১. আফ্রিকা সহ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের অংশীদার দেশগুলিতে উন্নতমানের পরিকাঠামো এবং দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে এই অঞ্চলের সার্বিক আথিক বিকাশ ও উন্নয়নের মাধ্যমে শান্তি, স্হিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং সমৃদ্ধি ঘটাতে ভারত ও জাপান একযোগে কাজ করতে রাজী হয়েছে। দুটি দেশই বিশ্বাস করে যে সব ধরণের উন্নয়ন সহযোগিতামূলক কাজই উদার মানসিকতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং কুক্ষিগত না রেখে, আন্তর্জাতিক মানের হওয়া প্রয়োজন। এই উন্ননমূলক সহযোগিতায় সার্বভৌমত্ব এবং একটি দেশের ভৌগলিক অখন্ডতা, ঋণ পরিশোধে দায়িত্ব পালন এবং স্হানীয় অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রাখার পাশাপাশি উন্নয়নমলূক কৌশল ও অগ্রাধিকারে ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন।
২. আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের স্হায়ী ও নিরবছিন্ন সম্পর্ক বজায় রাখতে ভারতের ‘পূবে তাকাও নীতি’ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর দশটি দিশা নির্দেশক নীতির পাশাপাশি জাপানের ‘উন্নত পরিকাঠামো উদ্যোগের জন্য সম্প্রসারিত অংশিদারিত্ব’ কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রেখে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যোগাযোগের মানোন্নয়ন তথা বিভিন্ন পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এক মজবুত সহযোগিতা গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সরকারগুলির সঙ্গে আরো আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উভয় দেশই সম্মত হয়েছে। এমনকি এই উদ্যোগকেও দুই দেশ স্বাগত জানিয়েছে। সুর্নিদিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা গড়ে তোলার বিভিন্ন দিক চিহ্নিতকরণে যে অগ্রগতি হয়েছে ভারত ও জাপান উভয় দেশই তাকে স্বাগত জানিয়েছে। সহযোগিতার এই ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে-
২.১ রান্নার গ্যাস সংক্রান্ত পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সহযোগিতা।
২.২ আবাসন, শিক্ষা এবং বৈদ্যুতিকিকরণ প্রকল্পগুলিতে সহায়তা দিয়ে রাখাইন প্রদেশে উন্নয়নমূলক প্রয়াসগুলির মধ্যে সঙ্গতি বজার রেখে মায়ানমারের সঙ্গে সহযোগিতা।
২.৩ রামগড় থেকে বড়িয়ারহাট পর্যন্ত অংশে চার লেন বিশিষ্ট সড়ক এবং সেতু পুনর্নিমাণ করা, সেইসঙ্গে যানুমা নদীর ওপর যমুনা রেল ব্রীজ নির্মাণ এবং রোলিং স্টক সরবরাহ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা।
২.৪ কেনিয়াতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রের উন্নয়নে একটি সেমিনার আয়োজনের পাশাপাশি ঐ দেশেই স্বাস্হ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল স্হাপনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে আফ্রিকার সঙ্গে সহযোগিতা।
৩. উভয় দেশই মানবসম্পদ উন্নয়ন, দক্ষতাবৃদ্ধি, স্বাস্হ্য পরিচর্যা, জীবন-জীবিকা, জল, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ডিজিটাল ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের গুরুত্বের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্হ্য ও অন্যান্য স্বাচ্ছন্দ্যের মতো বিষয়গুলিতে একযোগে কাজ করার বিষয়েও দুই দেশ সম্মত হয়েছে। আফ্রিকা সহ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের স্বার্থে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রয়াসগুলির বাস্তবায়নেও দুই দেশ সহমত প্রকাশ করেছে।
৪. ভারত প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলে শিল্পকরিডর ও শিল্প নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারত ও জাপানের মধ্যে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আদান-প্রদান আরো বাড়াতে ভারত-জাপান বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম স্হাপনে দুই দেশ একযোগে কাজ করবে। এই লক্ষ্য পূরণে, জাপানের সংস্হা নেক্সি এবং ভারতীয় সংস্হা ইসিজিসি-র মধ্যে সমঝোতাপত্রটিকে দুই দেশ স্বাগত জানিয়েছে। এই সমঝোতাপত্র কার্যকর হলে এই অঞ্চলে ভারত-জাপান ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলির উন্নয়নে আরো প্রসার ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৫. ভারত-জাপান উভই বিশ্বাস করে যে এই অঞ্চলের এক সামঞ্জস্যপূর্ণ ইতিবাচক এবং ভবিষ্যৎমুখী পরিবর্তনের সম্ভাবনাগুলিকে খুঁজে বের করতে ভারত প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের উন্নয়নমূলক সহযোগিতাগুলি বড় ভূমিকা পালন করবে।
ভারত-জাপান সহযোগিতা অ্যাক্ট-ইস্ট ফোরাম
১.ভারতের পূবে তাকাও নীতিতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সর্বদাই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। আশিয়ান দেশগুলির সঙ্গে ভারতের এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও পরম্পরাগত সম্পর্কের বন্ধন রয়েছে। আশিয়ান অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের প্রধান সংযোগরক্ষাকারী হয়ে উঠার সম্ভাবনাও এই অঞ্চলের রয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্হার উন্নতি ঘটিয়ে এই অঞ্চলের প্রতিবেশি দেশগুলির সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটির সম্ভাবনাগুলিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. গতবছর গঠিত অ্যাক্ট-ইস্ট ফোরাম উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারত-জাপান সহযোগিতার প্রসারে অন্যতম এক চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করেছে। গত ৮ই অক্টোবর ফোরামের দ্বিতীয় বৈঠকে নিম্নলিখিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে-
২.১ প্রকল্প বা কর্মসূচিগুলির রূপায়ণ ত্বরান্বিতকরণ
মেঘালয় উত্তরপূর্ব যোগাযোগ স্হাপন
প্রথম পর্যায় : তুরা-ডালু (জাতীয় মহাসড়ক ৫১)
দ্বিতীয় পর্যায় : শিলং-ডাউকি (জাতীয় মহাসড়ক ৪০)
মিজোরাম উত্তরপূর্ব যোগাযোগ স্হাপন
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় : আইজল-তুইপাঙ (জাতীয় মহাসড়ক ৫৪)
সিকিম : জীব বৈচিত্রের সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু বন পরিচালনা
নাগাল্যান্ড : অরণ্য সংরক্ষণ, জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন
২.২ ভারত ও জাপান নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে তাদের আগ্রহের কথা পুনরায় ব্যক্ত করেছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় ধুবড়ি/ফুলবাড়ি সেতু প্রকল্প সহ গেলেফু-ডালু করিডরের কাজ শেষ করা। ধুবড়ি/ফুলবাড়ি সেতু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি নদীর ওপর নির্মিত ভারতের দীর্ঘতম সেতু হয়ে উঠবে।
জেলার প্রধান সড়ক এবং অন্যান্য সড়কগুলির মানোন্নয়নের বিষয়ে বিবেচনা করা। এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তৃতীয় পর্যায়ের উমিয়াম-উমত্রু জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পের জন্য সরকারি উন্নয়নমূলক ঋণ সহায়তা বা ওডিএ।
ত্রিপুরায় অরণ্য অঞ্চলের সুষ্ঠু পরিচালনা ও তার সংরক্ষণে সহায়তা। একইসঙ্গে মেঘালয়াতে এ ধরনের একটি কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ।
২.৩ দক্ষতা ও বৃত্তিমূলক উদ্যোগ
