Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’-এর ৯৬ তম পর্ব অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ


আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ আমরা “মন কি বাতের” ছিয়ানব্বইতম পর্বে একসঙ্গে মিলিত হচ্ছি। “মন কি বাতের” আগামী পর্ব ২০২৩ সালের প্রথম পর্ব হবে। আপনারা যে সব বার্তা পাঠিয়েছেন তাতে বিদায়ী ২০২২ সাল সম্পর্কে আলোচনা করার কথাও আগ্রহ নিয়ে বলেছেন। অতীতের অবলোকন চিরকাল আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতির প্রেরণা দেয়। ২০২২ সালে দেশের মানুষের সামর্থ্য, তাদের সহযোগিতা, তাদের সঙ্কল্প, তাদের সাফল্যের বিস্তার এতটাই বেশি ছিল যে “মন কি বাত”-এ সবকিছুর বর্ণনা করা কঠিন হবে।  সত্যিই ২০২২ অনেক দিক থেকে প্রেরণাদায়ী ছিল, অদ্ভূত ছিল। এই বছর ভারত নিজের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ করেছে আর এই বছরই অমৃতকালের প্রারম্ভ হয়েছে। এই বছর দেশ নতুন গতি পেয়েছে, প্রত্যেক দেশবাসী একটার পর একটা বড় কাজ করেছেন। ২০২২ সালের বিভিন্ন সফলতা আজ গোটা বিশ্বে ভারতের জন্য এক বিশেষ স্থান নির্মাণ করেছে। ২০২২ অর্থাৎ ভারতের বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থব্যবস্থার মর্যাদা অর্জন করা, ২০২২ অর্থাৎ ভারতের ২২০ কোটি ভ্যাকসিনের অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান পার করে যাওয়ার রেকর্ড, ২০২২ অর্থাৎ রপ্তানিতে ভারতের চার’শো বিলিয়ন ডলারের আশ্চর্য পরিসংখ্যান অতিক্রম করে যাওয়া, ২০২২ অর্থাৎ দেশে জনে-জনে ‘আত্মনির্ভর ভারত’এর সঙ্কল্প গ্রহণ করা, প্রয়োগ করে দেখানো, ২০২২ অর্থাৎ ভারতের প্রথম স্বদেশী এয়ারক্র্যাফ্ট কোরিয়ার আই-এন-এস বিক্রান্তকে স্বাগত জানানো, ২০২২ অর্থাৎ স্পেস, ড্রোন আর ডিফেন্স সেক্টরে ভারতের সমূহ অগ্রগতি, ২০২২ অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে ভারতের দাপট। খেলাধুলোর ময়দানেও, সেটা কমনওয়েলথ গেমসেই হোক অথবা আমাদের মহিলা হকি টিমের জয়, আমাদের তরুণরা জবরদস্ত সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছে।

বন্ধুরা, এই সব কিছুর সঙ্গে আরও একটা কারণে ২০২২ সালকে মনে করা হবে। সেটা হল ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ ভাবনার বিস্তার। দেশের মানুষ একতা আর সংহতির উদযাপনের জন্য অনেক অদ্ভূত আয়োজন করেছিলেন। গুজরাতের মাধবপুর মেলা হোক যেখানে রুক্মিণী বিবাহ আর ভগবান কৃষ্ণের উত্তর-পূর্বের নানা সম্পর্ক উদযাপন করা হয় বা কাশী-তমিল সঙ্গমম হোক, এই সব পর্বের মধ্যেও একতার নানা বর্ণ ধরা পড়েছে। ২০২২ সালে দেশবাসীরা আর এক অমর ইতিহাস রচনা করেছেন। অগাস্ট মাসে চলা ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ অভিযান কেই বা ভুলতে পারবে?  এ এমন এক মুহূর্ত যা সব দেশবাসীর পক্ষে রোমহর্ষক ছিল। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরের এই অভিযানে গোটা দেশ তিরঙ্গাময় হয়ে গিয়েছিল। ছ’কোটিরও বেশি মানুষ তো তিরঙ্গার সঙ্গে সেল্ফি তুলে পাঠিয়েছেন। আজাদীর এই অমৃত মহোৎসব আগামী বছরও একইভাবে চলবে – অমৃতকালের ভীতকে আরও মজবুত করবে।

