Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ভারতের চন্দ্রবিজয় আমাদের জাতীয় গর্ব; চাঁদের মাটি স্পর্শ করার মুহূর্তটি হল এই ধরনের অভিযানে অনুপ্রাণিত হওয়ার আরও একটি বিরল মুহূর্ত

ভারতের চন্দ্রবিজয় আমাদের জাতীয় গর্ব; চাঁদের মাটি স্পর্শ করার মুহূর্তটি হল এই ধরনের অভিযানে অনুপ্রাণিত হওয়ার আরও একটি বিরল মুহূর্ত


নয়াদিল্লি, ২৬ আগস্ট, ২০২৩

 

 

ভারতের চন্দ্রাভিযানকে নিছক সাফল্য আখ্যা দিতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মতে, এই প্রচেষ্টা অসীম মহাকাশে ভারতের বৈজ্ঞানিক সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছে। চন্দ্রবিজয়ের এই ঘটনা আমাদের জাতীয় গর্ব, যা আজ পৌঁছে গেছে চন্দ্রপৃষ্ঠেও। এই ঘটনাকে এক কথায় নজিরবিহীন বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বর্তমান ভারত শুধুমাত্র অকুতোভয়ই নয়, একইসঙ্গে তা অনলস পরিশ্রমী। এ হল এমনই এক ভারত যে একদা অন্ধকারকে আলোকিত করেছে কারণ, ভারত সবকিছুকেই নতুন দৃষ্টিতে অভিনব উপায় ও পদ্ধতিতে নতুন করে আবিষ্কার করে। একুশ শতকে বিশ্বে বড় বড় সমস্যাগুলির সমাধান প্রচেষ্টায় ভারত এখন প্রস্তুত। 

আজ বেঙ্গালুরুতে ইসরো-র টেলিমেট্রিক ট্র্যাকিং অ্যান্ড কম্যান্ড নেটওয়ার্ক (ISTRAC)-এ চন্দ্রায়নের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় মিলিত হন প্রধানমন্ত্রী। গ্রীস থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করে ‘চন্দ্রায়ন-৩’ মিশনের সাফল্যে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের অভিনন্দিত করতে তিনি এইভাবেই তাঁদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় মিলিত হন। 

বেঙ্গালুরুর ISTRAC পরিদর্শনের সুযোগ পেয়ে দৃশ্যতই আনন্দিত দেখায় প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, এ হল এক বিরল মুহূর্ত যা আমার মন ও শরীরকে এক আনন্দানুভূতিতে ভরিয়ে দিয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চন্দ্রাভিযান সফল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসী মনেপ্রাণে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্তের স্বাদ অনুভব করেছেন। এইভাবে চন্দ্র স্পর্শের স্বাদ অনুভব করা এই শতকে আমাদের জাতীয় জীবনে প্রেরণাদায়ক এক মুহূর্ত। এই সাফল্যের জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের অবদানকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী। 

শ্রী মোদী বলেন, চাঁদের যে অংশটির ছবি এতদিন পর্যন্ত আমাদের কাছে অধরা ও অদেখা ছিল, তাই এখন আমাদের কাছে আলোর মতোই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শক্তিকে এবং ভারতের অনলস প্রচেষ্টাকে আজ স্বীকৃতি জানিয়েছে সমগ্র বিশ্ব।

চন্দ্রায়ন টিমের সাফল্য শুধুমাত্র ভারতের একার সাফল্যই নয়, বরং তা সমগ্র মানবজাতির এক সফল উদ্যোগ। ভারতের এই অভিযান প্রতিটি দেশের চন্দ্রাভিযানকে উৎসাহিত করবে। চাঁদের রহস্য উন্মোচনের ক্ষেত্রে ভারতের এই অভিযান যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আমাদের আরও সক্রিয়ভাবে প্রস্তুত থাকার কাজে উৎসাহিত করবে। চন্দ্রাভিযানের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, কলাকুশলী এবং অন্যান্যদের অকুন্ঠভাবে অভিনন্দিত করেন তিনি। 

শ্রী মোদী ঘোষণা করেন, যে অংশটিতে ‘চন্দ্রায়ন-৩’-এর মুন ল্যান্ডারটি স্পর্শ করেছে তা এখন থেকে ‘শিবশক্তি’ বলে পরিচিত হবে কারণ, শিব হল এমনই এক সঙ্কল্প যার লক্ষ্য মানবকল্যাণ। অন্যদিকে, সেই সঙ্কল্প পূরণে শক্তি আমাদের বল ও সাহস যোগায়। শুধু তাই নয়, চাঁদের যে অংশটি এখন থেকে ‘শিবশক্তি’ বলে পরিচিত হবে তা আমাদের হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী অভিযানের এক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে। 

