Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

“মন কি বাতে”


নতুনদিল্লি, ৩০শে জুলাই, ২০২৩

আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। “মন কি বাতে” আপনাদের স্বাগত জানাই। জুলাই মাস মানে বর্ষা ঋতুর মাস, বৃষ্টির মাস। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে, গত কিছু দিন উদ্বেগ আর সমস্যাসঙ্কুল হয়ে রয়েছে। যমুনা সমেত অনেক নদীতে বন্যার কারণে অনেক এলাকায় মানুষকে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বসের ঘটনাও ঘটেছে। এরই মধ্যে, দেশের পশ্চিম অংশে, কিছু দিন আগে গুজরাতে, ‘বিপর্যয়’ সাইক্লোনও এসেছিল। কিন্তু বন্ধুরা, এই সব বিপর্যয়ের মধ্যে, আমরা সব দেশবাসী আবার দেখিয়ে দিয়েছি, সম্মিলিত প্রয়াসের শক্তি কেমন হতে পারে। স্থানীয় মানুষজন, আমাদের এন-ডি-আর-এফের জওয়ানরা, স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যরা, দিনরাত এক করে এই সব বিপর্যয়ের মোকাবিলা করেছেন। যে কোনও বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়ার জন্য আমাদের সামর্থ্য আর ক্ষমতার ভূমিকা খুব বড় – কিন্তু এরই সঙ্গে, আমাদের সংবেদনশীলতা এবং অন্য একজনের হাত ধরার ভাবনা, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বজনের হিতের এই ভাবনা ভারতের পরিচয়ও বটে আর ভারতের শক্তিও বটে।
বন্ধুরা, বর্ষার এই সময় ‘বৃক্ষরোপণ’ এবং ‘জল সংরক্ষণের’ জন্যও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। ‘আজাদী কে অমৃৎ মহোৎসব’ চলাকালীন তৈরি হওয়া ষাট হাজারেরও বেশি অমৃৎ সরোবরেও সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে। এখন পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি অমৃৎ সরোবর তৈরি করার কাজও চলছে। আমাদের দেশবাসী পূর্ণ সচেতনতা ও দায়িত্বের সঙ্গে জল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নতুন-নতুন প্রয়াস করছেন। আপনাদের মনে থাকবে, কিছু দিন আগে আমি মধ্যপ্রদেশের শহডোলে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল পকরিয়া গ্রামের আদিবাসী ভাইবোনেদের সঙ্গে। ওখানেই প্রকৃতি আর জল বাঁচানোর ব্যাপারে আমার সঙ্গে আলোচনাও হয়েছিল। এখন আমি জানতে পেরেছি যে পকরিয়া গ্রামের আদিবাসী ভাইবোনেরা এই নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। এখানে, প্রশাসনের সহায়তায়, প্রায় একশো কূয়োকে ওয়াটার রিচার্জ ব্যবস্থায় বদলে ফেলা হয়েছে। বৃষ্টির জল এখন এই সব কূয়োতে ঢোকে , আর কূয়ো থেকে এই জল মাটির গভীরে পৌঁছে যায়। এতে এলাকার ভূগর্ভস্থ জলের স্তরেও ধীরে-ধীরে উন্নতি ঘটবে। এখন সব গ্রামবাসী গোটা এলাকায় প্রায় আট’শো কূয়োকে রিচার্জের জন্য উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। এমনই এক উৎসাহব্যঞ্জক খবর উত্তরপ্রদেশের থেকে এসেছে। কিছুদিন আগে, উত্তরপ্রদেশে, এক দিনে তিরিশ কোটি গাছ লাগানোর রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে। এই অভিযান শুরু করেছিল রাজ্য সরকার, সেটা সম্পূর্ণ করেন ওখানকার মানুষ। এমন প্রয়াস জন-অংশীদারিত্বের সঙ্গে-সঙ্গে জন-জাগরণেরও বড় উদাহরণ। আমি চাইব যে আমরাও সবাই, গাছ লাগানো এবং জল বাঁচানোর এই সব প্রয়াসের অংশ হয়ে উঠি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই সময়ে শ্রাবণের পবিত্র মাস চলছে। সদাশিব মহাদেবের পূজা আরাধনার পাশাপাশি এই মাস আনন্দ উৎসবের সঙ্গে যুক্ত। তাই আধ্যাত্মিক ব্যাপারের সঙ্গে সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোন থেকেও শ্রাবণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। শ্রাবণের ঝুলন, শ্রাবণের মেহেন্দী, শ্রাবণের  উৎসব – সব মিলিয়ে এই মাস মানেই আনন্দ উল্লাস।  
