Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘‘মন কি বাত’’, (১১৩ তম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ


আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাতে ফের একবার যুক্ত হওয়ার সুযোগ হল আমার। আজকের এই পর্ব আমাকে আবেগময় করে তুলেছে, অনেক পুরনো স্মৃতি জেগে উঠছে  – কারণ এটাই, যে মন কি বাতের আমাদের এই পথচলার দশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। দশ বছর আগে মন কি বাতের সূচনা তেসরা অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে হয়েছিল, আর এ কত পবিত্র সংযোগ যে এই বছর তেসরা অক্টোবর যখন মন কি বাতের দশ বছর পূর্ণ হবে তখন নবরাত্রির প্রথম দিন হবে। মন কি বাতের এই দীর্ঘ যাত্রার এমন বেশ কিছু ধাপ রয়েছে যেগুলো কখনই ভুলতে পারব না আমি। মন কি বাতের কোটি-কোটি শ্রোতা আমাদের এই যাত্রার এমন সঙ্গী যাঁদের নিরন্তর সহযোগিতা পেয়ে চলেছি আমি। দেশের বিভিন্ন কোণ থেকে তথ্য পাঠিয়েছেন তাঁরা। মন কি বাতের শ্রোতারাই এই অনুষ্ঠানের প্রকৃত সূত্রধর। সাধারণভাবে এমন একটা ধারণা চালু যে যতক্ষণ মুখরোচক আলোচনা না হচ্ছে, নেতিবাচক কথা না হচ্ছে ততক্ষণ সেটা বেশি মনযোগ পায় না। কিন্তু মন কি বাত প্রমাণ করেছে যে দেশের মানুষ সদর্থক তথ্যের জন্য কতটা মুখিয়ে আছেন। সদর্থক আলোচনা, প্রেরণাদায়ী উদাহরণ, উৎসাহ বাড়ায় এমন কাহিনী, খুব পছন্দ করেন মানুষজন। যেমন একটা পাখি আছে, চাতক যার সম্বন্ধে বলা হয় যে সে শুধু বৃষ্টির জলই পান করে। মন কি বাতে আমরা দেখেছি যে মানুষজনও চাতক পাখির মত, দেশের অর্জিত সাফল্য, মানুষের গোষ্ঠীগত সাফল্যের কথা কত গর্বের সঙ্গে শোনেন।

মন কি বাতের ১০ বছরের যাত্রা এমন এক মালা প্রস্তুত করেছে যাতে প্রত্যেক পর্বে নতুন গাথা, নতুন নতুন কৃতিত্ব,  নতুন ব্যক্তিত্বদের কথা যুক্ত হয়েছে। আমাদের সমাজে সমষ্টিগত ভাবনা থেকে যে যে কাজ হচ্ছে সেগুলি মন কি বাত এর মাধ্যমে সম্মানিত হয়। আমার মনও গর্বে ভরে ওঠে যখন আমি মন কি বাতের জন্য আসা চিঠিগুলো পড়ি। আমাদের দেশে কত কত প্রতিভাবান মানুষ আছেন! দেশ আর সমাজের সেবা করার জন্য কি আবেগ তাদের! নিঃস্বার্থভাবে সেবা করার জন্য তাঁরা তাদের সমগ্র জীবন সমর্পণ করেন। তাদের সম্বন্ধে জেনে আমি শক্তিতে, উদ্দীপনায় ভরপুর হয়ে উঠি। মন কি বাতের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আমার কাছে মন্দিরে গিয়ে ঈশ্বর দর্শন করার মতোই। মন কি বাতের প্রতিটি কথা, প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি চিঠি যখন আমি স্মরণ করি, তখন আমার মনে হয় যে, জনতা জনার্দন – যারা আমার কাছে ঈশ্বরের রূপ, আমি যেন তাদের দর্শন করছি।

