Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

মহান সন্ত কবি কবীরের ৫০০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের মগহরে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

মহান সন্ত কবি কবীরের ৫০০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের মগহরে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

মহান সন্ত কবি কবীরের ৫০০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের মগহরে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

মহান সন্ত কবি কবীরের ৫০০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের মগহরে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নমস্কার। সাহেব বন্দেগি। আজ আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে মনে করছি, কারণ, মহান সুফিসন্ত কবীরদাসের স্মৃতিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরেছি। আমি এই পবিত্র মাটিকে এবং আপনাদের সকলকে প্রণাম জানাই।

উত্তর প্রদেশের জনপ্রিয় ও যশস্বী মুখ্যমন্ত্রী শ্রী আদিত্যনাথ যোগী, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী মহেশ শর্মা, শ্রী শিবপ্রসাদ শুল্কা, রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ডঃ রীতা বহুগুনা ও শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ চৌধুরী, সংসদ সদস্য এবং উত্তর প্রদেশ বিজেপি-র সভাপতি আমার বন্ধু ডঃ মহেন্দ্রনাথ পাণ্ডে, স্থানীয় সংসদ সদস্য শ্রী শরত ত্রিপাঠী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যসচিব শ্রী রাজীব কুমার, এখানে উপস্থিত অন্যান্য মাননীয় ব্যক্তিবর্গ এবং দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আজ মগহরের এই পবিত্র ভূমিতে আসার সৌভাগ্য হয়েছে, আমার মনে একটি বিশেষ সুখানুভূতি সঞ্চারিত হয়েছে।

ভাই ও বোনেরা, প্রত্যেকের মনেই এমন তীর্থস্থানে যাওয়ার ইচ্ছে থাকে, আজ আমার সেই ইচ্ছে পূরণ হ’ল। কিছুক্ষণ আগে সন্ত কবীরদাসের সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ও তাঁর মাজারে চাদর চড়ানোর সৌভাগ্য হ’ল। আজ আমার সেই গুহাটিও দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, যেখানে কবীরদাস সাধনা করতেন। ভারতীয় সমাজকে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে মৈত্রী ও সাম্যের পথে যাঁর আলোকবর্তিকা সঠিক পথ দেখিয়েছে, সেই মহাত্মা কবীরের নির্বাণভূমিতে দাঁড়িয়ে আমি তাঁকে কোটি কোটি প্রণাম জানাই।

কথিত আছে যে, এখানেই সন্ত কবীর, গুরু নানকদেব এবং বাবা গোরখনাথ মুখোমুখী বসে আধ্যাত্মিক আলোচনা করেছিলেন। সেই পবিত্র মগহরে এসে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। আজ জ্যৈষ্ঠ শুক্ল পূর্ণিমা। আজ থেকেই ভগবান ভোলানাথের যাত্রা শুরু হবে। আমি তীর্থযাত্রীদের সুখময় যাত্রার জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

কবীরদাসের ৫০০তম পুণ্য তিথি উপলক্ষে আজ থেকে এক বছরের জন্য এখানে কবীর মহোৎসবের সূচনা হ’ল। সমগ্র মানবতার জন্য সন্ত কবীরদাস যে উচ্চ ভাবনাসম্পন্ন সম্পত্তি রেখে গেছেন, তার দ্বারা আমরা সকলেই উপকৃত হব। কবীর নিজেই বলে গেছেন

তীর্থ গয়ে তো এক ফল, সন্ত মিলে ফল চার।

সদ্‌গুরু মিলে অনেক ফল, কহে কবীর বিচার।।

অর্থাৎ, তীর্থে গেলে একবার পুণ্য হয়, কিন্তু একজন সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে এলে চারবার পুণ্য হয়। সদ্‌গুরুর পেলে অনেক পুণ্য হয়।

