Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ভারতের ৭২ তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ


আমার প্রিয় দেশবাসী,

 

স্বাধীনতার পবিত্র উৎসবে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আজ দেশ একটি আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ স্বপ্নকে সংকল্পের সঙ্গে পরিশ্রমের সাহায্যে দেশ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আজকের সূর্যোদয় একটি নতুন চেতনা, নতুন আকাঙ্খা, নতুন উৎসাহ, নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে এসেছে।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে বারো বছরে একবার নীল কুরঞ্জি ফুল ফোটে। এবছর দক্ষিণের নীলিগিরি পাহাড়ে আমাদের এই নীল কুরঞ্জি ফুল, মনে করুন, তেরঙ্গা ঝাণ্ডার অশোক চক্রের মতো দেশের স্বাধীনতার স্বাধীনতার উৎসবের বাতাসে দোল খাচ্ছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতার এই উৎসব আমরা তখন পালন করছি, যখন উত্তরাখণ্ড, হিমাচল, মণিপুর, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ — এইসব রাজ্যের মেয়েরা সাত সমুদ্র পার করেছেন। আর, সমুদ্রকে ত্রিবর্ণরঞ্জিত করে আমাদের মধ্যে ফিরে এসেছেন।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা স্বাধীনতার উৎসব এমন সময় পালন করছি, যখন ইতিমধ্যেই অনেকবার এভারেস্ট বিজয় হয়ে গেছে, আমাদের অনেক বীরেরা, আমাদের অনেক মহিলারা এভারেস্টে তেরঙ্গা পতাকা উড়িয়েছেন। কিন্তু এবারের এই স্বাধীনতার উৎসব পালনের সময় একথা মনে রাখব যে, আমাদের দূর সুদূর জঙ্গলে বসবাসকারী ছোট ছোট আদিবাসী বাচ্চারা এভারেস্টে ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করে ভারতের তেরঙ্গা পতাকার সম্মান আরও বৃদ্ধি করেছে।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, এই সবে লোকসভা-রাজ্যসভার অধিবেশন সম্পন্ন হয়েছে। আর আপনারা হয়তো দেখেছেন, অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আরেকভাবে দেখলে, সংসদের এই অধিবেশন সম্পূর্ণ রূপে সামাজিক ন্যায়ের প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিল। দলিত, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত ও মহিলাদের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের সাংসদরা সংবেদনশীলতা ও সচেতনতার সঙ্গে সামাজিক ন্যায়কে আরও অধিক শক্তিশালী করে তুলেছেন। ওবিসি কমিশনকে বছরের পর বছর ধরে সাংবিধানিক মর্যাদা প্রদানের দাবী উঠছিল। এবার সংসদ অনগ্রসর ও অতি-অনগ্রসরদের এই কমিশনকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিয়ে, এক সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রদান করে, তাঁদের অধিকার রক্ষার চেষ্টা করেছে।

 

আমরা আজ সেই সময় স্বাধীনতার উৎসব পালন করছি, যখন আমাদের দেশে এই খবরগুলি এক নতুন চেতনার সঞ্চার করেছে। প্রত্যেক ভারতীয়, তা তিনি বিশ্বের যে কোনও প্রান্তেই থাকুন না কেন, আজ এই নিয়ে গর্ব করছেন যে, ভারত বিশ্বে ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

এমন এক ইতিবাচক আবহ, ইতিবাচক ঘটনা পরম্পরার মধ্যে, আজ আমরা স্বাধীনতার উৎসব পালন করছি। দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পূজনীয় বাপুজীর নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যৌবন জেলে কাটিয়েছেন, ওই বিপ্লবী মহাপুরুষরা ফাঁসিকাঠে প্রাণ দিতে, দেশের স্বাধীনতার জন্য ফাঁসির রজ্জুকে চুম্বন করেছেন।

 

আমি আজ দেশবাসীর পক্ষ থেকে এই বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হৃদয় থেকে প্রণাম জানাই, অন্তরের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই। যে ত্রিবর্ণরঞ্জিত মর্যাদা অহংকার ও শৌর্য আমাদের বেঁচে থাকা, লড়াই করা ও আত্মবলিদানের প্ররণা জোগায়, সেই তেরঙ্গার মর্যাদার জন্য দেশের সেনাবাহিনীর জওয়ানরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। আমাদের আধাসামরিক বাহিনীর সৈন্যরা জীবন উৎসর্গ করেন, আমাদের পুলিশের জওয়ানরা সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য দিনরাত দেশের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।

 

আমি সকল সেনা জওয়ানদের, আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানদের, পুলিশের জওয়ানদের এই মহান সেবার জন্য, তাঁদের ত্যাগ ও তপস্যার জন্য, তাঁদের পরাক্রম ও শৌর্যের জন্য, আজ তেরঙ্গা পতাকার পাশে দাঁড়িয়ে, লালকেল্লার প্রাকার থেকে শত শত প্রণাম জানাই, আর তাঁদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

 

 

 

আজকাল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভাল বৃষ্টির খবর আসছে। কিন্তু পাশাপাশি বন্যার খবরও আসছে। অতিবৃষ্টি এবং বন্যার ফলে যে সব পরিবার তাঁদের স্বজনদের হারিয়েছেন, যাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তাঁদের সবার পাশে দেশ পূর্ণ প্রাণশক্তি নিয়ে তাঁদের সাহায্যে দাঁড়িয়ে আছে। আর যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁদের দুঃখের আমি সহমর্মী।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, পরবর্তী বৈশাখীতে আমাদের জালিয়ানওয়ালা বাগের সেই গণহত্যার শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য কিভাবে জীবন বাজি রেখেছিলেন আর অত্যাচারের মাত্রা কতটা বেড়ে গিয়েছিল।  জালিয়ানওয়ালা বাগ আমাদের দেশের সেই বীরেদের ত্যাগ আর বলিদানের বার্তা দেয়। আমি সেই সব বীরেদের হৃদয় থেকে, সম্মানের সঙ্গে তাঁদের নমস্কার করছি।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতা এমনিতে এসে যায়নি। পূজনীয় বাপুর নেতৃত্বে মহাপুরুষ, অনেক বীর পুরুষ, বিপ্লবীদের নেতৃত্বে অনেক যুবক সত্যাগ্রহ পালনকারী অনেক তরুণ তাঁদের যৌবন কারাগারেই কাটিয়রে দিয়েছেন। দেশকে স্বাধীন করেছেন, কিন্তু স্বাধীনতার এই সংগ্রামে নিজেদের স্বপ্নকে স্থান দেননি। ভারতের সুন্দর রূপই তাঁরা তাঁদের অন্তরে স্থান দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার বহু বছর আগে তামিলনাড়ুতে রাষ্ট্রকবি সুব্রহ্মণ্যম ভারতী নিজের স্বপ্নকে শব্দে সাজিয়েছিলেন। উনি লিখেছিলেন- (এলারুম অমরনিলিই এডুমনন India অলিগিরি কু অলিকুম India উলাগিরি কু অলিকুম)

 

আর উনি লিখেছেন,

এলারুম অমরনিলিই এডুমনন

ইন্ডিয়া অলিগিরি কু অলিকুম

ইন্ডিয়া কুলাগিরি কু অলিকুম

 

অর্থাৎ, ভারত তাঁর স্বাধীনতার পর কি স্বপ্ন দেখেছিল? সুব্রহ্মণ্যম ভারতী বলেছেন, ভারত সারা পৃথিবীর সব দিকের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য পথ দেখাবে।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, এই মহাপুরুষদের স্বপ্নকে পূর্ণ করার জন্য, স্বাধীনতার সেনানীদের ইচ্ছাকে পূরণ করার জন্য, দেশের কোটি কোটি জনতার আশা-আকাঙ্খাকে পূর্ণ করার জন্য স্বাধীনতার পর পূজনীয় বাবা সাহেব আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারত এক সমতার সংবিধান তৈরি করেছিলেন। এই সমতার সংবিধান এক নতুন ভারত নির্মাণের সংকল্প নিয়ে এসেছিল। আমাদের জন্য কিছু দায়দায়িত্ব নিয়ে এসেছিল। আমাদের জন্য সীমারেখা নির্ধারণ করে এসেছিল। আমাদের স্বপ্নগুলি পূরণ করার জন্য সমাজের প্রত্যেক বর্গকে সমস্ত স্তরকে, ভারতের প্রত্যেক সমানভাবে সুযোগ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, আমাদের সংবধান এই জন্য পথনির্দেশ করে চলেছে।

 

আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমাদের সংবিধান আমাদের বলে যে, ভারতের তেরঙ্গার থেকে আমরা প্রেরণা পাই – গরিব মানুষ যেন ন্যায় পান, প্রত্যেক নাগরিক যেন প্রগতির সুযোগ পায়, আমাদের নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত – তাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যেন কোনও বাধা না আসে, সরকারের প্রতিবন্ধকতা না আসে। সমাজ ব্যবস্থা যেন তাঁদের স্বপ্নকে গ্রাস না করে। তাঁরা যেন সর্বাধিক সুযোগ পান। তাঁরা যতটা প্রস্ফূটিত হতে চান, বিকশিত হতে চান, আমরা এক পরিবেশ বানাই।

