্ধ Botanical Diversity-র ছবি আমরা দেখতে পাই। আমার বিশ্বাস, Indian Virtual Herbarium, ভারতীয় বনস্পতি সংক্রান্ত  গবেষণায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতে আমরা দেশবাসীর এমন কিছু সাফল্যের কাহিনি সামনে নিয়ে আসি যা আমাদের মুখে হাসি ফোটায়। এরকম কোনো গল্প, যা আমাদের মুখে হাসি ফোটায় আবার স্বাদেও মিষ্টি হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আমাদের কৃষক বন্ধুরা, মধু উৎপাদনে এরকমই অসাধারণ কাজ করছেন। মধুর মিষ্টত্ব তাদের জীবনও বদলাচ্ছে, পাশাপাশি তাদের আয়ও বৃদ্ধি করছে।

হরিয়ানার যমুনানগরে, সুভাষ কম্বোজজী নামে এক মৌমাছি পালক বন্ধু থাকেন। উনি বৈজ্ঞানিক ভাবে মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপরে উনি কেবল ছয়টি বাক্স নিয়ে কাজ শুরু করেন। আজ উনি প্রায় দু’হাজার বাক্সে মৌমাছি পালন করেন। ওনার তৈরি এই মধু বহু রাজ্যে চালান হয়। জম্মুর ‘পল্লি’  গ্রামে বিনোদ কুমারজীও দেড় হাজারের বেশী কলোনিতে মৌমাছি পালন করছেন। উনি গত বছরে, রানি মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ নেন। এই কাজে উনি বছরে পনেরো থেকে কুড়ি লক্ষ টাকা আয় করছেন। কর্নাটকের আর একজন কৃষক বন্ধু আছেন-মধুকেশ্বর হেগড়েজী। উনি জানান, উনি ভারত সরকার থেকে পঞ্চাশটি মৌমাছির কলোনির জন্য subsidy নেন। আজ ওনার কাছে আটশোর বেশি কলোনি আছে এবং উনি কয়েক টন মধু বিক্রি করেন। উনি নিজের কাজে innovation নিয়ে এসেছেন। এখন উনি আমলকি মধু, জামের মধু, তুলসি মধুর মত বনস্পতি মধুও তৈরি করছেন। মধুকেশ্বজি, মধু উৎপাদনে আপনার innovation ও সাফল্য আপনাকে একজন স্বার্থকনামা ব্যক্তি করে তুলেছে।

বন্ধুরা, আপনারা জানেন, মধুকে আমাদের পারম্পরিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে কতখানি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আয়ুর্বেদ গ্রন্থে তো মধুকে অমৃত বলা হয়েছে। মধু শুধু স্বাদের জন্য নয়, রোগ নিরাময়ের জন্যও জরুরি। মধু উৎপাদন ক্ষেত্রে আজ এত বিপুল সম্ভাবনা যে যারা প্রোফেসনাল বিষয় নিয়ে  পড়াশোনা করছেন, তারাও এটিকে তাদের স্বনির্ভর রোজগারের উপায় হিসেবে দেখছেন। এমনই একজন যুবক হলেন উত্তর প্রদেশের গোরখপুরের নিমিত সিংহ। নিমিতজী বি.টেক করেছেন। ওর বাবা ডাক্তার। কিন্তু, পড়াশোনা শেষ করার পর, নিমিতজী চাকরি করার বদলে স্বনির্ভর হয়ে কিছু কিরার সিদ্ধান্ত নেন। উনি মধু উৎপাদনের কাজ আরম্ভ করেন। quality check. এর জন্য উনি লখনউ তে একটা ল্যাবরেটরিও তৈরি করেন। নিমিতজী এখন মধু ও bee wax থেকে ভাল উপার্জন করছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেন।