বন্ধুরা, এই বছর ভারত জি টোয়েন্টি গোষ্ঠীর অধ্যক্ষতা করার দায়িত্ব পেয়েছিল। আমি গতবার এ ব্যাপারে বিস্তারিত চর্চা করেছি। ২০২৩ সালে জি টোয়েন্টির উৎসাহকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে আমাদের, এক জনআন্দোলনের রূপ দিতে হবে এই আয়োজনকে।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ সারা বিশ্বে বড়দিনের উৎসবও আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। এটি যিশু খ্রিস্টের জীবন এবং শিক্ষাকে স্মরণ করার একটি দিন। আমি আপনাদের সকলকে বড়দিনের অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুরা, আজ আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ী জিরও জন্মদিন। তিনি একজন মহান রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন যিনি দেশকে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রত্যেক ভারতীয়ের হৃদয়ে তাঁর একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। আমি কলকাতা থেকে আস্থাজির একটি চিঠি পেয়েছি। এই চিঠিতে তিনি তার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে সেই সময় তিনি PM Museum পরিদর্শন করেছিলেন। এই মিউজিয়ামে অটলজির গ্যালারি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। সেখানে অটলজির সঙ্গে ক্লিক করা ছবি তাঁর কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। অটলজির গ্যালারিতে, আমরা দেশের জন্য তাঁর মূল্যবান অবদানের ঝলক দেখতে পাই। পরিকাঠামো হোক, শিক্ষা হোক বা বিদেশনীতি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি ভারতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন। আমি আরও একবার অটলজিকে অন্তর থেকে প্রণাম জানাই।

বন্ধুরা, আগামীকাল ২৬-এ ডিসেম্বর ‘বীর বাল দিবস’ এবং এই উপলক্ষে আমি দিল্লিতে সাহেবজাদা জোরাবার সিং জি এবং সাহেবজাদা ফতেহ সিং জি-এর বলিদানকে উৎসর্গিকৃত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য লাভ করব। দেশ সাহেবজাদে ও মাতা গুজরির বলিদানকে চিরকাল মনে রাখবে।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানে বলা হয় –

‘সত্যম্‌ কিম প্রমানম্‌, প্রত্যক্ষম কিম প্রমানম

অর্থাৎ সত্যের প্রমাণের প্রয়োজন হয় না, যা প্রত্যক্ষ তারও প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কথা আসে, তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – প্রমাণ, Evidance । বহু শতাব্দী ধরে ভারতীয় জীবনের একটি অংশ – যোগ এবং আয়ুর্বেদ। আমাদের শাস্ত্রে Evidence Based Research-এর অভাব, যা সবসময়ই একটি চ্যালেঞ্জ ! ফলাফল দৃশ্যমান, কিন্তু প্রমাণ নেই । কিন্তু, আমি খুশি যে Evidence Based Medicine এর যুগে, যোগ এবং আয়ুর্বেদ এখন আধুনিক যুগের পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হচ্ছে । আপনারা সবাই মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের কথা শুনে থাকবেন। এই প্রতিষ্ঠানটি Recharch, Inovation এবং ক্যান্সার কেয়ার-এ অনেক সুনাম অর্জন করেছে। এই কেন্দ্রের একটি Intensive Research-এ জানা গিয়েছে যে যোগব্যায়াম স্তন ক্যান্সার রোগীদের জন্য খুব কার্যকর। টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার আমেরিকায় অনুষ্ঠিত অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এক স্তন ক্যান্সার সম্মেলনে তাদের গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেছে। এই ফলাফল বিশ্বের বড় বড় বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ, টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার প্রমান সহকারে জানিয়েছে কীভাবে রোগীরা যোগব্যায়াম থেকে উপকৃত হয়েছেন। এই কেন্দ্রের গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত যোগব্যায়াম অভ্যাসে স্তন ক্যান্সারের রোগীদের, রোগের পুনরাবৃত্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।

ভারতীয় পারম্পরিক চিকিৎসার এটি প্রথম উদাহরণ যার পশ্চিমী কড়া মাপদন্ডে পরখ হয়েছে। এর পাশাপাশি, এটি প্রথম study, যাতে Brest Cancer আক্রান্ত মহিলাদের যোগ এর কারণে quality of life এর উন্নতি হওয়ার কথা জানা গেছে। শুধু তাই নয়, long term benefits এর ব্যাপারেও জানা গেছে। Tata Memorial Centre নিজেদের পরীক্ষার এই ফলাফল প্যারিসের European Society of Medical Oncology র সম্মেলনে উপস্থাপিত করেছে। 