বন্ধুরা, আমাদের এই বিশ্বাস ও পরম্পরার আরও একটা দিক আছে। আমাদের এই পরব, পরম্পরাগুলি আমাদের সচল, গতিশীল রাখে। এই শ্রাবণ মাসে শিবের আরাধণার জন্য অগনিত ভক্ত কাঁধে বাঁক নিয়ে যাত্রা করেন। শ্রাবণ মাসে বলে বহু ভক্তদের সমাগম হচ্ছে  দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ বেনারসে হাজির হচ্ছেন। এখন কাশীতে প্রতি বছর দশ কোটির বেশি পর্যটক যান। অয্যোধ্যা, মথুরা, উজ্জয়িনীর মতো তীর্থক্ষেত্রেও আগত ভক্তের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে। এতে লক্ষ লক্ষ গরীব মানুষের রোজগার হচ্ছে, তাদের জীবন ধারণের রসদ যোগাচ্ছে। এসবই আমাদের সাংস্কৃতিক জন-জাগরণের ফল। এর দর্শন পেতে এখন বিশ্ব থেকে মানুষ আমাদের দেশের তীর্থস্থানে আসছেন। আমি এরকমই দু’জন আমেরিকান বন্ধুর ব্যাপারে জানতে পেরেছি যারা সুদূর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে অমরনাথ যাত্রা করতে এসেছেন। এই বিদেশী অতিথিরা স্বামী বিবেকানন্দের অমরনাথ যাত্রার অভিজ্ঞতার কথা কোথাও শুনেছিলেন। তাঁরাও  অনুপ্রাণিত হয়ে সরাসরি অমরনাথ যাত্রা করতে চলে আসেন। এঁরা একে ভগবান ভোলানাথের আশীর্বাদ মনে করেন। এটাই ভারতের বৈশিষ্ট্য, সবাইকে আপন করে নেয়, সবাই কিছু  না কিছু  লাভ করে। এমনই একজন মহিলা হলেন ফ্রান্সের  – শার্লট শোপিন. কিছুদিন আগে আমি যখন ফ্রান্সে গিয়েছিলাম, তখন তার সঙ্গে আলাপ হয়।  শার্লট শোপিন নিয়মিত যোগাভ্যাস করেন, যোগ প্রশিক্ষক এবং তার বয়স  ১০০-রও  বেশি।  উনি বয়সের সেঞ্চুরি পার করে ফেলেছেন। উনি বিগত ৪০ বছর ধরে যোগাভ্যাস করছেন। উনি নিজের এই সুস্বাস্থ্য ও ১০০ বছর পরমায়ুর সব কৃতিত্ব যোগাভ্যাসকে দেন। উনি গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের এই যোগবিজ্ঞান ও তার শক্তির পরিচায়ক হয়ে উঠেছেন। আমাদের সকলের এঁর থেকে শেখা উচিৎ। আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে বুঝি ও দায়িত্বশীল ভাবে বিশ্বের সামনে তা তুলে ধরি। আমি আনন্দিত যে এরকমই একটি  চেষ্টা উজ্জয়িনীতে এখন চলছে। এখানে সারাদেশের ১৮জন চিত্রশিল্পী পুরাণ অবলম্বনে আকর্ষণীয় চিত্রকথা তৈরি করছেন। এই ছবিগুলি বুন্দি শৈলী, নাথদ্বারা শৈলী, পাহাড়ি শৈলী এবং অপভ্রংশ শৈলীর মতো কিছু বিশেষ শৈলীতে তৈরি করা হবে।
     বন্ধুরা, এগুলো উজ্জয়িনীর ত্রিবেণী যাদুঘরে প্রদর্শিত হবে, অর্থাৎ, কিছুদিন পর যখন আপনি উজ্জয়িনীতে যাবেন, তখন আপনি মহাকাল মহালোকের সঙ্গে অন্য একটি ঐশ্বরিক স্থান পরিদর্শন করতে পারবেন। বন্ধুরা, উজ্জয়িনীতে যে পেইন্টিং করা হচ্ছে সেই কথা বলার সময় আমার আরেকটি অনন্য পেইন্টিং এর কথা মনে পড়ল, এই পেইন্টিংটি তৈরি করেছিলেন রাজকোটের এক শিল্পী, প্রভাত সিং মোডভাই বারহাটজি। এই পেইন্টিংটি ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজের জীবনের একটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল।
ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ রাজ্যাভিষেকের পর যখন তাঁর কুলদেবী তুলজা মাতার দর্শন করতে গিয়েছিলেন, সে সময় পরিবেশ কেমন ছিল তা শিল্পী প্রভাত ভাই এঁকেছিলেন । আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সেগুলোর যত্ন করতে হবে, বাঁচাতে হবে, আগামী প্রজন্মকে শেখাতে হবে। আমি খুশি যে আজ এই লক্ষ্যে অনেক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, অনেক সময় যখন আমরা ইকোলজি, ফ্লোরা, ফনা,বায়ো-ডাইভারসিটির মতো শব্দ শুনি, তখন কেউ কেউ মনে করেন যে এটি নির্দিষ্ট কোনএকটি বিষয়, এর সঙ্গে যুক্ত বিষেষজ্ঞদের বিষয়, কিন্তু এমনটা নয়। আমরা যদি সত্যিই প্রকৃতিকে ভালবাসি তবে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মধ্যেও অনেক কিছু করতে পারি। তামিলনাড়ুর ভাদাভল্লির একজন বন্ধু সুরেশ রাঘওয়নজী। রাঘওয়নজীর ছবি আঁকার শখ। আপনারা জানেন যে পেইন্টিং শিল্প এবং ক্যানভাসের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি কাজ, কিন্তু রাঘওয়নজী ঠিক করলেন যে তার চিত্রকলার মাধ্যমে তিনি গাছপালা এবং প্রাণী সম্পর্কে জ্ঞানকে সংরক্ষণ করবেন। তিনি বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর চিত্র তৈরি করে সে সম্পর্কিত নানা তথ্য নথিভুক্ত করেন। তিনি এখনো পর্যন্ত কয়েক ডজন পাখি, প্রাণী এবং অর্কিডের ছবি এঁকেছেন যা বিলুপ্তির পথে। শিল্পের মাধ্যমে প্রকৃতির সেবা করার এমন একটি উদাহরণ সত্যিই অসাধারণ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমি আপনাদের আরও একটি মজার কথা বলতে চাই। কিছু দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দারুণ খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে আমেরিকা আমাদের কাছে ১০০টিরও বেশি দুর্লভ ও প্রাচীন নিদর্শন ফিরিয়ে দিয়েছে। এই খবরটি প্রকাশ্যে আসার পর, এই নিদর্শনগুলি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা হয়েছে। তরুণরা তাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করেছে। ভারতে ফিরে আসা এই নিদর্শনগুলি ২৫০০ বছর থেকে ২৫০ বছর পুরনো৷ আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এই বিরল জিনিসগুলি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এগুলি টেরাকোটা, পাথর, ধাতু ও কাঠের সাহায্যে বানানো হয়েছে। এর মধ্যে কিছু তো এমনও আছে, যেগুলো আপনাকে আশ্চর্য করে দেবে। আপনারা এগুলোকে দেখলে তাকিয়েই থাকবেন। এরমধ্যে একাদশ শতাব্দীর একটি সুন্দর সান্ডস্টোন-এর স্থাপত্যও আপনারা দেখতে পাবেন। এটি নৃত্যরত এক অপ্সরার কারুকৃতি যার সম্পর্ক মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে। চোল যুগের অনেক মূর্তিও এর মধ্যে আছে। দেবী এবং ভগবান মুরুগানের মুর্তি তো দ্বাদশ শতাব্দীর আর তামিলনাড়ুর প্রভাবশালী সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। ভগবান গণেশের প্রায় এক হাজার বছর পুরানো কাঁসার মুর্তি ভারতকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। ললিতাসনে বিরাজমান উমা-মহেশ্বরের একটি মূর্তি একবিংশ শতাব্দীর বলা হয়ে থাকে, যেখানে ওঁরা দু’জনে নন্দীর ওপর আসীন। পাথরের তৈরি জৈন তীর্থঙ্কর এর দু’টি মূর্তিও ভারতে ফেরত এসেছে। ভগবান সূর্যদেবের দুটি মুর্তিও আপনাদের মন ছুঁয়ে যাবে। এর মধ্যে একটি স্যান্ডস্টোন দিয়ে তৈরি। ফেরত দেওয়া জিনিসের মধ্যে কাঠের তৈরি একটি প্যানেলও আছে যা সমুদ্রমন্থন এর ইতিহাস সামনে নিয়ে আসে। ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীর এই প্যানেলের সম্পর্ক দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে।