 

আমাদের প্রবীণরাই হোন, আমাদের দিব্যাঙ্গরাই হোন, আমাদের মেয়েরা হোন, আমাদের দলিত, পীড়িত, আমাদের জঙ্গলে জীবন অতিবাহিত করা আদিবাসী ভাই-বোনই হোন, প্রত্যেকের আশা আর আকাঙ্খা অনুসারে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ যেন থাকে। এক আত্মনির্ভর ভারত হোক, এক সমর্থ ভারত হোক, বিকাশের নিরন্তর গতি বজায় রাখার, লাগাতার নতুন নতুন উচ্চতা পার করার ভারত হোক, পৃথিবীতে ভারতের নামে গর্ব হোক, আর এটুকুই নয়, আমি চাই বিশ্বে ভারতের নামে একটা চমক থাকুক। আমরা এমন একটা ভারত বানাতে চাই।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আগেও Team India-র কল্পনা আপনাদের সামনে পেশ করেছি। যখন সোয়াশো কোটি দেশবাসীর অংশগ্রহণ হয়, প্রত্যেক মানুষ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। সোয়াশো কোটি স্বপ্ন, সোয়াশো কোটির সংকল্প, সোয়াশো কোটির শৌর্য যখন নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে সঠিক দিশায় চলতে শুরু করে তখন কি না হতে পারে?

 

আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমি আজ খুব নম্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে, একথা অবশ্যই বলতে চাই যে, ২০১৪-তে এই দেশের সোয়া কোটি নাগরিক যে একটি সরকার নির্বাচিত করেছিল, তাঁরা শুধু সরকার নির্বাচিত করেই থামেনি। তাঁরা দেশ নির্মাণের জন্য জোটবদ্ধ আছে, জোটবদ্ধ ছিল এবং জোটবদ্ধ থাকবে। আমি বুঝতে পারি, এটাই তো আমাদের দেশের শক্তি। সোয়াশো কোটি দেশবাসী, ভারতের ছয় লাখের বেশি গ্রাম – আজ শ্রী অরবিন্দর জন্মজয়ন্তী। শ্রী অরবিন্দ খুব সঠিক কথা বলেছিলেন। রাষ্ট্র কি, আমাদের মাতৃভূমি কি, এটি কোনও জমির টুকরো নয়, শুধু একটি সম্বোধন নয়, এমনকি এটা কোনও নতুন কল্পনাও নয়। রাষ্ট্র এক বিশাল শক্তি, যা অসংখ্য ছোটো ছোট এককের সংগঠিত শক্তিকে মূর্ত রূপ দেয়। শ্রী অরবিন্দের এই কল্পনাই আজ দেশের প্রত্যেক নাগরিককে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে যুক্ত করছে। কিন্তু আমরা এগিয়ে চলেছি, এটা ততক্ষণ আমরা বুঝতে পারি না, যতক্ষণ না আমরা কোথা থেকে চলা শুরু করেছি, তাঁর দিকে আমরা নজর দেই। কোথা থেকে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম, আমরা যদি সেদিকে না তাকাই, কততা চলেছি, তাঁর সম্ভবত আন্দাজ করতে পারবো না। আর তাই, ২০১৩-তে আমাদের দেশ যে গতিতে চলছিল, জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ২০১৩-তে যে গতি ছিল, সেই ২০১৩-র গতি যদি আমরা ভিত্তি মনে করি, তাহলে গত চার বছরে যে কাজ হয়েছে, সেই কাজের যদি নিরীক্ষা করা যায়, তো আপনি আশ্চর্য হবেন যে দেশের গতি কতটা, গতি কি, প্রগতি কতটা এগিয়ে যাচ্ছে। শৌচালয়ের হিসাবই নিয়ে নিন। শৌচালয় বানানোয় ২০১৩-তে যে গতি ছিল, সেই গতিতে চললে কয়েক দশক পার হয়ে যেত, শৌচালয় ১০০ শতাংশ লক্ষ্যে পৌছতে।

 

আমরা যদি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌছানোর কথাই বলি, যদি ২০১৩-র ভিত্তিতে ভাবি তো গ্রামে বিদ্যুৎ পৌছতে সম্ভবত এক-দুই দশক লেগে যেত। আমরা যদি ২০১৩-র গতি দেখি তো গরিবকে এলপিজি গ্যাস কানেকশন দিতে, গরিব মা কে ধোঁয়ামুক্ত উনুন দিতে, যদি ২০১৩-র গতিতে চলতাম তো সেই কাজ পুরো করতে বোধ হয় ১০০ বছরও কম হয়ে যেত—যদি ২০১৩-র গতিতে আমরা চলতাম। আমরা যদি ১৩-র গতিতে optical fibre network করতাম, optical fibre লাগানোর কাজ করতাম, তো বোধ হয় কয়েক প্রজন্ম লেগে যেত, সেই গতিতে optical fibre ভারতের গ্রামে পৌছানোর জন্য। এই তীব্রতা, এই গতি, এই গ্রগতি, এই লক্ষ্য – তাকে পেতে আমরা এগিয়ে যাব।

 

ভাই-বোনেরা, দেশের প্রত্যাশা অনেক বেশি, দেশের প্রয়োজনও অনেক আর তাকে পুরো করা, সরকার হোক বা সমাজ হোক, রাজ্য সরকার হোক – সবাইকে মিলেমিশে প্রচেষ্টা করা নিরন্তর প্রয়োজন হয়। আর তারই ফলশ্রুতিতে আজ দেশে কিরকম পরিবর্তন এসেছে। দেশ একই আছে, ভূমিও একই আছে, হাওয়াও একই, আকাশও একই, সমুদ্রও একই, সরকারি দপ্তর একই, ফাইলগুলিও একই, নির্ণয় প্রক্রিয়ায় থাকা মানুষগুলিও একই আছে। কিন্তু চার বছরে দেশে পরিবর্তন অনুভব করা যাচ্ছে। দেশ এক নতুন চেতনা, নতুন আশা, নতুন শপথ, নতুন সাধ, নতুন সামর্থ্য, তাকে আগে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর সেই কারণেই দেশ আজ দ্বিগুণ মহাসড়ক বানাচ্ছে। চার গুণ ঘর বানাছে গ্রামীণদের জন্য। দেশ আজ রেকর্ড আনাজ উৎপাদন করছে, আবার দেশ আজ উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মোবাইল ফোনের উৎপাদন করছে। দেশ আজ উল্লেখযোগ্য ট্রাক্টর কিনছে। গ্রামের কিষাণ ট্রাক্টর, উল্লেখযোগ্য ট্রাক্টর কিনছে, আর অন্যদিকে দেশে আজ স্বাধীনতার পর সবথেকে বেশি উড়োজাহাজ কেনার কাজ চলছে। দেশ আজ স্কুলগুলিতে শৌচালয় বানানোর কাজও চলছে, তো দেশে নতুন আইআইএম, নতুন এইম্‌স-এর স্থাপনাও হচ্ছে। দেশে আজ ছোট ছোট জায়গায় দক্ষতা বৃদ্ধি লক্ষে এগিয়ে নিয়ে নতুন নতুন কেন্দ্র খুলছে, আর আমাদের টিয়ার-২, টিয়ার-৩  শহরে স্টার্ট আপের এক বন্যাই এসে গেছে, বাহার এসে গিয়েছে।

 

ভাই ও বোনেরা, আজ গ্রামের পর গ্রাম Digital India নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তো এক সংবেদনশীল সরকার Digital ভারত যাতে হয়, তাঁর জন্য কাজ করছে। অন্যদিকে আমাদের যে দিব্যাঙ্গ ভাইয়েরা আছেন, তাদের জন্য Common Sign, তাঁর Directory বানানোর কাজও ততটাই মন দিয়ে করছে আমাদের দেশ। আমাদের দেশের কিষাণ এই আধুনিকতা, বিজ্ঞান-মনস্কতার দিকে যাওয়ার জন্য Micro-irrigation, Drip-irrigation, sprinkle এর উপর কাজ করছে, তো অন্যদিকে ৯৯টি পুরনো বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকা সেচের বড় বড় প্রজেক্টও চালাচ্ছে। আমাদের দেশের সেনারা কোনও জায়গায় প্রাকৃতিক বিপদ হলে পৌঁছে যান। সঙ্কটে পড়া মানুষকে রক্ষার জন্য আমাদের সেনারা করুণা, মায়া, মমতার সঙ্গে পৌঁছে যান। কিন্তু সেই সেনা যখন শপথ নিয়ে চলতে শুরু করে, তখন Surgical Strike করে শত্রুকে পরাস্ত করে চলে আসে। এই আমাদের দেশের বিকাশের Canvas কত বড়, একদিকে দেখুন, অন্যদিকে দেখুন। দেশ পুরো বিরাট canvas-এ আজ নতুন আশা আর নতুন উৎসাহর সঙ্গে আগে এগোচ্ছে।