বন্ধুরা, আমি আজ দূরদর্শন, প্রসার ভারতী এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গে সংযুক্ত সকল মানুষকে আমার অভিনন্দন জানাই। তাদের অক্লান্ত প্রয়াসে মন কি বাত এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও রিজিওনাল টিভি চ্যানেলদের ধন্যবাদ জানাই যারা ক্রমাগত এই অনুষ্ঠান দেখিয়েছেন। মন কি বাত এর মাধ্যমে আমরা যে প্রসঙ্গগুলো উত্থাপন করেছি সেগুলো নিয়ে অনেক মিডিয়া হাউস প্রচার চালিয়েছেন। আমি প্রিন্ট মিডিয়াকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তারা একে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। আমি সেই ইউটিউবারদেরও ধন্যবাদ জানাই যারা মন কি বাতের উপর অনুষ্ঠান করেছেন। মান কি বাত অনুষ্ঠানটি দেশের ২২ টি ভাষার পাশাপাশি ১২ টি বিদেশী ভাষাতেও শোনা যায়। আমি আনন্দিত হই যখন মানুষ বলেন যে তারা মন কি বাত অনুষ্ঠান তাদের স্থানীয় ভাষায় শুনেছেন। আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই এটা জানেন যে মন কি বাত অনুষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে একটি কুইজ কম্পিটিশনও চলছে, যাতে যে কোন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারেন। Mygov.in-এ গিয়ে আপনি এই কম্পিটিশনে অংশ নিতে পারেন এবং পুরস্কারও জিততে পারেন।

আজ, এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমি আপনাদের সকলের কাছে আশীর্বাদ কামনা করছি। শুদ্ধ-চিত্ত ও সম্পূর্ণ সমর্পনের সঙ্গে আমি যেন  এভাবেই ভারতবাসীর গৌরবের গান গেয়ে যেতে পারি।  দেশের সামগ্রিকতার যে শক্তি তাকে যেন এভাবেই আমরা সবাই celebrate করতে পারি- ঈশ্বরের কাছে এটাই আমার প্রার্থনা, জনতা-জনার্দনের কাছে এটাই আমার প্রার্থনা।

আমার প্রিয় দেশবাসী, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন অংশে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষার এই সময় আমাদের মনে করিয়ে দেয় জল সংরক্ষণ কতটা প্রয়োজন, জল সঞ্চিত করে রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ! বৃষ্টির সময়ে ধরে রাখা জল, জল-সংকটের মাসগুলোয় অনেক উপকারে লাগে, আর এই ভাবনা থেকেই ‘catch the rain’-এর মতো প্রচারাভিযানের সূত্রপাত। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে বহু মানুষ জল সংরক্ষণ নিয়ে নতুন করে পথ দেখাচ্ছেন। এরকমই একটি প্রচেষ্টা  উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি’তে দেখা গেছে। আপনারা তো জানেনই যে ঝাঁসি বুন্দেলখন্ডে অবস্থিত, যেখানকার পরিচিতি জলসংকটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেখানে, ঝাঁসির কিছু মহিলাদের জন্য ঘুরারী নদী নবজীবন লাভ করেছে। সেই মহিলারা self help group-এর সঙ্গে যুক্ত এবং তাঁরা ‘জল সহেলী’ হয়ে এই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই মহিলারা যেভাবে মৃতপ্রায় ঘুরারী নদীকে বাঁচিয়েছেন, সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। সেই ‘জল সহেলী’রা বস্তায় বালি ভরে চেকড্যাম তৈরি করেছেন, বৃষ্টির জলের অপচয় বন্ধ করেছেন, আর নদীকে জলে টইটম্বুর করে তুলেছেন। সেই মহিলারা প্রচুর জলাশয় নির্মাণে এবং সেগুলোকে বাঁচিয়ে তোলার ক্ষেত্রে উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। এভাবে সে অঞ্চলের জলের সমস্যা তো দূর হয়েছেই তার সঙ্গে তাদের মুখে খুশীর হাসিও ফুটেছে।