মগহরের মাটিতে এই কবীর মহোৎসবে আমরা এমনই পুণ্য অর্জন করতে পারব।

ভাই ও বোনেরা, একটু আগেই এখানে সন্ত কবীর অ্যাকাডেমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ২৪ কোটি টাকা খরচ করে এখানে মহাত্মা কবীরের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। তাঁর আদর্শকে সঞ্জীবিত করে রাখার জন্য বিভিন্ন সংস্থা গড়ে তোলা হবে। কবীর যে সামাজিক চেতনা জাগ্রত করার জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন, সেগুলিকে সঞ্জীবিত রাখা জন্য কবীর গীতি প্রশিক্ষণ ভবন, কবীর নৃত্য প্রশিক্ষণ ভবন, গবেষণা কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, প্রেক্ষাগৃহ, ছাত্রাবাস, শিল্প প্রদর্শনশালা ইত্যাদি গড়ে তোলার পরিকল্পনা এর মধ্যে সামিল রয়েছে।

সন্ত কবীর অ্যাকাডেমি উত্তর প্রদেশের আঞ্চলিক ভাষাগুলি এবং লোক সংস্কৃতির বিকাশ ও সংরক্ষণের জন্যও কাজ করবে। ভাই ও বোনেরা, কবীরের সমগ্র জীবন সত্যের অণ্বেষণে এবং অসত্যের খন্ডনে ব্যতীত হয়েছে। কবীরের তাঁর সাধনা কোনও কিছু মেনে নিয়ে শুরু করেননি, তিনি জানার জন্য শুরু করেছিলেন। তিনি আনখশির মস্তমৌলা স্বভাবের ফকির, একরোখা, ভক্তদের সেবক, বাদশাহের জন্য অত্যন্ত সাহসী, পরিচ্ছন্ন মন, উন্নত মস্তিষ্ক, বাইরে থেকে কঠোর কিন্তু কোমল হৃদয়ের স্বশিক্ষিত সন্ত ছিলেন।

মহাত্মা কবীরদাস মাটি থেকে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুললেন যে তাঁর দর্শনকে মানুষ কপালের চন্দন করে নিলেন। তিনি ব্যক্তি থেকে অভিব্যক্তিতে পরিণত হলেন। তারপর শব্দ থেকে শব্দব্রহ্ম হয়ে উঠলেন। তিনি ভাবনাকে ব্যবহারে রূপান্তরিত করে অমর হয়ে গেলেন। সন্ত কবীরদাস সমাজকে শুধুই পথপ্রদর্শন করেননি, সমাজের চেতনাকে জাগ্রত করার জন্য তিনি কাশী থেকে মগহর এসেছিলেন। মগহরকে তিনি প্রতীক রূপে বেছে নিয়েছিলেন।

কবীর বলেছিলেন, ক্যায়া কাসী ক্যায়া উসর মগহর, রাম হৃদয় বসো মোরা।

অর্থাৎ, কাশীতে থাকি কিম্বা মগহর, রাম বাস করে আমার হৃদয়ে। তিনি আরও বলেছিলেন, হম কাসী মেঁ প্রকট ভয়ে হ্যাঁয়, রামানন্দ চেতায়ে। অর্থাৎ, তিনি কারও শিষ্য নন, রামানন্দ দ্বারা আলোকপ্রাপ্ত চেলা। কাশী তাকে আধ্যাত্মিক চেতনা আর গুরুর সান্নিধ্য দিয়েছিল।

ভাই ও বোনেরা, কবীরকে ভারতাত্মার সঙ্গীত, রস আর হৃদয় বলা যেতে পারে। তিনি সাধারণ গ্রামীণ মানুষের মনের কথা দিয়ে তাঁদেরই কথ্য ভাষায় মালা গেঁথেছিলেন। গুরু রামানন্দের শিষ্য ছিলেন, তিনি জাতপাত কিভাবে মানবেন! তিনি জাতিভেদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেন যে, ‘সব মানস কী এক জাতি’। অর্থাৎ, সমস্ত মানুষের জাত এক। নিজের অহঙ্কারকে চূর্ণ করে সেখানে বিরাজমান ঈশ্বর দর্শনের পথ দেখিয়েছেন কবীরদাস। তিনি সকলের ছিলেন, তাই সকলে তাঁর হয়ে গেছেন। তিনি লিখেছিলেন যে,