বন্ধুরা, আজকের সময়ে ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি যত evidence  based হবে, তত বেশী গোটা দুনিয়ায়  তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এই ভাবনাকে মাথায় রেখে দিল্লীর AIIMSএ এক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এখানে আমাদের পারম্পরিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলিকে validate করার জন্য, ছয় বছর আগে Centre for integrative medicine and research গঠন করা হয়। এখানে latest modern techniques এবং research  methods ব্যবহার করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ২০টি পেপার প্রকাশিত করে ফেলেছে। American College of Cardiology র জার্নালে  প্রকাশিত পেপারে syncope (সিঙ্কপী) তে পীড়িত রুগীদের যোগ এর দ্বারা সুফল লাভের কথা বলা হয়েছে। ঠিক এইভাবে, যোগ কিভাবে মাইগ্রেনে রুগীদের আরাম দিয়েছে সেই কথা বলা হয়েছে Neurology Journal এর পেপারে। এছাড়াও, আরও অন্যান্য অসুখে যোগ কিভাবে উপকারী সেই নিয়ে study চলছে, যেমন heart diseases,  depression, sleep disorder, pregnancy র সময়ে মহিলাদের নানা শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি।

বন্ধুরা, কিছুদিন আগেই আমি গোয়াতে ছিলাম,  World Ayurvedic Congress-এর জন্য। এখানে ৪০ টি দেশের ডেলিগেটরা অংশগ্রহণ করেন এবং এখানে ৫৫০ এরও বেশী Scientific Paper Present করা হয়। ভারত সহ গোটা দুনিয়ার ২১৫ টি কোম্পানি  এখানকার Exhibition এ তাদের Product Display করে। চারদিন ব্যাপী এই expo তে  এক লাখেরও বেশী মানুষ আয়ুর্বেদের সংশ্লিষ্ট তাদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন, enjoy করেন। এই Ayurveda Congress-এও আমি সারা বিশ্ব থেকে আসা আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞদের সামনে evidence based research  বিষয়টির ওপর জোর দিই। যেভাবে এই বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সময়ে আমরা যোগ ও আয়ুর্বেদের শক্তি সকলে দেখছি, এই ক্ষেত্রে Evidence Based Research আগামীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে। আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ, যোগ, আয়ুর্বেদ তথা আমাদের পারম্পরিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে যদি আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকে তাহলে তা অবশ্যই স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, বিগত কিছু বছরে আমরা স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জকে পরাজিত করতে পেরেছি। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের Medical  Experts,  Scientists ও দেশবাসীর ইচ্ছাশক্তি। আমরা ভারত থেকে Smallpox, Polio ও ‘Guinea  Worm’-এর মত রোগকে শেষ করে দেখিয়েছি। 

আজ ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতাদের আমি আরো এক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানাতে চাই, যা এখন শেষের কাছাকাছি চলে এসেছে। এই সমস্যা, এই রোগ হলো কালা জ্বর। এই রোগের সংক্রমণ Sand Fly অর্থাৎ বেলে মাছির কামড়ানোর ফলে ছড়ায়। যখন কেউ কালাজ্বরে আক্রান্ত হন তখন তার কয়েক মাস যাবত জ্বর হয়, রক্তাল্পতা, শারীরিক দুর্বলতা ও ওজন কমে যায়। এই রোগে আবালবৃদ্ধবণিতা, যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু সকলের প্রচেষ্টায়, কালা জ্বর নামক এই রোগ, এবার দ্রুতগতিতে শেষের পথে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত কালা জ্বরের প্রকোপ চার রাজ্যের ৫০ টিরও বেশি জেলায় ছড়িয়েছিল। কিন্তু এখন তা বিহার ও ঝাড়খন্ডের চারটি জেলায় সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস, বিহার ঝাড়খণ্ডের মানুষের চেষ্টা ও তাদের সচেতনতা এই চার জেলা থেকেও কালা জ্বরকে নির্মূল করতে সরকারের এই প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করবে। কালা জ্বর আক্রান্ত জায়গার বাসিন্দাদের কাছে আমার অনুরোধ যে তারা দু’টি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন। প্রথমত, Sand Fly বা বেলে মাছির নিয়ন্ত্রণ, ও দ্বিতীয়তঃ দ্রুততার সঙ্গে রোগের সনাক্তকরণ ও তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা। কালা জ্বরের চিকিৎসা খুবই সহজ, চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ খুবই কার্যকর। শুধু আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর হলে অবহেলা করবেন না ও বেলে মাছি মারার জন্য দরকারি কীটনাশক ব্যবহার করতে থাকুন। ভাবুন, যখন  আমাদের দেশ কালা জ্বর মুক্ত হয়ে যাবে, তখন তা আমাদের সকলের জন্য কতটা খুশির বিষয় হয়ে উঠবে। এই ভাবনা থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা যে আমরা ভারতকে ২০২৫ এর মধ্যে টি. বি. মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। আপনারা জানেন, বিগত দিনে যখন টি. বি. মুক্ত ভারত অভিযান শুরু হয়েছিল তখন হাজারো মানুষ টি. বি. রোগীদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। তারা নিক্ষয় মিত্র হয়ে টি. বি. রোগীদের দেখাশোনা করছেন, তাদের আর্থিক সাহায্য করছেন। জনসেবা ও জনগণের অংশগ্রহণের এই শক্তি, প্রতিটি কঠিন লক্ষ্য অর্জন করে দেখায়।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের পরম্পরা ও সংস্কৃতি মা গঙ্গার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। গঙ্গাজল আমাদের জীবনধারার অভিন্ন অংশ এবং আমাদের শাস্ত্রেও বলা হয়েছে:

নমামি গঙ্গে তব্‌ পাদ্‌ পঙ্কজং,
সুর অসুরৈঃ বন্দিত দিব্য রুপম্‌।
ভুক্তিম্‌ চ মুক্তিম্‌ চ দদাসি নিত্যম্‌,
ভাব অনুসারেণ সদা নরাণাম্‌।।

অর্থাৎ, হে মা গঙ্গা আপনি আপনার ভক্তদের তাদের ভাবনার অনুরূপ সাংসারিক সুখ, আনন্দ, আর মোক্ষ প্রদান করুন। সবাই আপনার পবিত্র চরণের বন্দনা করেন। আমিও আপনার পবিত্র চরণে আমার প্রণাম অর্পণ করছি। শতাব্দীর পর শতাব্দী কলকল করে বহমান মা গঙ্গাকে স্বচ্ছ রাখা আমাদের সবারই অনেক বড় দায়িত্ব। এই উদ্দেশ্য নিয়ে আট বছর আগে আমরা “নমামি গঙ্গে” অভিযান শুরু করেছিলাম। আমাদের সবার জন্য এটি অত্যন্ত গৌরবজনক যে ভারতের এই প্রচেষ্টা পৃথিবীব্যাপী প্রশংসা পাচ্ছে। ইউনাইটেড নেশনস “নমামি গঙ্গে” মিশনকে ইকোসিস্টেম রিস্টোর করতে পারার টপ টেন ইনিশিয়েটিভ এর মধ্যে সামিল করেছে। এটি আরও খুশির কথা যে সমগ্র বিশ্বে ১৬০ টি এরকম initiative-এর মধ্যে “নমামি গঙ্গে” এই সম্মান পেয়েছে।

বন্ধুরা, “নমামি গঙ্গে” অভিযানের সবথেকে বড় চালিকা শক্তি হলো মানুষজনের অক্লান্ত সহযোগিতা। “নমামি গঙ্গে” অভিযানে গঙ্গা প্রহরী এবং গঙ্গা দূত এর ভূমিকা খুব গুরুত্ব পূর্ণ। তারা গাছ লাগানো, ঘাট  পরিষ্কার, গঙ্গা আরতি, পথ নাটিকা, পেইন্টিং, আর কবিতার মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার করে চলেছেন। এই অভিযান থেকে bio-diversity তেও অনেক বদল দেখা যাচ্ছে। ইলিশ মাছ, গঙ্গা ডলফিন এবং কচ্ছপের বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যায় অনেক বৃদ্ধি হয়েছে। গঙ্গার ইকোসিস্টেম পরিষ্কার হওয়ার জন্য জীবন ধারণের অন্যান্য সুযোগও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে “জলজ আজিবিকা মডেল”-এর ব্যাপারে আমি আলোচনা করতে চাই, যেটা বায়োডাইভার্সিটি-কে মাথায় রেখে বানানো হয়েছে। এই tourism based boat safari  ২৬টি লোকেশনে শুরু করা হয়েছে। স্বভাবতই “নমামি গঙ্গে” মিশনের বিস্তার, এর সীমানা, নদীর পরিচ্ছন্নতার থেকেও অনেক বড়। এটি একদিকে যেমন আমাদের ইচ্ছা শক্তি ও নিরলস প্রচেষ্টার একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ তেমনি পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে বিশ্বকেও এক নতুন পথ দেখাতে চলেছে।