বন্ধুরা, কখনো নারী শক্তি জলশক্তিকে সমৃদ্ধ করে, তো কোথাও জল শক্তি, নারী শক্তিকে সুদৃঢ় করে। আমি মধ্যপ্রদেশের দুটি বড় প্রেরণাদায়ক প্রচেষ্টা সম্বন্ধে জানতে পেরেছি। এখানে ডিন্দরীর রায়পুরা গ্রামে একটি বড় ঝিল নির্মাণের ফলে ভূ-জলস্তর অনেক বেড়ে গেছে। যার সুবিধা এখানকার গ্রামের মহিলারা পেয়েছেন। ‘সারদা আজীবিকা স্বর্নিভর গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত মহিলারা মাছ চাষের মাধ্যমে এক নতুন ব্যবসার সুযোগও পেয়েছেন। এই মহিলারা ফিশ পার্লারও শুরু করেছেন, যেখানে মাছ বিক্রি করার ফলে তাদের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুর এলাকার মহিলাদের প্রচেষ্টাও অনেক প্রশংসনীয়। এখানকার খোঁপ গ্রামের একটি বড় ঝিল যখন শুকিয়ে যেতে শুরু করে, তখন ওখানকার মহিলারা একে পুনর্জীবিত করার সংকল্প নেন। ‘হরি বাগিয়াঁ স্বর্নিভর গোষ্ঠীর’ মহিলারা ঝিল থেকে বিশাল মাত্রায় আবর্জনা নিষ্কাশন করেন, আর সেই আবর্জনা অনুর্বর জমিতে ফ্রুট ফরেস্ট তৈরি করার কাজে লাগান। এই মহিলাদের পরিশ্রমের ফলে ঝিলে শুধুমাত্র জলস্তর বৃদ্ধি পায়নি, ফসলের ফলনও অনেক বেড়ে গেছে। দেশের প্রতিটি কোণে হওয়া জল সংরক্ষণের এইরকম প্রচেষ্টা জলের সংকট থেকে বাঁচার জন্য অনেক কার্যকারী হতে চলেছে। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে আপনারা আপনাদের চারপাশে হওয়া এরকম প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই অংশগ্রহণ করবেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী উত্তরাখণ্ডের উত্তর কাশিতে এক সীমান্তবর্তী গ্রাম হল ঝালা। এখানকার যুবকেরা নিজেদের গ্রামকে স্বচ্ছ রাখার জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।

ওনারা নিজেদের গ্রামে ‘ধন্যবাদ প্রকৃতি’ বা বলতে পারেন ‘thank you nature’ অভিযান চালানো শুরু করেছে। এর অধীনে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে গ্রাম পরিস্কার করার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।  গ্রামের রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা সংগ্রহ করে, সেগুলো, গ্রামের বাইরে, নির্দিষ্ট স্থানে, ফেলে দেওয়া হয়। এরফলে ঝালা গ্রাম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকছে এবং গ্রামের মানুষও সচেতন হচ্ছে। একটু ভেবে দেখুন, প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি গলি,  প্রতিটি পাড়া যদি একইভাবে ‘thank you’ অভিযান শুরু করে দেয়, তাহলে কত বড়ো পরিবর্তন আসতে পারে।

বন্ধুরা, পুদুচেরী সমুদ্র সৈকতে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। এইখানে রম্যাজি নামে একজন মহিলা, ‘মাহে’ পৌরসভা এবং এর আশেপাশের এলাকার যুবাদের নিয়ে গঠিত একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই দলের যুবারা তাদের প্রচেষ্টায় মাহে এলাকা এবং বিশেষ করে সেখানকার সমুদ্র উপকূল সম্পূর্ণ পরিষ্কার রাখছে।