বন্ধুরা এখানে তো আমি অনেক কম নাম বলেছি, কিন্তু বস্তুতপক্ষে এই তালিকা অনেক লম্বা। আমি মার্কিন সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ, আমাদের এই বহুমূল্য ঐতিহ্য ফেরত দেওয়ার জন্য। ২০১৬ এবং ২০২১ সালেও আমি যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলাম তখনও অনেক শিল্পকলা ভারতকে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। আমার বিশ্বাস এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর চুরি আটকানোর ক্ষেত্রে দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যর সঙ্গে দেশবাসীর সম্পর্ক আরো গভীর হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের কিছু মা এবং বোনেরা যে চিঠি আমাকে লিখেছিলেন তা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাঁরা নিজেদের ছেলেদের, নিজেদের ভাইদের অনেক আশীর্বাদ করেছেন। তাঁরা লিখেছেন যে তারা কখনো কল্পনাও করেননি যে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভূর্জপত্র তাঁদের জীবিকার অবলম্বন হতে পারে। আপনারা ভাবছেন যে এই পুরো ব্যাপারটা কি?
বন্ধুরা, আমাকে এই চিঠিটা লিখেছেন চমোলী জেলার নীতিমানা ঘাঁটির কিছু মহিলারা। এরা হলেন সেই মহিলা যারা গত বছর অক্টোবরে আমাকে ভূর্জপত্রের উপর একটি অনন্য কলাকৃতি উপহার দিয়েছিলেন। এই উপহারটি পেয়ে আমিও অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। সেই প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের শাস্ত্র এবং গ্রন্থ তো এই ভূর্জপত্রেই সংরক্ষিত হয়ে এসেছে। মহাভারতও তো এই ভূর্জপত্রেই লেখা হয়েছিল। আজ দেবভূমির এই মহিলারা এই ভূর্জপত্র দিয়ে অত্যন্ত সুন্দর সুন্দর শিল্পকীর্তি ও স্মারক তৈরি করছেন। মানা গ্রামে যাত্রার সময় আমি তাদের এই অনন্য প্রয়াসের প্রশংসা করেছিলাম। আমি দেবভূমিতে আগত পর্যটকদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম তারা যেন যাত্রার সময় বেশি করে স্থানীয় দ্রব্য কেনেন। সেই আবেদনের যথেষ্ট প্রভাব এখানে দেখা গেছে। এখন এখানে আগত তীর্থযাত্রীরা ভূর্জপত্র দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্য খুবই পছন্দ করছেন এবং ভালো দাম দিয়ে তা কিনছেনও। ভূর্জপত্রের এই প্রাচীন ঐতিহ্য উত্তরাখণ্ডের মহিলাদের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধির নতুন নতুন রং যোগ করছে। আমি এটা জেনেও খুশি হয়েছি যে ভূর্জপত্রের নতুন নতুন জিনিস তৈরি করার জন্য রাজ্য সরকার মহিলাদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে।  
রাজ্য সরকার ভূর্জপত্রের দুর্লভ প্রজাতিগুলি সংরক্ষণের জন্যও অভিযান শুরু করেছে। যে ভূখণ্ডকে একসময় দেশের শেষ প্রান্ত বলে মনে করা হতো, তাকে এখন দেশের প্রথম গ্রাম বিবেচনা করে উন্নতি সাধন করা হচ্ছে। এই প্রয়াস আমাদের পরম্পরা ও সংস্কৃতিকে লালন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নতিরও মূলধন হয়ে উঠছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবারের ‘মন কি বাতে’ আমি যথেষ্ট সংখ্যায় এমন চিঠি পেয়েছি যা মনকে ভালো করে দেয়। এই সব চিঠি সেই মুসলিম মহিলারা লিখেছেন যারা সম্প্রতি হজযাত্রা করে এসেছেন। তাদের এই যাত্রা অনেক অর্থেই অনন্য। এরা সেই মহিলা যারা কোন পুরুষ সহযোগী বা নিকটাত্মীয় অর্থাৎ “মেহরম” ছাড়াই হজযাত্রা সম্পূর্ণ করেছেন। আর এদের সংখ্যা ৫০ বা ১০০ নয়, ৪ হাজারেরও বেশি। এটা একটা বিরাট পরিবর্তন। আগে মুসলিম মহিলাদের পুরুষ নিকটাত্মীয় তথা মেহরম ছাড়া হজ করার অনুমতি ছিল না। আমি ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে সৌদি আরব সরকারের প্রতিও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মেহরম ছাড়া হজ করতে আসা মহিলাদের জন্য বিশেষ করে উইমেন কো- অর্ডিনেটর নিযুক্ত করা হয়েছিল।  
