Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

‘ভারতের রূপান্তর’ শীর্ষকবক্তৃতামালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

‘ভারতের রূপান্তর’ শীর্ষকবক্তৃতামালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


সিঙ্গাপুরের মাননীয়উপ-প্রধানমন্ত্রী শ্রী থরম্যান সন্মুগরত্নম,  

মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মীসদস্যগণ,  

বিভিন্ন রাজ্যেরমুখ্যমন্ত্রী এবং  

আমন্ত্রিত বক্তা ও বন্ধুগণ,  

  

বিকাশ তথা উন্নয়নকে একসময়েশ্রম ও মূলধনের সংখ্যার ওপর নির্ভরশীল বলে মনে করা হতো। কিন্তু বর্তমানে আমরাজেনেছি যে, তা নির্ভর করে প্রাতিষ্ঠানিক গুণমান ও চিন্তাভাবনার ওপর। গত বছরের প্রথমদিকে একটি নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়, যা পরিচিত ‘ভারতের রূপান্তরের লক্ষ্যে জাতীয়প্রতিষ্ঠান’ অর্থাৎ ‘নীতি’ রূপে। ভারতে রূপান্তরের পথ নির্দেশক এক বিশেষ প্রাতিষ্ঠানিককাঠামো রূপে নীতিকে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক চিন্তাভাবনার পর।   

  

নীতির কাজকর্মের মধ্যেরয়েছে  : 

  

–   বাইরের চিন্তাভাবনাগুলিকে সরকারি নীতির মূল স্রোতেরসঙ্গে যুক্ত করা। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় এই কাজকরা হয়ে থাকে।  

–   বহির্বিশ্বের অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ ওপেশাদার ব্যক্তিদের সঙ্গে সরকারের যোগসূত্র স্থাপন করা।   

–   বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত চিন্তাভাবনাকে নীতি রচনার সঙ্গেযুক্ত করা।  

  

ভারত সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের রয়েছেএক দীর্ঘ প্রশাসনিক ঐতিহ্য। প্রাচীনকাল থেকেই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের মতও চিন্তাভাবনাগুলি যুক্ত ও মিলিত হয়েছে এই ঐতিহ্যের সঙ্গে। এই প্রশাসনিক ঐতিহ্যঅনেক দিক থেকেই ভারতের প্রভূত উপকার করেছে। সর্বোপরি বৈচিত্র্যের গরিমার মধ্য দিয়েগড়ে ওঠা এই দেশে তা রক্ষা করেছে ঐক্য ও সংহতি, গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয়তা। এইপ্রাপ্তি বা সাফল্য কোনও অংশেই কম নয়। তা সত্ত্বেও আমরা এমন এক যুগে বর্তমানে বাসকরি যেখানে পরিবর্তন ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত।  

  

ভেতর এবং বাইরের নানা কারণে পরিবর্তন আমাদেরআনতেই হবে। প্রত্যেকটি দেশেরই রয়েছে নিজস্ব শক্তি, সম্পদ ও অভিজ্ঞতা। ৩০ বছর আগেএকটি দেশ অন্তর্মুখী হয়ে থাকতে পারত এবং সেখান থেকেই সে তার সমস্যার সমাধান খুঁজেনিতে পারত। কিন্তু, বর্তমান বিশ্বে দেশগুলি পরস্পর নির্ভরশীল এবং একে অপরের সঙ্গেযুক্ত। বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে কোনও দেশই এখন আর এককভাবে উন্নয়নের দিশাখুঁজে পেতে পারে না। তাই, প্রত্যেকটি দেশকেই এখন কাজ করতে হয় বিশ্ব মানের দিকেলক্ষ্য রেখে, অন্যথায় ঐ দেশ পিছিয়ে পড়তে বাধ্য।   

  

নানা অভ্যন্তরীণ কারণেও পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাঅনস্বীকার্য। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের চিন্তাভাবনা ও আশা-আকাঙ্খা এতটাই ভিন্নধরণের যে, সরকারের এখন অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকলেই চলবে না। এমনকি, পারিবারিকক্ষেত্রেও নবীন ও প্রবীণের সম্পর্ক এখন অনেকটাই বদলে গেছে। এমন একটা সময় ছিল, যখনবয়ঃজ্যেষ্ঠরা অনেক বেশি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন, তরুণ প্রজন্মের থেকে।কিন্তু, নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রসার পরিস্থিতির সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আরঠিক এই কারণেই যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে এবং ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশা পূরণের কাজেসরকারের কাছে চ্যালেঞ্জের সংখ্যাও এখন কম নয়।  

  

পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে যদি ভারতকে গ্রহণকরতে হয়, তা হলে শম্বুকগতিতে এগিয়ে গেলে চলবে না। প্রয়োজন তাতেও পরিবর্তন নিয়েআসার।  

  