বন্ধুরা, আমি এখানে মাত্র দুটি প্রচেষ্টার কথা আলোচনা করেছি, কিন্ত আমরা যদি চারপাশে তাকাই, তাহলে, দেখতে পাব যে, দেশের প্রতিটি প্রান্তে অবশ্যই ‘স্বচ্ছতা’ নিয়ে কোনো না কোনো অনন্য প্রচেষ্টা চলছে।  আর কিছুদিনের মধ্যে, ২রা অক্টোবর, ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ ১০ বছর পূর্ণ করবে। এই বিশেষ সময়টি  সেই মানুষগুলিকে অভিনন্দন জানানোর সময়, যাঁরা এই অভিযানকে ভারতীয় ইতিহাসে এত বৃহৎ গণআন্দোলনে পরিণত করেছেন। এটি মহাত্মা গান্ধীজির প্রতিও সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধাঞ্জলি, যিনি সারা জীবন এই উদ্দেশ্যে নিজেকে সমর্পিত করেছিলেন।

বন্ধুরা, আজ এটি ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর সাফল্য যে ‘waste to wealth’ মন্ত্রটি মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।  লোকেরা ‘Reduce, Reuse এবং Recycle’  সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেছেন, এই নিয়ে উদাহরণও দিচ্ছেন  ।

এখন যেমন কেরলের কোঝিকোডে একটি অসাধারণ প্রচেষ্টার কথা আমি জানতে পারলাম। এখানে ৭৪ বছর বয়সী সুব্রহমনিয়ন  বাবু ২৩ হাজারের বেশি চেয়ার সারাই করে আবার তাদের ব্যবহার-যোগ্য করে তুলেছেন। মানুষ তো তাঁকে reduce, reuse, recycle, অর্থাৎ RRR (triple R) Champion বলেও ডাকেন। ওঁর এই অনন্য প্রয়াসগুলি কোঝিকোডের সিভিল স্টেশন, PWD এবং LIC-র দপ্তরে দেখতে পাওয়া যেতে পারে।

          বন্ধুরা, স্বচ্ছতা নিয়ে চলতে থাকা এই অভিযানের সঙ্গে অধিক থেকে অধিকতর মানুষকে জুড়তে হবে এবং এটি এমন একটি অভিযান যা কোন এক দিন বা এক বছরের নয়, এটি যুগ-যুগ ধরে নিরন্তর করে যাওয়ার মত একটি কাজ। যতদিন না ‘স্বচ্ছতা’ আমাদের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে ততদিন কাজ করে যেতে হবে ।

          আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা নিজেদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীদের বা সহকর্মীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্বচ্ছতা অভিযানে অবশ্যই অংশগ্রহণ করুন। আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে স্বচ্ছ ভারত মিশনের সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।

          আমার প্রিয় দেশবাসী আমারা সবাই  নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করি । এবং আমি তো সবসময়ই বলি, ”বিকাশ ভি,  বিরাসত ভি”, অর্থাৎ   “প্রগতি-ও, ঐতিহ্য-ও”।

          এই কারণেই আমার সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরের একটি বিশেষ দিক নিয়ে আমি বহু বার্তা পাচ্ছি। আরো একবার আমাদের প্রাচীন শিল্পকর্মের প্রত্যাবর্তন নিয়ে অনেক চর্চা হচ্ছে।

          আমি এই ব্যাপারটি নিয়ে আপনাদের অনুভূতিগুলি বুঝতে পারছি এবং মন কি বাতের শ্রোতাদের এই বিষয়ে বলতেও চাই।

বন্ধুরা, আমার আমেরিকা সফরের সময় মার্কিন সরকার ভারতবর্ষকে প্রায় ৩০০টি প্রাচীন শিল্পকর্ম ফিরিয়ে দিয়েছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বাইডেন আন্তরিকতার সঙ্গে ডেলাওয়ারে নিজের বাসভবনে এর মধ্যে থেকে কিছু শিল্পকর্ম আমায় দেখান।