কবীরা খড়া বাজার মেঁ মাঙ্গে সবকী খ্যার।

ন কাহু সে দোস্তি, ন কাহু সে ব্যার।।

তাঁর দোহাগুলি বোঝার জন্য কোনও অভিধানের প্রয়োজন নেই। সরল কথ্য ভাষায় সহজভাবে জীবনের গভীর রহস্যগুলিকে তিনি সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে তুলেছিলেন। নিজের অন্তরের রামকে দেখো, হরি তোমার মনেই আছে, বাইরের আড়ম্বর দেখে বৃথাই সময় নষ্ট কর, নিজেকে সংশোধন কর – তা হলেই হরির দর্শন পাবে।

জব ম্যাঁয় থা তব হরি নেহি, জব হরি হ্যাঁয় ম্যাঁয় নেহি।

সব অন্ধিয়ারা মিট গয়া দীপক দেখা মাহী।।

অর্থাৎ, যখন আমি নিজের অহঙ্কারে ডুবে ছিলাম, তখন প্রভুকে দেখতে পাইনি কিন্তু যখন গুরু আমার মনে জ্ঞানের আলোক জ্বালিয়ে আমার অন্তর প্রকাশিত করেন, তখন অজ্ঞানতার সমস্ত অন্ধকার মিটে গেছে।

বন্ধুগণ, এটাই আমাদের দেশের মহান তপস্যা, এর শক্তি যে সময়ের সঙ্গে সমাজের অভ্যন্তরীণ সমস্ত খারাপ কিছুকে সংশোধন করার জন্য একের পর এক ঋষি, মুনি, আচার্য, সন্ত, সাধু-সন্ন্যাসীরা পথ দেখিয়েছেন। এই মহান তেজস্বী-তপস্বীদের শিক্ষার ফলেই কয়েকশো বছরের দাসত্বের সময়েও দেশের আত্মা সঞ্জীবিত থেকেছে, সাম্য ও সদ্ভাব অক্ষত থেকেছে।

ভগবান বুদ্ধ, মহাবীর, সন্ত কবীর, সন্ত সুরদাস, সন্ত গুরুনানকের মতো অনেক মহাপুরুষ দেশের নানা প্রান্তে জন্ম গ্রহণ করে সমাজকে পথ দেখিয়েছেন, ভারতাত্মার সংরক্ষণ সুনিশ্চিত করেছেন।

দক্ষিণ ভারতে মাধবাচার্য, নিম্বাগারাচার্য, বল্লভাচার্য, সন্ত বাসবেশ্বর, সন্ত তিরুগল, সন্ত তিরুবল্লার, রামানুচার্য; পশ্চিম ভারতে মীরাবাঈ, সন্ত একনাথ, সন্ত তুকারাম, সন্ত রামদাস, সন্ত জ্ঞানেশ্বর, মহর্ষি দয়ানন্দ, নরসী মেহতা; উত্তর ভারতে রামানন্দ, কবীরদাস, গোস্বামী তুলসীদাস, সুরদাস, গুরুনানকদের সন্ত রৈদাস; পূর্ব ভারতে চৈতন্য মহাপ্রভু, আচার্য শঙ্করদেব, রামকৃষ্ণ পরমহংস-এর মতো মহাপুরুষরা আলোকবর্তিকা প্রদর্শন করেছেন।

এই ঋষি-মুনি মহাপুরুষদের প্রভাবেই ভারত সেই কঠিন সময়ে যাবতীয় বিসঙ্গতি সহ্য করে এগিয়ে গেছেন এবং নিজেকে সঙ্কটমুক্ত করতে পেরেছেন।

পেশা ও বর্ণভেদকে জয় করতে রামানুচার্য যে ঈশ্বর ভক্তির পথ দেখিয়েছেন, সে পথেই এগিয়ে সন্ত রামানন্দ সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষকে নিজের শিষ্য করে নিয়ে জাতপাতকে কঠিন প্রহার করেছিলেন। সন্ত রামানন্দই সন্ত কবীরকে রামনামের পথ দেখিয়েছিলেন। এই রামনামের মাধ্যমেই কবীর আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মকাল ভারতবাসীকে সচেতন করে যাচ্ছেন।

