Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

‘মন কি বাত ২.০’-র দ্বাদশ পর্বের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ‘মন কি বাত ২.০’-র দ্বাদশ পর্বে মতবিনিময়ের সময় জানান, দেশে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় করোনার বিরুদ্ধে লড়াই বেশ ভালোভাবে করা হচ্ছে। তিনি কোভিড-১৯ মহামারীর বিষয়ে জনসাধারণকে আরও সতর্ক ও সজাগ থাকে আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ অর্থনৈতিক কাজকর্মের বেশিরভাগই এখন আবার শুরু হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাযথ সতর্কতার সঙ্গে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ও অন্যান্য বিশেষ ট্রেন পরিষেবা এবং বিমান চলাচলও শুরু হয়েছে। শিল্পসংস্থায় কাজকর্মও স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই এখনও গুরুতর। আমাদের সকলের পরিবারে এখনও করোনা থেকে একইরকম গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। সেইজন্য দু-গজ দূরত্ব, মুখে মাস্ক, হাত ধোয়া এইসব সাবধানতা মেনে চলতে হবে – যেরকম আমরা মেনে চলছিলাম। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাধা বিপত্তি এবং কঠিন তপস্যার পর দেশ যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে সেটাকে নষ্ট হতে দিতে চলবে না – আমাদের এই লড়াইকে দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী জনসাধারণের মানসিকতার প্রশংসা করেন এবং বলেন, দেশবাসীর সংকল্প শক্তির সঙ্গে এই লড়াইয়ে আর একটি বড় শক্তি হল౼ দেশবাসীর সেবার শক্তি। এটি আমাদের ক্ষমতার সব থেকে বড় উৎস। তিনি আরও বলেন, বাস্তবে এই মহামারীর সময় ভারতবাসী দেখিয়ে দিয়েছে সেবা আর ত্যাগের পথ অনুসরণ করা কেবল আমাদের আদর্শ নয় বরং ভারতের জীবন শৈলী। ‘সেবা পরমো ধর্মঃ’ এই ভাবনার সঙ্গে আমরা অত্যন্ত পরিচিত।

প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি চিকিৎসক, নার্স, সাফাই কর্মী, পুলিশ এবং সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের মানসিকতার প্রশংসা করেন। সংকটের এই সময়ে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি যে নজরকাড়া ভূমিকা রাখছে তিনি তারও প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন সাধারণ দেশবাসীর উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সংকটের এই সময়েও সীমিত সামর্থ দিয়ে তামিলনাড়ুর কে.সি. মোহন, আগরতলার গৌতম দাস, পাঠানকোটে ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধু রাজু যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তা উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির বিভিন্ন কার্যকলাপের কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এই মহামারীর মোকাবিলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি নাসিকের রাজেন্দ্র যাদবের কথা জানান যিনি করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর ট্রাক্টরের সঙ্গে একটি স্যানিটাইজেশন মেশিন যুক্ত করেছেন। অনেক দোকানদার দু-গজ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দোকানে বড় পাইপলাইন লাগিয়েছেন, যার একটি দিক থেকে তারা ক্রেতাদের জিনিসপত্র পাঠাচ্ছেন আর অন্য দিক দিয়ে ক্রেতারা তা গ্রহণ করছেন।

এই মহামারীর ফলে জনসাধারণের দুর্দশার যন্ত্রণা ভাগ করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের ফলে সমাজের সকলস্তরের মানুষই প্রভাবিত হয়েছেন, তবে প্রান্তিক শ্রমিকরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের প্রতিটি দপ্তর এবং প্রতিষ্ঠান ত্রাণের জন্য হাতে হাত রেখে কাজ করে চলেছে। শ্রী মোদী উল্লেখ করেন কেন্দ্র, রাজ্য বা স্থানীয় প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান – সকলেই দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। ট্রেনে এবং বাসে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকদের নিরাপদে নিয়ে যাওয়া, তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি জেলায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের বন্দোবস্ত করার জন্য যাঁরা নিরলস কাজ করে চলেছে তিনি তাঁদের প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী সংকটের এই সময়ে নানা সমস্যার সমাধানের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। সরকার এই লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা, স্বনির্ভর করে তোলা এবং ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য কেন্দ্র সম্প্রতি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমান দশকে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মধ্য দিয়ে দেশ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