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাঁশের প্রাচুর্য থাকায় এবং এই অঞ্চলে বাঁশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে ‘জাপান-ভারত উত্তরপূর্ব বাঁশ উদ্যোগ’ শুরু করা হবে। এই উদ্যোগের আওতায় শিল্পক্ষেত্রে বাঁশের ব্যবহারের পাশাপাশি বাঁশ অরণ্যের সুষ্ঠু পরিচালনার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ভারতের ১০০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাপানী ভাষার পাঠ্যক্রম চালু করার ব্যাপারে দু দেশের প্রধানমন্ত্রী যে অঙ্গিকার করেছেন তার অঙ্গ হিসাবে উত্তরপূর্বাঞ্চলে জাপানী ভাষাশিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কটন বিশ্ববিদ্যালয়, অসমের গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের একটি করে প্রতিষ্ঠান এ ধরনের পাঠ্যক্রম শুরু করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জাপানী ভাষা শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে এই উদ্যোগগুলিকে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি থেকে জাপানী ভাষা শিক্ষার আরও প্রস্তাব পাওয়া গেলে তাকে স্বাগত জানানো হবে।
২.৪ বিপর্যয় ব্যবস্হাপনা
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্হায়ি পরিকাঠামো নির্মাণে এবং পার্বত্য অঞ্চলে মহাসড়ক ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে জাপানের সহায়তা।
বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাস সংক্রান্ত জাপান-ভারত কর্মশিবির আয়োজনের মাধ্যমে জ্ঞানের আদান-প্রদান।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির আধিকারিকদের প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা প্রদানে জিকা নলেজ কো-ক্রিয়েশন কর্মসূচির সর্বাধিক সদ্ব্যবহার।
৩. ভারত-জাপান সহযোগিতা অ্যাক্ট-ইস্ট ফোরাম এই প্রকল্পগুলির অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে, সেইসঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে জড়িত ভবিষ্যৎ সহযোগিতার বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখবে।
ভারত-জাপান অর্থনৈতিক এবং ওডিএ বা সরকারি উন্নয়নমূলক ঋণ সহায়তা
ভারতে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের উন্নয়নে জাপানের ওডিএ বা সরকারি উন্নয়নমূলক ঋণ সহায়তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্বীকার করে নিয়ে সেদেশের নিরন্তর সহায়তার জন্য ভারত সন্তোষ প্রকাশ করেছে। জাপানের এই সহায়তা দুই দেশের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে। এই প্রেক্ষিতে, নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে জাপানী সহায়তার বিষয়গুলি ভারত-জাপান পর্যালোচনা করেছে :
জাপানের ওডিএ বা সরকারি উন্নয়নমূলক ঋণ সহায়তা
২০১৭-র সেপ্টেম্বরে ভারতে শেষ শীর্ষ বৈঠকের পর থেকে নিম্নলিখিত প্রকল্পগুলিতে ওডিএ বা সরকারি উন্নয়নমূলক ঋণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে- বেঙ্গালুরু জল সরবরাহ ও নিকাশী প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়); মুম্বাইয়ে তৃতীয় মেট্রো লাইন প্রকল্প; চেন্নাই-এ সমুদ্রের জল লবনমুক্ত করার কেন্দ্র নির্মাণ ;হিমাচলপ্রদেশে অরণ্য অঞ্চলে বাস্তুতন্ত্রের মানোন্নয়নের প্রকল্প ;হিমাচলপ্রদেশে জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে ব্যবস্হা গ্রহণ করা ; চেন্নাই পুরসভা অঞ্চলে অত্যাধুনিক পরিবহন ব্যবস্হা চালু করা সংক্রান্ত প্রকল্প ;মুম্বাই-আমেদাবাদ উচ্চগতি সম্পন্ন রেল প্রকল্প ; তৃতীয় পর্যায়ের উমিয়াম-উমত্রু জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ ; তৃতীয় পর্যায়ে দিল্লীতে দ্রুতগতি সম্পন্ন গণপরিবহন ব্যবস্হা প্রকল্প; তৃতীয় পর্যায়ের উত্তরপূর্ব সড়ক নেটওয়ার্ক যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্প ; পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায় তুর্গ পাম্প স্টোরেজ নির্মাণ প্রকল্প ; তামিলনাড়ুতে প্রথম পর্যায়ে চেন্নাই পেরিফেরাল রিং রোড নির্মাণ প্রকল্প এবং ত্রিপুরায় অরণ্য অঞ্চলের সংরক্ষণ তথা সুষ্ঠু পরিচালনা সংক্রান্ত প্রকল্প রয়েছে।
এছাড়াও, ভারতের প্রত্যাশা রয়েছে যে ভারতে ডেয়ারী ক্ষেত্রের উন্নয়নে শীঘ্রই ওডিএ বা সরকারি উন্নয়নমূলক সহায়তার ঋণ পাওয়া যাবে। মহারাষ্ট্রের নাগপুরে নাগ নদীতে দূষণ হ্রাস, মধ্যপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলে জল সরবরাহ, বনাঞ্চলের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে স্হানীয় মানুষজনকে সামিল করা এবং মেঘালয়ায় সুষ্ঠু গণ-পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সমীক্ষা শুরু করা হবে বলে ভারতের পক্ষ থেকে আশাপ্রকাশ করা হয়েছে। ভারতে সুস্হায়ী উন্নয়নের উদ্দেশ্যগুলি পূরণে সরকারি উন্নয়নমূলক ঋণ সহায়তার মাধ্যমে সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য ভারত ও জাপানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলির মধ্যে শুরু হওয়া আলোচনাকেও ভারতের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
বারাণসী সম্মেলন কেন্দ্র
উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা তথা সম্মেলন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রকল্পটির অগ্রগতিতে উভয়পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এই কেন্দ্রটি ভারত-জাপান বন্ধুত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জাপানের পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রটি নির্মাণে ইতিমধ্যেই যে অতিরিক্ত অনুদান সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, ভারত তার প্রশংসা করেছে।
যানজট এড়ানো এবং শহরাঞ্চলীয় পরিবেশের উন্নয়নে অনুদান সহায়তা
বেঙ্গালুরু শহরের কেন্দ্রস্হলে যানজট সংক্রান্ত তথ্য ও সুষ্ঠুভাবে যানজট এড়ানোর জন্য আধুনিক ব্যবস্হা গড়ে তোলা সম্পর্কিত প্রকল্পটি রূপায়ণে অনুদান সহায়তার লক্ষ্যে যে নথিপত্র বিনিময় হয়েছে, ভারত তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
রেল ক্ষেত্রে ভারত-জাপান সহযোগিতা
মুম্বাই-আমেদাবাদ উচ্চগতি সম্পন্ন রেল
ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্হায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে এবং উচ্চগতি সম্পন্ন রেল চালু করতে ভারত ও জাপান মুম্বাই-আমেদাবাদ উচ্চগতিসম্পন্ন রেল করিডর নির্মাণে সহযোগিতা করছে। এই প্রকল্পটির গুরুত্বের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নজরদারির জন্য নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান ডঃ রাজীব কুমার এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র বিশেষ উপদেষ্টা ডঃ হিরোতো ইজুমির সভাপতিত্বে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর নতুন দিল্লীতে এই কমিটির অষ্টম বৈঠকে মুম্বাই-আমেদাবাদ উচ্চগতি সম্পন্ন রেল প্রকল্পের ধারাবাহিক অগ্রগতিতে সন্তোষপ্রকাশ করা হয়। বৈঠকে আরো স্হির হয়েছে যে এই প্রকল্পের সাফল্য অর্জনে পারস্পরিক প্রয়াস জারি রাখা হবে। এই প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই জাপানের ভূমি, পরিকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী শ্রী কেইচি ইসি গত ডিসেম্বর মাসে এবং সেদেশের ভূমি, পরিকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী শ্রী মাসাতোশি আকিমতো গত মে মাসে ভারত সফর করেছেন। যৌথ কমিটির বৈঠকে এই প্রকল্পটিতে দ্বিতীয় পর্যায়ে জাপানের ঋণ সহায়তার জন্য নথিপত্র বিনিময় ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