 

আমি গুজরাট থেকে এসেছি। গুজরাটে একটি প্রবাদ আছে, ‘নিশানচুক মাফ, লেকিন নেহি মাফ নিচু নিশান’। অর্থাৎ, Aim-টা বড় হওয়া চাই, স্বপ্নটা বড় হতে হবে। তার জন্য পরিশ্রম করতে হবে, জবাব দিতে হয়। কিন্তু যদি লক্ষ্যটা বড় না হয়, লক্ষ্য যদি দূরের দিকে না থাকে, তো সমাধানও হয় না। বিকাশের যাত্রাও আটকে যায়। আর তাই, আমার প্রিয় ভাই বোনেরা, আমাদের জন্য দরকার হল, আমরা লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শপথের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার দিশায় চেষ্টা করি। লক্ষ্য যখন অনির্দিষ্ট থাকে, তখন মানসিক শক্তি উচ্চতা পায় না, তখন সমাজ জীবনের জরুরি সিদ্ধান্তগুলিও বছরে পর বছর আটকে পড়ে থাকে। MSP দেখে নিন. এই দেশের অর্থনীতিবিদরা দাবি করছিলেন, কিষাণ সংগঠন দাবি করছিল, কৃষক চাইছিল, রাজনৈতিক দলগুলি চাইছিল যে, কৃষকের খরচের দেড়গুণ এমএসপি পাওয়া উচিত। বছরের পর বছর আলোচনা চলছিল, ফাইল যাচ্ছিল, আটকেও যাচ্ছিল, ঝুলে থাকছিল, ধুলো জমছিল—কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাহস করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের দেশের কৃষকের দেড় গুণ MSP দেওয়া হবে।

 

GST, কে না সহমত ছিলেন, সবাই চাইছিলেন GST, কিন্তু সিদ্ধান্ত হতে পারছিল না। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের লাভ, লাভহীনতা, রাজনীতি, নির্বাচন – এসবের চাপ চলে আসছিল। আজ আমার দেশেরে ছোট ছোট ব্যবসায়ীর সহায়তায়, নতুনকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাদের স্বাভাবিক খোলা মনোভাবের কারণে আজ দেশে GST চালু হয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক নতুন বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে, ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মধ্যে, ছোট ছোট শিল্পে যুক্ত গোষ্ঠীর মধ্যে, GST-র সাথে শুরুতে সমস্যাবলী আসা সত্ত্বেও, তাকে সাগ্রহে স্বীকার করে নিয়েছে, গ্রহণ করেছে।

 

দেশ আগে এগোচ্ছে। আজ আমাদের দেশের Banking Sector-কে শক্তিশালী বানানোর জন্য Insolvency-র আইন হোক, বা Bankruptcy-র আইন হোক – কে আটকে ছিল আগে? এই জন্য শক্তি লাগে, দম থাকা চাই। বিশ্বাস লাগে, জনতা জনার্দনের প্রতি পূর্ণ সমর্পন লাগে, তবে সিদ্ধান্ত হয়। বেনামী সম্পত্তির আইন কেন লাগতো না। মানসিক শক্তি যখন বেশি থাকে, তখন দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা হয়, তাই বেনামী সম্পত্তি আইনও চালু হয়। আমার দেশের সেনা জওয়ানরা তিন-তিন চার-চার দশক ধরে One rank, One Pension এর জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁরা Discipline  মেনে চলেন বলে আন্দোলন করতেন না, কিন্তু আওয়াজ তুলছিলেন, কেউ শুনছিল না। কেউকে তো সিদ্ধান্ত নিতেই হতো। আমরা সেটি পূর্ণ করেছি।

 

আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমরা কড়া সিদ্দনাত নেওয়ার সামর্থ্য রাখি, কারণ দেশের হিত আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়ো। দলের স্বার্থে কাজ করার লোক আমরা নই আর তাই আমরা সংকল্প নিয়ে আমরা চলা শুরু করেছি।

 

আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমরা একথা কি করে ভুলতে পারবো যে, আজ বিশ্ব আর্থব্যবস্থার এই সময়কালে গোটা দুনিয়া ভারতের প্রতিটি পদক্ষেপ নিজরে রাখছে, আশা-আকাঙ্খা নিয়ে দেখছে। আর তাই, ভারতের ছোট ছোট বিষয়ের, বড় বিষয়েরও বিশ্ব খুব মনযোগ দিয়ে নজর রাখে। আপনি মনে করুন, ২০১৪-র আগে পৃথিবীর গণ্যমাণ্য সংস্থাগুলি, পৃথিবীর গণ্যমাণ্য অর্থনীতিবিদরা, যাদের কথা বিশ্বে স্বীক্ক্রিত বলে ধরে নেওয়া হয়, এমন লোকেরা কখনও আমাদের দেশের প্রসঙ্গে তখন কি বলতেন। সেও এক জমানা ছিল যখন বিশ্বে আওয়াজ উঠতো, বিদ্বানদের আওয়াজ উঠতো যে, ভারতের Economic Risk খুব বেশি। তাঁরা risk দেখতে পেতেন। কিন্তু, আজ সেই লোকেরাই সেই সংস্থাগুলিই, সেই লোকেরাই প্রচুর বিশ্বাসের সঙ্গে বলছেন যে, reform momentum, fundamentals-এর শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। কেমন পরিবর্তন এসেছে? একটা সময় ছিল যখন ঘরের ভিতরে হোক বা ঘরের বাইরে, পৃথিবী একটাই কথা বলত – Red Tape এর কথা বলতো। কিন্তু আজ, Red Carpet-এর কথা হচ্ছে। Ease of doing business –এর ক্ষেত্রে আমরা এখন ১০০-তে পৌঁছে গিয়েছি। আজ গোটা পৃথিবী ভারতের জন্য গর্ব অনুভব করছে। একটা দিন ছিল, যখব বিশ্ব মনে করতো ভারত মানে Policy Paralysis, ভারত মানে Delayed Reform – এসব কথা আমরা শুনতাম। এখনও সংবাদপত্র গণ্য খুঁজলে সেসব দেখতে পাওয়া যাবে। কিন্তু আজ পৃথিবী থেকে একটাই কথা শুনতে পাওয়া যায় যে, reform, perform, transform এর পরে একটি নীতি বিষয়ক সময়বদ্ধ সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা চলছে। সেতাও একটা সময় ছিল, যখন বিশ্ব ভারতকে fragile five-এর মধ্যে গণ্য করতো।বিশ্ব চিন্তিত ছিল যে, বিশ্বকে ডুবিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত তাঁর ভূমিকা পালন করছে। Fragile Five-এর মধ্যে আমাদের গণনা করা হচ্ছিল। কিন্তু আজ পৃথিবী বলছে যে, ভারত multi trillion dollar এর investment এর destination হয়ে গেছে। এখান থেকেই আওয়াজ বদলে গিয়েছে।

 

আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, ভারতকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলার সময়, আমাদের Infrastructure-এর আলোচনা করার সময়, কখনও বিদ্যুৎ চলা যাওয়ায় Blackout হয়ে যেত, সেই সব দিনের কথা স্মরণ করতো, কখনও Bottlenecks-এর বিষয়ে আলোচনা করতো। কিন্তু সেই বিশ্বই, সেই লোকেরাই, সেই বিশ্বের পথনির্দেশ করার লোকেরাই আজকাল বলেন যে, ঘুমিয়ে থাকা হাতি এখন জেগে গিয়েছে, চলতে শুরু করেছে। ঘুমন্ত হাতি এখন দৌড়তে শুরু করেছে। বিশ্বের আর্থ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, international institutions বলছে যে, আগামী তিন দশকে, অর্থাৎ ৩০ বছরের মধ্যে, বিশ্বের আর্থ ব্যবস্থার শক্তিকে ভারত গরি দিতে পারবে। ভারত বিশ্বের বিকাশে এক নতুন স্রোত হয়ে উঠতে চলেছে। এই বিশ্বাস আজ ভারতের নামে তৈরি হয়েছে।

 

আজ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের শৌর্য বেরেছে, নীতি-নির্ধারণ করার যেসব ছোটখাটো সংগঠনে আজ ভারতের স্থান হয়েছে, সেখানে ভারতের কথা শোনা হচ্ছে। ভারত সেখানে দিশা দেওয়ার ক্ষেত্রে, নেতৃত্ব দানে নিজের ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বে মঞ্চে আমরা নিজেদের কণ্টস্বর জোরদার করছি।

 

 