ফিরিয়ে দেওয়া শিল্পকর্ম, টেরাকোটা, পাথর, হাতির দাঁত, কাঠ, তামা এবং কাঁসার মতো জিনিস দিয়ে তৈরি। এর মধ্যে কয়েকটির বয়স ৪০০০ বছর পুরোনো। ৪০০০ বছরের প্রাচীন শিল্পকর্ম থেকে ১৯ শতকের শিল্পকর্ম আমেরিকা ফিরিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফুলদানি, দেবী-দেবতাদের টেরাকোটার ফলক, জৈন তীর্থঙ্করদের মূর্তি এবং ভগবান বুদ্ধ ও ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মূর্তি। ফিরিয়ে দেওয়া জিনিসগুলির মধ্যে, অনেক পশুপ্রাণীর মৃর্তি রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের টেরাকোটা টাইলস, যেখানে পুরুষ ও মহিলাদের চিত্র রয়েছে, তা খুবই আকর্ষণীয়। এর মধ্যে কাঁসার তৈরি ভগবান শ্রী গণেশের মূর্তি রয়েছে যা দক্ষিণ ভারতের। ফেরত পাওয়া জিনিসগুলির মধ্যে বিপুল সংখ্যায়ে ভগবান বিষ্ণুর ছবিও রয়েছে। এটি মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত । এই শিল্পকর্মগুলি দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের পূর্বপুরুষরা সুক্ষ বিষয়গুলোর ওপরও কতটা গুরুত্ব দিতেন। শিল্প সম্পর্কে তাঁদের অনন্য বোধ ছিল। এসব শিল্পকর্মের অনেকগুলোই চোরাচালান বা অন্যান্য অবৈধ উপায়ে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যা একটি গুরুতর অপরাধ। এটি নিজেদের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার মতো অপরাধ। তবে আমি খুবই আনন্দিত যে গত এক দশকে এমন অনেক নিদর্শন এবং আমাদের বহু প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জিনিস ঘরে ফিরেছে। আজ ভারতও, অন্য অনেক দেশের সঙ্গে, এই বিষয়ে কাজ করছে। আমি বিশ্বাস করি, যখন আমরা আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করি, তখন বিশ্বও এটিকে সম্মান করে। আর তারই ফল আজ পৃথিবীর অনেক দেশ আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া বেশ কিছু শিল্পকর্ম ফিরিয়ে দিচ্ছে।

আমার প্রিয় বন্ধুগণ, যদি আমি প্রশ্ন করি, একটি শিশু কোন ভাষা সবচেয়ে সহজে এবং দ্রুত শেখে – তাহলে আপনার উত্তর হবে ‘মাতৃভাষা’। আমাদের দেশে প্রায় কুড়ি হাজার ভাষা এবং উপভাষা রয়েছে, এবং এগুলো সবই কোনো না কোনো ব্যক্তির মাতৃভাষা তো বটেই। এমন কিছু ভাষা আছে যাকে ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এইসব ভাষাগুলির সংরক্ষাণের জন্য আজ অভিনব প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এমন একটি ভাষা হলো আমাদের santhali ভাষা। Santhali-কে digital innovation-এর সহযোগিতায় একটি নতুন রূপ দেওয়ার অভিযান শুরু করা হয়েছে। santhali আমাদের দেশের বহু রাজ্যের নিবাসী santhali জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা বলে থাকেন। ভারতবর্ষের বাইরেও বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান এ santhali জনজাতির আদিবাসীরা বাস করেন। Santhali ভাষার online পরিচিতি তৈরী করার জন্য ওড়িশার ময়ূরভাঞ্জের বাসিন্দা শ্রীমান রামজিৎ টুডু একটি  অভিযান চালাচ্ছে । রামজিৎ জি এমন একটি digital platform তৈরী করেছেন যার মাধ্যমে santhali ভাষার সাথে যুক্ত সাহিত্য পড়া যেতে পারে ও santhali ভাষায় লেখাও যেতে পারে। আসলে কয়েক বছর আগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু করার পর উনি এইটা ভেবে হতাশ হন যে উনি নিজের মাতৃ ভাষায় কোনো বার্তা দিতে পারছেননা। এর পর থেকেই উনি santhali ভাষার লিপি ওলচিকি টাইপ করার পথ খোঁজা শুরু করেন। নিজের কিছু বন্ধুদের সঙ্গে মিলে উনি ওলচিকি তে type করার প্রযুক্তি তৈরী করে ফেলেন। আজ ওর প্রয়াসের জন্য santhali ভাষায় প্রকাশিত লেখা অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

