নয়াদিল্লি, ১৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫
ক্যাবিনেটে আমার সহকর্মী শ্রী গিরিরাজ সিং এবং পবিত্র মার্গারিটা জি, বিভিন্ন দেশের মাননীয় রাষ্ট্রদূত, শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক, কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি, ফ্যাশন ও বস্ত্রবয়ন দুনিয়ার কুশীলব, উদ্যোগপতি, শিক্ষার্থী, আমার তন্তুবায় ভাইবোন এবং সমবেত অতিথিবৃন্দ !
আজ ভারত মণ্ডপমে ভারত টেক্স-এর দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন হয়েছে। এই সমারোহ কেবলমাত্র আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যেরই উদযাপন নয়, বিকশিত ভারতের বিপুল সম্ভাবনাকে তুলে ধরারও মঞ্চ। দেশের পক্ষে খুবই আনন্দের যে আমাদের বপণ করা বীজ এখন বটবৃক্ষে পরিণত হওয়ার পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বিশ্বের বস্ত্র ও বয়ন ক্ষেত্রে ভারত টেক্স হয়ে উঠছে অন্যতম এক সমারোহ। এবার এই শিল্পের মূল্যশৃঙ্খলের সঙ্গে যুক্ত ১২টি পক্ষেরই প্রতিনিধিত্ব রয়েছে এখানে। তাছাড়াও এই শিল্পে উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক ও বস্ত্র সম্ভার তুলে ধরা হয়েছে এখানে। ভারত টেক্স সারা বিশ্বের নীতি প্রণেতা, বিভিন্ন সংস্থার কর্ণধার এবং শিল্প জগতের কুশীলবদের আলাপচারিতা, সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠছে। সকলের সনির্বন্ধ প্রয়াস এই আয়োজনকে প্রকৃত অর্থেই সফল করে তুলছে এবং এজন্য আমি প্রত্যেককে অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা,
আজ ভারত টেক্স-এ রয়েছেন ১২০টি দেশের- গিরিরাজ জির কথা অনুযায়ী- ১২৬টি দেশের প্রতিনিধি। অর্থাৎ এই সমারোহে যোগ দেওয়া প্রত্যেক উদ্যোগপতি ১২০টিরও বেশি দেশের বিষয়ে প্রত্যক্ষভাবে অবহিত হতে পারছেন। নিজেদের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে তাঁদের সামনে। যাঁরা নতুন বাজার ধরতে চান, তাঁরা বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
এর আগে প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। সবকিছু না দেখতে পারলেও- (যদিও চেষ্টা করেছি, সব দেখতে গেলে দু-দিন লেগে যাবে এবং আপনারা তা নিশ্চয় বুঝবেন), আমি অনেকের সঙ্গেই কথা বলতে পেরেছি এবং তাঁদের কথা শুনেছি। অনেকেই বলেছেন, গত বছর ভারত টেক্স-এ যোগ দেওয়ার পর তাঁরা অনেক নতুন ক্রেতা পেয়েছেন এবং তাঁদের ব্যবসা বেড়েছে। একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় মন্তব্য, বা বলা যেতে পারে ‘মধুর অভিযোগ’, শুনেছি আমি। অনেকে বলেছেন, তাঁদের পণ্যের চাহিদা এতটাই বেড়ে গেছে যে সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়াও অনেক উদ্যোগপতি আমায় জানিয়েছেন, যে একটি কারখানা গড়তে মোটামুটি ৭০-৭৫ কোটি টাকা লাগে এবং তাতে ২০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে। সেজন্যই আমি ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের বিষয়টি ভেবে দেখে সহায়তার হাত আরও বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করবো।
বন্ধুরা,
এই সমারোহ বস্ত্র ও বয়ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ, রপ্তানি এবং সার্বিক বিকাশে আবহ গড়ে তুলতে অত্যন্ত সহায়ক একটি মঞ্চ।
বন্ধুরা,