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, বহু বছর ধরে যেসব সংস্থায় আমাদের সদস্যপদের জন্য অপেক্ষা ছিল, আজ দেশকে বিশ্বের অগুন্তি সংস্থার মধ্যে আমাদের স্থান হয়েছে। ভারত আজ পরিবেশ নিয়ে ভাবনার দেশগুলির মধ্যে global warming নিয়ে সমস্যার বিষয়ে আলোচকদের মধ্যে, ভারত আজ আশার কিরণ হয়ে উঠেছে।  আজ ভারত International Solar Alliance-এ গোটা বিশ্বকে নেতৃত্ব করছে। আজ যে কোনও ভারতবাসী, পৃথিবীর যেখানেই পা রাখুক, বিশ্বের সব দেশ তাকে স্বাগত জানানোর জন্য লালায়িত। তাদের নজরে এক চেতনা এসে যায় ভারতকে দেখে। ভারতের Passport এর ক্ষমতা বেড়ে গেছে। এতে প্রত্যেক ভারতীয়ের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, এক নতুন শক্তি, নতুন প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প জন্ম দিতে পেরেছে।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশ্বের কোনও জায়গায় যদি কোনও ভারতীয় সমস্যায় থাকে, তো আজ তার ভরসা আছে যে, দেশ আমার পিছনে থাকবে, আমার দেশ সঙ্কটে আমার সাথে আসবে। আর ইতিহাস সাক্ষী আছে অতীতের অনেক ঘটনার, যেগুলির কারণ আপনারা দেখেছেন।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশ্ব যেমন ভারতের দিকে দেখার ভঙ্গী বদলেছে, তেমনই ভারতে North East এর বিষয়ে – যখনই কখনও North East- এর বিষয়ে চর্চা হতো, তো কি খব্র আসতো। সেই খবরগুলি যেগুলি মনে হতো, এই খবরগুলি না এলেই ভালো হতো। কিন্তু আজ, আমার ভাই-বোনেরা, North-East একপ্রকার সেই খবরগুলিই নিয়ে আসছে, যা দেশকে আরও বেশি প্রেরনা দিচ্ছে। আজ ক্রীড়া জগতে দেখুন, আমাদের North-East-এর ঔজ্জ্বল্য কেমন দেখা যাচ্ছে।

 

আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা, আজ North-East থেকে খবর আসছে যে শেষ গ্রামেও বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে , আর গ্রামবাসীরা আনন্দে সারারাত নাচগান করেছে। আজ North-East থেকে এধরণের খবর আসছে।আজ North-East এ highways, railways, airways, waterways এবং information ways (i-way)স্থাপনের খবর আসছে। আজ বিদ্যুতের transmission line লাগানোর কাজ অনেক দ্রুত North-East এ এগিয়ে চলেছে। North-East এর নবীনরা সেখানে BPO খুলছেন। আজ আমাদের নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে।আজ আমাদের North-East organic farming এর hub হয়ে উঠছে। আজ আমাদের মণিপুরে North-East sports university প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

ভাই ও বোনেরা, একটা সময় ছিল যখন North east-কে মনে হতো, দিল্লির থেকে অনেক দূর। আমরা চার বছরের মধ্যে মধ্যে দিল্লিকে North-East এর দরজায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি।

 

ভাই বোনেরা, আজ আমাদের দেশ ৬৫ শতাংশ জনসংখ্যা ৩৫ বছরের মধ্যে। দেশের তরুণদের জন্য আমরা গর্ব করছি। দেশের নবযৌবন নতুন প্রজন্মের জন্য গর্ব করছে। আমাদের দেশের তরুণরা আজ অর্থের সব মাণদণ্ড বদলে দিয়েছে। প্রগতির সব মানদণ্ডতে একটি নতুন রঙ ভরে দিয়েছে। কখনও বড় শহরের কথা আলচিত হতো। আজ আমাদের দেশ Tier 2, Tier 3 City-র কথা বলে। কখনও গ্রামের ভিতরে গিয়ে আধুনিক চাষে নিযুক্ত তরুণদের কথা আলোচনা করছে। আমাদের দেশের তরুণেরা Nature of job কে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। Startup হোক, BPO হোক, e-commerce হোক, mobility-র ক্ষেত্র হোক, এমন নতুন ক্ষেত্রগুলিকে আজ দেশের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের বুকে বেঁধে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার দিকে প্রয়াসী হয়েছে।

 

আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, ১৩ কোটি MUDRA LOAN, অবশ্যই বিরাট একটা ব্যাপার। ১৩ কোটির মধ্যে ৪ কোটি তো তাঁরা, যারা নবযুবক। যারা জীবনে প্রথম বার কোনও জায়গা থেকে লোন নিয়েছেন, আর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বরোজগারে আগে এগোচ্ছেন। এরা নিজেরাই আপনা পাওনি বদলে যাওয়া বাতাবরণের জীবন্ত উদাহরণ। আজ ভারতের গ্রামে, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, ভারতের অর্ধেকের বেশি তিন লাখ গ্রামে, COMMON SERVICE CENTRE আমার দেশের যুবক ছেলে মেয়েদের চালাচ্ছে। তাঁরা প্রত্যেক গ্রামকে, প্রত্যেক নাগরিককে, চোখের পলক ফেলার আগেই বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য Information Technology-কে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করছে।

 

আমার ভাই-বোনেরা, আজা আমার দেশে Infrastructure নতুন চেহারা নিয়ে নিয়েছে। রেলের গতিই হোক, রাস্তার গতিই হোক, i-way হোক, নতুন airport হোক, এক অর্থে, আমার দেশ দারুণ তেজ গতিতে আগে এগিয়ে চলেছে।

 

ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরাও দেশের নাম উজ্জ্বল করতে কখনও পিছিয়ে থাকেনি। বিশ্বের প্রেক্ষিতেই হোক, আর ভারতের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতেই হোক, সব ভারতবাসী গর্ব অনুভব করেছেন, যখন দেশের বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে একশোরও বেশি স্যাটেলাইট আকাশে পাঠিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। এই ক্ষমতা আমাদের বিজ্ঞানীদের রয়েছে। আমাদের বিজ্ঞানীদের সামর্থ্য প্রকাশ পেয়েছিল প্রথম প্রয়াসেই মঙ্গলযানের উৎক্ষেপন সাফল্যে। মঙ্গলযান মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে, ওখানে পৌছেছে, এটাই আমাদের বিজ্ঞানীদের উৎকর্ষ ছিল। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আমরা আমাদের বিজ্ঞানীদের কল্পনা ও ভাবনার শক্তিতে ‘নাবিক’ লঞ্চ করতে যাচ্ছি। দেশের মৎস্যজীবীদের, সাধারণ নাগরিকদের পথ দেখাবে। এই বৃহৎ কাজটি কিছুদিনের মধ্যেই নাবিকের সাহায্যে করতে চলেছি।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ এই লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমি দেশবাসীকে খুশির খবর শোনাতে চাই। আমাদের দেশ মহাকাশ গবেষণায় উন্নতি করেছে। কিন্তু আমরা স্বপ্ন দেখছি, আমাদের বিজ্ঞানীরা স্বপ্ন দেখছেন, আমাদের দেশ এই সংকল নিয়েছে যে, ২০২২ সালে, যখন স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্ণ হবে, তখন বা সম্ভব হলে তার আগে, স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ উদযাপন করবো যখন, ভারতমাতার কোনও সন্তান, কন্যা হোক বা পুত্র, যে কেউ হতে পারে, সে মহাকাশে যাবে। হাতে তিরঙ্গা পতাকা নিয়ে যাবে। স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তির আগে এই স্বপ্ন সফল করতে হবে। মঙ্গলযানের সময় ভারতের বিজ্ঞানীরা শক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন। এখন আমরা মানুষ-সহ মহাকাশ যান নিয়ে চলবো এবং এই যান যখন মহাকাশে যাবে, তখন কোনও ভারতীয়কে নিয়ে যাবে। এই কাজ ভারতীয় বিজ্ঞানীদের দ্বারাই হবে। ভারতের শৌর্য দ্বারাই পূর্ণ হবে। তখন আমরা হবো বিশ্বে চতুর্থ দেশ, যে দেশ মানুষকে মহাকাশে পাঠাতে পেরেছে।

 

ভাই ও বোনেরা, আমি দেশের বিজ্ঞানীদের দেশের Technician-দের আমার মন থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই মহৎ কাজের জন্য।

 

ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশের খাদ্যশষ্য ভাণ্ডার আজ পূর্ণ হয়ে আছে। বিশাল পরিমাণ খাদ্যশষয় উৎপাদনের জন্য আমি দেশের কৃষকদের, ক্ষেতমজুরদের, কৃষিক্ষেত্রে কর্মরত বিজ্ঞানীদের দেশে কৃষি বিপ্লবকে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

 

কিন্তু ভাই ও বোনেরা, এখন সময় বদলে গেছে। আমাদের কৃষকদেরও, আমাদের কৃষি বাজারেরও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। জনসংখ্যা বাড়ছে, কৃষিজমি কমছে, আমাদের কৃষির আধুনিকীকরণ, বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ, টেকনোলজি নির্ভরতাকে বাড়ানো – এটা সময়ের দাবি। এবং এই জন্যই আজামাদের সম্পূর্ণ দৃষ্টি কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রয়োগের উপর নিবদ্ধ আছে।

 

