Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

মধ্যপ্রদেশের সেহরে কৃষক মহাসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ


বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় কৃষক ভাই ও বোনেরা,

আমি হেলিকপ্টারে আসার পথে দেখছিলাম, চারপাশে প্রায় ৫-১০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত বাসের সারি। আমার মনে হয়, সবকটি বাস এখনও এসে পৌঁছয়নি। যাঁরা এখনও এসে পৌঁছতে পারেননি, তাঁদের সবাইকে আমি এখান থেকে অভিনন্দন জানাই। চারপাশে যতদূর চোখ যাচ্ছে, শুধু মানুষের মাথা দেখতে পাচ্ছি। এই ছোট্ট জনপথ সেহরে এত বড় জনসভার আয়োজনের ফলে, গোটা রাজ্যের কৃষকরা আমাকে আশীর্বাদ করতে এসেছেন, তাঁদের সকলকে আমি অভিনন্দন জানাই।
১০ বছর আগে ভারতের কৃষি মানচিত্রে মধ্যপ্রদেশের কোনও স্থান ছিল না। পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং গঙ্গা, যমুনা, কৃষ্ণা, গোদাবরীর দু’পারের রাজ্যগুলি দেশের কৃষি মানচিত্রে উজ্জ্বল উপস্থিতি জানান দিত। কিন্তু, মধ্যপ্রদেশের কৃষকদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম এবং অভিনব প্রয়োগের মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজজীর সুযোগ্য নেতৃত্বে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রূপায়ণের মাধ্যমে, যথাযথ সেচ ও সার্বিক গ্রামীণ উন্নয়নের বাস্তবায়নের ফলস্বরূপ মধ্যপ্রদেশ আজ ভারতের কৃষি মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করেছে।

বিগত চার বছর ধরে লাগাতার এই রাজ্যের কৃষকরা কৃষি পুরস্কার জিতে নিচ্ছে, এটা কম কথা নয়। অর্থনীতিবিদরা বুঝতে পারবেন যে, ভারতের আর্থিক বিকাশে আজ মধ্যপ্রদেশের কৃষকদের কত বড় অবদান রয়েছে। সেজন্য আমি এখানে উপস্থিত লক্ষ লক্ষ কৃষকদের সামনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাতে এ বছরের ‘কৃষি কর্মণ’ পুরস্কার তুলে দিচ্ছি, সঙ্গে রয়েছেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রীও। তাঁদের হাতে তুলে দিলেও এই পুরস্কার আপনাদের সকলের পরিশ্রমের ফল, সেজন্য আমি আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই।

আপনারা অদ্ভুত কাজ করেছেন। গত দু’বছর ভালো বর্ষা হয়নি। কোনও অঞ্চলে খরা আবার কোনও অঞ্চলে বন্যা। এত প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেও আপনারা যে সাফল্য অর্জন করেছেন, সেজন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই।

আজ এখানে আমি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সূচনা করতে যাচ্ছি। মধ্যপ্রদেশের কৃষকদের উপস্থিতিতে আমি গোটা দেশের কৃষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার গাইডলাইন উদ্বোধন করছি। এই ফসল বিমা যোজনা আমাদের দেশে প্রথম চালু করেছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে এন ডি এ’র প্রথম প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ী। সরকার পরিবর্তনের পর, এই প্রকল্পে অনেক পরিবর্তন আসে, সেই পরিবর্তনে সরকারের উপকার হলেও কৃষকদের মনে আশঙ্কা উদয় হয়েছিল। ফলস্বরূপ, দেশের কৃষকরা এই প্রকল্প থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। এদেশের কৃষকদের এত বেশি প্রাকৃতিক সংকটের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, তবুও তাঁরা ফসল বিমা যোজনায় নাম লেখাতে প্রস্তুত ছিলেন না। সারা দেশে ২০ শতাংশের বেশি কৃষক কিষাণ বিমার সুযোগ নেননি। আমরা সরকারে এসে কৃষকদের মনে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি। আমরা বিমা যোজনার এমন একটি উৎপাদন আনলাম, যাতে কৃষকদের মনে সকল আশঙ্কা দূর হয়ে যায়। আমরা তারই নাম দিয়েছি প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা। যাঁরা সকাল-সন্ধ্যা মোদীকে কৃষক বিরোধী আখ্যা দিতে থাকেন, তাঁরাও প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার সমালোচনা করার কোনও সাহস দেখাননি। কারণ, এই যোজনা সহজেই কৃষকের সকল সমস্যার সমাধান সূচিত করে।