ভারত টেক্স-এ তুলে ধরা বস্ত্র সম্ভার ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতিফলন। পূব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই চিরাচরিত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বস্ত্র সম্ভারে সম্বৃদ্ধ এই দেশ। লক্ষ্ণৌ-এর চিকন, রাজস্থান এবং গুজরাটের বাঁধানি, গুজরাটের পাওটোলা, কাশীর বেনারসি সিল্ক, দক্ষিণের কাঞ্চিভরম সিল্ক, জম্মু ও কাশ্মীরের পশমিনা- সব কিছুই তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে এখানে। পোশাক শিল্পের প্রসারে আমাদের কারিগরি ও শৈল্পিক দক্ষতা অন্যতম চালিকাশক্তি অবশ্যই।
বন্ধুরা,
গত বছর আমি বস্ত্র ও বয়নশিল্পের ক্ষেত্রে ৫টি এফ-এর কথা বলেছিলাম- ফার্ম, ফাইবার, ফেব্রিক, ফ্যাশন এবং ফরেন। এই বিষয়গুলি নতুন ভারতের অভিযানের পথ খুলে দিচ্ছে। কৃষক, তন্তুবায়, ব্যবসায়ী এবং নকশা প্রস্তুতকারকদের সামনে খুলে যাচ্ছে নতুন সুযোগের দরজা। গত বছর ভারতের বস্ত্রবয়ন ও পোশাক ক্ষেত্রে রপ্তানি ৭ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু মাত্র ৭ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য আনন্দিত হচ্ছেন? পরেরবার এই বৃদ্ধি ১৭ শতাংশে পৌঁছবে তখন বরং হাততালি দেবেন ! আজ আমরা পোশাক ও বয়ন ক্ষেত্রে রপ্তানিতে সারা বিশ্বে ষষ্ঠ। এই খাতে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ৩ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। ২০৩০ নাগাদ এই পরিমাণ ৯ লক্ষ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। তবে, ২০৩০-এর কথা বলছি ঠিকই, কিন্তু আপনাদের যে উৎসাহ দেখছি তাতে হয়তো এই লক্ষ্যমাত্রা অনেক আগেই ছুঁয়ে ফেলা যাবে !
বন্ধুরা,
এই সাফল্য এসেছে এক দশকের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং উপযুক্ত নীতি প্রণয়নের সুবাদে। গত দশ বছরে এই খাতে বিদেশী লগ্নি দ্বিগুণ হয়েছে। আজ আমার কয়েকজন বন্ধু জানালেন, যে বহু বিদেশী সংস্থা এখন ভারতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তাঁদের আমি বলেছি- আপনারা আমাদের যোগ্যতম দূত ! যখনই আপনি ভারতের সম্ভাবনার কথা বলেন, মানুষ তা বিশ্বাস করে নেন সঙ্গে সঙ্গে। সরকার যদি কিছু বলে, তাহলে হয়তো তাঁরা খুঁটিয়ে দেখবেন, তথ্য মিলিয়ে দেখবেন এবং তারপরে আলোচনা করবেন। কিন্তু একই ক্ষেত্রে কর্মরত কোনও শিল্পপতি যখন একথা বলেন, তখন অন্যরা তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন এবং যাবতীয় সংশয় ঝেড়ে ফেলে সুযোগের সদ্ব্যবহারে উদ্যোগী হন।
বন্ধুরা,
আপনারা সকলেই জানেন যে বস্ত্র ও বয়ন শিল্প আমাদের দেশে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র। তা বহু মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস। ভারতের উৎপাদন ক্ষেত্রে এই শিল্পের অবদান ১১ শতাংশ। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে এ বছরের বাজেটে আমরা ‘মিশন ম্যানুফ্যাকচারিং’-এর ওপর জোর দিয়েছি। বস্ত্র ও বয়ন শিল্প এই অভিযানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বিনিয়োগ বাড়লে বিকাশ হার বৃদ্ধি পাবে এবং উপকৃত হবেন কোটি কোটি বয়ন শ্রমিক।
বন্ধুরা,