আমরা স্বপ্ন দেখছি কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার। স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্ণ হবে, কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার স্বপ্ন দেখছি। যাদের এটা নিয়ে সংশয় রয়েছে – যা স্বাভাবিক – কিন্তু আমরা লক্ষ্য নিয়েই চলেছি এবং আমরা মাখনে দাগ কাটার স্বভাবের নই। আমরা পাথরে দাগ কাটার মতো মানসিকতার লোক। মাখনে দাগ তো যে কেউ কাটতে পারে। কিন্তু, পাথরে দাগ কাটতে হলে ঘাম ঝরাতে হয়, পরিকল্পনা বানাতে হয়, মন প্রাণ এক করতে হয়। এই জন্য যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হবে, তখন পর্যন্ত, দেশের কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করে, কৃষির ফলককে চওড়া করতে করতে আজ আমরা চলতে চাই। বীজ থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত আমরা Value Addition করতে চাই। আমরা আধুনিকীকরণ চাই, এবং কিছু নতুন ফসলের record  উৎপাদন হয়ে চলেছে। এটা এই প্রথমবার আমরা দেশে Agriculture Export Policy রূপায়নে এগিয়ে চলেছি, যাতে আমাদের দেশের কৃষকরাও বিশ্ববাজারে শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে পারে।

 

আজ নতুন কৃষি বিপ্লব, Organic Farming, Blue Revolution, Sweet revolution, Solar Farming—এই নতুন দিগন্ত খুলে গেছে। এইসব নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

 

আমাদের সুখের কথা যে, আজ আমাদের দেশ বিশ্বের মধ্যে মৎস্য উৎপাদনে Second Highest হয়ে গেছে এবং দেখতে দেখতে দেশ প্রথম স্থানেও পৌঁছে যাবে। আজ Honey মানে মধুর Export দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আজ আখ চাষীদের জন্য সুখবর, আমাদের ইথানল উতপাদন তিনগুন হয়ে গেছে। গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থায় যতটুকু কৃষির ভূমিকা রয়েছে, ততটুকু অন্য ব্যবসারও আছে। আর এই জন্য আমরা Women Self-Help Group-এর দ্বারা লক্ষ কোটি টাকার মাধ্যমে গ্রামীণ সংস্থাকে নিয়ে গ্রামের সামর্থ্যকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এবং এই জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।

 

খাদিপূজ্য বাপুর নাম এর সঙ্গে জুড়ে আছে। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত খাদি বিক্রির যে ইতিহাস ছিল, আমি বিনম্রভাবে বলছি, খাদি বিক্রি আজ দ্বিগুণ হয়েছে। গরিব মানুষের হাতে রুটিরুজি পৌছেছে।

 

ভাই বোনেরা, আমাদের দেশের কৃষকরা এখন Solar Farming-এ জোর দিচ্ছেন। ক্ষেতে কাজ করা ছাড়া অন্য সময় তাঁরা সোলার ফারমিং-এর দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় করতে পারেন। আমাদের যারা চড়কা চালান, হ্যান্ডলুম জগতের মানুষ, তাঁরাও আজ রোজগার বাড়াচ্ছেন।

 

আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশের আর্থিক বিকাশ হোক, আর্থিক সমৃদ্ধি হোক, কিন্তু এই সব কিছুর পরও মানুষের গরিমা, এটা কিন্তু সুপ্রিম। মানুষের মর্যাদা ছাড়া দেশ বাঁচতে পারেনা, ভারসাম্য বজায় রেখে এগুতে পারে না, চলতে পারেনা। এইজন্য ব্যক্তির মর্যাদা, ব্যক্তির সম্মান, আমাদের এই পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে যাতে তাঁরা সসম্মানে জীবন কাটাতে পারেন, গর্ব নিয়ে বাঁচতে পারেন। নীতি এমন হোক, রীতি এমন হোক, মানসিকতা এমন হোক যাতে সাধারণ মানুষ, গরিবের থেকে গরিব মানুষও সবার সামনে নিজেকে সমমর্যাদায় দেখার সুযোগ পায়।

 

সেজন্যে উজ্জ্বলা যোজনায় আমরা দরিদ্রের ঘরে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার কাজটা করেছি। সৌভাগ্য যোজনায় দরিদ্র মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ‘শ্রমেব জয়তে’-কে শক্তিশালী করে আমরা এগিয়ে চলেছি।

 

গতকালই আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ শুনেছি। তিনি বিস্তারিতভাবে গ্রাম স্বরাজ অভিযানের বর্ণনা দিয়েছেন। যখনই সরকারের কথা হয়, তখন এটা বলা হয়, নীতি তো তৈরি হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয় না। কাল রাষ্ট্রপতি খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যাশী জেলাগুলি ৬৫ হাজার গ্রামে দিল্লি থেকে শুরু করা যোজনা গরিবের ঘরে ঘরে পিছিয়ে পড়া গ্রামে পৌঁছে গেছে, কাজ হয়েছে।

 

প্রিয় দেশবাসী, ২০১৪ সালে এই লাল কেল্লার প্রাকার থেকে যখন আমি স্বচ্ছতার কথা বলেছিলাম, তখন কিছু মানুষ এই নিয়ে পরিহাস করেছিলেন, বিদ্রুপ করেছিলেন। কিছু মানুষ এমনও বলেছিলেন যে, সরকারের হাতে অনেক কাজ রয়েছে, স্বচ্ছতার মতো বিষয় নিয়ে কেন শক্তিক্ষয় করছি। কিন্তু প্রিয় ভাইবোনেরা, সম্প্রতি WHO-র রিপোর্ট এসেছে। এবং WHO বলছে, স্বচ্ছতা অভিযানের জন্য ভারতে তিন লক্ষ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এমন কোনও ভারতীয় কি আছেন, যিনি এই স্বচ্ছতায় অংশ নিয়ে তিন লক্ষ শিশুর জীবন রক্ষার পূণ্য কর্মে সামিল হননি। তিন লক্ষ গরিব শিশুর জীবন রক্ষা কতটা মানবিক কাজ। বিশ্বের নানা সংস্থা এটাকে recognise করেছে।

 

ভাই বোনেরা, আগামী বছর মহাত্মা গান্ধির ১৫০ তম জন্মজয়ন্তীর বছর। পূজনীয় বাপু নিজের জীবনে স্বাধীনতার চাইতে বেশি গুরুত্ব স্বচ্ছতাকে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতা আসবে সত্যাগ্রহীদের দ্বারা আর স্বচ্ছতা আসবে স্বচ্ছাগ্রহীদের দ্বারা। গান্ধীজী সত্যাগ্রহী তৈরি করেছিলেন এবং গান্ধীজীর অনুপ্রেরণায় স্বচ্ছাগ্রহী তৈরি হয়েছিল। সামনে ১৫০ তম জন্মজয়ন্তী যখন উদযাপন করবো, তখন এই দেশ পূজনীয় বাপুর স্বচ্ছ ভারতের রূপে, এই আমাদের কোটি কোটি স্বচ্ছাগ্রহী পূজনীয় বাপুকে কাজের দ্বারা অঞ্জলি দেবে। এবং আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে চলেছি, সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপ নেবে।

 

 

আমার ভাই বোনেরা, এটা সত্য, যে স্বচ্ছতা তিন লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। কিন্তু যতই মধ্যবিত্ত সুখী পরিবার হোক না কেন, ভাল আয় করছে এমন ব্যক্তি হোক না কেন, গরিবই হোক না কেন, একবার রোগ যদি ঘরে ঢোকে, শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো পরিবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। কখনও প্রজন্মের পর প্রজন্ম রোগের খপ্পরে ফেঁসে যায়।

 

দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষ, সাধারণ মানুষের রোগমুক্তির সুযোগ যাতে মেলে, এইজন্য কঠিন অসুখে বড় বড় হাসপাতালে সাধারণ মানুষরাও চিকিৎসার সুযোগ যাতে পান, বিনামূল্যে পান, এইজন্য ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রী জন-আরোগ্য অভিযান আরম্ভ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ‘জন-আরোগ্য যোজনা’র অধীনে, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ যোজনার অধীনে এই দেশের দশ কোটি পরিবার, এটা প্রথম পর্যায়ে, আগমী দিনে নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্তদেরও এর সুবিধা মিলবে। এইজন্য দশ কোটি পরিবার, মানে প্রায় ৫০ কোটি নাগরিকের সব পরিবারকে বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাকার Health Assurance দেওয়ার যোজনা এটা। এটা আমরা দেশকে সমর্পন করছি, এটা Technology-driven ব্যবস্থা। Transparancy এর শক্তি। কোনও সাধারণ মানুষরও এর সুবিধা নিতে বেগ পেতে হবে না, বাধা হবে না। এতে Technology Intervention খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য Technology-কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

 