বন্ধুরা, গত কয়েক বছরে হজ নীতিতে যে পরিবর্তন করা হয়েছে তা বিপুলভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আমাদের মুসলিম মা ও বোনেরা এ বিষয়ে আমাকে অনেক কিছু লিখেছেন। এখন বেশী সংখ্যায় মানুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। হজযাত্রা থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা বিশেষ করে আমাদের মা-বোনেরা চিঠি লিখে যে আশীর্বাদ করেছেন তা আমার কাছে অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, জম্মু-কাশ্মীরে মিউজিক্যাল নাইট আয়োজিত হওয়া, অত্যন্ত উচ্চতায় বাইক র‍্যালি হওয়া, চণ্ডীগড়ে স্থানীয় ক্লাব তৈরি হওয়া, এবং পাঞ্জাবে খেলাধুলার জন্য বহু গোষ্ঠী গঠিত হওয়া— কথাগুলি শুনে মনে হবে বিনোদনের কথা হচ্ছে, অ্যাডভেঞ্চারের কথা হচ্ছে, কিন্তু ব্যাপারটা অন্যরকম, এই আয়োজন একটা অভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গেও যুক্ত আছে। আর সেই অভিন্ন উদ্যোগটি হল ড্রাগসের বিরুদ্ধে জন সচেতনতা অভিযান।  
জম্মু কাশ্মীরের যুবক-যুবতীদের ড্রাগস থেকে বাঁচাতে বেশ কিছু উদ্ভাবনমূলক প্রয়াস দেখতে পাচ্ছি আমরা। এখানে মিউজিক্যাল নাইট, বাইক র‍্যালির মতন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চন্ডীগড়ে এই বার্তা ছড়িয়ে দেবার জন্য স্থানীয় ক্লাবগুলোকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা এঁদের ভাডা ক্লাবস্‌ বলে অভিহিত করেছেন। ভাডা অর্থাৎ ভিকট্রি এগেইনস্ট ড্রাগ অ্যাবিউস । পাঞ্জাবে খেলাধুলার বেশ কিছু গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে, যারা  ফিটনেসে মনোনিবেশ করছেন ও নেশা-মুক্তির লক্ষ্যে সচেতনতা কর্মসূচী চালাচ্ছেন।
নেশা মুক্তির কার্যক্রমে যুবাদের বেশি অংশগ্রহণ খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। এই প্রচেষ্টা ভারতের নেশা-বিরোধী অভিযানকে অনেক শক্তি দেবে। আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলিকে বাঁচাতে গেলে তাদের ড্রাগস থেকে দূরে রাখতে হবে। এই ভাবনা মাথায় রেখেই ২০২০ সালের ১৫ই আগস্ট ‘নেশা মুক্ত ভারত অভিযান’ শুরু করা হয়। এই অভিযানের সঙ্গে ১১ কোটির বেশি মানুষ যুক্ত হয়েছেন। দু’সপ্তাহ আগেই ভারত মাদকের বিরুদ্ধে বিশাল একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। মাদকের প্রায় দেড় লক্ষ কিলোর একটি চালান বাজেয়াপ্ত করে ধ্বংস করা হয়েছে।
ভারত ১০ লক্ষ কিলোর মাদক নষ্ট করার একটি দারুণ রেকর্ড-ও তৈরি করেছে। এই মাদকের দাম ১২,০০০ কোটি টাকারও বেশি ছিল। আমি তাঁদের সবাইকে প্রশংসিত করতে চাইব যাঁরা এই মহত নেশা মুক্তি অভিযানে অংশগ্রহণ করছেন। নেশার কুপ্রভাব শুধু একটি পরিবার না, পুরো সমাজের জন্য বড় সমস্যা সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতিতে যাতে এই সমস্যা সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায় তার জন্য আমাদের সবার মিলিত হয়ে এগোন প্রয়োজন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যেহেতু কথা মাদক ও যুবসম্প্রদায়ের হচ্ছে, আমি আপনাদের মধ্য প্রদেশের একটি অনুপ্রেরণামুলক উদ্যোগের কথা বলতে চাইব। এই অনুপ্রেরণামুলক উদ্যোগটি  মিনি ব্রাজিলের । আপনি হয়ত ভাবছেন মধ্য প্রদেশে মিনি ব্রাজিল কোথা থেকে এল, এটাই তো গল্পের মোড়। মধ্যপ্রদেশের শাহডোলের একটি গ্রামের নাম বিচারপুর।  