ভাই ও বোনেরা, সন্ত কবীরের পর এই বার্তা ছড়িয়ে দেন রৈদাস। কয়েকশো বছর পর মহাত্মা ফুলে, মহাত্মা গান্ধী এবং বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর একই ভাবধারা নিয়ে সমাজে অসাম্য দূর করার জন্য নিজের মতো করে সমাজকে পথ দেখিয়েছেন।

বাবাসাহেব আমাদের দেশকে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। দেশের নাগরিক হিসাবে প্রত্যেককে সমান অধিকার দিয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত, আজ এই মহাপুরুষদের নামে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সমাজকে বিভাজিত করার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক দল সমাজে শান্তি ও উন্নয়ন চায় না, তারা চায় কলহ ও অশান্তি। তারা মনে করে, যতটা অসন্তোষ ও অশান্তির পরিবেশ তাঁরা সৃষ্টি করতে পারবেন, ততই তাঁদের রাজনৈতিক লাভ হবে। কিন্তু বাস্তব হ’ল – মাটির সঙ্গে এদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। সন্ত কবীর, মহাত্মা গান্ধী এবং বাবাসাহেবের আদর্শ অনুসরণকারী এই দেশের মূল স্বভাব কী, সেটাই তাঁরা বুঝতে পারেন না। কবীর বলতেন, নিজের অন্তরের দিকে তাকাও, তাহলেই সত্যকে দেখতে পাবে। কিন্তু তাঁরা কখনও কবীরকে ভালোভাবে পড়েননি। কবীর বলতেন –

পোথী পঢ়ী-পঢ়ী জগ মুয়া, পণ্ডিত ভয়া ন কোয়,

ঢাই আখর প্রেম কা পঢ়ে সো পণ্ডিত হোয়ে।।

জনগণ, দেশ ও সমাজের উন্নতির জন্য সচেষ্ট থাকলেই উন্নয়নের হরি দর্শন হবে। কিন্তু তাঁদের মন পড়ে আছে নিজেদের কারুকার্যমণ্ডিত বিশাল বাংলোতে। আমার মনে আছে, যখন গরীব ও মধ্যবিত্তদের গৃহ প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা শুরু হয়েছিল, তখন বিগত সরকার কী ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছিল।

আমরা দিল্লিতে সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর যখন সমস্ত রাজ্য সরকারের কাছে গৃহহীনদের সংখ্যা জানতে চাই, তৎকালীন উত্তর প্রদেশ সরকার তখনও নীরব থেকে যায়। তাদেরও মন পড়ে ছিল নিজস্ব কারুকার্যমণ্ডিত বিশাল বাংলোয়। তারপর, আপনারা যখন ভোট দিয়ে যোগীজির নেতৃত্বাধীন সরকারকে এই রাজ্যের ক্ষমতায় আনলেন, তারপরই রাজ্য সরকার গৃহহীন দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের সংখ্যা আমাদের জানায় এবং অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যেই এই রাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে।

বন্ধুগণ, কবীর তাঁর গোটয়া জীবন আদর্শ নিয়ে বেঁচে ছিলেন – নিজস্ব মানবিক আদর্শ। মগহর আসার পেছনেও ছিল সেই আদর্শ। মোক্ষলাভের প্রতি তাঁর কোনও আকর্ষণ ছিল না।