আজ দেশ এমন যুবকদের কঠোর পরিশ্রমের জন্যই মধুর বড় উৎপাদক হয়ে উঠেছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন আমাদের দেশে মধুর রপ্তানিও বেড়েছে। দেশে National Beekeeping and Honey মিশনের মতো প্রচার চালানো হয়েছে, কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং আমাদের মধুর মিষ্টত্ব বিশ্বে পৌঁছাতে শুরু করেছে। এখনো এই ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আমি চাই আমাদের তরুণেরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন, এতে যোগ দিয়ে লাভান্বিত হোন ও নতুন সম্ভাবনাগুলি পূর্ণ করুন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি হিমাচল প্রদেশ থেকে ‘মন কি বাত’-এর জন্য একজন শ্রোতা, শ্রীমান আশিস বহলজির কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন চম্বা’র ‘মিঞ্জর মেলার’। আসলে, ভুট্টার ফুল কে ‘মিঞ্জর’ বলা হয়। যখন ভুট্টা গাছে ফুল ফোটে, তখন মিঞ্জর মেলা পালিত হয় এবং এই মেলায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত, এই সময়ে মিঞ্জার মেলা চলছে। আপনি যদি হিমাচলে গিয়ে থাকেন, তাহলে এই মেলা দেখতে চাম্বা যেতে পারেন। চাম্বা এতোটাই সুন্দর যে এখানের লোকসঙ্গীতে বার বার  বলা হয় –

“চাম্বে এক দিন ওণা কনে মহীনা রয়না” |

অর্থাৎ যারা একদিনের জন্য চাম্বায় আসেন, তারা এঁর সৌন্দর্য দেখে মাসখানেক এখানেই থেকে যান।

বন্ধুরা, আমাদের দেশে মেলারও অনেক সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে। মানুষ ও মনকে সংযুক্ত করে মেলা। যখন বর্ষার পর হিমাচলে খরিফ ফসল পেকে ওঠে, তখন সেপ্টেম্বর মাসে সিমলা, মান্ডি, কুল্লু এবং সোলানের সবাই সইরি বা আনন্দভ্রমণে মেতে ওঠেন।

সেপ্টেম্বরে ‘জাগরা মেলা’ও আসতে চলেছে। জাগরা মেলায় মহাসু দেবতার আহ্বানে বিসু গান গাওয়া হয়। হিমাচলের সিমলা, কিন্নর, সিরমৌর সহ উত্তরাখণ্ডের অনেক জায়গায় মহাসু দেবতার এই জাগর উৎসব পালিত হয়।

বন্ধুরা, আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, জনজাতি সমাজের মধ্যেও অনেক ঐতিহ্যবাহী মেলা রয়েছে। তার মধ্যে কিছু মেলা জনজাতিগুলির সংস্কৃতি সম্পর্কিত, আর কিছু মেলা রয়েছে  জনজাতিগুলির ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর সঙ্গে সম্পর্কিত; যেমন আপনার যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে তেলেঙ্গানার ‘মেডারম’এ চারদিনের ‘সমক্কা-সরলম্মা যাত্রা’ মেলাতে একবার অবশ্যই যাবেন। এই মেলাকে তেলেঙ্গানার মহাকুম্ভ’ও বলা হয়ে থাকে। ‘সরলাম্মা যাত্রা’ মেলার এই উৎসব জনজাতিগোষ্ঠীর দু’জন বীরাঙ্গনা ‘সমক্কা’ এবং সরলম্মা’কে সম্মান জানাতে পালিত হয়। শুধু তেলেঙ্গানা’ই নয়, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কোয়া জনজাতির মানুষের ভাবাবেগের দিক থেকেও এই মেলাটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। অন্ধ্রপ্রদেশের ‘মারীদম্মার মেলা’ও জনজাতি-গোষ্ঠী মানুষের বিশ্বাস সঙ্গে যুক্ত একটা বড় মেলা। মারীদম্মার মেলা জ্যৈষ্ঠের অমাবস্যা থেকে আষাঢ়ের অমাবস্যা পর্যন্ত চলে; এবং সেই সময় সেখানকার জনজাতি-গোষ্ঠীর মানুষ, এই উৎসব উপলক্ষে শক্তির উপাসনা করেন। সেখানে পূর্ব-গোদাবরীর পেদ্দাপুরমে, মারীদম্মা মন্দির’ও রয়েছে। একই ভাবে রাজস্থানে, গরাসিয়া উপজাতির লোকেরা বৈশাখের শুক্লা চতুর্দশীতে ‘সিয়াওয়া কা মেলা’ বা ‘মানখাং-রো মেলা’ নামে এক উৎসবের আয়োজন করেন।

ছত্তিশগড়ে, বাস্তারের নারায়নপুরে ‘মাওলি মেলা’ নামে খুবই উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের ‘ভগোরিয়া মেলা’ও অত্যন্ত বিখ্যাত। কথিত আছে, রাজা ভোজের সময় ‘ভগোরিয়া মেলা’ শুরু হয়েছিল। সেই সময়ের ভীল রাজা কাসুমরা এবং বালুন তাদের নিজ নিজ রাজধানীতে প্রথমবার এই মেলার আয়োজন করেছিলেন।

