Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

“ভারতের রূপান্তরই আমার স্বপ্ন” : প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী

“ভারতের রূপান্তরই আমার স্বপ্ন” : প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী


বহুত্ববাদে বিশ্বাসীভারত। আমরা বিশ্বাস করি যে বিশ্ব যত জটিলতর হয়ে উঠবে, ততই বৃদ্ধি পাবেবহু উদ্দেশ্যসাধক প্রাতিষ্ঠানিকতা। ১৯৪৪-এ ব্রেটন উড্‌স সম্মেলনে ভারত প্রতিনিধিত্ব করেছিল। এই সম্মেলনকে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আই এম এফ) সূতিকাগার বলা চলে। ঐ সময় ভারতের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন শ্রী আর কে সন্মুখম চেট্টি যিনি পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতের প্রথম অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাই ৭০ বছরেরও বেশি সময়কালের। ‘এশীয় পরিকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক’ এবং ‘নতুন উন্নয়ন ব্যাঙ্কে’র আমরা অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এশিয়ার বিকাশ ও উন্নয়নে এই ব্যাঙ্কগুলি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ও আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার আয়োজিত ‘এশিয়ার অগ্রগতির লক্ষ্যে : ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ’ শীর্ষক এক সম্মেলনে ভাষণদানকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের ডিরেক্টর মিসেস ক্রিস্টিন ল্যাগার্ডকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে উপলব্ধির প্রতিফলন ঘটেছেআন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের প্রতিনিধি হিসেবে মিসেস ল্যাগার্ডের এ দেশে উপস্থিতিতে। এই ধরনের একটি সম্মেলনের উদ্যোগ-আয়োজন ভারত তথা এশিয়া সম্পর্কে তাঁর গভীর অনুভব তথা উপলব্ধিরই প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেন শ্রী মোদী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কার প্রক্রিয়াকে সচল ও গতিশীল করে তোলা প্রয়োজন। বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে তা প্রতিফলিত হবে এর মধ্য দিয়ে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার এশিয়ার অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টায় বিশেষজ্ঞের জ্ঞান ও পরামর্শদানের ক্ষেত্রে এক অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। সকল সদস্য রাষ্ট্রেরই উচিত এই সুযোগকে কাজে লাগানো। এক বৃহৎ অর্থনীতি গড়ে তুলতে,উন্নয়নকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করতে এবং আরও বেশি করে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে আমাদের উচিত সুনির্দিষ্ট নীতিগুলিকে অনুসরণ করা। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার এই কাজে এক বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন শ্রী মোদী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের সঙ্গে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার এক নতুন অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তাকেন্দ্র গড়ে তুলতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এই কেন্দ্রটির মাধ্যমে সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন আনতেও এই কেন্দ্র এক বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলি নানা ধরনের কারিগরি সহায়তা লাভ করবে এই কেন্দ্রটি থেকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্ঞানী ও বিদগ্ধজনের মতে একুশের শতক এশিয়ার শতকে রূপান্তরিত হতে চলেছে। বিশ্বের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের বাস এশিয়ায়। বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষেত্রে এশিয়ার অংশগ্রহণ এখন এক-তৃতীয়াংশের মতো। অন্যদিকে, বিশ্বে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাজকর্মের ক্ষেত্রে এশিয়ার অংশীদারিত্ব বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ। তাই, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গতিশীল অঞ্চল হল বর্তমানে এশিয়া।

‘ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ’ – সম্মেলনের এই আলোচ্যসূচির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এশিয়ায় বসবাসকারী পরিবারগুলি সঞ্চয়ের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী। তাই, ভবিষ্যতের জন্য তাঁরা বিনিয়োগ করে থাকেন। এশিয়ার দেশগুলির এই সঞ্চয় প্রবণতার কথা বলে থাকেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরাও। ঋণ বা ধার গ্রহণ করার পরিবর্তে সঞ্চয়ের অর্থে ঘর-বাড়ি কেনার পক্ষপাতী এশিয়ার মানুষ। শুধু তাই নয়, এশিয়ার উন্নয়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হল শক্তিশালী পারিবারিক মূল্যবোধকেন্দ্রিক সামাজিক স্থিতিশীলতা। এখানকার মানুষ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু করে যেতে বিশেষভাবে আগ্রহী।