দরিদ্র মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া আর সমাজবাদ ও বহুজনের নামে ক্ষমতার প্রতি লোভের রাজনীতি আমরা আজ ভালোভাবেই দেখছি। দু’দিন আগেই দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার ৪৩ বর্ষ পূর্তি হ’ল ক্ষমতার লোভ এমনই যে, জরুরি অবস্থা ঘোষণাকারী আর সেই সময়ে জরুরি অবস্থার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি আজ ক্ষমতার লোভে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারের বিরোধিতা করছে। তাঁর দেশ কিংবা সমাজ নয়, শুধুই নিজের আর পরিবারের স্বার্থ নিয়ে চিন্তিত। তাঁরা কোটি কোটি গরিব, দলিত, শোষিত, বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের ধোকা দিয়ে নিজেদের জন্য কোটি কোটি টাকা বাংলো নির্মাণ করেছেন। নিজেদের ভাই ও আত্মীয়দের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। এরকম মানুষদের থেকে উত্তর প্রদেশ তথা দেশের মানুষদের সতর্ক করতে হবে।

বন্ধুগণ, আপনারা তিন তালাক নিয়ে এদের বিরোধিতা দেখেছেন। সারা দেশের মুসলমান বোনেরা আজ যাবতীয় বাধানিষেধের পরোয়া না করে এই কুসংস্কার থেকে তাঁদের সমাজকে মুক্তি দেওয়ার জন্য লড়াই করছেন। কিন্তু এই রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতার লোভে ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে খেলা করতে তিন তালাকের বিলটিকে সংসদে মঞ্জুর হতে দিচ্ছে না। তাঁরা নিজেদের স্বার্থে সর্বদাই সমাজকে দুর্বল করে রাখতে চায়, কুসংস্কার মুক্ত হতে দিতে চায় না।

বন্ধুগণ, সন্ত কবীরদাস সাধারণ মানুষের স্বার্থে বাদশা-কেও চ্যালেঞ্জ জানাতে ভয় পাননি। তিনি লিখেছিলেন, দর কী বাত কহ, দরবেসা বাদশাহ কৌন ভেসা।

তিনি বলেছিলেন, আদর্শ শাসক তিনি হতে পারেন, যে জনগণের দুঃখ যন্ত্রণা বোঝেন আর তা দূর করার চেষ্টা করেন। তিনি আদর্শ শাসক রূপে রাজা রামের কল্পনা করতেন। তাঁর কল্পনার দেশ গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ কয়েকটি হাতেগোণা পরিবার নিজেদের জনগণের ভাগ্য বিধাতা ভেবে সন্ত কবীরদাসের আদর্শকে নস্যাৎ করছেন। তাঁরা ভুলে গেছেন যে, আমাদের সংঘর্ষ আর আদর্শের বুনিয়াদ হলেন কবীরের মতো মহাপুরুষ।

কবীর নিঃসঙ্কোচে কুসংস্কারকে তীব্র প্রহার করেছিলেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের বিভেদ সৃষ্টিকারী প্রত্যেক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিস্পর্ধা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি নিপীড়িত, বঞ্চিত ও শোষিতদের ক্ষমতায়ন চাইতেন, তাঁদের যেন কারও সামনে হাত না পাততে হয়! তিনি বলতেন –

মাঙ্গন মরণ স্মান হ্যাঁয়, মত কোই মাঙ্গো ভিখ

মাঙ্গন তে মরনা ভলা, ইয়হ সতগুরু কী সীখ ।।

কবীর নিজে শ্রমজীবী ছিলেন। তিনি শ্রমের গুরুত্ব বুঝতেন। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও আমাদের নীতি প্রণয়নকারীরা কবীরের এই দর্শনকে বুঝতে পারেননি। গরিবী ঘটানোর নামে তাঁরা ভোট ব্যাঙ্ককে ক্ষমতা দখলের উপায় হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন।

বন্ধুগণ, বিগত চার বছর ধরে আমরা সেই রীতিনীতি পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সরকার গরিব, দলিত, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত, মহিলা ও বেকার যুবক-যুবতীদের ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে চলেছে। জন ধন যোজনার মাধ্যমে উত্তর প্রদেশের প্রায় ৫ কোটি গরীব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, ৮০ লক্ষেরও বেশি মহিলাকে উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ, ১ কোটি ৭০ লক্ষ দরিদ্রদের মাসে ১ টাকা এবং দৈনিক ৯০ পয়সা কিস্তিতে দুর্ঘটনা বিমা ও জীবন সুরক্ষা বিমা পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে, উত্তর প্রদেশের গ্রামে ১ কোটি ২৫ লক্ষেরও বেশি শৌচালয় নির্মাণের টাকা সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা করে তাঁদের ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করা হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের গরিব পরিবারগুলিকে সস্তায় উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে, গরিব মানুষের আত্মসম্মান ও তাঁদের জীবনকে সহজ করে তোলাকে বর্তমান সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে।

