নয়াদিল্লি, ৪ এপ্রিল, ২০২৫
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ৩ ও ৪ এপ্রিল সরকারি সফরে থাইল্যান্ডে যান এবং ব্যাঙ্ককে ষষ্ঠ বিমস্টেক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেন। ব্যাঙ্ককে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।
ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ৭৮ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ভাষাগত ক্ষেত্রে গভীর বন্ধনের কথা উল্লেখ করে দুই নেতা প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, মহাকাশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, পর্যটন এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা করেন। সহযোগিতার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে মউ স্বাক্ষরিত হয়।
কৌশলগত অংশীদারিত্বের পাশাপাশি দুই নেতা অবাধ, মুক্ত, স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমৃদ্ধ এবং সুস্থায়ী ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। সেইসঙ্গে আসিয়ান-এর পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন। দুই নেতা নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে একমত হন :
রাজনৈতিক সহযোগিতা
আঞ্চলিক স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি রাজনৈতিক বোঝাপড়াকে মজবুত করতে নিয়মিত বৈঠকের ওপর গুরুত্ব। দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী ও পদস্থ আধিকারিকদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকের পাশাপাশি নিয়মিত সংসদীয় আদান-প্রদান।
প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা সহযোগিতা
বর্তমান সুরক্ষা সহযোগিতা ব্যবস্থাকে মজবুত করা এবং দুই দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা। প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা শিল্প, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, পারস্পরিক বিনিময়, মহড়া এবং সক্ষমতা নির্মাণ।
নিয়মিত আলাপ-আলোচনা এবং বিনিময়ের মাধ্যমে সুরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা এবং আঞ্চলিক সুরক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের মধ্যে নিয়মিত মত বিনিময়। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা, সামুদ্রিক সুরক্ষা, সাইবার সুরক্ষা, সন্ত্রাসবাদ দমন। সেইসঙ্গে সাইবার অপরাধ, আন্তর্জাতিক আর্থিক অপরাধ, অর্থ পাচার ও মানুষ পাচার, মাদক প্রভৃতির মতো সংগঠিত অপরাধের মোকাবিলায় পারস্পরিক তথ্য বিনিময়।
আর্থিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা
ভারত ও থাইল্যান্ডে যৌথ বাণিজ্য কমিটির মাধ্যমে দুই দেশের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক। সেইসঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বার্ষিক বৈঠকের ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে। অচিরাচরিত শক্তি, বৈদ্যুতিক গাড়ি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, রোবোটিক্স, আইসিটি, মহাকাশ প্রযুক্তি, জৈব প্রযুক্তি, সৃজনশীল শিল্প এবং স্টার্টআপের মতো ভবিষ্যতের উপযোগী শিল্পে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা।
সামুদ্রিক পণ্য, স্মার্টফোন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পেট্রোলিয়াম সামগ্রী, গাড়ির যন্ত্রাংশ, পরিষেবা ও ওষুধের মতো ক্ষেত্রে ধারাবাহিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব। দুই দেশের মধ্যে চালু থাকা বাণিজ্যিক চুক্তিকে আরও সহজ-সরল করার ওপর গুরুত্ব। ভারত ও আসিয়ান দেশগুলির মধ্যে সরবরাহ শৃঙ্খলকে জোরদার করতে বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনা।
দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে বিনিয়োগের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা। ভারতের পুবে তাকাও নীতি এবং মেক ইন ইন্ডিয়ার মাধ্যমে বর্তমানে চালু থাকা বিনিয়োগ নীতি ও প্রকল্পগুলির যথার্থ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব। ভারত-থাইল্যান্ড যৌথ বাণিজ্য ফোরামের নিয়মিত বৈঠক এবং দুই দেশের যৌথ প্রকল্প ও বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে সহযোগিতা। দুই দেশের শিল্পোদ্যোগী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থা এবং স্টার্টআপের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ভারত ও থাইল্যান্ডে স্টার্টআপ পরিমণ্ডলের ব্যাপক ব্যাপ্তির কথা মাথায় রেখে স্টার্টআপ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সক্রিয়তা বাড়াতে একমত হয়েছে দুই দেশ।
যোগাযোগ
ডিজিটাল ও আর্থিক সহ যোগাযোগের সমস্ত ক্ষেত্রকে মজবুত করার ব্যাপারে একমত হয়েছে দুই দেশ। আঞ্চলিক যোগাযোগকে মজবুত করা, দুই দেশের বন্দরের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং বিমান পরিবহণকে উৎসাহিত করার ওপর গুরুত্ব।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ
দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যটন ক্ষেত্রে সম্ভাবনার ওপরও গুরুত্ব। শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মধ্যে শক্তিশালী বোঝাপড়া গড়ে তোলা। শিক্ষাগত যোগ্যতাকে পারস্পরিক স্বীকৃতি, ভারত ও থাইল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তির আদান-প্রদান বৃদ্ধি, যৌথ গবেষণা ও ফেলোশিপের ওপর গুরুত্ব। দক্ষতা উন্নয়ন, ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষণ, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, দুই দেশের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব।
শিল্পকলা, প্রদর্শনী, সেমিনার, সম্মেলন, প্রত্নতত্ব, গবেষণা সহ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতাকে আরও মজবুত করার ওপর গুরুত্ব।
ক্রীড়া ক্ষেত্রেও সম্ভাবনার ক্ষেত্র খতিয়ে দেখতে একমত হয়েছে দুই দেশ। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার লক্ষ্যে ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং পর্যটন, সংস্কৃতি, পেশা এবং কারিগরি সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে মতৈক্য।
আঞ্চলিক, বহুস্তরীয় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে ভারত ও থাইল্যান্ড রাষ্ট্রসংঘে গঠনমূলক ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে দুই দেশ সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে একমত হয়েছে। ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কাঠামোকে আরও মজবুত করা। আসিয়ান, বিমস্টেক, এশিয়া কো-অপারেশন ডায়লগ, ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড গ্রোথ ট্র্যাঙ্গেল প্রভৃতি সংস্থায় সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করা। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেকং-গঙ্গা কো-অপারেশনের আওতায় পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরও মজবুত করা।
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলকে সমৃদ্ধ, সুস্থায়ী ও অবাধ করে তুলতে বিমস্টেক-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ হিসেবে ভারত ও থাইল্যান্ড আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
ভারত ও থাইল্যান্ডের দুই প্রধানমন্ত্রী কৌশলগত অংশীদারিত্বের যথাযথ রূপায়ণের লক্ষ্যে একটি যৌথ কর্মপরিকল্পনা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করতে দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রককে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
SC/MP/NS….
Deepening cultural ties and bringing BIMSTEC nations even closer. pic.twitter.com/lLLhJECO9r
— PMO India (@PMOIndia) April 4, 2025
Encouraging the participation of youth. pic.twitter.com/X5VeZMoqQj
— PMO India (@PMOIndia) April 4, 2025
At the BIMSTEC Summit, PM @narendramodi highlighted the need to enhance collaboration among member nations and deepen engagement. He put forward a comprehensive 21-point Action Plan. pic.twitter.com/u2xGIea8SA
— PMO India (@PMOIndia) April 4, 2025