মুম্বাই, আমেদাবাদ উচ্চগতিসম্পন্ন রেল প্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে জাতীয় উচ্চগতিসম্পন্ন রেল নিগম লিমিটেড বা এনএইচএসআরসিএল। প্রকল্পটি রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় জমির চূড়ান্ত সমীক্ষার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। মুম্বাই এবং আমেদাবাদের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজ এ বছরের ডিসেম্বর মাস নাগাদ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ৪৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেল প্রকল্পের ৩২৮ কিলোমিটারের যৌথ সমীক্ষার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি গড়ে তোলার পাশাপাশি উচ্চগতি রেল সম্পর্কিত একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্হাপনে ২৬টি সংস্হাকে বরাত দেওয়ার জন্য চিন্হিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই চারটি ক্ষেত্রে বরাত দানের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। এই রেল প্রকল্পে যে ১২টি স্টেশন থাকছে, সেগুলির প্রত্যেকটিতেই আধুনিক ও সুস্হায়ী সুসংবদ্ধ পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট ইন্টিগ্রেশন প্ল্যান বা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর
মুম্বাইয়ে জওহরলাল নেহরু বন্দর টার্মিনাল থেকে দাদরি (গুজরাট) পর্যন্ত ১ হাজার ৫২২ কিলোমিটার দীর্ঘ পশ্চিমাঞ্চলীয় ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হল মুম্বাই-দিল্লী রুটে যানযট এড়ানো। জেআইসিএ-এর তহবিল সহায়তায় এই প্রকল্পটি রূপায়িত হচ্ছে।
এই প্রকল্পের ৪৮ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এমনকি ৮০২ কিলোমিটার রেললাইন স্হাপনের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণের জন্য প্রায় ৯৯ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে এবং ৩৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকার বরাত দানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৫ আগস্ট নির্মীয়মান এই ফ্রেইট করিডরের ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ আতেলি-ফুলেরা শাখায় পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হয়েছে। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি ভারতীয় রেল ব্যবস্হায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে।
ভবিষ্যৎ সহযোগিতা
১. মুম্বাই-আমেদাবাদ উচ্চগতিসম্পন্ন রেল প্রকল্পে মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচির উদ্দেশ্যগুলিতে বাস্তবায়িত করতে দুই দেশের একাধিক সংস্হা ও প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়েছে। চারটি উপগোষ্ঠী গঠনের ব্যাপারেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই রেল প্রকল্পে পরিষেবা দানের জন্য মোট ২৪টি ট্রেনের মধ্যে ৬টি ট্রেন মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের আওতায় তৈরি করা হবে।
২. জাপানের সরকারি উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে পাওয়া ঋণকে কাজে লাগিয়ে বরোদায় ভারতীয় রেলের জাতীয় শিক্ষামূলক ক্যাম্পাসে উচ্চগতিসম্পন্ন রেল বিষয়ক একটি নতুন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য দুটি দরপত্র বন্টন করা হয়েছে। শেষ দরপত্রটি গত জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়। আশা করা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দরপত্রের পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং ২০২০ ডিসেম্বর মাস নাগাদ এটি চালু হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উচ্চগতিসম্পন্ন রেল প্রকল্প পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে উভয় দেশই সম্মত হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভারতীয় রেলের ২৮৭ জন তরুণ আধিকারিক জাপানে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। ভারতীয় রেল আধিকারিকদের প্রশিক্ষণের জন্য জাপান সরকার প্রতি বছর ২০ জন আধিকারিককে প্রশিক্ষিত করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় রেলের ১৭ জন আধিকারিক জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিগ্রি কোর্সে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ২০১৯ সালের জন্য ২০ জন আধিকারিককে এই ডিগ্রি কোর্সে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান সরকার।
৩. রেল সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ভারত সরকার যে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তার প্রেক্ষিতে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়ে শ্রেষ্ঠ পন্হা পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে অবহিত হতে ভারত জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছে। প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য জাপানের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি দল ইতিমধ্যেই ভারত সফরে এসে এদেশে রেল সুরক্ষা নিরাপত্তার বিষয়গুলি খতিয়ে দেখি গিয়েছে। সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষনের জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতার আওতায় রেল নিরাপত্তা বিষয়ক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগে ভারত-জাপান সহযোগিতা
চলতি বছরের জুলাই মাসে গুজরাটের আমেদাবাদে জেটরো বিজনেস সাপোর্ট সেন্টার চালু করার পাশাপাশি জাপান-ভারত বিনিয়োগ প্রসার পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে দুই দেশেই বিনিয়োগের প্রসারে একাধিক সেমিনার আয়োজিত হয়েছে।
ভারতে বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রায় ৬০টি জাপানি সংস্হা বিনিয়োগের যে প্রস্তাব দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সেবিষয়ে গত ২৯ অক্টোবর অবহিত করা হয়। এই বিনিয়োগ প্রকল্পগুলিতে ইনভেস্ট ইন্ডিয়া এবং জাপানের জেটরো সংস্হা সহায়তা করবে। মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচিতে এই বিনিয়োগ প্রকল্পগুলি আরো গতি সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিনিয়োগের পরিমান প্রায় ২৮০ বিলিয়ন জাপানী ইয়েন। প্রকল্পগুলিতে অতিরিক্ত ২৯ হাজার কর্মসংস্হানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
নতুন এক উদ্যোগের অঙ্গ হিসাবে ভারত ও জাপানের দুই সংস্হা- এমইটিআই এবং ডিআইপিপি কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলির প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা প্রণালীকে আরো সুবিন্যাস্ত করতে‘অ্যাডভান্সড মডেল সিঙ্গল ইউন্ডো’ গড়ে তোলার ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সহযোগিতার ফলে প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ পন্হা পদ্ধতিগুলিকে অনুসরণ করা হবে। একইসঙ্গে এ ধরনের কাজকর্ম পরিচালনায় দক্ষতা বাড়বে। এরফলে ভারতে সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকারি প্রয়াসগুলি ত্বরান্বিত হবে। এক কার্যকর লজিস্টিক সাপ্লাই ব্যবস্হা গড়ে তুলতে যে লজিস্টিক ডেটা ব্যাঙ্ক প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি ভারতে বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
দক্ষতা উন্নয়ন ক্ষেত্রে ভারত-জাপান সহযোগিতা
আগামী দশ বছরে ৩০ হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে ভারতে উৎপাদন ক্ষেত্রের সার্বিক অগ্রগতির জন্য এক অনুকূল বাতাবরণ প্রদানের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় দক্ষতা উন্নয়ন ও শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রক এবং জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রকের মধ্যে ২০১৬তে ‘উৎপাদন ক্ষেত্রে দক্ষতা হস্তান্তর প্রসার কর্মসূচি’সংক্রান্ত একটি সহযোগিতা সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই কর্মসূচিটি ভারতের স্কিল ইন্ডিয়া এবং মেক ইন ইন্ডিয়ার মতো ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগে অবদান যোগাচ্ছে। স্বাক্ষরিত সহযোগিতা সমঝোতাপত্রের মাধ্যমে ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত জাপানী সংস্হাগুলি জাপান-ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ ম্যানুফ্যাকচারিং এবং জাপানীজ এনডাওয়েড কোর্স চালু করার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করছে।