আমার প্রিয় দেশবাসী,  যখন আমাদের সঙ্কল্প ও শক্তি মজবুত হয়, তখন বড় থেকে বড় চ্যালেঞ্জও সহজ হয়ে যায়। এর উদাহরণ স্থাপন করেছেন সিকিম এর থেগু গ্রামের সাঙ্গে শেরপাজি। ইনি বিগত ১৪ বছর থেকে ১২,০০০ ফুট এরও বেশি উচ্চতায় পরিবেশ সংরক্ষণ এর কাজ করে যাচ্ছেন। সাঙ্গে জি সাংস্কৃতিক ও পৌরাণিক মাহাত্ম্য যুক্ত Tsomgo (সোমগো)  lake-কে পরিষ্কার রাখার সংকল্প গ্রহণ করেছেন। নিজের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় উনি এই গ্লেসিয়ার লেক এর রং রূপই  বদলে দিয়েছেন।  ২০০৮ সালে সাঙ্গে শেরপা জি যখন স্বছতার এই অভিযান শুরু করেছিলেন তখন উনি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। 

কিন্তু দেখতে দেখতে তাঁর এই মহৎ কাজে যুবসমাজ এবং গ্রামবাসীদের পাশাপাশি পঞ্চায়েতের তরফ থেকেও প্রচুর সহযোগিতা মেলা শুরু হয়। এখন যদি আপনি Tsomgo (সোমগো) Lake দেখতে যান, তাহলে দেখতে পাবেন ওখানে চারপাশে বড় বড় Garbage Bins রয়েছে।  এখন এখানে জমা হওয়া আবর্জনা recycling-এর জন্য পাঠানো হয়। এখানে যে সব পর্যটকেরা আসেন, তাদেরকে কাপড়ের তৈরী Garbage bags-ও‌ দেওয়া হয়ে থাকে যাতে তারা যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলেন। এখন অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এই হ্রদটিকে দেখার জন্য প্রতিবছর প্রায় ৫ লক্ষ পর্যটক এখানে আসেন। Tsomgo (সোমগো) lake সংরক্ষণের এই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সাঙ্গে শেরপা-জি’কে বহু সংস্থা সম্মান-প্রদান’ও করেছে। এই সমস্ত প্রয়াসের কারণেই সিকিমকে বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে গণ্য করা হয়। আমি সাঙ্গে শেরপা-জি এবং তাঁর সহযোগীদের পাশাপাশি সারাদেশ জুড়ে যাঁরা পরিবেশ সংরক্ষণের মত ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত, সেই সমস্ত মানুষদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

বন্ধুরা, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে স্বচ্ছ-ভারত মিশন আজ প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। ২০১৪ সালে এই জনবিপ্লব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিতে আমাদের দেশের মানুষ বহু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এই  উদ্যোগ কেবলমাত্র সমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তা সরকারি দপ্তরের অভ্যন্তরেও সমানভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রমাগত এই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ– জঞ্জাল-আবর্জনা পরিষ্কার হওয়ার ফলে, অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরানোর ফলে দপ্তরে অনেক জায়গা বেরিয়ে আসে, নতুন space পাওয়া যায়। আগে, জায়গার অভাবে অনেক দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে অফিস চালাতে হতো। বর্তমানে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এত জায়গা বেরিয়ে আসছে, যে এখন একই স্থানে সমস্ত দফতরকে জায়গা করে দেওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক– মুম্বাই, আমেদাবাদ, কলকাতা ও শিলং সহ বহু শহরে এমনই উদ্যোগ নিয়েছে এবং আর তার ফলে আজ তাদের দুই-তিন তলা বিল্ডিং-এর সমান বহু জায়গা যা নতুন করে কাজে লাগানো যায়, তা মিলে গিয়েছে। সম্পদের optimum utilization-এর যে উত্তম অনুভূতি আমরা আপনা আপনিই পাচ্ছি তা এই স্বচ্ছতার কারণে। সমাজে, প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটা শহরে, একইভাবে বিভিন্ন দপ্তরে এই উদ্যোগ সমস্ত দিক থেকে সমগ্র দেশের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী প্রমাণিত হচ্ছে।