বন্ধুরা, যখন আমাদের দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে সম্মিলিত অংশগ্রহণের মিলন হয় তখন গোটা সমাজের সামনে আশ্চর্য ফলাফল বেরিয়ে আসে। এর সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ – “এক পেড় মা কে নাম’ অর্থাৎ একটি গাছ মায়ের নামে”- এই আশ্চর্যজনক অভিযান মানুষজনের সম্মিলিত অংশগ্রহণের ফলে এমন এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে যা সত্যি খুবই প্রেরণাদায়ক। পরিবেশ সংরক্ষণ কে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই অভিযানে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে মানুষ যুক্ত হয়ে বিস্ময়কর কাজ করে দেখিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সংখ্যায় গাছ লাগিয়ে নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি করেছে। এই অভিযানে উত্তরপ্রদেশে ২৬ কোটির থেকেও বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। গুজরাটের মানুষজন ১৫ কোটির চেয়েও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। রাজস্থানের শুধু আগস্ট মাসেই ছয় কোটির বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। দেশের হাজার হাজার স্কুলও এই অভিযানে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করছেন।

           বন্ধুরা, আমাদের দেশে গাছ লাগানোর অভিযানে যুক্ত কতশত উদাহরণ সামনে আসছে। এমনই এক উদাহরণ তেলেঙ্গানার কে. এন. রাজশেখরজি। গাছ লাগানো নিয়ে তাঁর অঙ্গীকার আমাদের সবাইকে অবাক করেছে। প্রায় চার বছর আগে তিনি গাছ লাগানোর অভিযান শুরু করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে প্রতিদিন অন্তত একটি গাছ অবশ্যই লাগাবেন। তিনি কঠোর ব্রতের মতো তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন। ইতিমধ্যেই পনেরশোরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা এই বছর এক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া সত্বেও তিনি তার সংকল্প থেকে নড়েননি। আমি এই সকল প্রচেষ্টাকে হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি “এক পেড় মা কে নাম”-র এই পবিত্র অভিযানে আপনিও অবশ্যই যুক্ত হন।

আমার প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা দেখেছেন আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতেও ধৈর্য হারান না, বরং সেখান থেকে শেখেন। এমনই একজন মহিলা সুবাশ্রী, যিনি নিজের চেষ্টায় দুষ্প্রাপ্য এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শেকড়-বাকড়-এর একটি আশ্চর্য বাগান তৈরি করেছেন। উনি তামিলনাড়ুর মাদুরাই-এর বাসিন্দা। পেশায় উনি একজন শিক্ষিকা, কিন্তু ঔষধি গাছ অর্থাৎ মেডিকেল হার্বস-এর প্রতি ওঁর গভীর আগ্রহ রয়েছে। আশির দশকে উনি এই আগ্রহ প্রথমবার অনুভব করেছিলেন যখন ওঁর বাবাকে একটি বিষাক্ত সাপে কামড়ায়। তখন প্রচলিত কিছু শেকড়-বাকড় ওঁর বাবার সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিতে অনেকটা সাহায্য করেছিল। এই ঘটনার পরে উনি আমাদের ঐতিহ্যবাহী ঔষধি এবং শেকড়-বাকড়ের খোঁজ শুরু করেন। আজ মাদুরাইয়ের বেরিচিয়ুর গ্রামে ওঁর বিশেষ হার্বাল গার্ডেন আছে যেখানে পাঁচশোরও বেশি দুষ্প্রাপ্য ঔষধি গাছ পাওয়া যায়। নিজের এই বাগান তৈরি করার জন্য উনি কঠিন পরিশ্রম করেছেন। এক একটি গাছ খোঁজার জন্য উনি অনেক দূরে যাত্রা করেছেন, এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং বহুবার অন্য অনেক মানুষের কাছে সাহায্য নিয়েছেন। কোভিডের সময়ে উনি ইমিউনিটি বাড়াতে পারে এমন শেকড়-বাকড় মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আজ ওঁর হার্বাল গার্ডেন দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। উনি সকলকে ঔষধি গাছের সম্বন্ধে তথ্য প্রদান করেন এবং তাদের উপকারিতার বিষয়ও বলেন। সুবাশ্রী আমাদের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন যা প্রায় কোটি কোটি বছর ধরে আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ওঁর হার্বাল গার্ডেন আমাদের অতীতের সঙ্গে ভবিষ্যতের সংযোগ ঘটায়। ওঁকে আমার অনেক শুভকামনা।