ভারতের বস্ত্র ও বয়ন ক্ষেত্রের সামনে থাকা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা ও নুতন সুযোগের দরজা খুলে দেওয়ায় আমরা দায়বদ্ধ। এজন্য আমরা দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নিয়ে চলেছি। এ বছরের বাজেটে তার প্রতিফলন রয়েছে। এই শিল্পের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমরা দেশের মধ্যে তুলো সরবরাহ আরও স্থিতিশীল করে তুলতে চাইছি এবং সমগ্র মূল্যশৃঙ্খলকেও আরও শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হয়েছি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় তুলোকে প্রতিযোগিতায় দড় করে তোলা আমাদের লক্ষ্য। সেকথা মাথায় রেখেই আমরা ঘোষণা করেছি ‘মিশন ফর কটন প্রোডাক্টিভিটি’-র। তাছাড়াও প্রযুক্তি কেন্দ্রিক বয়নের মতো উদীয়মান ক্ষেত্রেও আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষের সঙ্গে আমার মতবিনিময় হত। যখন প্রযুক্তি কেন্দ্রীয় বয়নের কথা বলতাম, তখন তাঁরা বিষয়টি কী তা জানতে চাইতেন। আজ আমি খুশি যে ভারতে এই ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দেশজ কার্বন তন্তু উৎপাদন এবং তার প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের প্রসারে দ্রুত এগোচ্ছি আমরা। উচ্চমানের কার্বন তন্তু উৎপাদনেও দ্রুত এগিয়ে চলেছে দেশ। এসবের পাশাপাশি বস্ত্র ও বয়ন শিল্পের সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ নানা নীতির রূপায়ণ চলছে জোর কদমে। যেমন, এ বছরের বাজেটে এমএসএমই-র সংজ্ঞা পুনর্মার্জিত হয়েছে। এইসব সংস্থার ঋণ পাওয়ার পথও সহজ করে তোলা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ভারতে বস্ত্র ও বয়ন শিল্পে ৮০ শতাংশ অবদান এমএসএমই ক্ষেত্রের। কাজেই এইসব সংস্কারমূলক পদক্ষেপ অত্যন্ত ফলদায়ী হয়ে উঠবে।
বন্ধুরা,
দক্ষ কর্মী থাকলে তবেই একটি ক্ষেত্র উন্নত হয়ে উঠতে পারে। বস্ত্র ও বয়ন ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিকের কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে। সেজন্যই আমরা, বিশেষত এই ক্ষেত্রের জন্য শ্রমিকদের দক্ষতায়নে বিশেষ জোর দিচ্ছি। ‘দক্ষতায়নের জাতীয় উৎকর্ষ কেন্দ্র’গুলি এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। ‘সমর্থ যোজনা’ মূল্য শৃঙ্খলের প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের দক্ষ করে তুলছে। আজকেই সমর্থ যোজনার আওতায় প্রশিক্ষিত কয়েকজন মহিলার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। গত ৫, ৭ এবং ১০ বছরে তাঁদের অগ্রগতি আমাকে গর্বিত করে। এরই সঙ্গে মনে রাখতে হবে যে এটা প্রযুক্তির যুগ। কাজেই চিরাচরিত তাঁতশিল্পী এবং কারিগরদের দক্ষতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে অবশ্যই। তাঁদের শৈল্পিক পারদর্শিতা আন্তর্জাতিক আঙিনায় নিয়ে যেতে এবং তাঁদের সামনে আরও সুযোগের পরিসর গড়ে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য। বিগত দশকে তাঁত শিল্পের প্রসারে ২,৪০০-রও বেশি বিপণন কেন্দ্রিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ‘ইন্ডিয়া হ্যান্ডমেড’ নামে একটি ই-বাণিজ্য মঞ্চ গড়ে তোলা হয়েছে তাঁত সামগ্রীর অনলাইন কেনাবেচার জন্য। এতে নাম লিখিয়েছে বহু সংস্থা। তারা জিআই ট্যাগিং-এর সুবিধা পাচ্ছে।
বন্ধুরা,
