Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ভিয়েতনামসফরকালে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি

ভিয়েতনামসফরকালে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি


মাননীয়প্রধানমন্ত্রী নগুয়েন জুয়ান ফুক,

সংবাদমাধ্যমপ্রতিনিধিবৃন্দ,

মাননীয়প্রধানমন্ত্রী, আমাকে এবং আমার প্রতিনিধিদলকে আপনার উদার আতিথেয়তা এবং আন্তরিক ওসাদর সম্ভাষণের জন্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে। এর আগে আজ সকালে আপনি ব্যক্তিগতভাবেআমাকে হো চি মিন-এর বাসস্থানটি দেখতে নিয়ে গিয়েছিলেন। হো চি মিন ছিলেন বিংশশতাব্দীর বলিষ্ঠ নেতাদেরই অন্যতম। তাই, আমাকে এই সুযোগদানের জন্য আমি বিশেষভাবেধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। গতকালই ভিয়েতনামের জনসাধারণ তাঁদের জাতীয়দিবসটি পালন করেছেন। সেজন্য আমি অভিনন্দন জানাই তাঁদেরও।

বন্ধুগণ,

আমাদেরদুটি দেশের সম্পর্ক দু’হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। ভারত থেকে ভিয়েতনামে বৌদ্ধ ধর্মেরপ্রসার এবং ভিয়েতনামের হিন্দু মন্দিরগুলি আমাদের এই নিবিড় বন্ধনেরই প্রতীক চিহ্ন।আমাদের এই প্রজন্মের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছেভিয়েতনাম। উপনিবেশবাদের শাসন শৃঙ্খল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ভিয়েতনামের জনসাধারণ যেবীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা এক প্রকৃত অনুপ্রেরণার উৎস। জাতীয়পুনর্মিলনের লক্ষ্যে আপনাদের সাফল্য এবং জাতি গঠনের কাজে আপনাদের অঙ্গীকার আপনাদেরদেশের সাধারণ মানুষের চারিত্রিক দৃঢ়তারই পরিচায়ক। আমরা ভারতবাসীরা আপনাদেরসঙ্কল্পের বিশেষ প্রশংসা করি। আপনাদের সাফল্যেও আমরা উল্লসিত। জাতি গঠনের লক্ষ্যেআপনাদের যাত্রাপথে সর্বদাই সঙ্গী হয়েছি আমরা ।

বন্ধুগণ,

প্রধানমন্ত্রীফুক-এর সঙ্গে আমার বিস্তারিত আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক তথা বহুপক্ষীয়বিষয়গুলি সম্পর্কেও পূর্ণ মতবিনিময় করেছি আমরা। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরওদৃঢ় ও উন্নীত করে তোলার কাজেও আমরা সম্মত হয়েছি। এই অঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশহিসেবে আমরা এটাও অনুভব করেছি যে আমাদের সাধারণ স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ওআন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও নিবিড় করে তোলা প্রয়োজন। এইঅঞ্চলের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার সদ্ব্যবহারেও পূর্ণ সহমত পোষণ করে এইদুটি দেশ। আঞ্চলিক স্তরে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতাচালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নেও সম্মতি জানিয়েছি আমরা। আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বেরসম্পর্ককে উন্নীত করে এক সুসংবদ্ধ কৌশলগত সহযোগিতায় রূপান্তরের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণকরেছি আমরা, তা আমাদের ভবিষ্যৎ সহযোগিতার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকেই পূরণ করবে। শুধুতাই নয়, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক নতুন দিশা নির্দেশের পাশাপাশিঅংশীদারিত্বের বিষয়গুলিকেও তা চিহ্নিত করবে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ওস্থিতিশীলতার বাতাবরণকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে আমাদের পারস্পরিক প্রয়াস ওপ্রচেষ্টা।

বন্ধুগণ,

আমাদেরদু’দেশের জনসাধারণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রচেষ্টার পাশাপাশি তা সুরক্ষিত রাখারবিষয়টিও যে একান্ত জরুরি তাও উপলব্ধি করেছি আমরা। তাই, প্রধানমন্ত্রী এবং আমিআমাদের দু’দেশের সাধারণ স্বার্থ পূরণে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতাকে আরও গভীরকরে তোলার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছি। আজ কিছুক্ষণ আগে নৌ-প্রহরার জন্য জাহাজ নির্মাণসম্পর্কিত যে সহযোগিতা চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা আমাদের প্রতিরক্ষাসহযোগিতাকে একটি নির্দিষ্ট রূপ ও আকার দেওয়ার কাজে বিশেষভাবে সাহায্য করবে।ভিয়েতনামের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তার কথাওআমি এই উপলক্ষে সানন্দে ঘোষণা করছি। দু’দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করেতুলবে এই ঋণ সহায়তার বিষয়টি। কিছুক্ষণ আগে যে সমস্ত বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি আমরাতা আমদের সহযোগিতার বহুমুখীনতা ও গভীরতাকেই প্রতিফলিত করে।