মিসেস ক্রিস্টিন ল্যাগার্ডকে বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় মহিলা নেত্রী রূপে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, থাইল্যান্ড মায়নামার এবং ফিলিপিন দ্বীপপুঞ্জে মহিলারা আজ জাতীয় নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত। অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় এই ক্ষেত্রটিতে বেশ এগিয়ে রয়েছে এশিয়া। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, গুজরাট এবং রাজস্থান – ভারতের এই চারটি বড় রাজ্যে বর্তমানে প্রশাসনের নেতৃত্বে রয়েছেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন করে মহিলা। এমনকি, সংসদে লোকসভার অধ্যক্ষের আসনেও রয়েছেন একজন মহিলা।

শ্রী মোদী বলেন, এশিয়ায় ভারত এক বিশেষ স্থানের অধিকারী। নানাভাবে এশিয়ার ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়েছে ভারতের অবদানে। চিন, জাপান সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসার লাভ করেছিল ভারত থেকেই। এই মহাদেশের সংস্কৃতিতেও ভারতের স্থায়ী প্রভাব অনস্বীকার্য। ভারতের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলি ১ হাজার বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে নৌ-বাণিজ্যের সম্পর্কে যুক্ত। ভারতের জাতীয় আন্দোলন এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিকে দেখিয়েছেঅহিংস আন্দোলনের পথে কিভাবে ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়া যায়। শুধু তাই নয়, জাতীয়তাবাদ যে কতটা উদার অথচ অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠতে পারে তাও প্রমাণ করেছে আমাদের দেশ। দেশকে ভাষা ও ধর্মের সংকীর্ণতার গণ্ডীতে আবদ্ধ রাখা ঠিক নয়। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ – এই নীতিতে ভারত বিশ্বাসী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক গতিশীলতার মধ্যে যে কোন বিরোধ থাকতে পারে না সে কথা প্রমাণ করেছে ভারত। এ দেশে রয়েছে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত একগণতন্ত্র যেখানে উন্নয়নের হার পরিলক্ষিত হয়েছে ৭ শতাংশেরও বেশি। অনেকেই হয়তো মনে করেন যে ভারতের পক্ষে গণতন্ত্র হল ঔপনিবেশকিতার দান। কিন্তু ঐতিহাসিকদের মতে, বহু শতাব্দী আগে বিশ্বের অন্যত্র যখন গণতন্ত্রের চিহ্নমাত্র ছিল না, তখনই গণতান্ত্রিক স্বশাসনের নজির সৃষ্টি করেছিল ভারত। বহু বৈচিত্র্যের একটি দেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে যে কিভাবে সম্ভব করে তুলতে পারে ভারত তা প্রমাণ করে দিয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক অথচ সহযোগিতাভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদের পথে অগ্রসর হয়ে আমরা সে কথা প্রমাণ করে দিয়েছি। সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলির চরিতার্থতায় অবদান রয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েরই। যে সমস্ত রাজ্য ভালো নীতি অনুসরণের মাধ্যমে দরিদ্র সাধারণ মানুষের কাছে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজে সফল, তারা আদর্শ ও অনুসরণযোগ্য হয়ে রয়েছে অন্য রাজ্যগুলির কাছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এশিয়ায় এক স্বাতন্ত্র্য দাবী করতে পারে। আমাদের সঙ্গে যারা অংশীদারিত্বের সম্পর্কে যুক্ত তাদের দানে আমরা কখনই লাভবান হতে চাই না। প্রতিবেশীকে নিঃস্ব করে দেওয়ার বৃহদায়তন অর্থনীতি আমরা অনুসরণ করে চলি না। মুদ্রার বিনিময় হারকেও আমরা কখনও তুচ্ছ করে দেখি না। আর এই কারণেই এশিয়ার একটি সৎ জাতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির একজন ভালো অংশীদার হিসেবে আমাদের সুনাম ও সুখ্যাতি।