১৫ আগস্ট থেকে ৪-৫-৬ সপ্তাহের মধ্যে দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে এই Technology-র টেস্টিং শুরু হচ্ছে এবং একে Full-Proof বানানোর জন্য চেষ্টা চলছে। এই দুজনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২৫ সেপ্টেম্বর পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তীতে, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তীতে, সারা দেশে জন-আরোগ্য যোজনা শুরু করে দেওয়া হবে এবং এর ফলে দেশের দরিদ্র মানুষকে আর রোগের সংকটে বিপর্যস্ত হতে হবে না। মানুষকে সুদখোরের কাছ থেকে চড়া সুদে ধার করতে হবে না। তাদের পরিবারের সর্বনাশ হবে না। আর দেশেও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির জন্য, নবীন প্রজন্মের জন্য, নিরাময়ের নতুন সুযোগ খুলবে। Tier-2, Tier-3 city-গুলিতে নতুন হাসপাতাল খুলবে। অনেক বেশি সংখ্যায় Medical Staff প্রয়োজন হবে। অনেক বড় কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।

 

ভাই ও বোনেরা, কোনও গরিব দারিদ্র্য নিয়ে বাঁচতে চান না। কোনও গরিব দারিদ্র্যে মরতে চান না। কোনও গরিব নিজের সন্তানদের উত্তরাধিকার রূপে দারিদ্র্য দিয়ে যেতে চান না। তিনি ছটফট করতে থাকেন সারা জীবন ধরে দারিদ্র্য থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য। আর এই সংকট থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য গরিবের ক্ষমতায়নের এটাই উপায়। আমরা বিগত চার বছরে গরিবদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জোর দিয়েছি। আমাদের চেষ্টা ছিল, গরিবের ক্ষমতায়ন হোক। আর সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি খুব ভালো রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে, বিগত দু বছরে ভারতে পাঁচ কোটি গরিব দারিদ্র্যসীমার উর্ধে উঠে এসেছে।

 

ভাই ও বোনেরা, যখন দরিদ্রদের ক্ষমতায়নের কাজ করি, আর যখন আমি আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে কথা বলি, ১০ কোটি পরিবার অর্থাৎ ৫০ কোটি জনসংখ্যা। অনেক কম মানুষের ধারণা নেই যে এটি কত বড় প্রকল্প। আমি যদি আমেরিকা, কানাডা আর মেক্সিকোর জনসংখ্যাকে জুড়ি, তাহলে প্রায় সমপরিমাণ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে উপকৃত হবে।

 

ভাই ও বোনেরা, গরিবদের ক্ষমতায়নের জন্য আমরা অনেক প্রকল্প গড়েছি। প্রকল্প তো রচিত হয়, কিন্তু দালালরা, কটকী কোম্পনি, তা থেকে সব খেয়ে নেয়। গরিব তাঁর অধিকার পায় না। রাজকোষ থেকে টাকা যায়, প্রকল্প কাগজে দেখা যায়, দেশ লুঠ হয়ে চলে। সরকার চোখ বন্ধ করে বসতে পারে না, আর আমি তো কখনই বসতে পারি না।

 

আর সেজন্য ভাই ও বোনেরা, আমাদের ব্যবস্থায় উৎপন্ন বিকৃতিগুলিকে উৎখাত করে দেশের সাধারণ মানুষের মনে আস্থার সঞ্চার করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর এই দায়িত্ব রাজ্য হোক, কেন্দ্র হোক, স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসনাধীন সংস্থা হোক, আমাদের মিলেমিশে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। আপনারা শুনে অবাক হবেন, যখন থেকে আমরা এই সাফাই অভিযান শুরু করেছি, লিকেজ বন্ধ করতে শুরু করেছি, অনেক রান্নার গ্যাসের সংযোগের জন্য প্রত্যাশী, ডুপলিকেট গ্যাস কানেকশন-এর প্রত্যাশী, অনেক পেনশনের প্রত্যাশী, এরকম অনেকে উপকৃত হতেন কিন্তু ৬ কোটি উপকৃত এমন ছিলেন, যাঁরা কখনও জন্মই নেননি, যাঁদের কোনও অস্থিত্বই নেই, কিন্তু তাঁদের নামে টাকা যেত। এই ৬ কোটি নাম চিহ্নিত করা কত বড় কঠিন কাজ ছিল, কতজনকে আপ্রাণ খাটতে হয়েছে। যে মানুষের জন্ম হয়নি, যে মানুষ পৃথিবীতে নেই – তেমন ভুয়ো নাম লিখে টাকা মেরে দেওয়া হ’ত। এই সরকার এগুলিকে রুখেছে। দুর্নীতি, কালো টাকা এসব কারবার বন্ধ করার লক্ষ্যে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।

 

ভাই ও বোনেরা, আর এর ফল কি হয়েছে। প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা, এটা অল্প টাকা নয়, ৯০ হাজার কোটি টাকা যা ভুল লোকেরদের হাতে অন্যায়ভাবে, ভুল পদ্ধতিতে চলে যেত, তা আজ দেশের রাজকোষে সাশ্রয় হয়েছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কাজে ব্যয় হচ্ছে।

 

ভাই ও বোনেরা, এরকম কেন হয়? এই দেশ গরিবের গরিমা রক্ষায় কাজ করার দেশ। আমাদের দেশের গরিব সসম্মানে বাঁচবে, সে জন্য কাজ করতে হবে। কিন্তু এই দালালরা কি করতো? আপনারা জানেন, যে বাজারে গমের দাম ২৪/২৫ টাকা, যেখানে রেশন কার্ডে সরকার সেই গম ২৪/২৫ টাকায় কিনে শুধু দু টাকায় গরিবদের পৌঁছে দেয়। চালের বাজার দাম ৩০/৩২ টাকা, কিন্তু গরিবদের চাল দেওয়ার জন্য সরকার ৩০/৩২ তাকায় কিনে ৩ টাকায় রেশন কার্ডে গরিবদের পৌঁছায়। অর্থাৎ এক কেজি গম এক্সযদি কেউ ভুল নামে চুরি করে তাহলে সে ২০/২৫ টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। এক কেজি চাল চুরি করলে ৩০/৩৫ টাকা এমনি হাতে পেয়ে যায়। আর সেজন্য ভুতুড়ে নামে কারবার চলতো। আর যখন গরীব রেশন দোকানে যেত, ওরা বলে দিত যে রেশন শেষ হয়ে গেছে। রেশন সেখান থেকে বের করে অন্য দোকানে চলে যেত আর দু-টাকায় পাওয়া গম গরিবকে ২০ টাকা ২৫ টাকায় কিনতে হতো। তাঁর অধিকার কেড়ে নেওয়া হতো, ভাই বোনেরা। আর সেইজন্য এই ভুয়ো কারবার এখন বন্ধ করেছি আর তাকে থামিয়েছি।

 

ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশের কোটি কোটি গরিবের যাতে দু-টাকায় তিন টাকায় খাবার পায়, সরকার তাঁর জন্য অনেক বড় অর্থ খরচ করছে। কিন্তু তাঁর সুনাম সরকার পায় না। আমি আজ বিশেষ করে দেশের সৎ করদাতাদের বলতে চাই যে, আজ দুপুরে আপনারা যখন খাবার খাবেন, এক মূহুর্তের জন্য পরিবারের সঙ্গে বসে আমার কথাগুলি মনে করবেন। আমি আজ সৎ করদাতাদের হৃদয়কে ছুঁতে চাই। তাদের মনের মন্দিরে প্রণাম করতে যাচ্ছি আমি। আমার দেশবাসী, যারা সৎ করদাতা, যিনি ট্যাক্স দেন, আমি আপনাকে এই বিশ্বাস দিতে চাই যে, যে সৎ করদাতা কর দেন, সেই পয়সা দিয়েই এইসব যোজনা চলে। এই যোজনাগুলির পূণ্য যদি কারোর প্রাপ্য হয়, সেটা সরকারের নয়, আমার সৎ করদাতাদের প্রাপ্য, ট্যাক্সদাতাদের পাওয়া উচিত। আর সেইজন্য, যখন আপনি খেতে বসেন, আপনি বিশ্বাস করুন, আপনার কর দানের সৎ প্রক্রিয়ার পরিণাম হল, যখন আপনি খাছেন, তখন তিনটি গরিব পরিবারও খাচ্ছে এবং তাঁর পূণ্য সৎ করদাতাই পান আর গরিবের পেট ভরে।

 

বন্ধুরা, দেশে কর না দেওয়ার একটা বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু যখন করদাতা বুঝে যান যে তাঁর করের বিনিময়েই, ট্যাক্সের বিনিময়েই, তা তিনি ঘরেই থাকুন বা এয়ার কন্ডিশন্ড কামরাতেই থাকুন, তাঁর করের পয়সাতেই তিনটি গরিব পরিবার সেই সময় পেট ভরতে পারছেন। এর থেকে বড় সন্তোষ জীবনে কী হতে পারে! এর থেকে বেশি মনের পূণ্য আর কি আছে।

 

ভাই ও বোনেরা, আজ দেশ সততার উৎসব নিয়ে আগে এগোচ্ছে। আর সততার উৎসব নিয়েই চলছে। দেশে ২০১৩ পর্যন্ত, অর্থাৎ আগের ৭০ বছরে আমাদের গতিবিধির পরিণাম ছিল, দেশে প্রত্যক্ষ কর দাতা ছিলেন চার কোটি। কিন্তু, ভাই ও বোনেরা, আজ এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে পৌনে সাত কোটি হয়েছে।