বন্ধুগণ,

দ্রুতবিকাশ এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এখন এগিয়ে চলেছে ভিয়েতনাম।

ভিয়েতনামেরলক্ষ্য হল :

· দেশবাসীরসমৃদ্ধি ও ক্ষমতায়ন;

· কৃষিরআধুনিকীকরণ;

· উদ্ভাবনও শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহদান;

· বিজ্ঞানও প্রযুক্তিকে শক্তিশালি করে তোলা;

· দ্রুতঅর্থনৈতিক বিকাশের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার বিকাশ; এবং

· আধুনিকজাতি গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

ভিয়েতনামের এই যাত্রাপথে বন্ধু ওসহযোগী হিসেবে সঙ্গী হতে প্রস্তুত ভারতের ১২৫ কোটি জনসাধারণ। সহযোগিতার সঙ্কল্পগ্রহণে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্মত হয়েছি আমি এবং প্রধানমন্ত্রী। নাহত্র্যাং-এর টেলিযোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সফটওয়্যার পার্ক গড়ে তোলার কাজে ভারতভিয়েতনামকে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো আর্থিক সহায়তা দেবে। মহাকাশ সহযোগিতারক্ষেত্রে যে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছে তার আওতায় উন্নয়নের জাতীয় লক্ষ্য পূরণেভিয়েতনাম ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাওয়ার সুযোগ পাবে।দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধিও আমাদের কৌশলগত লক্ষ্যগুলির অন্তর্ভুক্ত । এই উদ্দেশ্যে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ১৫ বিলিয়ন মার্কিনডলার পরিমাণের বাণিজ্যিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যেরসুযোগগুলিকে কাজে লাগানো হবে। ভিয়েতনামে ভারতীয় বিনিয়োগ এবং প্রকল্প রূপায়ণের যেকাজগুলি চলছে সেগুলির সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কেও খোঁজখবর নিয়েছি আমি। আমার সরকারেরবিভিন্ন কর্মসূচির সুযোগ গ্রহণের জন্য ভিয়েতনামের শিল্প সংস্থাগুলিকে এই উপলক্ষেআহ্বান জানাই আমি।

বন্ধুগণ,

আমাদের দু’দেশের সাধারণ মানুষেরমধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক কয়েক শতাব্দী প্রাচীন। হ্যানয়-এ অনতিবিলম্বেই আমরা একভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন ও তার উদ্বোধন করতে পারব বলে আশাবাদী। ভারতীয়পুরাতত্ত্ব সমীক্ষা বিভাগ মাই সন-এ খুব শীঘ্রই এ দেশের চ্যাম স্মৃতিস্তম্ভগুলিরপুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করবে। এবছরের গোড়ার দিকে নালন্দা মহাবিহারের মতোইউনেস্কো-র একটি আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের স্মারক কেন্দ্রে লিপি উদ্ধারের বিষয়েভিয়েতনামের সহযোগিতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।

বন্ধুগণ,

ঐতিহাসিক সংযোগ, ভৌগোলিক নৈকট্য,সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং কৌশলগত সম্পর্কের অংশীদার আমাদের এই দুটি দেশ। তাই,আসিয়ান-কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ভারত। আমাদের ‘পূবে তাকাও’ নীতির মূলকেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান এই বিষয়টির। আসিয়ান-এর সঙ্গে ভারতের সমন্বয়ের ক্ষেত্রেবিশেষ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছে ভিয়েতনাম। তাই, সবক’টি ক্ষেত্রেই ভারত-আসিয়ানসহযোগিতার সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাব আমরা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আমাদের আতিথেয়তা দানের ক্ষেত্রে আপনিযথেষ্ট উদার ও মহান। ভিয়েতনামের জনসাধারণের আদর ও ভালোবাসা আমার হৃদয়কে পূর্ণকরেছে। আমাদের অংশীদারিত্বের সম্পর্কের এই প্রকৃতি ও লক্ষ্য আমাদের যথেষ্টসন্তোষের কারণ। একইসঙ্গে, আমাদের এই সম্পর্কের গভীরতাকে অটুট ও অক্ষত রাখতে কাজকরে যেতে হবে আমাদের। আপনাদের আতিথেয়তা আমি বিশেষভাবে উপভোগ করেছি। তাই, ভারতেআপনাকে এবং ভিয়েতনামের নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানানোর সুযোগ পেলে আমি বিশেষভাবে খুশিহব। ভারতে আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকব আমরা।

ধন্যবাদ,

আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

PG/SKD/DM/