বন্ধুরা বদলে যাওয়া এই সময়ে কাজের ধরন অর্থাৎ নেচার অফ জবস পাল্টাচ্ছে, এবং নতুন নতুন সেক্টর অর্থাৎ ক্ষেত্র আত্মপ্রকাশ করছে। যেমন গেমিং, অ্যানিমেশন, রিল মেকিং, ফ্লিম মেকিং এবং পোস্টার  মেকিং।

যদি আপনি এর মধ্যে কোনো বিষয়ে পারদর্শীতা দেখাতে পারেন, তাহলে আপনারা প্রতিভা প্রদর্শনের অনেক বড় মঞ্চ পেতে পারে। যদি আপনি কোনো ব্যান্ডের সাথে যুক্ত থাকেন বা কোনো কমিউনিটি রেডিওর জন্য কাজ করেন, তাহলেও আপনি অনেক বড় সুযোগ পেতে পারেন। আপনাদের প্রতিভা ও সৃজশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রালয় , “create in India,” এই থিমের অন্তর্গত ২৫টি চ্যালেঞ্জ শুরু করেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো নিশ্চয়ই আপনাদের খুব মনোগ্রাহী হবে। কিছু চ্যালেঞ্জ সঙ্গীত, শিক্ষা এমনকি anti piracy – এই বিষয়ের উপর রয়েছে। এই গোটা আয়োজনে বেশ কয়েকটি পেশাদার সংস্থা যুক্ত আছে যারা এই চ্যালেঞ্জগুলিকে পুরো সাপ্পোর্ট দিচ্ছে। অংশগ্রহণ করার জন্য আপনারা wavesindia.org তে লগ ইন করতে পারেন। সারা দেশের ক্রিয়েটারদের কাছে আমার অনুরোধ তারা এগিয়ে আসুক ও এতে অংশগ্রহণ করে তাদের সৃজনশীলতাকে সবার সামনে তুলে ধরুন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, এই মাসে আরও একটি গুরুত্বপুর্ন অভিযানের দশ বছর পূর্ণ হল। এই অভিযানের সাফল্যের পেছনে দেশের বড় বড় উদ্যোগপতি থেকে শুরু করে ছোটো দোকানদার সকলের অবদান রয়েছে। আমি কথা বলছি মেক ইন ইন্ডিয়া র। আজ আমার এটা দেখে খুবই আনন্দ হয় যে দরিদ্র, মাঝারি অর্থাৎ MSME-গুলি এই অভিযান থেকে খুবই লাভবান হয়েছে। এই অভিযান প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষকে নিজের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে। আজ ভারত manufacturing-এর powerhouse হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং দেশের যুবশক্তির কারনে গোটা পৃথিবীর নজর আমাদের উপর। Automobile হোক, textile হোক, aviation হোক, electronics হোক বা defence- প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের দেশের রপ্তানি লাগাতার বেড়ে চলেছে । দেশে ক্রমাগত FDI এর হার বৃদ্ধি পাওয়াও, আমাদের মেক ইন ইন্ডিয়ার সাফল্যের কাহিনী তুলে ধরছে ।