জাপান-ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ ম্যানুফ্যাকচারিং সংস্হা জাপানী পদ্ধতিতে উৎপাদন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ভারতের শিল্পপতিদের প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। ৫টি জাপানী সংস্হা ২০১৭ সালে জাপান-ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ ম্যানুফ্যাকচারিং স্হাপন করেছে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে গুজরাটে সুজুকি সংস্হা, রাজস্হানে ডাইকিন সংস্হা, তামিলনাড়ুতে ইয়ামাহা সংস্হা এবং কর্ণাটকে হিতাচি ও টয়োটা সংস্হা যুক্ত রয়েছে। ২০১৮তে জাপানী সংস্হা আরেস্টি হরিয়ানার ভাওয়ালে জাপান-ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ ম্যানুফ্যাকচারিং স্হাপন করেছে। টয়োটা সুশো সংস্হা গুজরাটে মান্ডালে এবং তিরুমো সংস্হা তিরুবনন্তপুরমে জাপান-ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ ম্যানুফ্যাকচারিং স্হাপন করেছে।
ভারতে উৎপাদন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণদানের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে জাপানীজ এনডাওয়েড কোর্স চালু হয়েছে। ২০১৭তে জাপানী সংস্হা মেইডেনশা কর্পোরেশন বিদ্যুৎ বন্টন এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে এদেশে প্রথম জাপানীজ এনডাওয়েড কোর্স চালু করে। এরপর মিৎসুবিশি ইলেকট্রিক ২০১৮তে ভারতের একাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ফ্যাক্টরি অটোমেশন কোর্স চালু করেছে।
কেন্দ্রীয় দক্ষতা উন্নয়ন ও শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রক গত বছরের অক্টোবর মাসে জাপানের স্বাস্হ্য, শ্রম ও কল্যাণ তথা সেদেশের ন্যায়বিচার এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রকের সঙ্গে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অর্ন্তবর্তী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা সংক্রান্ত একটি সহযোগিতাপত্র স্বাক্ষর করেছে। এই সহযোগিতাপত্র স্বাক্ষরের ফলে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অর্ন্তবর্তী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটির যথাযথ রূপায়ণের জন্য দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক অনুকূল বাতাবরণ গড়ে উঠছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ১৫জন ভারতীয় শিক্ষানবীশের প্রথম দলটি বিভিন্ন জাপানী সংস্হায় কাজের জন্য প্রশিক্ষণ পাবেন। এছাড়াও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অর্ন্তবর্তী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে আরো ১৭ জন ভারতীয় প্রযুক্তি-শিক্ষানবীশ জাপানে বিভিন্ন সংস্হায় কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।
ভারতের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নিগম এবং জাপানের জিটকো সংস্হার সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় দক্ষতা উন্নয়ন ও শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রক চলতি বছরের গোড়ায় ফেব্রুয়ারী মাসে নতুন দিল্লীতে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অর্ন্তবর্তী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সংক্রান্ত সচেতনতামূলক এক কর্মশিবির এবং গত সেপ্টেম্বর মাসে সেদেশের নাগোয়াতে এ বিষয়ক একটি সেমিনার আয়োজন করে। উদ্দেশ্য ছিল, জাপানী সংস্হাগুলির চাহিদা পূরণে দক্ষ ভারতীয় শিক্ষানবীশদের প্রেরণ করে ভারতের সক্ষমতাকে তুলে ধরা। সেইসঙ্গে ঐ কর্মসূচির সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ভারতে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে সচেতন করে তোলা।
ভবিষ্যৎ সহযোগিতা
জাপান-ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ ম্যানুফ্যাকচারিং এবং জাপানীজ এনডাওয়েড কোর্সের মাধ্যমে ভারতে দক্ষতা উন্নয়ন ক্ষেত্রে জাপান-ভারত উভয় দেশই তাদের প্রয়াসগুলি অব্যহত রাখবে। এরফলে ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগে আরো গতি সঞ্চারিত হবে।
জাপানী ভাষা শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে ভারত-জাপান দক্ষতা প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকবে। ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
ডিজিটাল অংশিদারিত্ব ক্ষেত্রে ভারত-জাপান সহযোগিতা
দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে একযোগে অগ্রসর হতে এবং জাপানের‘সোসাইটি ৫.০’ তথা ভারতের ডিজিটাল ইন্ডিয়া, স্মার্ট সিটি ও স্টার্ট আপ ইন্ডিয়ার মতো ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচিগুলির মধ্যে আরো ভালো সমন্বয় গড়ে তুলতে উভয় দেশই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অফ থিঙ্কস-এর মতো পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রক এবং ভারতের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের মধ্যে গঠিত যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর ৬টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারত-জাপান যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর পঞ্চম বৈঠকে তথ্য ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য ভারতের যোগাযোগ মন্ত্রক এবং জাপানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রকের মধ্যে যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘ভারত-জাপান ডিজিটাল অংশিদারিত্বের’ সাফল্য কামনা করে একে স্বাগত জানিয়েছেন। ভারতের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক তথা জাপানের অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা খুঁজে বের করতে এবং এক্ষেত্রে আরো সহযোগিতা গড়ে তুলতে একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এই সমঝোতাপত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি ভারত-জাপানের মধ্যে ‘স্টার্ট আপ হাব’ গড়ে তোলার সম্ভাবনা সম্প্রসারিত করার ওপরও জোর দেওয়া হয়।
ভারত ও জাপানের মধ্যে স্টার্ট আপ হাব :
ভারত ও জাপানের মধ্যে স্টার্ট আপ হাবগড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৭-র ভারত-জাপান বার্ষিক শীর্ষ বৈঠকের যৌথ ঘোষণাপত্রে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের অঙ্গীকারগুলিকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে চলতি বছরের মে মাসে সেদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী মিস্টার সিকো-র ভারত সফরের সময় উভয়পক্ষ জাপান-ভারত স্টার্ট আপ উদ্যোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে। ঐ ঘোষণাপত্রে বেঙ্গালুরুতে এই হাবটি গড়ে তোলার সংস্হান রয়েছে। এই স্টার্ট আপ হাবটি সম্ভাব্য জাপানী বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করতে কাজ করবে। ভারতের পক্ষ থেকেও জাপান-ভারত স্টার্ট আপ হাব সংক্রান্ত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে।
মেধা বিনিময়