একটা সময় ছিল যখন কোন কোন এলাকায় ফসল বিমার প্রিমিয়াম ছিল ১৪%, কোথাও কোথাও আবার ৬-৮ শতাংশ কৃষকদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বিমা কোম্পানিগুলি ফুলে – ফেঁপে উঠছিল। আমাদের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বিমা কোম্পানিগুলি রবি ফসলের ক্ষেত্রে ১.৫ শতাংশ আর খরিফ ফসলের ক্ষেত্রে ২ শতংশের বেশি প্রিমিয়াম নিতে পারবে না।তখন জমা দেওয়া খুব সহজ ছিল কিন্তু টাকা পেতে খুব কষ্ট হতো। এখন আমরা প্রিমিয়ামে উর্দ্ধসীমা লাগিয়ে দিয়েছি কিন্তু কৃষকের টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও উর্দ্ধসীমা লাগায়নি। যত টাকার বিমা তিনি করাবেন, তত টাকা ফেরৎ পাবার অধিকার তাঁর রয়েছে। আর বিমা কোম্পানিগুলিকে তত টাকাই ফিরিয়ে দিতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক।

আরেকটা কথা, আজ পরিস্থিতি এরকম গ্রামের ১০০ জন কৃষকের মধ্যে যদি শুধু ২০ জনই কিষাণ বিমা যোজনায় যুক্ত হন, আর মনে করুন তার চারপাশের ১০-২৫টি গ্রামে কোনও কারণে ফসল লোকসান হয়েছে, তবুও সেই ২০ জন কৃষক বিমার সুবিধা পাবেন। এমনকি, অনেকগুলি গ্রামের মধ্যে একজন কৃষকও যদি এই বিমা যোজনার অন্তর্ভুক্ত হন, তা হলে খরা, বন্যা, শিলাবৃষ্টি, ধ্বস যে কোনও কারণেই লোকসান হলে সেই বিমার সুবিধা পাবেন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।

এই বিমা যোজনার আওতায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, ফসল ফলানোর সময়ে আবহাওয়া ভালো ছিল, হঠাৎ প্রবল বর্ষা এসে গেলো, ফসল কাটার পর বন্যা এসে ফসল ভাসিয়ে নিয়ে গেল – এসব ক্ষেত্রে দেশের কোনও বিমা কোম্পানি কৃষকদের বিমার সুবিধা দিতে প্রস্তুত ছিল না। এই প্রথমবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হ্যেছে যে, ফসল কাটার ১৪ দিনের মধ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত, শিলাবৃষ্টি কিংবা বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হলে কৃষককে বিমার টাকা দিতে হবে।

ভাই ও বোনেরা, আগে বিমা মঞ্জুর হতেই চার মরশুম পেরিয়ে যেত। বিমা কোম্পানি, সরকার এবং কৃষকের মধ্যে এই সময়ের ব্যবধান কমাতে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছি। তৎকাল সমীক্ষা করে ২৫ শতাংশ টাকা তক্ষুনি কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এর থেকে বড় ঝুঁকি সরকারের কাছে আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু আমরা দেশের কৃষকদের বিশ্বাস করি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এত বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু দেশের সরকার কৃষকদের ভরসা করেনি। সেজন্য ২০ শতাংশের বেশি কৃষকরাও সরকারি বিমা যোজনায় যুক্ত হননি। এখন আমরা যে বিশ্বাসের পরিবেশ গড়ে তুলেছি, তাতে আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতেই দেশের ৫০ শতাংশ কৃষক প্রধানমন্ত্রী কিষাণ বিমা যোজনার সঙ্গে যুক্ত হবেন। যত বেশি কৃষক যুক্ত হবেন, রাজকোষে ততই বোঝা বাড়বে, তবুও আমি আপনাদের বলবো যে আপনারা এই বিমা যোজনার সঙ্গে যুক্ত হন, ভারত সরকার এই প্রথমবার কৃষকদের মঙ্গলের জন্য এতবড় পরিকল্পনা নিয়েছে, যাতে কোনও রকম প্রাকৃতিক সংকট আপনাদের সমস্যায় না ফেলতে পারে।

ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশে এমন কোনও বছর যায় না যে, কৃষকদের কোনও না কোনও প্রাকৃতিক সংকটের সম্মুখীন হতে হয়নি। কিন্তু, আগে নিয়ম ছিল কোনও অঞ্চলে ৫০ শতাংশের বেশি ফসলের ক্ষতি হলে তবেই সরকার ভর্তুকির কথা ভাবতো। ভাই ও বোনেরা, আমরা ক্ষমতায় এসেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রাকৃতিক সংকটে কৃষকের এক-তৃতীয়াংশ ফসলও যদি লোকসান হয়, তা হলে ভর্তুকি দেওয়া হবে, এটাও একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। আগে যত ভর্তুকি দেওয়া হতো, এখন তার তিনগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই আমরা গ্রামের কৃষকদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে চাই।

সরকার আরেকটি নতুন কাজ শুরু করেছে। দেশে আধুনিক কৃষির প্রচলন। কৃষিক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা দেশকে অধিক ফলনশীল করে তুলতে চাই। এর মানে এই নয় যে, আমাদের হাজার হাজার বছরের অভিজ্ঞতাকে ভুলে যাবো। আমাদের কৃষকদের পরম্পরাগত জ্ঞানকেও আমরা সমানভাবে কাজে লাগাতে চাই। আমাদের কৃষি মন্ত্রী শ্রী রাধামোহন সিং পরম্পরাগত জ্ঞানের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক মেলবন্ধনের মাধ্যমে দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছেন, সেজন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

ভাই ও বোনেরা, আমাদের কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলান কিন্তু সঠিক দাম পান না। এত বড় দেশ একই ফসলের দাম কোথাও পড়ে গেলেও, অন্য জায়গায় বেড়ে যায়। কিন্তু, কৃষকের কোনও নিজস্ব পছন্দ থাকে না, তাঁকে তো গ্রামের নিকটবর্তী বাজারেই বিক্রি করতে হয়। কৃষকদের এই সমস্যা দূর করতে আমরা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সফল প্রয়োগের মাধ্যমে আগামীদিনে জাতীয় কৃষি বাজারের ভিস্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এর মাধ্যমে আমাদের কৃষকরা তাঁদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই দেখতে পাবেন তিনি যে ফসল উৎপাদন করেছেন, সেটি সেদিন ভারতের কোন প্রান্তের কোন বাজারে কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই অনুযায়ী, তিনি ঠিক করবেন দেশের কোন প্রান্তে গিয়ে তাঁর ফসল বিক্রি করবেন। এই প্রথমবার দেশের প্রায় ৫৫০টি বড় বাজারকে প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত করে অনলাইন নেটওয়ার্কেরমাধ্যমে জাতীয় কৃ্ষি বাজার গড়ে তোলা হচ্ছে।

ভাই ও বোনেরা, আগামী ১৪ এপ্রিল ডঃ ভীমরাও বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজজী মউ শহরে বাবাসাহেব আম্বেদকর তীর্থ গড়ে তুলেছেন। সেই ১৪ এপ্রিলে আমরা ঐ জাতীয় কৃষি বাজারের অনলাইন সূচনা করবো।

ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশে আখচাষীদের নিয়ে সবসময়েই দুশ্চিন্তা থাকে। আমরা সরকারে এসে দেখেছি, আখচাষীদের অনেক ভর্তুকি বাকি রয়েছে। কোথাও ৬৫ হাজার কোটি টাকা আবার কোথাও ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই ভর্তুকি কিভাবে দেব, তা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। সেসময় গোটা বিশ্বে চিনির দাম কম ছিল। কিন্তু ভারতে যথেষ্ট চিনি মজুত ছিল। কেউ আমাদের থেকে চিনি কিনতে চাইছিল না। আমরা তখন অনেক ভাবনাচিন্তা করে এমন পরিকল্পনা শুরু করলাম যে গত ১৮ মাসে প্রায় সকল ভর্তুকি কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া গেছে। এখন বাকি আছে মাত্র ১ হাজার কোটি টাকারও কম।

ভাই ও বোনেরা, শুধু তাই নয়, আমরা নিয়ম করেছি যে, সকল গাড়িকেই পেট্রোলে ১০ শতাংশ ইথানল ব্যবহার করতে হবে। এরফলে, দূষণ কমবে আর কৃষকদেরও সব আখ চিনির কারখানায় দিয়ে দিতে হবে না। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন।

চিনি রপ্তানির পরিকল্পনা তৈরি করেছি। আমদানি কমানোর পরিকল্পনা তৈরি করেছি। ব্রাউন চিনির পরিকল্পনাও তৈরি করেছি। ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে কৃষকের কল্যাণকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আমাদের শাসনকালে গুজরাটের মরুভূমির কৃষকরা তাঁদের পরিশ্রম দিয়ে অভূতপূর্ব ফসল উৎপাদন করে দেশকে চমকে দিয়েছিলেন। আজ বিগত চার বছর ধরে মধ্যপ্রদেশের কৃষকরাও তাঁদের পরাক্রমে আমাদের শাসনকালকে স্মরণীয় করে রাখছেন।

ভাই ও বোনেরা, আজ কৃষিক্ষেত্রে অনেক নতুন প্রয়োগ, নতুন আবিষ্কার দেশকে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের পথে এগিয়ে দিতে পারে, সেজন্য আমরা ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’ অভিযান শুরু করেছি। এই অভিযান কেবলই তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রের অভিযান নয়, এই অভিযান কৃষিক্ষেত্রকেও নতুন নতুন আবিষ্কার ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগে সোনালী ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কৃষি, পশুপালন, মৎস্যচাষ, দুগ্ধ উৎপাদন, হাঁস-মুরগী পালনের ক্ষেত্রেও ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’ লাভদায়ক প্রতিপন্ন হবে।

জৈবচাষের ক্ষেত্রেও কৃষকদের জন্য নতুন বাজার গড়ে উঠছে। আমাদের দেশের পার্বত্য রাজ্য সিকিম দেশের প্রথম জৈব রাজ্য হয়ে উঠেছে। আর গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সকল রাজ্যে এত দ্রুত এই জৈবচাষের প্রসার ঘটছে যে, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয় তথা গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিশ্বের জৈব রাজধানী হয়ে উঠতে পারে।

আমার ইচ্ছা, ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনা’র মাধ্যমে দেশের সকল কৃষকের ক্ষেতে জল পৌঁছে দেওয়া। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, একাজে আমরা সফল হলে এদেশের মাটি সর্বত্র সোনা ফলাবে। সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প, প্রতি বিন্দুতে অধিক ফসল ফলানোর জন্য প্রয়াস চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজজী’কে আমি ধন্যবাদ জানাই। তাঁর সফল নেতৃত্বেই মধ্যপ্রদেশে আজ সবুজ বিপ্লব এসেছে। সেচ প্রকল্পকে ১২ লক্ষ থেকে ৩২ লক্ষে পৌঁছে দিতে পেরেছেন বলেই তিনি এই সাফল্য পেয়েছেন।

আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। উপগ্রহ থেকে তোলা চিত্র ব্যবহার করে আপনাদের গ্রামে জলসেচের পরিকল্পনা ছকতে পারি। বর্ষার জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা, সেই জল অপচয় না করা, সারের খালি বস্তা এবং সিমেন্টের খালি বস্তায় পাথর ও মাটি ভরে জল আটকানোর ব্যবস্থা করলে ১০-১৫ দিনের মধ্যেই সেই জল গ্রামের মাটি-ই শুষে নেবে। সেক্ষেত্রে মাটির নীচের জলস্তর ওপরে উঠে আসবে, আপনারা লাভবান হবেন। এভাবে সাধারণ প্রয়োগের মাধ্যমে মধ্যপ্রদেশ তথা সারা ভারতে জল সংরক্ষণের কাজ আমরা করবো।

বন্যার জল সেচের কাজে ব্যবহার করবেন না। বেশি জল হলেই ভালো ফসল হয়, এই ধারণা বদলাতে হবে। অনেক পরিবারে এমন শিশু থাকে, যার বয়স ৫-৬ বছর হয়ে গেছে কিন্তু শরীরের গঠন দুই বছরের বাচ্ছার মতো। তাকে যদি বালতি ভরে পেস্তা-বাদাম মিশিয়ে দুধ খাওয়ালেই কি তার বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়ে যাবে! তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। আর তারপর সারা দিনে ২০০ গ্রাম দুধ খাওয়ালেই তার শরীর মজবুত হবে। ফসলের ক্ষেত্রেও এটা সত্য।

ভাই ও বোনেরা, ২০১৪ সালে আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হলাম, প্রায় সকল মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে চিঠিআসে যে, তাঁদের রাজ্যে ইউরিয়ার আকাল রয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সালে দেশের কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে ইউরিয়ার জন্য চিঠি লিখতে হয়নি। সারা দেশের কোনও খবরের কাগজে ইউরিয়ার জন্য কৃষকদের লম্বা লাইনের ছবি ছাপা হয়নি। আগে প্রতিবছর কালোবাজার থেকে ইউরিয়া কিনতে হতো, ঝগড়া, মারামারি, লাঠিচার্জ হতো। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার পর প্রথমবার ২০১৫য় দেশে এত ইউরিয়া উৎপন্ন হয়েছে যে কালোবাজারি বন্ধ হয়ে গেছে, প্রত্যেক কৃষকের প্রয়োজন অনুসারে ইউরিয়া তাঁর কাছে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা গেছে।

ভাই ও বোনেরা, আমরা সেখানেই থেমে থাকিনি, বন্ধ হয়ে যাওয়া, সকল ইউরিয়া কারখানাগুলি চালু করার ব্যবস্থা করেছি। আর ইউরিয়ার কালোবাজারি রুখতে কারখানাগুলিকে বাধ্য করেছি যাতে, নিম কোটিং করে ইউরিয়া বাজারে ছাড়ে। ইউরিয়ায় নিমতেল মেশানোর ফলে ফসল কীটপতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আগে যার ৬-৭ কেজি ইউরিয়া লাগতো, তাঁর এখন ৩-৪ কেজি ইউরিয়াতেই কাজ হয়ে যাবে। ইউরিয়া প্রয়োগে মাটির যতটা ক্ষতি হতো, সেটাও এখন হবে না। পাশাপাশি, ইউরিয়া চুরি হয়ে যেভাবে রাসায়নিক কারখানায় চলে যেত, সেই দুর্নীতিও বন্ধ হয়েছে।

ভাই ও বোনেরা, আপনাদের অনুরোধ, ইউরিয়া সার নির্ভরতা কমান। সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী শহরের বর্জ্য পদার্থ থেকে উৎপাদিত জৈব সার সস্তাদরে কিনে আপনারা অধিক ফলনের সুযোগ নিন।

