নয়াদিল্লি, ১২ মার্চ, ২০১৫ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মরিশাসে পৌঁছে জানিয়েছেন, তাঁকে যে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে, তাতে তিনি অভিভূত। পাশাপাশি, আজ মরিশাসের জাতীয় দিবসে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পেরে তিনি মরিশাসবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ভারতবর্ষের ১২৫ কোটি মানুষের কাছে এটি একটি সম্মান। তাঁরা এই সম্পর্কের যথার্থ মর্যাদা দেয়। এই সম্পর্কের ধারা হৃদয়-নিসৃত এবং হৃদয়ের গভীরে নিহিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত – মরিশাস দু’দেশই সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ যা বন্ধুত্বের কারণে স্বাভাবিকভাবেই নিসৃত হয়েছে এবং মূল্যবোধের আদান-প্রদানে, একই ধরণের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থে গ্রথিত হয়েছে। তিনি বলেন, দু’দেশই অর্থনৈতিক বিকাশে দু’দেশের সহযোগী এবং এই সম্পর্ক অতুলনীয়। শ্রী মোদী কথা প্রসঙ্গে এও জানান, তার সঙ্গে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী স্যার অনিরুদ্ধ জগন্নাথের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। বৈঠকের পরিণাম এবং যা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে দু’দেশ তা গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়ে দু’দেশই তাদের বক্তব্য আদান-প্রদান করেছে। এই আলাপ-আলোচনার একটিই লক্ষ্য – ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলটিকে কি করে আরও মজবুত ও সাফল্যমণ্ডিত করা যায়। এই অঞ্চলে মরিশাসের নেতৃত্বকে মূল্য দেয় ভারতবর্ষ, বলে অভিমত ব্যক্ত করেন শ্রী মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মরিশাসের অসামরিক পরিকাঠামোমূলক প্রকল্পে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ছাড়যুক্ত ঋণ প্রদান করেছে ভারত। এর সঙ্গে ভারতবর্ষ অচিরেই এই দেশে পেট্রোলিয়াম মজুদের আধার এবং বাঙ্কার তৈরি করতে প্রস্তুত। এর ফলে, কেবলমাত্র মরিশাস উপকৃত হবে না, এই দেশ আঞ্চলিক হাব হিসাবেও তার ভূমিকা যথোপযুক্ত করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, এক দশক আগে মরিশাসে প্রথম সাইবার শহর গড়ে তোলায় ভারত সহযোগিতা করেছিল। এর অভূতপূর্ব সাফল্য যথেষ্ট বার্তাবহ এবং মরিশাসের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণে সেই দেশের কৌশলী দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পেরেছে এই পদক্ষেপ। ভারত, এবার এই দেশে দ্বিতীয় সাইবার শহর গড়ে তোলায় সাহায্য করবে বলে জানান শ্রী মোদী। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতার আরও একটি বড় নিদর্শন আগালেগা দ্বীপ বিকাশের জন্য আজ ভারত – মরিশাসের ঐকমত্যে আসা। পারস্পরিক বোঝাপড়ার গভীরতার পরিচায়ক এই পদক্ষেপ। মহাসাগরীয় অর্থনীতির বিকাশে মরিশাস তার দর্শন কি তাও দেখিয়ে দিয়েছে কার্যপ্রণালীতে, বলে অভিমত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাসাগরীয় অর্থনীতিতে সহযোগিতা সংক্রান্ত দু’দেশের চুক্তি দু’দেশেরই বিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের পরিচায়ক। এই পদক্ষেপ সামুদ্রিক পরিবেশ বোঝার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, এই সহযোগিতা মহাসাগরীয় অর্থনীতিই নতুন নতুন এলকার বিকাশ ঘটানোর সহায়ক এবং নীল সম্পদের সদ্ব্যবহারও সম্ভব এতে। বিগত কিছু বছরে, দু’দেশই দ্বি-কর প্রদান এড়ানোর নীতিটি সংশোধনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়েছে। ঐ নীতি অবমাননা এড়ানোর প্রচেষ্টা দু’দেশের যৌথ অংশীদারিত্বেই নিহিত রয়েছে। একটাই লক্ষ্য, মরিশাসবাসী যাতে উপকৃত