বিচারপুরকে মিনি ব্রাজিল বলা হয়। মিনি ব্রাজিল এই জন্য বলা হয় কারণ এই গ্রামটি ফুটবলের উঠতি তারকাদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে যখন আমি শাহডোল গিয়েছিলাম, তখন আমার ওখানকার এরকম বেশ কিছু ফুটবলারের সঙ্গে দেখা হয়। আমার মনে হল এই ব্যাপারে আমাদের দেশবাসীদের, বিশেষ করে যুবা বন্ধুদের, অবশ্যই জানানো উচিৎ।
বন্ধুরা, বিচারপুর গ্রামকে মিনি ব্রাজিল বানানোর এই যাত্রা দু-আড়াই দশক আগে শুরু হয়েছিল। সেই যুগে বিচারপুর বেআইনি মদের জন্য কুখ্যাত ছিল, নেশার করাল গ্রাসে বন্দি ছিল। এই পরিবেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল সেখানকার তরুণ প্রজন্ম। একজন প্রাক্তন জাতীয়স্তরের খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষক রইস আহমেদ এই যুবকদের প্রতিভার খোঁজ পেয়েছেন। রইসজির খুব বেশি সম্পদ ছিল না, তবে তিনি, যুবকদের, সম্পূর্ণ উৎসাহের সঙ্গে ফুটবল শেখানো শুরু করেছিলেন। কয়েক বছরের মধ্যে এখানে ফুটবল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে বিচারপুর গ্রামটি, এখন ফুটবল খেলা দিয়েই পরিচিত হয়ে উঠেছে। এখন এখানে ফুটবল ক্রান্তি নামে একটি কর্মসূচি চলছে। এই কর্মসূচির আওতায় যুবকদের এই খেলার সঙ্গে যুক্ত করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কর্মসূচি এতটাই সফল হয়েছে যে বিচারপুর থেকে জাতীয় ও রাজ্যস্তরের  ৪০জনেরও বেশি খেলোয়াড় উঠে এসেছে। এই ফুটবল আন্দোলন এখন ধীরে ধীরে সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। শাহডোল ও এর আশপাশের এলাকায় বারোশোর বেশী ফুটবল ক্লাব গড়ে উঠেছে। এখান থেকে বিপুল সংখ্যক খেলোয়াড় এমন উঠে আসছেন, যাঁরা জাতীয় স্তরে খেলছেন। অনেক বড় প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষক, আজ, এখানে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আপনারাই ভাবুন, একটি জনজাতি এলাকা যেটি অবৈধ মদের জন্য পরিচিত ছিল, মাদকের জন্য কুখ্যাত ছিল, তা এখন দেশের ফুটবলের ধাত্রীভূমি হয়ে উঠেছে। তাইতো কথাতেই আছে- ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। আমাদের দেশে প্রতিভার অভাব নেই। যদি প্রয়োজন হয় তবে সেগুলি সন্ধান করুন এবং যত্ন করুন। এরপর সেই যুবকরাই দেশের নাম উজ্জ্বল করবে এবং দেশের উন্নয়নের পথের সন্ধান দেবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা সবাই সম্পূর্ণ উৎসাহের সঙ্গে ‘অমৃত মহোৎসব’ উদ্‌যাপন করছি। ‘অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষে সারাদেশে প্রায় দুই লক্ষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানগুলি একাধিক রঙে সজ্জিত ছিল, এবং বৈচিত্র্যে পূর্ণ ছিল। এই আয়োজনের একটি বিশেষত্ব ছিল এইগুলির মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক যুবক অংশগ্রহণ করেছিল। এই সুযোগেই তরুণরা দেশের মহান ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছে। প্রথম কয়েক মাসের কথা বললে, জনগণের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত অনেক আকর্ষণীয় কর্মকাণ্ডের সাক্ষী ছিল। সেরকমই একটি অনুষ্ঠান ছিল- বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন লেখকদের জন্য লেখক সম্মেলনের আয়োজন। এতে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতিতে ‘রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সম্মেলন’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। আমাদের ইতিহাসে দুর্গ — ফোর্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সবাই জানি। এটাই বোঝানোর জন্য ‘দুর্গ এবং কাহিনী’ অর্থাৎ ফোর্টের সঙ্গে সম্পর্কিত গল্পগুলিকে চিত্রায়ণ করার এক উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা সকলের খুব পছন্দ হয়েছিল।
বন্ধুরা, আজ যখন সারা দেশ জুড়ে ‘অমৃত মহোৎসবের’ হাওয়া বইছে, সামনেই ১৫ই আগস্ট, তাই দেশে আরো একটি বড় অভিযান আরম্ভ হতে চলেছে। শহীদ বীর ও বীরাঙ্গনাদের সম্মান জানানোর জন্য ‘মেরি মাটি – মেরা দেশ’ অভিযান শুরু হবে। এর মাধ্যমে, অমর শহীদদের স্মরণে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এই বিভূতিদের স্মরণ করে, দেশের লক্ষ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে বিশেষ স্মারক শিলান্যাস করা হবে। এই অভিযানের মাধ্যমে সারা দেশ জুড়ে অমৃত কলস যাত্রা বের করা হবে। দেশের বিভিন্ন গ্রাম ও প্রান্ত থেকে ৭৫০০ কলসিতে, মাটি ভরে এই অমৃত কলস যাত্রা দেশের রাজধানী দিল্লিতে পৌছবে। এই যাত্রা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাছের চারাও নিয়ে আসবে। ৭৫০০ কলসিতে ভরে আনা মাটি ও গাছের চারা গুলি দিয়ে জাতীয় যুদ্ধ স্মারকের  কাছে অমৃত বাটিকা নির্মাণ করা হবে। এই অমৃত বাটিকা ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের’ একটি মহৎ প্রতীক হয়ে উঠবে। আমি গত বছর লাল কেল্লা থেকে আগামী ২৫ বছরের অমৃত কালের জন্য পঞ্চ প্রণের কথা বলেছিলাম। ‘মেরি মাটি মেরা দেশ’ অভিযানে ভাগ নিয়ে আমরা এই পঞ্চ প্রণকে পূরণ করারও শপথ নেব। আপনারা সকলে দেশের পবিত্র মাটিকে হাতে নিয়ে শপথ নেওয়ার সময় নিজেদের সেলফি yuva.gov.in এঅতি অবশ্যই আপলোড করবেন। গত বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ অভিযানের জন্য পুরো দেশ একত্র হয়েছিল, সেই রকমই আমাদের এবারেও ঘরে ঘরে পতাকা উত্তোলন করতে হবে এবং এই ঐতিহ্যকে নিরন্তর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।  
এইসব প্রয়াসের মাধ্যমে আমাদের নিজেদের কর্তব্যবোধ তৈরী হবে, দেশের স্বাধীনতার জন্য অসংখ্য আত্মবলিদান সম্পর্কে বোধ জাগ্রত হবে, স্বাধীনতার মূল্য সম্পর্কে ধারণা তৈরী হবে। অতএব প্রত্যেক দেশবাসীর এই প্রয়াস এর সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হওয়া উচিত।
আমার প্রিয় দেশবাসী ‘মন কি বাতে’ আজ এপর্যন্তই। আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা ১৫ই আগস্ট এ স্বাধীনতা দিবসের মহান উৎসবের পালন করব। দেশের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুকে যারা বরণ করে নিয়েছেন তাদের সব সময় স্মরণ করব। আমাদের অনেক স্বপ্ন সফল করার জন্য দিন রাত পরিশ্রম করতে হবে আর ‘মন কি বাত’ দেশবাসীর এই পরিশ্রমকে, তাদের সম্মিলিত প্রয়াসকে সামনে আনার জন্য একটি মাধ্যম মাত্র।
পরের বার আবার কিছু নতুন বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।

CG/CB/ ……30th July, 2023……(2652)