শ্রী মোদী বলেন, এশিয়ার সাফল্যই আমরা কামনা করি। অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠলে এশিয়ার সমৃদ্ধিতে ভারত এক বিশেষ অবদান সৃষ্টি করতে পারে। আন্তর্জাতিক দুনিয়া যখন নানা ধরনের সমস্যায় জেরবার, তখন আমি একথা ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে বড় ধরনের অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ভারত এক আলোকবর্তিকা বিশেষ। সম্ভাবনা ও গতিময়তার সমন্বয় ঘটেছে এখানে। বিশেষ সাফল্যও আমরা অর্জন করেছি আমাদের কর্মপ্রচেষ্টার এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে। সন্তোষজনকভাবে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস, সফল আর্থিক সংহতি, লেনদেনজনিত অনুকূল পরিস্থিতি এবং বিদেশি মুদ্রার পর্যাপ্ত ভাণ্ডার আমাদের এই সাফল্যেরই পরিচয় বহন করে। প্রতিকূল পরিবেশ এবং উপর্যুপরি দু’বছর অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও আমাদের অগগ্রতির হার পৌঁছে গেছে ৭.৬ শতাংশে যা বিশ্বের প্রধান প্রধান অর্থনীতিগুলির তুলনায় বেশ ওপরের দিকেই রয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক পরিচালনকেও আমরা অনেক উন্নত করে তুলেছি। দুর্নীতির দিন এখন শেষ। ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনরকম প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টারও অবসান ঘটেছে। বেশ বড় মাত্রায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কর্মসূচিগুলিতেও আমরা সাফল্য লাভ করেছি। দেশের ২০ কোটি মানুষকে আমরা নিয়ে আসতে পেরেছি ব্যাঙ্ক পরিষেবার আওতায়। রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে ভর্তুকি সহায়তা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার কাজেও ভারত এক উল্লেখযোগ্য সাফল্যের নজির সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে খাদ্য, কেরোসিন এবং সারের ক্ষেত্রেও এই ভর্ভুকি সহায়তা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। এর ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং সরকারি ব্যয়ের সঠিক পরিচালন সম্ভব হয়ে উঠেছে। অর্থনীতির সবক’টি ক্ষেত্রকেই উন্মুক্ত করে দিয়েছি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ লাভের জন্য। বাণিজ্যিক কাজকর্মের ভালো স্থান হিসেবে ভারত বিশ্ব ব্যাঙ্কের র‍্যাঙ্কিং-এ এক বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছে গেছে ২০১৫ সালে। কয়লা, বিদ্যুৎ, ইউরিয়া, সার এবং মোটর গাড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত যথেষ্ট উন্নয়ন ও সাফল্যের নিদর্শন দেখিয়েছে। দেশের প্রধান প্রধান বন্দরগুলিতে মালপত্র ওঠানো-নামানো, নতুন মহাসড়ক প্রকল্প, সফটওয়্যার রপ্তানি, শিল্পোদ্যোগ – সবক’টি ক্ষেত্রেই ভারত এগিয়ে চলেছে দ্রুততার সঙ্গে। প্রযুক্তিগত স্টার্ট আপ সংস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইজরায়েলের পরেই রয়েছে ভারতের নাম। ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ সাময়িকীটিতে ভারতকে বর্ণনা করা হয়েছে বৈদ্যুতিন বাণিজ্যের এক নতুন অগ্রদূত হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু এই সমস্ত সাফল্যের মধ্যেই আমরা আমাদের কাজকর্মকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। কারণ আমাদের মূল লক্ষ্য হল ‘সংস্কার থেকে রূপান্তর’। এই কাজ আমাদের এখনও সম্পূর্ণ করা বাকি। আমাদের কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রে দার্শনিক উপলব্ধি হল সম্পদ সৃষ্টির উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা, সেই সম্পদে সমৃদ্ধ করে তোলা প্রত্যেক ভারতবাসীকে এবং দরিদ্র, বঞ্চিত ও কৃষিজীবী মানুষের কাছে এই সম্পদ পৌঁছে দেওয়া।