 

আর সেজন্য ভাই ও বোনেরা, আমাদের ব্যবস্থায় উৎপন্ন বিকৃতিগুলিকে উৎখাত করে দেশের সাধারণ মানুষের মনে আস্থার সঞ্চার করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর এই দায়িত্ব রাজ্য হোক, কেন্দ্র হোক, স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসনাধীন সংস্থা হোক, আমাদের মিলেমিশে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। আপনারা শুনে অবাক হবেন, যখন থেকে আমরা এই সাফাই অভিযান শুরু করেছি, লিকেজ বন্ধ করতে শুরু করেছি, অনেক রান্নার গ্যাসের সংযোগের জন্য প্রত্যাশী, ডুপলিকেট গ্যাস কানেকশন-এর প্রত্যাশী, অনেক পেনশনের প্রত্যাশী, এরকম অনেকে উপকৃত হতেন কিন্তু ৬ কোটি উপকৃত এমন ছিলেন, যাঁরা কখনও জন্মই নেননি, যাঁদের কোনও অস্থিত্বই নেই, কিন্তু তাঁদের নামে টাকা যেত। এই ৬ কোটি নাম চিহ্নিত করা কত বড় কঠিন কাজ ছিল, কতজনকে আপ্রাণ খাটতে হয়েছে। যে মানুষের জন্ম হয়নি, যে মানুষ পৃথিবীতে নেই – তেমন ভুয়ো নাম লিখে টাকা মেরে দেওয়া হ’ত।

 

কোথায় তিন, সাড়ে তিন, পৌনে চার কোটি আর কোথায় পৌনে সাত কোটি – এটাই সততার জলজ্যান্ত উদাহরণ। দেশ সততার পথে এগিয়ে চলছে – এটাই তার প্রমাণ। ৭০ বছর ধরে আমাদের দেশে যতজন অপ্রত্যক্ষ কর, ৭০ বছরে আমাদের দেশে যত পরোক্ষ কর প্রদানকারী যুক্ত হয়েছিলেন ৭০ বছরে ৭০ লক্ষের পরিসংখ্যানে পৌঁছেছিলেন। ৭০ বছরে ৭০ লক্ষ, কিন্তু শুধু জিএসটি কার্যকর হওয়ার পর গত এক বছরে এই ৭০ লক্ষের পরিসংখ্যান ১ কোটি ১৬ লক্ষে পৌঁছে গেছে। ভাই ও বোনেরা, আমার দেশের প্রত্যেক ব্যক্তি আজ সততার উৎসবে এগিয়ে আসছেন। যাঁরাই এগিয়ে আসছেন, তাঁদের আমি স্বাগত জানাই। যাঁরা এগিয়ে যেতে চাইছেন, তাঁদের আমি আশ্বস্ত করতে চাই, এখন দেশ সমস্যাগুলি থেকে মুক্ত, গর্বপূর্ণ করদাতাদের জীবন গঠন করার জন্য দায়বদ্ধ। আমি করদাতাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা দেশ নির্মাণে অংশগ্রহণ করছেন, আপনাদের সমস্যাগুলি আমাদের সমস্যা, আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, কারণ আপনাদের যোগদানের মাধ্যমে আমাদের দেশকে এগিয়ে যেতে হবে, আর সেজন্য ভাই ও বোনেরা, আমরা কালো টাকা ও দুর্নীতিকে ক্ষমা করব না।

 

যতই বাধা আসুক না কেন, আমি এই পথ ছাড়বো না, দেশবাসী, কারণ দেশকে এই অসুখকে ঘুণের মতো ঝুরঝুরে করে দিয়েছে। আজ সেজন্য আমাদের এবং আপনারা দেখেছেন হয়তো, দিল্লির অলিগলিতে পাওয়ার ব্রোকারদের আর দেখা যায় না। দিল্লিতে এখন যদি কোনও প্রতিধ্বনি শোনা যায়, তা হলে গরিবের আওয়াজের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। ভাই ও বোনেরা, এখন সময় বদলে গেছে।

 

আমরা আমাদের দেশে, অনেকে বাড়িতে বসেই বলতেন, আরে সরকারের অমুক নীতি বদলে দেব, অমুক কাজ করে দেব, তমুক কাজ করে দেব; তাদের সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।

 

ভাই ও বোনেরা,

ভাই-ভাতিজাবাদ তো আমরা সমাপ্ত করে দিয়েছি, স্বজন-পোষণের পরম্পরা আমরা শেষ করে দিয়েছি। ঘুষ গ্রহণকারীদের জন্য আইন কঠোর হচ্ছে, প্রায় ৩ লক্ষ…… এই পরিসংখ্যান ছোট নয়, প্রায় ৩ লক্ষ সন্দেহজনক কোম্পানিতে তালা ঝুলছে, তাঁদের ডাইরেক্টরদের গতিবিধি নজর রাখা হচ্ছে। ভাই ও বোনেরা।

 

আর আজ আমরা প্রক্রিয়াগুলিতে স্বচ্ছতা আনতে অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করেছি। আমরা তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগ করেছি। আর তার পরিণাম-স্বরূপ, আজ পরিবেশ………

 

একটা সময় ছিল যখন পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র পেতে দুর্নীতির পাহাড়ে চড়তে হ’ত, তবে গিয়ে পাওয়া যেত।

 

ভাই ও বোনেরা,

আমরা একে স্বচ্ছ করে তুলেছি, অনলাইন করে দিয়েছি। যে কোনও ব্যক্তি একে দেখতে পারে এবং ভারতের সম্পদের সঠিক ব্যবহার হোক – এই বিষয়ে কাজ করতে পারেন।

 

 

 

ভাই ও বোনেরা, আজ আমাদের গর্বের বিষয় হ’ল যে আজ আমাদের দেশের সুপ্রিম কোর্টে তিন মহিলা বিচারক বসে আছেন। ভারতের যে কোনও নারী গর্ব করতে পারেন। যে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে তিন জন মহিলা বিচারপতি ন্যায়-বিচার করছেন। ভাই ও বোনেরা, আমার গর্ব হয় যে, স্বাধীনতার পর এটাই প্রথম মন্ত্রিসভা যেখানে সবচেয়ে বেশি মহিলা স্থান পেয়েছেন। ভাই ও বোনেরা, আমি আজ এই মঞ্চ থেকে আমার কিছু কন্যাকে, বাহাদুর মেয়েদের একটি সুখবর দিতে চাই। ভারতীয় সশস্ত্র সেনায় শর্ট সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিযুক্ত মহিলা আধিকারিকদের, শর্ট সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে মহিলা আধিকারিকদের সমকক্ষ আধিকারিকদের মতো স্বচ্ছ চয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়ী কমিশনের সিদ্ধান্ত আজ আমি ঘোষণা করছি। আমাদের যে লক্ষ লক্ষ কন্যা আজ ইউনিফর্ম পরিহিতার জীবন বেছে নিয়েছেন, দেশের জন্য কিছু করতে চান, তাঁদের জন্য আজ আমি এই উপহার দিচ্ছি, লালকেল্লার প্রাকার থেকে জানাচ্ছি। দেশের মহিলারা আরও শক্তিশালী ভারত নির্মাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগোচ্ছেন। আমাদের মা-বোনেদের জন্য গর্ব, তাঁদের অবদান, তাঁদের সামর্থ্য আজ দেশ অনুভব করছে।

 

ভাই ও বোনেরা,

প্রায় প্রতিদিনই নর্থ-ইস্ট থেকে নানা হিংসার ঘটনার খবর আসতো, বিচ্ছিন্নতাবাদের খবর আসতো। বোমা, বন্ধুক, পিস্তলের ঘটনা শোনা যেত। কিন্তু আজ এক আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, যা প্রায় তিন-চার দশক ধরে বলবৎ ছিল, আজ আমি আনন্দিত যে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলির ক্রমাগত প্রচেষ্টায়, রাজ্য সরকারের সক্রিয়তার ফলে কেন্দ্র এবং রাজ্যের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলির প্রভাবে, জনসাধারণকে যুক্ত করার প্রচেষ্টাগুলির পরিণাম হ’ল যে আজ অনেক বছর পর ত্রিপুরা এবং মেঘালয় থেকে সম্পূর্ণ রূপে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

অরুণাচল প্রদেশেরও কয়েকটি জেলাকে এ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি জেলায় এখনও এটি বলবৎ রয়েছে। অতিবাম উগ্রপন্থা, মাওবাদ দেশ রক্তাক্ত করে যাচ্ছিল। প্রায় প্রতিদিনই হত্যা ও নাশকতার পর পালিয়ে যাওয়া, জঙ্গলে লুকিয়ে পড়া কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর নিরন্তর প্রচেষ্টায়, নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করার প্রচেষ্টার ফলে যে অতিবাম উগ্রপন্থা ১২৬টি জেলার মানুষকে মৃত্যুর করাল ছায়ায় বাঁচতে বাধ্য করছিল, আজ তা হ্রাস পেয়ে প্রায় ৯০টি জেলায় সীমিত হয়েছে। উন্নয়ন এক অদ্ভুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