গত বছরের ভারত টেক্স সমারোহে ‘টেক্সটাইলস স্টার্টআপ গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জ’-এর সূচনা হয়। এর লক্ষ্য, বয়ন শিল্পের প্রসারে উদ্ভাবনমূলক এবং পরিবেশ সহায়ক প্রণালী চিহ্নিত করায় নবীন প্রজন্মকে উৎসাহিত করে তোলা। এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন সারা দেশের বহু তরুণ-তরুণী। ওই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তাঁরা এসেছেন। এঁদের কাজে লাগাতে আগ্রহী স্টার্টআপ সংস্থাগুলিকেও এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই উদ্যোগে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে আইআইটি ম্যাদ্রাজ, অটল ইনোভেশন মিশন এবং বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা।
আমি তরুণ উদ্যোগপতিদের নতুন ধরনের প্রযুক্তি কেন্দ্রিক বয়ন স্টার্টআপ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। আইআইটি-র মতো সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এই ক্ষেত্রের উপযোগী উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগও জরুরি। সামাজিক মাধ্যমে দেখতে পাই আমাদের তরুণ প্রজন্ম আধুনিক ফ্যাশানের পাশাপাশি চিরাচরিত পোষাকের বিষয়েও আরও আগ্রহী হয়ে চলেছে। ফলে ঐতিহ্য এবং নতুনত্বের সম্মিলন এখন আরও বেশি জরুরি। আমাদের চিরাচরিত বস্ত্র সম্ভারকে বিশ্বের আঙিনায় আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাব। ফ্যাশন দুনিয়ায় নিত্য নতুন নানা প্রবণতাকে চিহ্নিত করতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। এনআইএফটি-র স্টলে গিয়ে জানতে পারলোম যে ২০২৬-এ ফ্যাশন দুনিয়ার গতিবিধি কী হতে পারে তা আগাম বুঝে নিতে এ আইকে কাজে লাগানো হচ্ছে। আগে বাইরের দুনিয়া আমাদের হাল ফ্যাশনের খবর দিত এবং আমরা সেই অনুযায়ী চলতাম। কিন্তু এখন আমরা ফ্যাশনের খবর দেব সারা বিশ্বকে। সেইজন্যই, একদিকে যেমন চিরাচরিত খাদির প্রসারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তেমন অন্যদিকে ফ্যাশন দুনিয়ার মতিগতি বুঝতে কাজে লাগানো হচ্ছে এআই-কে।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৩ সাল নাগাদ আমি গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষ্যে মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান পোরবন্দরে খাদি ফ্যাশন শো-র আয়োজন করেছিলাম। এই কাজে হাত মিলিয়েছিলেন এনআইএফটি এবং এনআইডি-র শিক্ষার্থীরা। ওই চত্ত্বরে ‘বৈষ্ণব জন কো তেনে রে কহিয়ে’ ভজনটি বাজানো হয়েছিল। আর তারই সঙ্গে আমি বিনোবা ভাবের ঘনিষ্ঠ সহযোগিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ফ্যাশন শো-এর হালচাল সম্পর্কে তাঁরা সেভাবে অবহিত না হওয়ায় প্রথম দিকে বেশ সন্দিহান ছিলেন গোটা বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অনুরোধে ওই অনুষ্ঠানে এসে তাঁরা বলেছিলেন, খাদিকে জনপ্রিয় করে তুলতে হলে এগোতে হবে এভাবেই। আজ খাদি সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। তার প্রসারে আরও উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় খাদি ছিল দেশের প্রতীক। আজ খাদি ফ্যাশনের বার্তা দেয়।
বন্ধুরা,
ঘোষক যেমন বললেন, কয়েকদিন আগেই আমি বিদেশ সফর সেরে ফিরেছি। গিয়েছিলাম ফ্যাশন দুনিয়ার মক্কা প্যারিসে। ওই সফরে ফ্রান্স এবং ভারতের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বের সূচনা হয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলি। আজ সারা বিশ্ব পরিবেশ বান্ধব জীবনশৈলীর কথা বলছে। ফ্যাশন শিল্পের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। পরিবেশ বান্ধব ফ্যাশন এবং ক্ষমতায়নের জন্য ফ্যাশনের ক্ষেত্রে ভারত পথপ্রদর্শক।