সেই দিন থেকে আজও, এই মেলা, একই উৎসাহের সঙ্গে আয়োজন করা হয়। একইভাবে, গুজরাটের তর্নেটার এবং মাধোপুরের মতন অনেক মেলা বিখ্যাত। ‘মেলা’ নিজেই, আমাদের সমাজ, জীবনের শক্তির একটি বড় উৎস। আপনার আশেপাশেও এমন অনেক মেলার আয়োজন হয়তো করা হয়ে থাকে। আধুনিক সময়ে, ‘এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর চেতনাকে শক্তিশালী করার জন্য সমাজের এই পুরনো যোগসূত্রগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যুবসমাজকে অবশ্যই এই  চেতনার  সঙ্গে যোগ দিতে হবে এবং যখনই আপনি এই ধরনের মেলায় যাবেন, সেখানকার ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়াতেও শেয়ার করুন। আপনি চাইলে একটি নির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে অন্যান্য মানুষও সেইসব মেলা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

আপনি সংস্কৃতি মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও ছবিগুলি আপলোড করতে পারেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রক একটি প্রতিযোগিতাও শুরু করতে চলেছে। যাঁরা মেলার সেরা ছবি পাঠাবেন তাঁদেরও পুরস্কৃত করা হবে, তাই দেরি না করে মেলা ঘুরে দেখুন, মুহূর্তগুলির ছবি share করুন, হয়ত আপনিও পুরস্কার পেয়ে যেতে পারেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, ‘মন কি বাত’-এর একটি পর্বে আমি বলেছিলাম যে খেলনা রপ্তানিতে ভারতের একটি পাওয়ার হাউসে পরিণত হওয়ার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। খেলাধুলা ও খেলায় ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নিয়ে আমি বিশেষভাবে আলোচনা করেছি। ভারতের স্থানীয় খেলনা ঐতিহ্য এবং প্রকৃতি উভয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, পরিবেশ বান্ধব। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে ভারতীয় খেলনা শিল্পের সাফল্য শেয়ার করতে চাই। আমাদের তরুণ, স্টার্ট আপ এবং উদ্যোক্তাদের কারণে, আমাদের খেলনা শিল্প যা করেছে, আমরা যে সাফল্য অর্জন করেছি তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।

আজ যখন ভারতীয় খেলনার কথা হয় তখন সব দিকে ভোকাল ফর লোকাল এর প্রতিধ্বনিই শোনা যায়। আপনাদের এটা জেনেও ভাল লাগবে যে ভারতে এখন বিদেশ থেকে আসা খেলনার সংখ্যা ক্রমাগত কম হতে শুরু করেছে। প্রথমে যেখানে ৩০০০ কোটি টাকার বেশি খেলনা আমদানি করা হতো, সেখানে বর্তমানে এই সংখ্যা ৭০% পর্যন্ত কমানো গেছে আর খুশির কথা এই যে, এই সময়ে ভারত ২৬০০ কোটি টাকারও বেশি খেলনা বিদেশে রপ্তানি করেছে, অথচ প্রথম দিকে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার খেলনা ভারত থেকে বাইরে যেত, আর আপনারা তো জানেনই যে এইসব করোনা কালেই হয়েছে। ভারতের টয় সেক্টর নিজেকে ট্রান্সফর্ম করে দেখিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় উৎপাদকরা এখন ভারতীয় পুরাণ, ইতিহাস আর সংস্কৃতি ভিত্তিক খেলনা বানাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলনার যে ক্লাসটার আছে, খেলনা প্রস্তুতকারক যে ছোট ছোট উদ্যমী আছে, তারা এই জন্য অনেক লাভবান হচ্ছেন। এই ছোট ছোট উদ্যমীদের বানানো খেলনা এখন পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতের খেলনা নির্মাতারা বিশ্বের বিখ্যাত গ্লোবাল টয় ব্র্যান্ডস এর সাথে মিলে কাজ করছেন। আমার এটাও ভারী ভালো লাগছে, যে আমাদের স্টার্টআপ সেক্টরও খেলনার জগতের উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছে। তারা এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন মজাদার উদ্ভাবনও করছেন। ব্যাঙ্গালোরে ‘সুমি টয়েজ’ নামের একটি স্টার্টআপ ইকো ফ্রেন্ডলি খেলনার উপর ফোকাস করছে। গুজরাটের ‘আর্কিডজু ‘ কম্পানি এ.আর বেসড্ ফ্ল্যাশ কার্ড আর এ.আর বেসড্ স্টোরি বুকস বানাচ্ছে। Pune-র কম্পানি ‘ফানভেনশন লার্নিং’, খেলনা আর Activity Puzzle এর মাধ্যমে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর অংকে বাচ্চাদের আগ্রহ বাড়াতে সচেষ্ট। খেলনার দুনিয়ায় এরকম অসাধারণ কাজে যুক্ত সকল ম্যানুফ্যাকচারার আর স্টার্টআপ দের আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