বন্ধুগণ, কবীর শ্রমযোগী ছিলেন, কর্মযোগী ছিলেন। তিনি বলতেন – কাল করে সো আজ কর।

কবীর কাজে বিশ্বাস করতেন, রামে আস্থা রাখতেন। আজ সমস্ত প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় দ্বিগুণ গতিতে সড়ক, মহাসড়ক, রেল লাইন, বৈদ্যুতিকীকরণ, দ্রুত নির্মীয়মান বিমানবন্দর, দ্বিগুণের বেশি গতিতে নির্মীয়মান গৃহহীনদের বাড়ি, প্রত্যেক পঞ্চায়েত অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের বিস্তার – এই সকল কাজের গতি কবীরের প্রদর্শিত পথেরই প্রতিফলন। সেজন্য আমাদের সরকারের মূলমন্ত্র হ’ল – সকলের সাথে সকলের উন্নয়ন।

বন্ধুগণ, কবীরের সময়কালে মগহরকে যেমন ঊষর এবং অভিশপ্ত বলে মনে করা হ’ত ঠিক তেমনই দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরও দেশের সামান্য কিছু অংশেই উন্নয়নের আলো পৌঁছতে পেরেছে। ভারতের একটি বিস্তীর্ণ অংশ সকল উন্নয়নের আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। পূর্ব উত্তর প্রদেশ থেকে শুরু করে গোটা পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত এই বঞ্চনার শিকার। কবীর যেভাবে মগহরকে অভিশাপ মুক্ত করেছিলেন, আমাদের সরকারও তেমনই ভারতের প্রত্যেক ইঞ্চি মাটিকে উন্নয়নের মূলস্রোতে যুক্ত করার চেষ্টা করছে।

ভাই ও বোনেরা, গোটা দুনিয়া মগহরকে সন্ত কবীরের নির্বাণ ভূমি রূপে জানে। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও এই অঞ্চলের উন্নয়ন থমকে আছে। ১৪-১৫ বছর আগে যখন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম এখানে এসেছিলেন, তখন তিনি এই স্থানটিকে নিয়ে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। এত বছর পর তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আমরা মগহরকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে সমতা, সম্প্রীতি ও সদ্ভাবের কেন্দ্র হিসাবে বিকশিত করে তোলার কাজ দ্রুতগতিতে শুরু করতে চলেছি।

সারা দেশে মগহরের মতো আস্থা ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলিকে স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের মাধ্যমে বিকশিত করার জন্যে আমরা বৌদ্ধ সার্কিট, সুফি সার্কিটের মতো অনেক সার্কিট বানিয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছি। বন্ধুগণ, বিশ্ব মানবতা, সৌভ্রাতৃত্ব এবং পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কবীরের প্রেমের বাণী অত্যন্ত সরল মাধ্যম। সর্বধর্ম সমন্বয় ও সামাজিক সাম্য বজায় রাখতে তা আমাদের পথপ্রদর্শকের কাজ করে। এই বাণী প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং তাঁর শিক্ষায় নিজের আচরণ বদলাতে হবে। আশা করি, কবীর অ্যাকাডেমি এক্ষত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমি আরেকবার বাইরে থেকে আসা ভক্তদের সন্ত কবীরের এই পবিত্র ভূমিতে পদার্পণের জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। সন্ত কবীরের অমৃত বাণীগুলিকে জীবনে অনুসরণ করে আমরা নতুন ভারতের সংকল্প সিদ্ধ করতে পারব।

এই বিশ্বাস নিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সাহিব বন্দগী, সাহিব বন্দগী, সাহিব বন্দগী।

CG/SB/SB