ভারতের চিরাচরিত বয়ন শিল্পে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি বরাবরই জড়িত ছিল। আমাদের খাদি, আদিবাসি বয়নশিল্প এবং প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার সেই সাক্ষ্য দেয়। এখন উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় ভারতের চিরাচরিত নানা কৃৎকৌশল বিবর্তিত হচ্ছে এবং উপকৃত হচ্ছেন কারিগর, তন্তুবায় ও বয়ন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোটি কোটি মহিলা।
বন্ধুরা,
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বয়নশিল্পেও সম্পদের ব্যবহারে দক্ষতা এবং বর্জ্যের পরিমান যথা সম্ভব কমানোর উদ্যোগ জরুরি। আজ প্রতি মাসেই সারা বিশ্বে কোটি কোটি পোশাক পুরনো হয়ে যায়। এর অনেকটাই ফ্যাশন বদলে যাওয়ার কারণে। এই বর্জ্য পরিবেশের পক্ষে অবশ্যই হানিকর। এ ধরনের বর্জ্যের পরিমাণ ২০৩০ নাগাদ ১৪ কোটি ৮০ লক্ষ টনে পৌঁছবে বলে অনুমান। এখন এ ধরনের বর্জ্যের মাত্র এক চতুর্থাংশ প্রক্রিয়াজাত হয়। কিন্তু এই বিষয়টিকেই সুযোগে পরিণত করা যেতে পারে। ভারতে এ সংক্রান্ত দীর্ঘ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ ঐতিহ্য রয়েছে। যেমন ভারত কার্পেট তৈরি হয় ফেলে দেওয়া কাপড় থেকে। মহারাষ্ট্রে ফেলে দেওয়া কাপড় ব্যবহার করেই নানান জিনিস তৈরি হয়। এসব নিয়ে যাওয়া যেতে পারে বিশ্বের বাজারে।
কেন্দ্রীয় বস্ত্র ও বয়ন মন্ত্রক এই লক্ষ্যে ‘স্ট্যান্ডিং কনফারেন্স অফ পাবলিক এন্টারপ্রাইজেস’ এবং বিভিন্ন ই-বিপণন মঞ্চের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছে। এই উদ্যোগে সামিল হয়েছে ভারতের নানা সংস্থা। নভি মুম্বাই এবং বেঙ্গালুরুতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরনো কাপড়-চোপড় সংগ্রহের প্রারম্ভিক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের স্টার্টআপগুলির উচিত এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের বাজার ধরা। ভারতে বয়ন সামগ্রী প্রক্রিয়াকরণের বাজার আগামী বছরগুলিতে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। বিশ্বে এই বাজার হয়ে উঠবে ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলারে। এখনই উদ্যোগী হলে ভারত এই বাজারের অনেকটাই দখল করতে পারবে।
বন্ধুরা,
বহু শতক আগে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির শিখরে থাকার সময় ভারতের বয়ন শিল্প ছিল কেন্দ্রীয় ভূমিকায়। আজ আমরা বিকশিত ভারত গড়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছি। বয়ন ক্ষেত্র আবারও দেশের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে প্রস্তুত হয়ে উঠছে। ভারত টেক্স-এর মতো আয়োজন এই দেশকে বয়ন ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু করে তুলবে। আমি প্রত্যয়ী যে প্রতি বারই এই সমারোহে সাফল্যের নতুন গাথা তৈরি হবে। এই আয়োজনের সাফল্যের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
অনেক ধন্যবাদ,
নমস্কার।
প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে।
SC/AC/NS
Earlier today, attended #BharatTex2025, which showcases India’s textile diversity. I talked about the strong potential of the textiles sector and highlighted our Government’s efforts to support the sector. pic.twitter.com/ah0ANZMCN1
— Narendra Modi (@narendramodi) February 16, 2025