Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ফ্রান্স সফর নিয়ে ভারত – ফ্রান্স যৌথ বিবৃতি


নয়াদিল্লি, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

 

ফ্রান্স প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রঁর আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ১০-১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ফ্রান্স সফর করেন। ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ভারত ও ফ্রান্সের যৌথ পৌরহিত্যে এআই অ্যাকশন সামিটের আয়োজন করা হয়। এতে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির নেতা, ছোট-বড় সংস্থার কর্তাব্যক্তি, শিক্ষা মহলের প্রতিনিধি, অ-সরকারি সংগঠন, শিল্পী এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। এআই-কে যাতে জনস্বার্থে বিশ্বের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, তা সুনিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার করেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী এই সফল সম্মেলনের জন্য প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁকে অভিনন্দন জানান। পরবর্তী এআই সামিট আয়োজনের যে সিদ্ধান্ত ভারত নিয়েছে, ফ্রান্স তাকে স্বাগত জানায়।

প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীর এটি ষষ্ঠ ফ্রান্স সফর। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ গত বছরের জানুয়ারিতে ভারতের ৭৫তম সাধারণতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ মারসেই’তে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীর সম্মানে ব্যক্তিগত নৈশভোজের আয়োজন করেন। তাঁরা যৌথভাবে মারসেই’তে ভারতের বাণিজ্য দূতাবাসের উদ্বোধন করেন। পরিদর্শন করেন আন্তর্জাতিক থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টর কেন্দ্র।

২০২৪ – এর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর ভারত সফরের সময়ে এবং ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বাস্তিল দিবস উদযাপনের সময় প্রধান অতিথি হিসেবে শ্রী মোদীর ফ্রান্স সফরের সময় যে ২০৪৭ রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়েছিল, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে তাঁদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী পুনর্ব্যক্ত করেন।

দুই নেতা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির সাপেক্ষে বিশ্বকে প্রস্তুত করে তোলার জন্য সংস্কার ও কার্যকর বহুপাক্ষিকতার উপর জোর দেন। রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অবিলম্বে সংস্কারসাধনের গুরুত্বের উপর জোর দেন তাঁরা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের একযোগে কাজ করতে সহমত হন। রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যলাভের দাবিকে সমর্থন জানায় ফ্রান্স। দুই নেতা ভেটো প্রয়োগ সংক্রান্ত বিধি নিয়োগ নিয়ে আলোচনার জোরালো দাবি জানিয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদী বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ এবং বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তাঁদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্তরে সংযোগ আরও সুদৃঢ় করতে তাঁরা সহমত হন।

বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, গবেষণা ও উদ্ভাবনের অগ্রগতির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এবং এইসব ক্ষেত্রে ভারত ও ফ্রান্সের সুদীর্ঘ সংযোগের কথা স্মরণ করে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২৬ সালকে ভারত – ফ্রান্স উদ্ভাবনের বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ২০২৬ সালের মার্চ মাসে নতুন দিল্লিতে এর লোগো প্রকাশ করা হবে।

কৌশলগত অংশীদারিত্বের অঙ্গ হিসেবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ক্ষেত্রে সুগভীর ও দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২৪ সালের প্রতিরক্ষা শিল্প রোডম্যাপের আওতায় আকাশ ও সমুদ্র সম্পদ নিয়ে সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়েছেন। দুই নেতা ভারতে স্কর্পিন সাবমেরিন নির্মাণ, ডিআরডিও-র উদ্যোগে পি-৭৫ স্কর্পিন সাবমেরিনে এয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোপালশন – এআইপি’র সংযুক্তিকরণ এবং ভবিষ্যতে পি-৭৫ এএস – এ ইন্টিগ্রেটেড কমব্যাট সিস্টেম – আইসিএস – এর সম্ভাব্য সংযুক্তির উদ্যোগের প্রশংসা করেন। গত ১৫ জানুয়ারি পি-৭৫ স্কর্পিন শ্রেণীর ষষ্ঠ ও শেষ সাবমেরিন আইএনএস ভাগসির ভারতীয় নৌ-বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দুই নেতা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্র, হেলিকপ্টার ইঞ্জিন ও জেট ইঞ্জিন নিয়ে আলোচনা, স্যাফ্রন গ্রুপ এবং তাদের ভারতীয় সহযোগীদের মধ্যে চমৎকার সহযগিতারও প্রশংসা করেছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী মোদী পিনাক এমবিএলআর খুঁটিয়ে দেখার জন্য ফরাসী সেনাবাহিনীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ফ্রান্স এটি গ্রহণ করলে তা ভারত – ফ্রান্স প্রতিরক্ষা সংযোগের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।

দুই নেতা যৌথ সামরিক মহড়ার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁরা জানুয়ারি মাসে ফরাসী রণতরী চার্লস দ্য গল – এর ভারতে আসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। ফ্রান্সের বহুজাতিক মহড়া লা পেরাউস – এ ভারতীয় নৌ-বাহিনীর অংশগ্রহণকেও স্বাগত জানানো হয়।

