Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ভারত টেক্স ২০২৫ সমারোহে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

ভারত টেক্স ২০২৫ সমারোহে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী


নয়াদিল্লি, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ 

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লির ভারত মণ্ডপম – এ ভারত টেক্স ২০২৫ সমারোহে ভাষণ দিলেন। প্রদর্শনীও ঘুরে দেখেন তিনি। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত মণ্ডপম – এ এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভারত টেক্স সমারোহের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের ঐতিহ্য এবং বিকশিত ভারতের ছবি। ভারত টেক্স বস্ত্র ও বয়ন ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী হয়ে উঠেছে। এই শিল্পের মূল্য-শৃঙ্খলের সঙ্গে যুক্ত ১২টি গোষ্ঠী এবারের আয়োজনে যোগ দিয়েছে। বস্ত্র, যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক – সবই স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নীতি প্রণেতা, একাধিক গোষ্ঠীর কর্ণধার এবং সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ এখানে মতবনিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছেন। 

এবারের ভারত টেক্স – এ ১২০টি দেশের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। ফলে, বিশ্বের বাজারের চাহিদা সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত হতে পারছেন সকলেই। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্টলে গিয়ে উদ্যোগপতিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই নতুন ক্রেতা পাচ্ছেন বলে তাঁকে জানিয়েছেন। এই সমারোহ বিনিয়োগ, রপ্তানী এবং সার্বিকভাবে বস্ত্র ও বয়ন ক্ষেত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদী। উদ্যোগপতিদের চাহিদা অনুযায়ী, ব্যাঙ্কগুলিকেও উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তেমনটা হলে কর্মসংস্থান এবং এই ক্ষেত্রের সুযোগ ও সম্ভাবনা আরও প্রসারিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত টেক্স -এ ভারতের চিরাচরিত ঐতিহ্য বস্ত্র সম্ভারের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। গত বছর এই ক্ষেত্র ৭ শতাংশ হারে বিকশিত হয়েছে এবং ভারত বর্তমানে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম বস্ত্র রপ্তানীকারক দেশ। এদেশের বস্ত্র রপ্তানীর পরিমাণ ৩ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ২০৩০ নাগাদ এই পরিমাণ ৯ লক্ষ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। 

বিগত দশকের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় ভারতের বস্ত্র ও বয়ন ক্ষেত্রে প্রভূত সাফল্য এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। এই খাতে গত দশকে বিদেশি বিনিয়োগ দ্বিগুণ হয়েছে বলেও তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বস্ত্র বয়ন ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে চলেছে। সামগ্রিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে বস্ত্র বয়ন শিল্পের অবদান ১১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী এই বাজেটে ঘোষিত মিশন ম্যানুফ্যাকচারিং – এর কথা উল্লেখ করেন। বস্ত্র বয়ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে কোটি কোটি শ্রমিক উপকৃত হচ্ছেন বলে তাঁর মন্তব্য। 

বস্ত্র বয়ন ক্ষেত্রের উন্নয়নে এবারের বাজেটে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, তুলা সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে চালু করা হবে তুলো উৎপাদনশীলতা অভিযান। প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক বস্ত্র বয়নের মতো উদীয়মান ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতে উচ্চমানের কার্বন তন্তু উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রের সংজ্ঞা পরিমার্জন এবং ঋণের সংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই বাজেটে ঘোষিত পদক্ষেপগুলিও তুলে ধরেন। বস্ত্র বয়ন ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের অবদান ৮০ শতাংশ – একথা উল্লেখ করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনও ক্ষেত্রের উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদ আবশ্যিক এক শর্ত। কর্মীদের দক্ষতায়নে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রযুক্তির এই যুগে হস্তচালিত তাঁত শিল্পের স্বকীয়তা বজায় রাখার উপর তিনি জোর দিয়েছেন। গত ১০ বছরে হস্তচালিত তাঁত শিল্পের প্রসারে ২ হাজার ৪০০-রও বেশি বড় ধরনের বিপণন উদ্যোগের আয়োজন হয়েছে বলে তিনি জানান। এক্ষেত্রে ই-বাণিজ্য মঞ্চের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁতজাত পণ্যের জিআই ট্যাগিং তার উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক বলে তিনি মনে করিয়ে দেন। 

শ্রী মোদী বলেন, গত বছরের ভারত টেক্স – এর সময় সূচনা হওয়া স্টার্টআপ গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্ত্র বয়ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনশীল তরুণ প্রজন্মকে সামিল করে তোলাই এর লক্ষ্য ছিল। ঐ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের এবারের সমারোহে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বস্ত্র বয়ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তি-ভিত্তিক স্টার্টআপ তৈরি করতে আরও উদ্যোগী হওয়ার জন্য তিনি যুব সমাজের কাছে আবেদন রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্ম ঐতিহ্যের সঙ্গে নবীনত্বের মিশেলে তৈরি হওয়া পোশাক পছন্দ করছেন। সেই চাহিদা পূরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বড় ভূমিকা নিতে পারে। 

ফ্যাশন জগতের মক্কা বলে পরিচিত প্যারিসে তাঁর সাম্প্রতিক প্যারিস সফরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে নতুন অংশীদারিত্ব তৈরি হচ্ছে। পরিবেশ-বান্ধব জীবনশৈলীর সঙ্গে ফ্যাশন দুনিয়ার চাহিদার সামঞ্জস্য বিধানের উপর তিনি জোর দিয়েছেন। সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার এবং বর্জ্য উৎপাদন ন্যূনতম স্তরে নিয়ে যাওয়ার মন্ত্র বস্ত্র বয়ন ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া জরুরি বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। তিনি বলেন, ২০৩০ নাগাদ ফ্যাশন জগৎ থেকে তৈরি হওয়া বর্জ্যের পরিমাণ ১৪ কোটি ৮০ লক্ষ টনে পৌঁছে যেতে পারে। এর কারণ, আজ এই ক্ষেত্রে দৈনিক বর্জ্যের এক-চতুর্থাংশেরও কম প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। এই ধরনের বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণে ভারতের চিরাচরিত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ দক্ষতার সদ্ব্যবহারের উপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন। এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে কেন্দ্রীয় বস্ত্র বয়ন মন্ত্রক, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং ই-মার্কেট প্লেস ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে এগোচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। নভি মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুর মতো শহরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের প্রারম্ভিক প্রকল্প চালু হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের বস্ত্র বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ৪০ কোটি ডলারের মাত্রা স্পর্শ করবে বলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমান। সারা বিশ্বে এই বাজার ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা। উপযুক্ত নীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে ভারত এই শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চলে আসতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।

বহু দশক আগে ভারত সমৃদ্ধির শিখরে থাকার সময় বস্ত্র বয়ন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন। বিকশিত ভারতের নির্মাণের ক্ষেত্রেও এই শিল্প পুনরায় তার গুরুত্ব ফিরে পাবে বলে তিনি আশাবাদী। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রী শ্রী গিরিরাজ সিং, বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী শ্রী পবিত্র মার্গারিটা প্রমুখ। 

 

SC/AC/SB