হন। শ্রী মোদী জানান, তিনি ঐ দেশের প্রধানমন্ত্রী শ্রী জগন্নাথ’কে আশ্বাস্ত করেছেন এই বলে যে, এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ কোনও বিপরীত কার্যবিধি গ্রহণ করবে না ভারতের এই শক্তিশালী কৌশলী সহযোগীর বিপরীতে। কর-কাঠামোয় তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে মরিশাসের অভূতপূর্ব সহযোগিতার কথাও তিনি কথাপ্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে জানান। তিনি এও বলেন, সুসংবদ্ধ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিটি নিয়ে দু’দেশেরই আলাপ-আলোচনা শুরু করা আবশ্যক। কারণ, তিনি এবং মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, দু’দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের ভিত হল দু’দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতা। কারণ, দুদেশের প্রতি দায়বদ্ধতা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সামুদ্রিক প্রতিবেশীর সঙ্গে নিজ-নিজ দর্শন ভাগ করে নেওয়ার নীতি। এছাড়াও, মরিশাস তাঁর স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল যাতে গড়ে তুলতে পারে সে ব্যাপারে ভারতবর্ষের সমর্থনের আশ্বাস দেন শ্রী মোদী। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে জানান, নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্ষমতা বিকাশে মরিশাসের অংশীদার হওয়ার সৌভাগ্য ভারতবর্ষের হয়েছে এবং আজ মরিশাসের উপকূল রক্ষীবাহিনীর সেবায় ব্যারাকুডা (জাহাজ) প্রদান করবে ভারতবর্ষ। অন্যান্য জাহাজ ও সরঞ্জাম প্রদান-সহ সময়মতো বিভিন্ন এলাকায়ও মরিশাসকে সাহায্যের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। দু’দেশই একটি বিষয়ে একমত যে আঞ্চলিক সহযোগিতা সামুদ্রিক পরিবেশের শান্তি এবং সমৃদ্ধির সহায়কের ভূমিকা নেবে। এ প্রসঙ্গে শ্রী মোদী মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত মহাসাগরীয় বলয় সমিতির নেতৃত্ব দেওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে মরিশাস ভারতবর্ষকে সমর্থন করায়ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। দু’দেশের ঐতিহ্যের ভাগীদার হওয়ার ঘটনায় একটি সুনির্দিষ্ট উদাহরণ হল রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ২১ জুন দিনটি ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ হিসাবে গণ্য হওয়া বলে জানান শ্রী মোদী। আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়েও একটি কার্যকরী বৈঠক হয়েছে দু’দেশের মধ্যে বলে মত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। একটি মজবুত জাতীয় কার্যবিধি গ্রহণ করার প্রয়াসে দু’দেশই বদ্ধপরিকর বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব দৃঢ়তর করে এই সমস্যার মোকাবিলা করা হবে। শ্রী মোদী বলেন, ভারতবর্ষ ইলেক্ট্রনিক যাত্রা প্রাধিকার বা এ বাবদ শুল্ক মাফ করে দিয়েছে মরিশাসের ক্ষেত্রে। তিনি এও জানান, দু’দেশই একটি বহুমুখী যুব মঞ্চ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে দু’দেশের যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যায় এবং ভবিষ্যতে দু’দেশের অংশীদারিত্বের ভিত আরও মজবুত হয়। পরিশেষে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী শ্রী অনিরুদ্ধ জগন্নাথ এবং তাঁর দলের সঙ্গে বৈঠক সফল হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শ্রী মোদী। এ প্রসঙ্গে তিনি মরিশাসের জাতীয় দিবস উদযাপন সমারোহ এবং জাতীয় সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ পাওয়ায় উদ্বুদ্ধ বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন। তাঁর ভাষায় – এটি দু’দেশের সম্পর্কের দৃঢ়তারই পরিচায়ক।