এই কারণেই আমার লক্ষ্য হল – ভারতের দ্রুতরূপান্তর, মন্থর গতির বিবর্তন নয়।  

  

·   প্রশাসনতথা পরিচালনের রূপান্তর বিনা ভারতের রূপান্তর কখনই সম্ভব হতে পারে না।  

·   মানসিকতারপরিবর্তন না ঘটলে প্রশাসন তথা পরিচালন ব্যবস্থাতে পরিবর্তন আসতে পারে না।  

·   রূপান্তরমুখীচিন্তাভাবনা ছাড়া মানসিকতার পরিবর্তনও সম্ভব নয়।  

  

আইনগুলিরক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসার পাশাপাশি, অপ্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতিও আমাদেরএড়িয়ে চলতে হবে। বরং, প্রক্রিয়ায় গতিসঞ্চার করে প্রযুক্তি গ্রহণের লক্ষ্যে আমাদেরসচেষ্ট থাকতে হবে। উনিশ শতকের প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে একবিংশ শতাব্দীরদিকে আমরা পা বাড়াতে পারি না।  

  

আকস্মিককোনও আঘাত বা সংকটের মধ্য দিয়ে সাধারণত প্রশাসনিক চিন্তাভাবনা ও মানসিকতারক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। ভারতের সৌভাগ্য যে, গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতাতার রয়েছে। এই ধরণের কোনও ঘটনা না ঘটলেও রূপান্তরমুখী পরিবর্তনের লক্ষ্যেসর্বশক্তি নিয়োজিত করার কাজে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে বইকিংবা প্রবন্ধ-নিবন্ধ পাঠ করে আমরা নতুন নতুন নতুন মত ও চিন্তাভাবনার শরিক হতেপারি। বই আমাদের মনের জানালাগুলি উন্মুক্ত করে দেয়। তবে, আমরা যদি আমাদেরচিন্তাভাবনা আর সকলের মধ্যে ছড়িয়ে না দিই, তা হলে তা একান্তভাবে বন্দী হয়ে থাকেব্যক্তি-মানুষের মনেই। আমরা প্রায়শই নতুন নতুন মত ও চিন্তাভাবনার কথা শুনে থাকিএবং সেগুলি আমরা হৃদয়ঙ্গমও করতে পারি। কিন্তু তা নিয়ে আমরা আর বেশি দূর এগিয়ে যেতেপারি না। কারণ, তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি কোনও একক ব্যক্তি-মানুষের পক্ষেসম্ভব নয়। কিন্তু, যদি আমরা সকলে একত্রে মিলিত হই, চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগানোর মতোমিলিত শক্তির সন্ধান পেতে পারি। আমাদের যা প্রয়োজন, তা হল – আমাদের মন ওচিন্তাভাবনাকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া, এক নতুন আন্তর্জাতিক পট ও প্রেক্ষিতেতাকে সাজিয়ে তোলা। এই কাজের জন্য নতুন নতুন চিন্তাভাবনাকে আমাদের গ্রহণ করতে হবেসম্মিলিতভাবে, এককভাবে নয়। আর এজন্য প্রয়োজন বিশেষ উদ্যম ও প্রচেষ্টার সমন্বয়।  

  

আপনাদেরমধ্যে অনেকেই হয়ত জানেন যে, দায়িত্বভার গ্রহণের সময় থেকেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ,পুলিশ আধিকারিক এবং সরকারের সচিবদের সঙ্গে মত ও চিন্তাভাবনার আসরে আমি মিলিতহয়েছি। অন্যান্যরাও উপস্থিত থাকেন সেখানে। এই সমস্ত মঞ্চে যে মত ও চিন্তাভাবনা আমরাসংগ্রহ করি, তা যুক্ত করে থাকি নীতির সঙ্গে।  

  

এইসমস্ত প্রচেষ্টার মূলে রয়েছে, নিজেদের মধ্য থেকে মত ও চিন্তাভাবনা সংগ্রহের তাগিদ।পরবর্তী প্রচেষ্টা হল – বাইরের জগৎ থেকে মত ও চিন্তাভাবনা সংগ্রহ। সাংস্কৃতিক দিকথেকে ভারতীয়রা বরাবরই বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে মত ও চিন্তাভাবনা গ্রহণ করে এসেছে।ঋগ্বেদে কথিত আছে – “আ তো ভদ্রাঃ ক্রতবো ইয়ন্তু বিশ্বতঃ”। এর অর্থ হল – বিভিন্নদিক থেকে আগত মহৎ চিন্তাভাবনাকে আমরা স্বাগত জানাই।   

  

‘ভারতেরূপান্তর’ বক্তৃতামালার এটাই হল উদ্দেশ্য। এটি হল এমনই একটি সিরিজ, যেখানে আমরাঅংশগ্রহণ করব শুধুমাত্র ব্যক্তি-মানুষ হিসাবেই নয়, বরং এক মিলিত দল বা শক্তিহিসেবে যা পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম।   