আসুন, আমরা সবাই মিলে ভারতীয় খেলনাকে বিশ্বজুড়ে আরো বেশি জনপ্রিয় করে তুলি। এরই সঙ্গে আমি অভিভাবকদের কাছেও অনুরোধ করতে চাই, তারা যেন বেশি করে দেশীয় খেলনা, puzzles এবং games কেনেন।

বন্ধুরা, ক্লাসরুম হোক বা খেলার মাঠ, আমাদের যুব সম্প্রদায় আজ প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশকে গৌরবান্বিত করছেন। এ মাসেই পি. ভি. সিন্ধু সিঙ্গাপুর ওপেনে নিজের প্রথম খেতাব জয় করেছেন। নীরজ চোপড়াও নিজের অসাধারণ প্রদর্শন বজায় রেখে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের জন্য রৌপ্য পদক জিতেছেন। আয়ারল্যান্ড প্যারা ব্যাডমিন্টন ইন্টারন্যাশনালেও আমাদের ক্রীড়াবিদরা এগারোটি পদক জিতে দেশের গৌরব বাড়িয়েছেন। রোমে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপেও ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা দুর্দান্ত প্রদর্শন করেছেন। আমাদের অ্যাথলিট সুরজ তো গ্রেকো-রোমান ইভেন্টে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘ ৩২ বছর পর রেসলিং এর এই ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছেন। ক্রীড়াবিদদের জন্য তো এই গোটা মাসটাই অ্যাকশনে ভরপুর ছিল। চেন্নাইতে ৪৪ তম চেস অলিম্পিয়াডের আয়োজন করাও ভারতের জন্য অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। ২৮শে জুলাই এই টুর্নামেন্টের শুভ সূচনা হয় এবং তার ওপেনিং সেরিমনিতে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। একই দিনে UK তে কমনওয়েলথ গেমসও শুরু হয়েছে। তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর ভারতীয় দল সেখানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। আমি সব ক্রীড়াবিদ ও অ্যাথলিটদের সকল দেশবাসীর পক্ষ থেকে শুভকামনা জানাচ্ছি। এটাও আমার কাছে খুব আনন্দের বিষয় যে ভারত Fifa Under 17 Women’s World Cup-এরও আয়োজন করতে চলেছে।

এই টুর্নামেন্টটি অক্টোবরের কাছাকাছি হবে, যা  খেলার প্রতি দেশের মেয়েদের উৎসাহ বৃদ্ধি করবে। বন্ধুরা, কিছুদিন আগেই সমগ্র দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আমি ওই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন জানাই যারা কঠিন পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দ্বারা সাফল্য অর্জন করেছে। মহামারী চলাকালীন বিগত দু’বছর অত্যন্ত উদ্বেগজনক ছিল। এই পরিস্থিতিতেও যেভাবে আমাদের দেশের তরুণেরা,  যে সাহস এবং সংযমের পরিচয় দিয়েছে,  তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি সকলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমরা দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা জয়ন্তীতে দেশের যাত্রার সঙ্গে আমাদের আলাপচারিতা শুরু করেছি। পরের বার যখন আমাদের কথা হবে তখন আমাদের আগামী ২৫ বছরের যাত্রা শুরু  হয়ে যাবে। নিজের ঘরে ও আপনজনদের ঘরে যাতে আমাদের প্রিয় ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা ওড়ে সেই জন্য সকলকে একত্রিত হতে হবে। আপনারা এইবার স্বাধীনতা দিবস কি ভাবে উদযাপন  করলেন, উল্লেখযোগ্য কি কি করলেন সেগুলো আমাকে নিশ্চয়ই জানাবেন। পরের বার আমরা আমাদের অমৃতকালের নানান রঙ্গিন অধ্যায় বিভিন্ন দিক নিয়ে আবার কথা বলব। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অনুমতি দিন অনেক-অনেক ধন্যবাদ।