দু-দেশের শিল্প সংস্হাগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বজায় রাখতে এবং অভিজ্ঞতার আদান-প্রদানে সামঞ্জস্য গড়ে তুলতে ভারত এবং জাপানের মধ্যে মেধা বিনিময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে ভারত-জাপান ডিজিটাল অংশিদারিত্ব যথাযথ ভূমিকা নেবে। সেইসঙ্গে প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা তথা ইন্টার্নশিপ কর্মসূচিগুলির আরো প্রসারে বর্তমান কাঠামো ব্যবস্হার সম্প্রসারণও করা হবে। একইভাবে জাপানে কর্মসংস্হানমূলক মেলা আয়োজন, উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন ভারতীয় পেশাদারদের জন্য স্টার্ট-আপ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা
ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত জাতীয় গবেষণা কর্মসূচিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং ভারতের নীতি আয়োগ এবং জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রকের মধ্যে যোগসূত্র বাড়াতে সেদেশের‘সোসাইটি ৫.০’ কর্মসূচির আওতায় উদ্ভাবনমূলক প্রযুক্তির বিকাশে জোর দেওয়া হচ্ছে। ভারত ও জাপান ইতিমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলিতে অনুসন্ধানমূলক কাজকর্ম পরিচালনার সম্ভাবনার বিষয়টিরও উল্লেখ রয়েছে। হায়দ্রাবাদ আইআইটি এবং জাপানের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড ইন্ডাসট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা কেন্দ্রের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্মসূচি
অত্যাধুনিক এবং নিরাপদ প্রযুক্তির প্রয়োজনীতার বিষয়টিকে বাস্তবায়িত করতে ভারত ও জাপান ভবিষ্যৎ ডিজিটাল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এক নিরাপদ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে এবং টেলি-যোগাযোগ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সহযোগিতা স্হাপনের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। দুই দেশের নেতৃবৃন্দই চেন্নাই এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সামুদ্রিক অপটিকাল ফাইবার কেবল স্হাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। দুই দেশই নিজেদের কৌশলগত গুরুত্বের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে সমুদ্রের তলদেশে ফাইবার কেবল স্হাপন সংক্রান্ত কর্মসূচিগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আরো সহযোগিতা করবে।
ইলেকট্রনিক ইকো সিস্টেম
বৈদ্যুতিন উপকরণ ও সাজ-সরঞ্জাম নির্মাণক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে এক অংশিদারিত্বমূলক ব্যবস্হা গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশের বৈদ্যুতিন সাজ-সরঞ্জাম নির্মাতা সংস্হাগুলির মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
ডিজিটাল কর্পোরেট অংশিদারিত্ব
টেলি যোগাযোগ ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য ভারতের যোগাযোগ মন্ত্রক এবং জাপানের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মধ্যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরফলে ভারত ও জাপানের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্পোরেট ও বাণিজ্যিক যোগসূত্র বৃদ্ধি পাবে। ভারতের ন্যাসকম বা ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস কোম্পানি এবং জাপানের প্রিফেকচার গর্ভমেন্ট অফ হিরোসিমা জাপানে প্রথম ‘তথ্যপ্রযুক্তি করিডর’ স্হাপন করেছে। এই ধরনের করিডর স্হাপনের উদ্দেশ্য হল, হার্ডওয়্যার ক্ষেত্রে জাপানের সক্ষমতা এবং সফটওয়্যার ক্ষেত্রে ভারতের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে যৌথভাবে এক বিশ্ব বাজার ব্যবস্হা গড়ে তোলা।
কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা, বনাঞ্চল এবং মৎসচাষ ক্ষেত্রে ভারত ও জাপানের মধ্যে সহযোগিতা
১ কৃষি
ভারতের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রক এবং জাপানের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতাপত্রের ওপর ভিত্তি করে যৌথ কর্মীগোষ্ঠী গঠিত হয়েছে। এই সমঝোতাপত্রটি ২০১৬-র ১১ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালে স্বাক্ষরিত হয়। এই কর্মীগোষ্ঠীর প্রথম বৈঠক ২০১৭-র ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। যে তিনটি ক্ষেত্র সহযোগিতার জন্য চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলি হল- কৃষি উৎপাদনশীলতা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং মৎসচাষ।
কৃষি ও মৎসচাষ ক্ষেত্রে ভারতে জাপানের বিনিয়োগ বাড়াতে যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর প্রথম বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পন্হা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই লক্ষ্যে গত ২৯ অক্টোবর এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই কর্মসূচির প্রথম বিনিয়োগ হিসাবে খাদ্য সংক্রান্ত তেলেঙ্গানা মেগা প্রজেক্টটিকে চিহ্নিত করা হয়।
২ ভারত-জাপান কৃষি উৎকর্ষকেন্দ্র
জাপানী প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতে কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে জাপান কিভাবে সাহায্য করতে পারে সেই নিয়ে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এই লক্ষ্যে ভারত-জাপান কৃষি উৎকর্ষকেন্দ্র স্হাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কেন্দ্রে জাপানী প্রযুক্তিগুলি তুলে ধরা হবে।
৩ গবেষণামূলক সহযোগিতা
জাপানের ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর এগ্রিকালচার সায়েন্সেস এবং ভারতের কৃষি গবেষণা পর্ষদ বা আইসিএআর-এর মধ্যে গত ৯ ফেব্রুয়ারী যৌথ গবেষণামূলক একটি গবেষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রথম বৈঠক হরিয়ানার কার্নালে গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে কম খরচে ভূপৃষ্ঠে নিকাশী ব্যবস্হার উন্নয়ন, সুস্হায়ীভাবে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, লবনাক্ত মাটির জায়গাগুলিতে কৃষিসেচ প্রযুক্তি এবং লবনাক্ত মাটিতে শস্য উৎপাদন সম্ভব করে তোলার মতো আঞ্চলিক চাষাবাদের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ
১. বিশ্ব খাদ্য উৎসব, ভারত ২০১৭
২০১৭তে ভারতে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য উৎসবে অংশীদার দেশ হিসাবে জাপান যোগ দেয়। এই উৎসবে জাপানী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সেদেশের কৃষি, বনাঞ্চল এবং মৎসচাষ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মিস্টার তানিয়ায়। প্রায় ৬০টি জাপানী সংস্হাও এই উৎসবে অংশ নেয়।
২. ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পমন্ত্রক এবং জাপানের কৃষি, বনাঞ্চল এবং মৎসচাষ বিষয়ক মন্ত্রকের মধ্যে গত ২৯ অক্টোবর সহযোগিমূলক সমঝোতাপত্র এবং এ সংক্রান্ত নথিপত্র বিনিময় হয়েছে।
৩. ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পমন্ত্রক এবং জাপানী আইএসই ফুড সংস্হার মধ্যে গত ১৩ মার্চ প্রথম সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
এ সংক্রান্ত আরো একটি সমঝোতাপত্র ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পমন্ত্রক এবং দুই জাপানী সংস্হা- কাগমে ও নিশান স্টিলের মধ্যে গত ২৯ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়।
৪ জাপানে ভারতীয় বাজার সমীক্ষার জন্য খাদ্য সংস্হাগুলির সংগঠন
জাপানের কৃষি, বনাঞ্চল ও মৎসচাষ বিষয়ক মন্ত্রক বিশ্ব খাদ্যশৃঙ্খল ব্যবস্হার উন্নয়নের প্রসারে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্ব খাদ্যশৃঙ্খল ব্যবস্হার প্রসারে গত মার্চ মাসে ভারতীয় উপকমিটিতে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি পরিষদের বৈঠক আয়োজন করা হয়। এই পরিষদের সদস্য সংখ্যা প্রায় চারশো।
গত মে মাসে খাদ্য সংক্রান্ত ভারত-জাপান বাণিজ্য পর্ষদের সূচনা হয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তা
ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ও গুণমান কর্তৃপক্ষ এবং জাপানের খাদ্য নিরাপত্তা কমিশন, উপভোক্তা বিষয়ক এজেন্সি, স্বাস্হ্য, শ্রম এবং শ্রমিককল্যাণ মন্ত্রকের মধ্যে গত ২৯ অক্টোবর সহযোগিমূলক সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বনাঞ্চল
ভারতের পরিবেশ, বন তথা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রক এবং জাপানের কৃষি, বন ও মৎসচাষ বিষয়ক মন্ত্রকের মধ্যে ২০১৫-র ১১ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত সহযোগিতামূলক সমঝোতাপত্র অনুযায়ী যৌথ কর্মীগোষ্ঠী গঠিত হয়। এই সমঝোতাপত্র অনুযায়ী সহযোগিতামূলক ক্ষেত্র হিসাবে ৭টি বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলি হল- মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক আদান-প্রদান ;বনাঞ্চলের সুষ্ঠু বিকাশ ও পরিচালনা ; বনাঞ্চল সংরক্ষণ উদ্যোগ বৃদ্ধি করা এবং বনাঞ্চলে বিপর্যয় প্রতিরোধ ; জৈব বৈচিত্রের সংরক্ষণ ; বনজ সম্পদের কার্যকর সদ্ব্যবহার ; বন সংরক্ষণ ও পরিচালনা সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তিগুলির কার্যকর প্রয়োগ এবং অরণ্যক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন।
গত ২৩ জুলাই যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর তৃতীয় বৈঠকে ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সময়ে বনাঞ্চল সংরক্ষণ ক্ষেত্রে ভারত-জাপান ভবিষ্যৎ দিশা নির্দেশ রচনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।
মৎসচাষ
মানুষের আহারের জন্য মাছ ও মৎসজাত পণ্য ভারতে রপ্তানীতে প্রয়োজনীয় শংসাপত্র গত মার্চ মাসে পাওয়া গেছে।
চিংড়ি ও এ জাতীয় অন্যান্য মাছ জাপান থেকে ভারতে রপ্তানীতে প্রয়োজনীয় শংসাপত্র গত অক্টোবর মাসে পাওয়া গেছে।
জাপানের কৃষি, বনাঞ্চল এবং মৎসচাষ বিষয়ক মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে সহযোগিতা। সেইসঙ্গে বেসরকারি সংস্হাগুলির কাজকর্ম- অন্ধ্রপ্রদেশে জাপানের কৃষি, বনাঞ্চল এবং মৎসচাষ বিষয়ক মন্ত্রক এবং ভারতের রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক সমঝোতাপত্র ২০১৬-এর ৩০ জুলাই স্বাক্ষরিত হয়।
অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার এবং জাপানের কৃষি, বনাঞ্চল এবং মৎসচাষ বিষয়ক মন্ত্রকের মধ্যে হিমঘর স্হাপন সংক্রান্ত একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য গত ২৫ অক্টোবর একটি সহযোগিতামূলক সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে।
মহারাষ্ট্রে জাপানের কৃষি, বনাঞ্চল এবং মৎসচাষ বিষয়ক মন্ত্রকের সঙ্গে মহারাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতামূলক সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে ২৯ অক্টোবর। উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গেও গত ২৬ অক্টোবর জাপানের কৃষি, বনাঞ্চল এবং মৎসচাষ বিষয়ক মন্ত্রকের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এজেন্সি
অন্ধ্রপ্রদেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে কৃষিসেচ এবং জীবন-জীবিকার উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এজেন্সি এবং অর্থমন্ত্রকের মধ্যে ২০১৭-র ১৩ই ডিসেম্বর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এজেন্সি এবং জাপানে ভারতীয় দূতাবাসের মধ্যে হিমাচলপ্রদেশে বনাঞ্চলের সংরক্ষণ এবং জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নের কর্মসূচি গ্রহণে গত ২৯ মার্চ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সমবায় সমিতির মাধ্যমে ডেয়ারী ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এজেন্সি গত জুলাই মাসে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে।
ভারত-জাপান নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
২০০৮ সালে নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত ভারত-জাপান যৌথ ঘোষনাপত্র প্রকাশের পর থেকে অভিন্ন নিরাপত্তার লক্ষ্যে যৌথ প্রয়াস গ্রহণে বিগত দশকে লক্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্হা গ্রহণের মাধ্যমে উভয় দেশই দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও নিবিড়তর করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বার্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রতিরক্ষানীতি সংক্রান্ত আলোচনা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে আলোচনা, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন শাখার প্রধানদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। এছাড়াও দুই দেশের সেনাবাহিনীগুলি যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। মালাবার মহড়ার গুরুত্ব উভয় দেশের কাছেই অগ্রাধিকার পেয়েছে। জাপানের প্রতিরক্ষাবাহিনী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের ব্যাপারে যৌথ মহড়া চালিয়েছে।
আঞ্চলিক শান্তি ও স্হিতিশীলতা রক্ষায় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক সহায়তা এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ভারত ও জাপান সামুদ্রিক নিরাপত্তার সহযোগিতা গড়ে তুলেছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে ত্রয়োদশ শীর্ষ বৈঠকে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং জাপানের নৌবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতাকে আরও নিবিড়তর করার জন্য স্বাক্ষরিত চুক্তিটিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে এ ধরনের সহযোগিতা কৌশলগত সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা সাজ-সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির আদান-প্রদানে ব্যাপক সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।
কার্যকর কাঠামো
ভারত ও জাপানের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ২০০৮ সালের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত যৌথ ঘোষণাপত্র এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতাপত্রের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়ে থাকে।
ভারতীয় নৌবাহিনী এবং জাপানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতাকে আরো নিবিড়তর করতে অক্টোবর মাসে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে তথ্য আদান-প্রদানের পাশাপাশি দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে যৌথ মহড়া চালানোর পন্হা-পদ্ধতি নির্ধারণ করা আরো সহজ হবে।
বর্তমান পরিস্হিতি
প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ে বার্ষিক বৈঠক ২০০৬ সালের মে মাসে শুরু হয়েছিল। গত অগাস্ট মাসে ভারতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বার্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিরক্ষানীতি সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা ২০০৭-এর এপ্রিলে টোকিওতে শুরু হয়। ষষ্ঠ প্রতিরক্ষানীতি সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা এবং মন্ত্রি পর্যায়ে ২+২ বৈঠক গত জুন মাসে নতুন দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়।
ভারত ও জাপানের সেনাবাহিনীর তিন শাখার প্রধানদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা বর্তমানে জারি হয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনী এবং জাপানের নৌবাহিনীর প্রধানদের মধ্যে সপ্তম বৈঠক গত জানুয়ারিতে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং সেদেশের বিমানবাহিনীর প্রধানদের বৈঠক গত জুন মাসে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং সেদেশের বিমানবাহিনীর মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের পঞ্চম বৈঠক আগামী বছরের গোড়ায় ভারতে অনুষ্ঠিত হবে। দুই দেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা এ বছরের গোড়ায় নতুন দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়।