দুই নেতা প্যারিসে ২০২৪ সালের ৫-৬ ডিসেম্বর এফআরআইএনডি – এক্স এর সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এটি ভারত – ফ্রান্স প্রতিরক্ষা শিল্প রোডম্যাপ হরাইজন ২০৪৭ – এর সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত অংশীদারিত্বকে আরও নিবিড় করতে দুই নেতা ডিজিএ এবং ডিআরডিও-র মধ্যে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংক্রান্ত সহযোগিতার একটি কাঠামো দ্রুত শুরু করার উপর জোর দিয়েছেন। গবেষণা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত অংশীদারিত্বের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগুলিকে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে ফ্রান্সের ওএনইআরএ এবং ভারতের ডিআরডিও-র মধ্যে যে আলোচনা চলছে, তাকেও স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা।

মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনের যুদ্ধ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দুই নেতার মধ্যে বিশদে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে এবং সুসমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে সহমত হয়েছেন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময় ভারত – মধ্যপ্রাচ্য – ইউরোপ করিডরের সূচনার উল্লেখ করে দুই নেতা সংযোগ বৃদ্ধি, সুস্থিত বিকাশ এবং দূষণমুক্ত জ্বালানীর লক্ষ্যে এর আরও বেশি কার্যকর ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছেন।

ভারতের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক সুদৃঢ় করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন দুই নেতা।

অস্ট্রেলিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দিয়ে ফ্রান্স, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মধ্যে হওয়া যৌথ সামরিক মহড়ার প্রশংসা করেছেন দুই নেতা। অর্থনীতি, উদ্ভাবন, স্বাস্থ্য, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং সমুদ্র ক্ষেত্রে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার কথা বলেছেন তাঁরা।

দুই নেতা এক মুক্ত অন্তর্ভুক্তিমূলক নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতি তাঁদের অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

মহাকাশ ক্ষেত্রে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে সহযোগিতা আরও নিবিড় করতে সহমত হয়েছেন দুই নেতা।

দুই নেতাই দ্বিধাহীনভাবে সবধরনের সন্ত্রাসবাদের প্রতি তাঁদের তীব্র ধিক্কার ব্যক্ত করেছেন। সীমান্তপারের সন্ত্রাসের নিন্দা করে সন্ত্রাসে মদত দেওয়া অর্থের যোগান বন্ধ করার এবং সন্ত্রাসবাদীদের সুরক্ষিত স্বর্গগুলিকে নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড এবং ফ্রান্সের জিআইজিএন – এর মধ্যে সন্ত্রাস প্রতিরোধে সংস্থাগত সহযোগিতাকে স্বাগত জানান তাঁরা।

অসামরিক বিমান ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্বিক কাঠামো গড়ে তুলতে দু’পক্ষের মধ্যে যে আলোচনা চলছে তাকেও স্বাগত জানিয়েছেন দুই নেতা।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ পরমাণু শক্তির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ভারত – ফ্রান্স পরমাণু শক্তি সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার করেছেন দুই নেতা।

পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার উপর দুই নেতা বিশেষ জোর দিয়েছেন।

ভারত – ফ্রান্স ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় ত্রিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়ে দুই নেতা বলেছেন, এর লক্ষ্য হ’ল – পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা করা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে সুস্থিত উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক প্রকল্পগুলির রূপায়ণ।

২০২৪ সালে রেকর্ড পরিমাণ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সন্তোষ প্রকাশ করে দুই নেতা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অসীম সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ১৯৬৬ সালে প্রথম সাংস্কৃতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর ৬০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দুই নেতা আরও বেশি সাংস্কৃতিক বিনিময় ও অনুষ্ঠান আয়োজনে সহমত হয়েছেন।

২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিকের সফল আয়োজনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ২০৩৬ সালে ভারত অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক আয়োজনের দাবি জানাবে। এক্ষেত্রে ফ্রান্সের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার কথা বলেছেন শ্রী মোদী।

দুই নেতা রাইসিনা ডায়ালগের আঞ্চলিক সংস্করণ প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছেন। সরকার, শিল্পনেতা, বাণিজ্য ও সংযোগ ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা আরো বাড়াবার কথা বলেছেন তাঁরা।

ভারত – ফ্রান্স অভিবাসন ও যাতায়াত সংক্রান্ত অংশীদারিত্ব চুক্তির আওতায় ইয়ং প্রফেশনাল স্কিম চালু হওয়াকে দুই নেতা স্বাগত জানিয়েছেন।

ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে যে সার্বিক ও গতিশীল কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে, তা আরও নিবিড় করতে এবং হরাইজন ২০৪৭ রোডম্যাপের অনুসরণে তা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে দুই নেতা সহমত হয়েছেন।

 

SC/SD/SB