Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ভারত – ব্রাজিল যৌথ বিবৃতি

ভারত – ব্রাজিল যৌথ বিবৃতি


 নয়াদিল্লি, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ 

 

নতুন দিল্লিতে জি-২০ গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আজ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি ল্যুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা বৈঠক করেছেন। 
এ বছর ব্রাজিল ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। উভয় নেতা এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তোলার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। অভিন্ন মূল্যবোধ এবং শান্তি, সহযোগিতা ও স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রশ্নে দুটি দেশের একই লক্ষ্য থাকায় এই সম্পর্ক ক্রমশ বিকশিত হয়েছে। ব্রাজিল – ভারত কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করে তোলা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীতে দু’দেশের নির্দিষ্ট ভূমিকা বজায় রাখার প্রশ্নে উভয় নেতা তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তা সন্তোষজনক বলে তাঁরা মতপ্রকাশ করেছেন।   
রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষতা ও প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলি সৃষ্টি হচ্ছে, তার মোকাবিলায় পরিষদের যথাযথ ভূমিকার জন্য এর স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে উভয় নেতা তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রসংঘের সম্প্রসারিত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের জন্যও দুই দেশই একে-অপরকে সমর্থন করবে।  
জি-৪ এবং এল-৬৯ এর মতো গোষ্ঠীগুলিতে ব্রাজিল ও ভারত একযোগে কাজ করবে বলে উভয় নেতা জানিয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের জন্য তাঁরা নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতামূলক বৈঠক করবেন। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের জন্য আন্তঃসরকারি পর্যায়ের আলোচনা থেমে থাকায় দুই নেতা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর এটিই যথাযথ সময় বলে তাঁরা মনে করেন। 
২০২৮ – ২৯ সময়কালে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী আসনের জন্য ভারতের প্রার্থীপদকে ব্রাজিল সমর্থন করবে বলে রাষ্ট্রপতি লুলার ঘোষণাকে প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানিয়েছেন। 
জ্বালানী ব্যবহার সংক্রান্ত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে উভয় নেতা সহমত পোষণ করেন। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের পরিবহণ ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণের হার কমিয়ে আনতে জৈব জ্বালানী এবং ফ্লেক্স ফুয়েল যানবাহন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকারি স্তরে এবং বেসরকারি উদ্যোগে জৈব জ্বালানীর ক্ষেত্রে যে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে – উভয় নেতা তার প্রশংসা করেন। জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের সময় ভারত আন্তর্জাতিক জৈব জ্বালানী জোট গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, দুই দেশই সেই উদ্যোগে সামিল হয়েছে। 
দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণের জন্য এবং সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সময়কালে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় সমস্যা বলে উভয় নেতা মনে করেন। দুটি দেশই জলবায়ু সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও প্রসারিত এবং শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই, রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কনভেনশন – ইউএনএফসিসিসি, কিয়োটো প্রোটোকল এবং প্যারিস চুক্তিকে মেনে চলার ক্ষেত্রে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ বজায় থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে কপ-২৮ থেকে কপ-৩০ পর্যন্ত ইউএনএফসিসিসি-র বহুস্তরীয় উদ্যোগে দুই দেশ একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলে ষষ্ঠ মূল্যায়নের প্রতিবেদন অনুসারে এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন। এই প্রেক্ষিতে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রিত করতে দুই দেশ উদ্যোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রুপ অফ-১৭ অ্যান্ড চায়না এবং বেসিক গ্রুপ অফ কান্ট্রিজ – এর মতো সংগঠনে দুটি দেশ একযোগে কাজ করবে। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বহুস্তরীয় উদ্যোগ বৃদ্ধি পাবে। বেসিক গোষ্ঠীর সভাপতি এবং কপ-৩০ এর সম্মেলনে ব্রাজিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ভারত সবধরনের সহযোগিতা করবে। আন্তর্জাতিক সৌর জোট এবং কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার – এর মতো সংগঠনে দুই দেশ তৃতীয় দেশের সঙ্গে যৌথভাবে আরও বেশি প্রকল্প বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্তরে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে উভয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দুই দেশ সহ সারা বিশ্বের খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত নিরাপত্তা বজায় রাখতে সুস্থায়ী কৃষি কাজ ও গ্রামোন্নয়নে ভারত ও ব্রাজিল পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে। একটি মুক্ত ও ভরসাযোগ্য খাদ্য সরবরাহ-শৃঙ্খল গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দিয়ে উভয় দেশ বহুপাক্ষিক বাণিজ্য নীতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। এর ফলে, একতরফা কোনও বিধিনিষেধ গ্রহণ করলে কৃষি সংক্রান্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যাতে নেতিবাচক কোনও প্রভাব না পড়ে, তা নিশ্চিত হবে। কৃষি ও পশুপালন সংক্রান্ত ব্যবসা-বাণিজ্যে একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গড়ে তোলায় উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 
ভারত ও মার্কোসোর গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মার্কোসোরে ব্রাজিলের সভাপতিত্বকালে ভারত ও এই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে দুটি দেশ একযোগে কাজ করবে। এর ফলে, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে। 
বেসরকারি ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য ভারত – ব্রাজিল বিজনেস ফোরামে একটি পৃথক ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠায় উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 
সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উচ্চস্তরীয় প্রতিনিধি দলের আদান-প্রদান বাড়াতে এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে উভয় দেশের অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে ভারত ও ব্রাজিল সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই নেতা একে স্বাগত জানিয়ে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন নতুন অংশীদারিত্ব এবং যৌথ প্রকল্প গড়ে তোলার বিষয়ে উদ্যোগী হতে পরামর্শ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ফলস্বরূপ, একটি ভরসাযোগ্য সরবরাহ-শৃঙ্খল গড়ে তোলা যাবে।
ভারত – ব্রাজিল সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তি কার্যকর হওয়ায় উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে, দুই দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়েছে। 
চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধে সফল অবতরণের ফলে ভারত যে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে, রাষ্ট্রপতি লুলা তার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে, প্রথম সৌরাভিযান আদিত্য এল-১ – এর সফল উৎক্ষেপণেও তিনি আনন্দ প্রকাশ করেছেন। মহাকাশ বিজ্ঞানী এই দুটি সাফল্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
আইবিএসএ-র তিন অংশীদারের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা শুরু করতে দুই নেতা সহমত পোষণ করেছেন। এ বছর আইবিএসএ ফোরামের ২০তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্তরে দক্ষিণী বিশ্বের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে আইবিএসএ – এর কৌশলগত তাৎপর্যের কথা উভয় নেতা স্বীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী আইবিএসএ – এর সভাপতি হিসেবে ব্রাজিলকে সবধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। 
তাঁদের আলোচনায় সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস্ শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়টি উঠে এসেছে। এই বৈঠকে রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের জন্য আরও উদ্যোগী হওয়া এবং ব্রিকস্ গোষ্ঠীতে ৬টি দেশের পূর্ণ সদস্য পদ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর মতো ইতিবাচক দিকগুলির বিষয়ে উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্রপতি লুলা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অভিনন্দন জানান। আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে এই গোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি ভারতের সহযোগিতার আবেদন জানান। জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে পর পর দুটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র দায়িত্ব পালন করতে চলেছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দক্ষিণী বিশ্বের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রাজিলের সভাপতিত্বে আইবিএসএ গোষ্ঠীর তিনটি দেশ জি-২০ ত্রৈকা গঠন করায় উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন। 

 

AC/CB/SB