যৌথ মহড়া : ভারত-জাপান নৌবাহিনীর মধ্যে মহড়া প্রায়শই আয়োজিত হয়ে থাকে। এ ধরনের মহড়াগুলির মধ্যে ত্রিপাক্ষিক মালাবার মহড়া সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। মালাবার মহড়া ২০১৮, গত জুন মাসে গুয়াম-এ আয়োজিত হয়। পাঁচ বছর পর চলতি অক্টোবর মাসে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং জাপানের নৌবাহিনীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক মহড়ার আয়োজন করা হয় বিশাখাপত্তনমে। এছাড়াও একাধিক মহড়ায় ভারতীয় নৌ, বিমান এবং সেনাবাহিনী সেদেশের সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলির সঙ্গে অংশ নিয়ে থাকে। ২০১৭-র নভেম্বর মাসে জাপান-মার্কিন কমন ইন্টিগ্রেশন ইমার্জেন্সি মহড়ায় ভারত প্রত্যক্ষকারি দেশ হিসাবে অংশ নেয়।
প্রতিরক্ষা সাজ-সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা
গত এপ্রিল মাসে চেন্নাইয়তে আয়োজিত প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিভিন্ন বিভাগ অংশ নেয়।
২০১৪ সালে প্রতিরক্ষা সাজ-সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার লক্ষ্যে গঠিত যৌথ কর্মীগোষ্ঠী এখনো পর্যন্ত চারবার বৈঠকে মিলিত হয়েছে। চতুর্থ বৈঠকটি গত জুলাই মাসে নতুন দিল্লীতে আয়োজিত হয়। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্হা ডিআরডিও এবং জাপানের প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহ সংক্রান্ত সংস্হার মধ্যে সহযোগিতামূলক গবেষণার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। গত জুলাই মাসে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
ভারত ও জাপানের মধ্যে প্রতিরক্ষা শিল্পসংস্হাগুলির প্রথম আলোচনাসভা ২০১৭-র সেপ্টেম্বর মাসে টোকিওতে আয়োজিত প্রতিরক্ষা সাজ-সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সংক্রান্ত যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর তৃতীয় বৈঠকের সঙ্গেই আয়োজিত হয়। ঐ কর্মীগোষ্ঠীর চতুর্থ বৈঠকের পাশাপাশি একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়, যেখানে জাপানের প্রতিরক্ষা শিল্পসংস্হাগুলির সঙ্গে ব্যবসায়িক আলাপ-আলোচনা হয়।
বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে ভারত-জাপান সহযোগিতা
বিশ্বের অন্যতম দুটি বিপর্যয়প্রবণ দেশ হিসাবে ভারত ও জাপান বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক সংক্রান্ত কর্মসূচিগুলি রূপায়ণে সহযোগিতা করে আসছে। ২০১৬-র নভেম্বরে নতুন দিল্লীতে আয়োজিত বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাস সংক্রান্ত এশিয়ার দেশগুলির মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকের ফলস্বরুপ গত জানুয়ারি মাসে ভারত বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাস সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক স্তরের এক কর্মশিবিরের আয়োজন করে। এই কর্মশিবিরে জাপান সহ বিশ্বের ২০টি দেশ অংশ নেয়। মন্ত্রি পর্যায়ের ঐ বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন বিপর্যয়রোধী পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ভারত অন্যান্য দেশ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে অংশিদারিত্ব গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী।
২০১৭-র সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী আবে-র ভারত সফরের সময় বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে ভারত-জাপান সহযোগিতায় এক নতুন মাইলফলক অর্জিত হয়। সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্যে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রক এবং জাপান সরকারের ক্যাবিনেট কার্যালয়ের মধ্যে এক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করা হয়। ভারতের জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্হাপনা কর্তৃপক্ষকে (এনডিএমএ) এ সংক্রান্ত কর্মসূচি রূপায়ণে প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়। সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতাপত্রের আওতায় বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক ভারত-জাপান প্রথম কর্মশিবিরটি গত মার্চ মাসে নয়া দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মশিবিরে বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতি হিসাবে জাপানের বিভিন্ন প্রযুক্তি তথা আগাম সতর্কীকরণবার্তা সহ তাদের অভিজ্ঞতা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিনিময় করা হয়।
এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় কর্মশিবির গত ১৫ অক্টোবর টোকিওতে আয়োজিত হয়। শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ যে তিনটি বিষয়ের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয় সেগুলি হল, বিপর্যয় সংক্রান্ত মহড়া ও প্রশিক্ষণ ; চলতি বছরে দুই দেশে একাধিক বিধ্বংসী বন্যার প্রেক্ষিতে পরিবেশগত আকস্মিক ঘটনা এবং নীতি তথা প্রযুক্তিগত দিক থেকে আগাম সতর্কতা ব্যবস্হা।
ভারত-জাপান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তথা শিক্ষা বিষয়ক সহযোগিতা
কার্যকর কাঠামো ব্যবস্হা
ভারত-জাপান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতা ১৯৮৫ সালে আন্তঃসরকারি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়। দ্বিপাক্ষিক এই সহযোগিতা ১৯৯৩ সালে ভারত-জাপান বিজ্ঞান পর্ষদ গঠনের মাধ্যমে আরো প্রসারিত হয়। এখনও পর্যন্ত এই পর্ষদের ১৯টি বৈঠক আয়োজিত হয়েছে। ২৫০টি যৌথ প্রকল্পে সহায়তা যুগিয়েছে, বিজ্ঞানীরা পারস্পরিক দেশে ভ্রমণ করেছেন ১৬০০ বার, ৬৫টি যৌথ সেমিনার বা কর্মশিবির আয়োজিত হয়েছে। সেইসঙ্গে মহাদেশীয় পর্যায়ে ৯টি শিক্ষা বিষয়ক সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক উদ্যোগসমূহ
যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় এবং বোম্বে আইআইটি-র মধ্যে ইন্টারনেট অফ থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স মতো বিষয়ে যৌথ গবেষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইআইটি হায়দ্রাবাদের মধ্যে সুস্হায়ী শস্য উৎপাদনের জন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক চাষাবাদ ব্যবস্হায় সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যান্য উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে তরুণ গবেষকদের ফেলোশিপ কর্মসূচির জন্য কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর এবং জাপান সোসাইটি ফর দ্যা প্রমোশন অফ সায়েন্স সংস্হার সহযোগিতা ; ধাতব পদার্থের আধুনিক গবেষণার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের ইন্ডিয়ান বিম লাইন কর্মসূচি রূপায়ণে সমঝোতাপত্র।
সুস্হায়ী উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বিজ্ঞান-প্রযুক্তি গবেষণা অংশীদারিত্বের আওতায় উদীয়মান দেশগুলির জন্য স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা সংক্রান্ত একটি প্রকল্প ২০১৭তে শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞান ক্ষেত্রে জাপান-এশিয়া যুব বিনিময় কর্মসূচির আওতায় ২০১৭-র এপ্রিল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত ৬৫৫ জন ছাত্রছাত্রী ও তত্ত্বাবধায়ক জাপান সফর করেছেন। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের মনোনীত ৩৯ জন ছাত্রছাত্রী এই কর্মসূচির আওতায় গত মে মাসে জাপান সফর করেছেন।