 

ভাই ও বোনেরা,

জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে অটল বিহারী বাজপেয়ীজি আমাদের পথ দেখিয়েছেন আর এটাই সঠিক পথ। আমরা সেই পথে এগিয়ে যেতে চাই। বাজপেয়ীজি বলেছিলেন, ‘মানবতা, স্বাধীনতা ও কাশ্মীরীসত্ত্বা’ – এই তিনটি মূল বিষয় নিয়ে আমরা কাশ্মীরের উন্নয়ন করতে পারি – তা আজ আদাখ হোক, জম্মু হোক কিংবা শ্রীনগর উপত্যকা হোক। ভারসাম্যযুক্ত উন্নয়ন, সমান উন্নয়ন, সেখানকার সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করা, পরিকাঠামো উন্নয়ন আর পাশাপাশি পরস্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মনোভাব নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আমরা গুলি ও গালিগালাজের পথে নয়, হাতে হাত ধরে আমার কাশ্মীরের দেশভক্তি নিয়ে বেঁচে থাকা জকনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

 

ভাই ও বোনেরা, সেচ প্রকল্পগুলি অগ্রগতির পথে। আইআইটি, আইআইএম, এইম্‌স-গুলির নির্মাণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ডাল লেকের সংস্কার, পুনরুদ্ধারের কাজও আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হ’ল, আগামীদিনে জম্মু ও কাশ্মীরের গ্রামের প্রতিটি মানুষ আমাদের এক বছর ধরে দাবি জানাচ্ছেন, সেখানকার পঞ্চায়েত সদস্যরা দলে দলে এসে দেখা করে দাবি জানাচ্ছেন যে, জম্মু ও কাশ্মীরে আমাদের পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।

 

কোনও না কোনও কারণে তা স্থগিত রয়েছে। আমি আনন্দিত যে, আগামী কয়েক মাসেদ্র মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন, নিজেদের স্বায়ত্ত্বশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ পাবেন। এখন তো কেন্দ্রীয় সরকার থেকে এমন অনেক পরিমাণ অর্থ সরাসরি গ্রামে পাঠানো হচ্ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন হলে গ্রামোন্নয়নের সেই অর্থ পঞ্চায়েতগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এজন্য অদূর ভবিষ্যতে যাতে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়, পুরসভাগুলির নির্বাচন হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি।

 

ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। আমাদের মন্ত্র হ’ল ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। কোনও ভেদভাব না করে, আমার-তোমার না করে, আপন-পর না দেখে, কোনও স্বজন-পোষণ না করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সকলের উন্নয়ন। আর সেজন্য আমরা এমন লক্ষ্য স্থির করে কাজ করি। আর আমি আজ আরেকবার এই তেরঙ্গা পতাকার নীচে দাঁড়িয়ে; লালকেল্লার প্রাকার থেকে কোটি কোটি দেশবাসঈদের সেসব সংকল্পের কথা মনে করাতে চাই, সেসব সংকল্প উচ্চারণ করতে চাই, যেগুলির জন্য আমরা নিজেদের উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।

 

প্রত্যেক ভারতবাসীর নিজস্ব বাড়ি হবে – housing for all. প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে – power for all. প্রত্যেক ভারতবাসী রান্নাঘরের ধোঁয়া থেকে মুক্তি পাবেন – cooking gas for all. প্রত্যেক ভারতবাসীর শৌচালয় থাকবে – sanitation for all. প্রত্যেক ভারতবাসী কর্মদক্ষ হয়ে উঠবে skill for all. প্রত্যেক ভারতবাসী ভালো এবং সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন – health for all. প্রত্যেক ভারতবাসীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে, বিমার রক্ষা কবচ পাবেন – Insurance for all.প্রত্যেক ভারতবাসী ইন্টারনেট পরিষেবা পাবেন – Connectivity for all. এই মন্ত্র নিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

 

আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, অনেকে বিদ্রুপ করে আমার উদ্দেশে অনেক কথা বলেন, কিন্তু যেগুলি বলা হয়, আমি আজ সর্বসমক্ষে তাঁর মধ্য থেকে কিছু স্বীকার করে নিতে চাই যে আমি অধৈর্য, কারণ অনেক দেশ আমাদের থেকে এগিয়ে গেছে, আমি অধৈর্য – আমার দেশকে সেই দেশগুলি থেকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অস্থির। আমি অস্থির, কারণ আমাদের দেশের শিশুদের বিকাশে অপুষ্টি একটি অনেক বড় বাধা হয়ে রয়েছে। একটি অনেক বড় bottleneck হয়ে রয়েছে। আমি এই দেশকে অপুষ্টি মুক্ত করানোর জন্য অস্থির। আমার দেশবাসী, আমি ব্যাকুল, যাতে গরিব মানুষেরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আসেন, সেজন্য অস্থির যাতে আমার দেশের সাধারণ মানুষও অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়তে পারেন, বুঝতে পারেন।

 

ভাই ও বোনেরা, আমি যেমন ব্যাকুল, আমি তেমনই ব্যগ্র। আমি ব্যগ্র, যাতে দেশের নাগরিকদের quality of life, ease of living – এর সুযোগ পান, এক্ষেত্রে উন্নতি হয়।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি ব্যগ্র, কারণ আমি চাই যে দেশ নিজের ক্ষমতা এবং সম্পদের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করুক আর আমরা বিশ্বে গর্বের সঙ্গে এগিয়ে যাই।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা আজ যতটা, আগামীকাল তা থেকেও এগিয়ে যেতে চাই। আমরা থেমে থাকতে চাই না, আমরা থামতে চাই না। আর মাথা নত করা আমাদের স্বভাবে নেই। এই দেশ আর থেমে থাকবে না, মাথা নত করবে না, ক্লান্ত হবে না, আমরা নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে চাই, উত্তরোত্তর প্রগতি করতে চাই।

 

ভাই ও বোনেরা, বেদের সময়থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বের চিরপুরাতন ঐতিহ্যে আমরা ধনী। আমাদের উপর এই ঐতিহ্যের আশীর্বাদ রয়েছে। এই ঐতিহ্য আমাদের আত্মবিশ্বাসের সুফল। একে সঙ্গে নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যেতে চাই। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা শুধুই ভবিষ্যৎ দেখার অপেক্ষায় থাকতে চাই না। কিন্তু ভবিষ্যতের সেই শিখরেও পৌঁছতে চাই। ভবিষ্যতের শিখরের স্বপ্ন নিয়ে আমরা চলতে চাই আর সেজন্য আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের এক নতুন আশা, এক নতুন উদ্দীপনা, এক নতুন বিশ্বাস …… দেশ তা দিয়েই চলে, দেশ তা দিয়েই বদলায়, আর সেজন্য আমার প্রিয় দেশবাসী ……

 

নিজের মনে একটি লক্ষ্য নিয়ে,

নিজের মনে একটি লক্ষ্য নিয়ে,

গন্তব্য নিজেদের ঠিক করে

নিজের মনে একটি লক্ষ্য নিয়ে,

গন্তব্য নিজেদের ঠিক করে আমরা ভাঙছি শেকলগুলি,

আমরা ভাঙছি শেকলগুলি,

আমরা বদলাচ্ছি এই ছবিগুলি,

এটা নবযুগ, এটা নতুন যুগ,

এটা নতুন ভারত, এটা নতুন যুগ,

এটা নতুন ভারত।

‘নিজেরাই লিখব নিজেদের ভাগ্য, আমরা বদলাচ্ছি এই ছবিগুলি,

নিজেরাই লিখব নিজেদের ভাগ্য, এটা নতুন যুগ, নতুন ভারত,

আমরা বেরিয়ে পড়েছি, আমরা বেরিয়ে পড়েছি পণ করে,

আমরা বেরিয়ে পড়েছি পণ করে, নিজেদের তনমন অর্পণ করে,

নিজেদের তনমন অর্পণ করে, এটাই জেদ, এটাই জেদ, এটাই জেদ,

এক সূর্যোদয় করতে হবে, এটাই জেদ সূর্যোদয় করতে হবে,

আকাশ থেকে উপরে উঠতে হবে, আকাশ থেকে উপরে উঠতে হবে,

এক ভারত নতুন বানাতে হবে, এক নতুন ভারত বানাতে হবে”।

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, আরেকবার স্বাধীনতার পবিত্র উৎসবে আপনাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা দিয়ে …… আসুন ‘জয় হিন্দ’ মন্ত্র উচ্চস্বরে আমার সঙ্গে বলুন – জয় হিন্দ, জয় হিন্দ, জয় হিন্দ, জয় হিন্দ, ভারতমাতা কী জয়, ভারতমাতা কী জয়, ভারতমাতা কী জয়, বন্দে মাতরম, বন্দে মাতরম, বন্দে মাতরম, বন্দে মাতরম, বন্দে মাতরম

 

CG/SB/SB