          এখন আমরা মূলত দুটি বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছি। প্রথম বিষয়টি হল কোয়ালিটি অর্থাৎ গুনমান । আমাদের দেশের তৈরি প্রতিটি বস্তু যেন বিশ্বমানের হয়। দ্বিতীয় বিষয়টি হল ‘vocal for local’, অর্থাৎ স্থানীয় বস্তুগুলোকে যেন আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মন কি বাত অনুষ্ঠানে আমি #myproductmypride, এই বিষয়ে আলোচনা করেছি। Local product কে গুরুত্ব দিলে আমাদের দেশের মানুষের কিভাবে সুবিধে হয়, তা একটা উদাহরন শুনলেই আপনারা বুঝতে পারবেন ।

মহারাষ্ট্রের ভাণ্ডারা জেলায় বস্ত্রশিল্পের একটি প্রাচীন পরম্পরা আছে; “ভান্ডারা তসর সিল্ক হ্যান্ডলুম”। তসর সিল্ক তার ডিজাইন, রং এবং পোক্ত বুনটের জন্যে খ্যাত। এর সংরক্ষণের কাজে ভাণ্ডারার কিছু কিছু এলাকার প্রায় ৫০ টিরও বেশি self help group নিয়োজিত রয়েছে। এই ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণও যথেষ্ট বেশি। এই সিল্ক অত্যন্ত দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং স্থানীয় মানুষদের কর্মসংস্থান দিয়ে চলেছে। আর, এটাই তো make in India র স্পিরিট।

বন্ধুরা, উৎসবের এই মরসুমে আপনারা সেই পুরোনো সংকল্প আবারো স্মরণ করে নেবেন। যাই কিনবেন, তা made in India হতেই হবে। যাই উপহার দেবেন, তাও, made in India ই হতে হবে। শুধুমাত্র মাটির প্রদীপ কেনাই Vocal for Local হওয়া নয়। আপনাকে নিজের ভূমিতে তৈরি স্থানীয় জিনিসকে যতটা বেশি সম্ভব প্রোমোট করতে হবে। এমন যেকোনো দ্রব্য, যা তৈরিতে ভারতের কোনো না কোনো কারিগরের ঘাম মিশে আছে, যা ভারতের মাটিতে তৈরি, সেটাই আমাদের গর্ব। এই গৌরবকে সর্বদাই উজ্বল করে তুলতে হবে আমাদের।

          বন্ধুরা, মন কি বাতের এই পর্বে আপনাদের সাথে যুক্ত থাকতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। এই অনুষ্ঠানের জন্যে আপনাদের মতামত এবং পরামর্শ আমার কাছে নিশ্চয়ই পাঠাবেন। আপনাদের চিঠি এবং বার্তার অপেক্ষায় রইলাম। কিছুদিনের মধ্যেই উৎসবের মরসুম শুরু হতে চলেছে। নবরাত্রির সঙ্গে এর সূচনা হবে, এবং আগামী দুই মাস পূজাপাঠ, ব্রতকথা, আনন্দ উল্লাস, চারিপাশে এমনই এক পরিবেশ থাকবে। আসন্ন উৎসবের জন্যে আপনাদের জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আপনারা সবাই, আপনাদের পরিবার এবং প্রিয়জনেদের সঙ্গে উৎসবে খুব আনন্দ করুন, আর অন্যদেরও এই আনন্দে সামিল করুন। সামনের মাসে অন্য আরো নতুন বিষয় নিয়ে মন কি বাত আপনাদের কাছে আসবে। আপনাদের সবাইকে জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ।

********