জাপানের সুকুবাতে অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল ল্যাবরোটরি ফর অ্যাডভান্সড বায়োমেডিসিন প্রতিষ্ঠান স্হাপন। একইভাবে ভারতে ঔষধী গবেষণা ও ভেষজ চিকিৎসার জন্য সিক্স সিস্টার্স বা স্যাটেলাইট ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেশাল ট্রেনিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ প্রতিষ্ঠান স্হাপন। ২০১৬-র নভেম্বরে ভারতের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক এবং জাপানের মেরিন-আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এজেন্সির মধ্যে মহাসাগর তথা ভূ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মসূচির আওতায় সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারতের জৈব প্রযুক্তি দপ্তর এবং জাপানের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রান্সনেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের জন্য একটি যৌথ গবেষণামূলক চুক্তি হয়েছে। ২০১৭-য় হেভি আয়ন রেডিও থেরাপি ক্ষেত্রে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর কোয়ান্টাম অ্যান্ড রেডিওলজিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং কলকাতাস্হিত টাটা মেডিক্যাল সেন্টারের মধ্যে সহযোগিতামূলক সমঝোতা হয়েছে। ভারতের মহাকাশ দপ্তর এবং ইসরো তথা জাপানের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক যৌথভাবে ২০১৭-র নভেম্বরে বেঙ্গালুরুতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক মহাকাশ এজেন্সি ফোরামের ২৪তম বৈঠক আয়োজন করে।
গবেষণা ও শিক্ষামূলক অংশিদারিত্ব
জাপানের রিটসুমেইকান বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, সেদেশের ওমরন কর্পোরেশন এবং ভারতের হায়দ্রাবাদ আইআইটি-র মধ্যে শিক্ষানবীশ প্রকল্প বিষয়ক একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জাপানের হিরোসীমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভারতের ৮টি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি ও সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের সেন্ট্রাল ইলেকট্রিনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট এবং জাপানের হিরোসীমা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণা, শিক্ষা ও শিক্ষামূলক বিনিময়ের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে তোলা।
জাপানের হিরোসীমা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারতের বিড়লা ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শিক্ষামূলক বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর। হিরোসীমা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বোম্বে আইআইটি-র মধ্যে আরো একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও জাপানের হিরোসীমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষামূলক আদান-প্রদানের জন্য সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারতের আমেদাবাদে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট একই ধরনের একটি চুক্তি হিরোসীমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছে। দিল্লী আইআইটি-র সঙ্গেও হিরোসীমা বিশ্ববিদ্যালয়ের একইরকম একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। হায়দ্রাবাদ আইআইটি এবং হিরোসীমা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষামূলক আদান-প্রদানে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে।
জাপানের নাগাওকা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং নিউক্লিয়ার সিস্টেম সেফটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ভারতের তিরুপতি আইআইটি-র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ইন্দোর আইআইটি-র স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন অফ মেটালার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
টোকিও ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির ইনোভেটিভ রিসার্চ ইন্সটিটিউট এবং ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পর্ষদের মধ্যে চলতি অক্টোবর মাসে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়াও জাপানের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ পোলার রিসার্চ এবং ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড ওশেন রিসার্চ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেরু অঞ্চলে গবেষণামূলক কাজকর্মের জন্য সহযোগিতা সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
উভয় দেশ জলবায়ু ও মহাসাগরীয় গতিপ্রকৃতির মতো ক্ষেত্রে যৌথ গবেষণা চালানোর প্রস্তাব করেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারত-জাপান যৌথ গবেষণা কর্মসূচির আওতায় দুই দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলি ভবিষ্যতেও পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখতে গবেষণামূলক উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। ২০২০ সালের গোড়ার দিকে মেরু প্রদেশে যৌথ সমীক্ষা চালানোর ব্যাপারেও দুই দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলি সম্মত হয়েছে।
ভারতে জাপানী ভাষা শিক্ষার প্রসার
ভারতে বিগত কয়েক বছর ধরে জাপানী ভাষায় দক্ষ পেশাদারদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে ভারত ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতাকে আরও সম্প্রসারিত ও নিবিড়তর করতে ভারতে জাপানী ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বকে স্বীকার করেছেন। ভারতে জাপানী ভাষা শিক্ষার প্রসারে ২০১৭-র ১৪ সেপ্টেম্বর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে একটি সহযোগিতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এই সহযোগিতাপত্র অনুযায়ী ভারতে জাপানী ভাষার শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্র স্হাপনের কথা উল্লেখ রয়েছে। আরও বলা হয়েছে, আগামী ৫ বছরে এদেশে ১ হাজার শিক্ষককে জাপানী ভাষায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং নতুন ১০০টি জাপানী ভাষাশিক্ষা পাঠ্যক্রম চালু করা হবে।
স্বাক্ষরিত সমঝোতাপত্র অনুযায়ী জাপানী ভাষার শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্র গত জুলাই মাসে নতুনদিল্লীতে স্হাপিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছে।
জাপানী ভাষা জানা ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের জন্য তিন মাসের একটি কোর্স গত ২৩ জুলাই শুরু হয়। ত্রিস্তরীয় এই প্রশিক্ষণ কোর্সে জাপানী ভাষায় আরো দক্ষ করে তোলার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। গত ১২ অক্টোবর এই শিক্ষাক্রম সফলভাবে শেষ হয়েছে। প্রশিক্ষণ পর্বে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষণ পদ্ধতি সহ শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদানের পন্হা পদ্ধতির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষনরত ব্যক্তিদের দক্ষ করে তোলা হয়। এই প্রশিক্ষণ পর্বে মোট ২৫ জন সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ভাষা শিক্ষার এ ধরনের প্রশিক্ষণ পর্ব দু-দফায় ভারতে আয়োজিত হয়। এ ধরনের প্রথম প্রশিক্ষণ পর্ব গত ১২-১৬ সেপ্টেম্বর শান্তিনিকেতনে এবং ২৬-২৭ অক্টোবর বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত হয়।
CG/BD/NS/