করোনা মহামারীর সময়ে প্রত্যেকে যোগ এবং আয়ুর্বেদের বিষয়ে আরও বেশি করে খোঁজ নিচ্ছেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি ‘কমিউনিটি, ইমিউনিটি ও ইউনিটি’౼র জন্য যোগাভ্যাসকে জীবনের অঙ্গ করার পরামর্শ দেন। শ্রী মোদী বলেন, করোনা মহামারী আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট ক্ষতি করার চেষ্টা করে। যোগে প্রণায়মের মাধ্যমে শ্বাসক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে, যার উপকার দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া যাবে।

প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক ভিডিও ব্লগ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য জনসাধারণকে আহ্বান জানান। আয়ুষ মন্ত্রক ‘মাই লাইফ, মাই যোগ’ শীর্ষক একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী চান সকলে যেন এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে অংশীদার হন।

শ্রী মোদী এই মহামারীর মোকাবিলায় সরকারের নানা উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মাধ্যমে প্রায় ১ কোটির বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছেন। ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর সমস্ত লাভবান ব্যক্তিদের ও তার সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসায় যুক্ত ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের এই মহামারীর সময়ে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে আমরা মহামারীর সঙ্গে লড়াই করছি আর অন্যদিকে সম্প্রতি পূর্ব ভারতের কিছু এলাকায় আমাদের ঘূর্ণিঝড় উমপুন-এর মতন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার কৃষকরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি তার জন্য সমবেদনা জানান এবং বলেন, জনগণ যেভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন তা প্রশংসনীয়।

শ্রী মোদী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অংশে পঙ্গপাল ‘লকেস্ট’ হানা দিয়েছে। তিনি এই সংকটের মোকাবিলায় সরকার কিভাবে কাজ করে চলেছে সেকথা জানান, যার ফলে দেশের জনসাধারণ অত্যাবশ্যক পণ্য সামগ্রির অভাব বোধ করবেন না । তিনি জানান কেন্দ্র, রাজ্য, কৃষি বিভাগ থেকে শুরু করে প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তর এই সংকট থেকে কৃষকদের বাঁচাতে আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করছে౼ যাতে ফসলের ক্ষতি কমানো যায়।

প্রধানমন্ত্রী জল সংরক্ষণের জন্য বর্তমান প্রজন্মকে তাঁদের কর্তব্য উপলব্ধি করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বর্ষা ঋতুতে জল বাঁচানো এবং সংরক্ষণ করার উদ্যোগ সকলের নেওয়া উচিত। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দেশবাসীকে কিছু গাছ লাগানোর তিনি অনুরোধ জানান, যাতে তাঁরা প্রকৃতির সেবার জন্য এমন কিছু সংকল্প গ্রহণ করেন যার মাধ্যমে প্রকৃতির সঙ্গে তাঁদের দৈনন্দিন সম্পর্ক বজায় থাকে। শ্রী মোদী বলেন, লকডাউনের কারণে বিগত কয়েক সপ্তাহে জীবনের গতি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে ঠিকই, তবে এটি আমাদের চারপাশের প্রকৃতির সমৃদ্ধি ও জীব বৈচিত্রকে ঘনিষ্টভাবে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। অনেক জায়গা থেকে পশু-পাখির অনিয়ন্ত্রিত ঘোরাফেরার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

তাঁর অনুষ্ঠানের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেন বেপরোয়া বা অসাবধান না হই। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই এখনও যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয় !

CG/CB/SKD