ভাই ও বোনেরা, আমরা ‘মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড’ চালু করেছি। সারা দেশের সকল কৃষকের হাতে এই কার্ড পৌঁছে দেওয়া আমাদের স্বপ্ন। আপনারা রক্ত পরীক্ষা করালে তা দেখে ডাক্তার যেমন বলে দিতে পারেন, আপনার রক্তে শর্করা রয়েছে কি না, তেমনই মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেক কৃষককে বিজ্ঞানীরা তাঁর জমির গুণাগুণ বলে দেবেন। পৈত্রিক আমলে হয়তো কোনও জমিতে গম চাষ ভালো হতো কিন্তু এখন আর তেমন হয় না, কৃষি বিজ্ঞানীরা বলে দেবেন যে, আপনার জমির মাটির গুণ অনুযায়ী এতে এখন অমুক ডালের চাষ বা তিলের চাষ করলে ভালো হবে। তাঁদের কথা মেনে চাষ করলে আপনারা লাভবান হবেন। এভাবেই ফসল বিমার পাশাপাশি, মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড আপনাদের অনেক বড় নিরাপত্তা প্রদান করবে।

ভাই ও বোনেরা, আপনারা যেমন আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এ অংশগ্রহণ করেছেন, ফলস্বরূপ এই পাশেই আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা বুধনি, ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসমুক্ত হয়েছে, তেমনই আপনারাও নিজেদের প্রত্যেকের গ্রামকে গড়ে তুলুন। ইন্দোর এলাকায়ও অনেক ভালো কাজ হয়েছে। আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয়া সুমিত্রাজী বলছিলেন যে, তাঁর এলাকাও ইতিমধ্যেই মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসমুক্ত হয়েছে। সেজন্য তাঁদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। আর, মধ্যপ্রদেশের সকল কৃষককে আহ্বান জানাই আপনারা গ্রামের মা-বোনেদের খোলা মাঠে যেতে দেবেন না। যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যেকের বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণ করুন।

ভাই ও বোনেরা, আসুন আমরা সকলে সংকল্প নিই, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, দেশের সকল কৃষক, ১২৫ কোটি ভারতবাসী এই সংকল্প নিই যে, ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিবর্ষে দেশের কৃষকদের আয় আমরা দ্বিগুণ করে ছাড়বো। তার জন্য যা করতে হয়, কেন্দ্রীয় সরকার, প্রতিটি রাজ্য সরকার এবং দেশের প্রত্যেক নাগরিক তা করবো।

আমি আরেকবার আপনাদের সকলকে অন্তর থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই এবং আশা করি যে, পর পর চার বছর আপনারা এই পুরস্কার জিতেছেন, আগামী বছরগুলিতেও এই পুরস্কার আপনারা হাতছাড়া করবেন না। কিছুদিন আগেই সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর রাজপুত্র আবুধাবি থেকে এদেশে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমাদের মাটির নীচে এত তেল রয়েছে, পয়সারও অভাব নেই কিন্তু আমাদের ভাগ্যে বৃষ্টি নেই। জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ১০-১৫ বছর পর খাদ্যশস্য বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে, শাক-সব্জি, ডাল, তিল – এই সবকিছুই আমদানি করতে হবে। এ ব্যাপারে উপসাগরীয় দেশগুলির সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত কী ভেবেছে। তাঁর কথা শুনে আমি অবাক। এর মানে নিজেদের উদরপূর্তির পাশাপাশি, ১০-১৫ বছর পর আমাদের কৃষকদের উপসাগরীয় দেশগুলির মানুষের উদরপূর্তির কথাও ভাবতে হবে। তাঁদের জন্যও ফসল উৎপন্ন করতে হবে।

আমার কৃষক ভাই ও বোনেরা, গোটা বিশ্ব আজ ভারতের দিকে এমনি অধীর প্রতীক্ষায় তাকিয়ে আছে। আমরা চেষ্টা করলে আমাদের উৎপাদনবৃদ্ধির মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতেই বিশ্ব বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। সেই স্বপ্ন নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি, সেই আশা নিয়েই আপনাদের সকলকে অন্তর থেকে অভিনন্দন জানাই। ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’ – এই মন্ত্র একদিন ভারতের খাদ্য ভাণ্ডারকে ভরে তুলেছিল। এখন সেই কৃষকদের উত্তর প্রজন্ম ভারতকে নতুন আর্থিক উচ্চতায় পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অনেক অনেক ধন্যবাদ। অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

PG/SB/SB/S