শ্রী মোদী বলেন, গ্রাম ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে আমাদের বিনিয়োগকে আমরা ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছি। কারণ, গ্রামেই বসবাস অধিকাংশ ভারতীয়র। কিন্তু কৃষকদের হাত ধরে তোলাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। সেচ ব্যবস্থার প্রসারের মধ্য দিয়ে আমাদের লক্ষ্য তাদের আয় ও উপার্জন অন্তত দ্বিগুণ করে তোলা। কৃষি ছাড়াও রেল ও সড়ক ক্ষেত্রেও সরকারি বিনিয়োগের মাত্রা আমরা বৃদ্ধি করেছি। অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা এবং সংযোগ তথা যোগাযোগ ব্যবস্থারগতিশীলতার মধ্যে তা বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে উঠবে। বেসরকারি বিনিয়োগের বিষয়টি যখন বেশ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে, তখন সরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি একান্ত জরুরি। সম্পদ ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে অন্যান্য সংস্কারের কাজও আমরা শুরু করে দিয়েছি। শিল্পোদ্যোগের উৎসাহ-উদ্দীপনা আমাদের ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিকে সফল করে তুলবে বলেই আমার বিশ্বাস। স্টার্ট আপের উপযোগী বাজেট সংস্থানও রাখা হয়েছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির সাফল্যের জন্য যা একান্তভাবে প্রয়োজন তা হল দেশের যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। তাই, দেশের শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের রয়েছে এক বিশেষ কর্মসূচি। আমাদের এই দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি অর্থনীতির ২৯টি ক্ষেত্রে আজ প্রসারিত।

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সি ও পি-২১ শীর্ষ বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা বিশ্বের ইতিহাসকে আরও নতুন রূপ দিতে আগ্রহী। এজন্য আমাদের প্রয়োজন দ্রুত অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়া। ঐ সময়কালের মধ্যে দেশের সংস্থাপিত মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ শতাংশই উৎপাদিত হবে জীবাশ্ম বহির্ভূত জ্বালানি শক্তি থেকে। আন্তর্জাতিক সৌর সমঝোতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা রয়েছি বর্তমানে এক নেতৃত্বদানের ভূমিকায়। বিশ্বের যে ক’টি দেশে কার্বন কর ধার্য করা হয়েছে ভারত তার মধ্যে অন্যতম। কয়লার ওপর ধার্য এই কর আদায় করা হবে সেস হিসেবে। ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরের বাজেটে সেসের এই পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়েছে।

এশিয়ায় বেশ কয়েকটি কর্মসূচি সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে তুলতে আগ্রহী ভারত। ‘পূবে তাকাও নীতি’টিকে আমরা ‘পূর্বের জন্য কাজ করো’ – এই নীতিতে রূপান্তরিত করতে চলেছি। আসিয়ানভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে এবং আমাদের বিশেষ অংশীদার সিঙ্গাপুর, জাপান ও কোরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই কাজে এগিয়ে যেতে আগ্রহী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের রূপান্তরই আমার স্বপ্ন। ‘অগ্রণী এশিয়া’ – এই স্বপ্নকে সাকার করে তোলার পাশাপাশি ভারতের রূপান্তরের স্বপ্নও লালন ও পালন করি আমরা। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের বাস যেখানে, সেই এশিয়ায় সুখ ও পরিপূর্ণতার মধ্য দিয়ে সকলে যাতে এগিয়ে যেতে পারে সেই লক্ষ্যেই আমরা সফল করে তুলতে চাই আমাদের এই স্বপ্নগুলিকে। আমাদের যৌথ ঐতিহ্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাধারণ লক্ষ্য এবং প্রায় সমতুল নীতিগুলি অনুসরণ করে আমরা নিরন্তর অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাব এই আশা আমি পোষণ করি।

PG/SKD/DM/