  

বিশিষ্টও প্রখ্যাত ব্যক্তিদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার শ্রেষ্ঠ দিকগুলি আমাদের গ্রহণ করতে হবে।বিশ্বে নিজেদের দেশকে এক সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জন্য তাঁরা আমাদেরঅনেকেরই জীবনে পরিবর্তন সম্ভব করে তুলেছেন বা এই প্রক্রিয়ায় প্রভাব স্থাপন করেছেন।  

  

সিরিজেরপ্রথম বক্তৃতাই হল এটিই। আপনাদের প্রত্যেককেই ফিডব্যাক লেখার জন্য একটি করে ফর্মদেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করে তোলার কাজে সাহায্য করার জন্য আপনাদেরখোলাখুলি ও বিস্তারিত মতামত সংগ্রহ করার জন্য আমি অপেক্ষা করব। ভারত এবংআন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করার জন্য আমিআপনাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি সরকারের সচিবপদাধিকারীদের কাছে এক সপ্তাহের মধ্যে এর ফলাফল জানানোর জন্য তাঁদের মন্ত্রকেরঅংশগ্রহণকারী সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা বৈঠকের ব্যবস্থা করার জন্য। আমার একথা বলারউদ্দেশ্য হল, আজ এই পর্বের অনুষ্ঠান থেকে যে সমস্ত চিন্তাভাবনা সংগৃহীত ও সংকলিতহবে তার ভিত্তিতে প্রত্যেকটি গ্রুপের জন্যই সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ছকে ফেলা। যদিসম্ভব হয়, মন্ত্রীদেরও আমি অনুরোধ জানাব, বিভিন্ন পর্বের আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য।  

  

এইসময়কালের শ্রেষ্ঠ প্রশাসক ও সংস্কারকদের অন্যতম হলেন লি কোয়ান ইউ। আজকেরসিঙ্গাপুরের রূপকার হলেন তিনি-ই। তাই, যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গেই সিঙ্গাপুরেরউপ-প্রধানমন্ত্রী শ্রী থরম্যান সন্মুগরত্নম’কে নিয়েই আমরা এই সিরিজের উদ্বোধন করতেপেরেছি। তিনি হলেন একজন বিদগ্ধ ব্যক্তি এবং সরকারি নীতি রচয়িতা। উপ-প্রধানমন্ত্রীছাড়াও তিনি হলেন অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতি দপ্তরের মন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী এবংসিঙ্গাপুরের অর্থ সংক্রান্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন চেয়ারম্যান। অতীতে শ্রমশক্তিদপ্তরের মন্ত্রী, অর্থ সংক্রান্ত দ্বিতীয় মন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্বওতিনি পালন করে এসেছেন।  

  

শ্রীসন্মুগরত্নমের জন্ম ১৯৫৭ সালে। তিনি শ্রীলঙ্কার এক তামিল বংশোদ্ভূত। লন্ডন স্কুলঅফ ইকনমিক্স থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন তিনি। পরে, অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিলাভ করেন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনবিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও তিনি অর্জন করেছেন। তাঁর বিশিষ্ট কাজ ও সেবার জন্যতাঁকে সম্মানিত করা হয় হার্ভাডে।  

  

শ্রীসন্মুগরত্নম হলেন বিশ্বের প্রথম সারির বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম। তাঁর চিন্তাভাবনারপ্রসার ও ব্যপ্তির একটি উদাহরণ আমি এখানে তুলে ধরছি। সিঙ্গাপুরের বর্তমান অর্থনীতিঅনেকাংশেই সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহণের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু, বিশ্ব উষ্ণায়ন যদিমেরুপ্রদেশের তুষারকে গলতে সাহায্য করে এবং নতুন সমুদ্রপথ আবিষ্কৃত হয়, তা হলেসিঙ্গাপুরের প্রাসঙ্গিকতা অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে। আমি জানতে পেরেছি যে, তিনিইতিমধ্যেই এ সম্পর্কে চিন্তাভাবনার কাজ শুরু করে দিয়েছেন এবং তাঁর পরিকল্পনামতোতিনি কাজ করে চলেছেন।  

  

বন্ধুগণ,যে সাফল্য ও সম্মান অর্জন করেছেন শ্রী সন্মুগরত্নম তার তালিকা দীর্ঘ। কিন্তু, এখনআমরা তাঁর কাছ থেকে কিছু কথা শুনতে আগ্রহী। তাই, আর কোনও রকম বিলম্ব না করেই আমিসানন্দে এই মঞ্চে স্বাগত জানাচ্ছি শ্রী থরম্যান সন্মুগরত্নম’কে। তাঁকে অনুরোধজানাচ্ছি, বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত – এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করার জন্য।   

  

PG/SKD/SB