আমার প্রিয় দেশবাসী। আমাদের দেশে নিজেদের শিল্প ও সংস্কৃতিকে ঘিরে আমরা নতুন ভাবে সজাগ হয়েছি। একটি নতুন চেতনা জেগে উঠেছে। “মন কি বাতে” আমরা এই ধরনের চর্চা প্রায়শই করে থাকি। যেমন শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সমাজের সমষ্টিগত সম্পদ, এইরকমই এটা কে  এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সমাজের ওপরেই। এইরকমই একটি সফল প্রয়াস লাক্ষাদ্বীপে হচ্ছে। এখানে কল্পেনি দ্বীপে একটি ক্লাব আছে যার নাম কুমেল ব্রাদার্স চ্যালেঞ্জার্স ক্লাব। এই ক্লাব যুবকদের স্থানীয় ঐতিহ্যপূর্ণ কলা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য উৎসাহ প্রদান করে। এখানে যুবকদের স্থানীয় লোকশিল্প কোলকলি, পরীচাকলি, কিলিপ্পট্ট্‌ আর পারম্পরিক গানের ট্রেনিং দেওয়া হয়। অর্থাৎ পুরনো ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের হাতে সুরক্ষিত থাকছে, আগে এগিয়ে চলেছে, এবং বন্ধুরা, আমি খুবই খুশি যে এই ধরনের প্রয়াস শুধু দেশে নয় বিদেশেও হচ্ছে। সম্প্রতি জানা গেছে যে দুবাইয়ের কালারি  ক্লাব গিনিস  বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে। কেউ ভাবতেই পারে দুবাইয়ের ক্লাব রেকর্ড করেছে তো তাতে ভারতের কি? আসলে এই রেকর্ড ভারতের প্রাচীন মার্শাল আর্ট কলারীপট্টু-র  সঙ্গে জড়িত। এই রেকর্ড একসঙ্গে করা সর্বাধিক মানুষের কলারীর প্রদর্শন। দুবাইতে কলারী ক্লাব, দুবাই পুলিশের সহযোগে এই প্ল্যানটি করে এবং UAE-র রাষ্ট্রীয় দিবসে প্রদর্শন করে। এই অনুষ্ঠানে চার বছরের শিশু থেকে শুরু করে ষাট বছরের মানুষেরা কলারীর দক্ষতার সর্বোত্তম ভাবে প্রদর্শন করে। ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্ম কিভাবে একটি প্রাচীন পরম্পরাকে গভীর মনোযোগের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

বন্ধুরা, “মন কি বাতের” শ্রোতাদের আমি কর্নাটকের গডক জেলার বাসিন্দা কেমোশ্রী জি-এর সম্বন্ধে জানাতে চাই। কেমশ্রী  জি দক্ষিণে কর্নাটকের কলা-সংস্কৃতিকে পুণর্জীবিত করার লক্ষ্যে বিগত ২৫ বছর ধরে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। আপনি কল্পনা করতে পারেন কত দীর্ঘ ওঁর তপস্যা। আগে তো উনি হোটেল ম্যানেজমেন্ট এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু নিজের সংস্কৃতি ও পরম্পরা নিয়ে ওঁর টান এত গভীর ছিল যে এটাকেই তিনি জীবনের মিশন বানিয়ে নিয়েছেন। উনি “কলা চেতনা” নামক একটি মঞ্চ বানিয়েছেন। এই মঞ্চ আজ কর্নাটকের এবং দেশ-বিদেশের  কলাকুশলীদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজিত করে। এখানে লোকাল আর্ট এবং কালচারকে প্রমোট করার জন্য নানা ধরনের উদ্ভাবনী কাজকর্ম হয়। 

বন্ধুগণ, কলা সংস্কৃতির  প্রতি দেশবাসীর এই উৎসাহ নিজেদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্বের ভাবনারই প্রকাশ। আমাদের দেশের নানা কোনায়, এরকম কতইনা রঙ ছড়িয়ে আছে। আমাদের উচিত সেগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে যত্নে সংরক্ষণের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যাওয়া।

আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের বহু জায়গায় বাঁশ দিয়ে অনেক সুন্দর ও উপযোগী দ্রব্য তৈরি করা হয়। বিশেষ করে জনজাতি অঞ্চলে বাঁশের দক্ষ কারিগর ও শিল্পীরা রয়েছেন। যখন থেকে দেশে বাঁশের সঙ্গে সম্পর্কিত অতীতের আইন কানুন বদলানো হয়েছে তখন থেকে এর একটা বড় বাজার গড়ে উঠেছে। মহারাষ্ট্রের পালঘরের মতো স্থানেও জনজাতি সমাজের মানুষেরা বাঁশ দিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রোডাক্ট তৈরি করছেন। বাঁশ দিয়ে তৈরি বাক্স, চেয়ার, চায়ের পাত্র, ঝুড়ি, ট্রে  ইত্যাদি জিনিস খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই শিল্পীরা bamboo ঘাস দিয়ে খুব সুন্দর পোশাক ও সাজগোজের জিনিসও তৈরি করছেন। এতে জনজাতি মহিলাদের উপার্জনও হচ্ছে, আবার তাঁদের দক্ষতার পরিচয়ও সবাই পাচ্ছেন।

বন্ধুরা, কর্নাটকের এক দম্পতির সুপারির তন্তুর সাহায্যে তৈরি বহু ইউনিক প্রোডাক্টস ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট পর্যন্ত পৌঁছেছে। কর্নাটকের শিবমোগার এই দম্পতি হলেন শ্রীমান সুরেশ আর ওঁর স্ত্রী শ্রীমতি মৈথিলী। এঁরা সুপারির তন্তু দিয়ে ট্রে, প্লেট, হ্যান্ডব্যাগ থেকে শুরু করে বহু ডেকোরেটিভ জিনিস বানাচ্ছেন। এমন তন্তু দিয়ে বানানো চপ্পলও আজকাল মানুষ খুব পছন্দ করছেন। তাঁদের প্রোডাক্টস আজ লন্ডন ও ইউরোপের বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। এটাই তো আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ আর পরম্পরাগত দক্ষতার গুণ যা সবাই পছন্দ করছেন, ভারতের এই পরম্পরাগত দক্ষতায় সারা দুনিয়া সাসটেনেবল ফিউচার এর দিশা খুঁজে পাচ্ছে। আমাদের নিজেদেরও এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে। আমরা নিজেরাও যেন এমন স্বদেশী ও লোকাল প্রোডাক্ট বেশি করে ব্যবহার করি ও অন্যদেরও উপহার দিই। এতে আমাদের পরিচয়ও দৃঢ় হবে, স্থানীয় অর্থ ব্যবস্থাও মজবুত হবে এবং অধিক সংখ্যায় মানুষের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।

আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন আমরা ধীরে ধীরে “মন কি বাত” এর ১০০তম পর্বের অভূতপূর্ব মুহূর্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আমি অনেক দেশবাসীর চিঠি পেয়েছি যাতে তাঁরা ১০০তম পর্বের বিষয়ে উৎসাহ ভরে জানতে চেয়েছেন। ১০০ তম পর্বে আমরা কী কথা বলব, সেই পর্বকে কীভাবে বিশেষ করে তুলব সে ব্যাপারে আপনারা আমাকে পরামর্শ দিলে আমার খুব ভালো লাগবে। আগামী পর্বে আমরা ২০২৩ সালে মিলিত হব। আমি আপনাদের সবাইকে ২০২৩ এর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই বছরটাও দেশের জন্য স্মরণীয় হোক, দেশ নতুন নতুন শিখর স্পর্শ করুক – আমাদের সবাই মিলে এই সংকল্প করতে হবে ও তাকে বাস্তব রূপও দিতে হবে। এ সময় বহু মানুষই ছুটির মেজাজে আছেন। আপনারা এই উৎসবের, অবসরের আনন্দ খুব ভালোভাবে উপভোগ করুন, কিন্তু একটু সতর্কও থাকুন।

আপনারাও দেখছেন পৃথিবীর অনেক দেশে করোনা বাড়ছে। তাই আমাদের মাস্ক আর হাত ধোয়ার মতো সাবধানতার প্রতি আরো বেশি করে মনোযোগী হতে হবে। আমরা সাবধান থাকলে সুরক্ষিতও থাকব আর আমাদের আনন্দে কোন বাধাও পড়বে না। এ কথার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের সবাইকে আরো একবার শুভকামনা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।