বিজ্ঞানচর্চার কল্যাণময় দিকটির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই আমরা আমাদের সঙ্কল্প ও শক্তির কথা উল্লেখ করি, তখন আরেকটি শক্তির কথাও আমাদের উজ্জীবিত করে। সেটি হল নারীশক্তি। ‘চন্দ্রায়ন-৩’ মিশনে দেশের মহিলা বিজ্ঞানীরা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ‘শিবশক্তি’র স্থানটি ভারতের বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক চিন্তাভাবনারই সাক্ষী হয়ে থাকবে। সাফল্য হল এমনই এক গ্যারান্টি যেখানে মানুষের প্রবল ইচ্ছাশক্তি বিশেষভাবে কাজ করে। 

বিশ্বে ভারতই হল চতুর্থ রাষ্ট্র যে সফলভাবে চাঁদকে স্পর্শ করতে পেরেছে। এই কথাটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল অতি সাধারণভাবে। কিন্তু তা থেকেই আজ আমরা এতদূরে পৌঁছে যেতে পেরেছি। এক সময় ভারতকে তৃতীয় বিশ্বের এমন একটি দেশ বলে মনে করা হত যার নাকি প্রযুক্তিগত কোনো উদ্যোগ নেই। কিন্তু আজ বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির একটি দেশ হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে আত্মপ্রকাশ করেছে আমাদের দেশ। সেই অর্থে পরিবেশ বা প্রযুক্তি, যেদিক থেকেই ধরা হোক না কেন, ভারত রয়েছে বিশ্বের সফল দেশগুলির সঙ্গে প্রথম সারিতেই। আমাদের এই সাফল্যের পেছনে ইসরো-র কৃতিত্বকে কোনো অংশেই আমরা ছোট করে দেখতে পারি না। কারণ, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র কর্মপ্রচেষ্টাকে আজ তাঁরা চাঁদে পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পেরেছেন।

দেশবাসীর স্বার্থে ইসরো-র বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ ভারত থেকে চাঁদের দক্ষিণ দিকে পৌঁছনো একটি সহজ যাত্রা মাত্র ছিল না। এজন্য ইসরো-কে একটি কৃত্রিম চাঁদও তার গবেষণার স্বার্থে তৈরি করতে হয়েছে। ভারতের যুবশক্তিরও এ ধরনেরই উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উদ্ভাবন প্রচেষ্টা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মঙ্গলায়ন ও চন্দ্রায়নের সাফল্য এবং গগনায়নের জন্য প্রস্তুতি দেশের তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি করে উৎসাহিত করেছে। ইসরো-র বিজ্ঞানীদের এই শ্রম ও সাফল্য ভারতের এক নতুন প্রজন্মকে জন্ম দিতে চলেছে। এইভাবে তাঁদের মধ্যে সঞ্চারিত হবে শ্রম ও উদ্যোগের এক বিশেষ ধারাবাহিকতা। চন্দ্রায়ন দেশের অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও উৎসাহ যুগিয়েছে। এখনকার বিজ্ঞানীদের মধ্যেই দেশের প্রায় প্রত্যেকটি শিশু তার আগামীদিনের ভবিষ্যৎকে প্রত্যক্ষ করছে।

শ্রী মোদী বলেন, মহাকাশ ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতা শুধুমাত্র উপগ্রহ উৎক্ষেপণ বা মহাকাশ অনুসন্ধানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, মানুষের জীবনকে আরও সহজ করে তোলা এবং প্রশাসনিক কাজকর্মকে সরল করে তোলার লক্ষ্যেও এই শক্তি কাজ করে যাবে। ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’, শিক্ষা, যোগাযোগ এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রেও মহাকাশ প্রযুক্তিকে আমরা কাজে লাগিয়েছি। টেলি-মেডিসিন এবং দূরশিক্ষা ক্ষেত্রেও মহাকাশ প্রযুক্তি আমাদের নানাভাবে সাহায্য করেছে। শুধু তাই নয়, মহাকাশ প্রযুক্তি আমাদের ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’-এর ভিত রচনা করেছে। বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি রচনা, রূপায়ণ ও তার তদারকিতে মহাকাশ শক্তিকে আমরা কাজে লাগিয়েছি। এইভাবেই মহাকাশ শক্তিকে আমরা মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে ব্যবহার করেছি। 

প্রশাসন ও পরিচালনের ক্ষেত্রে মহাকাশ প্রযুক্তির ওপর একটি জাতীয় হ্যাকাথন আয়োজন করার জন্য ইসরো-র বিজ্ঞানীদের অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলির দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই কাজ করা যেতে পারে। জাতীয় হ্যাকাথন আয়োজিত হলে দেশের প্রশাসন ও পরিচালন যে আরও আধুনিক ও সক্রিয় হয়ে উঠবে, এ বিষয়ে তাঁর স্থির বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের তরুণ প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্যোতির্বিজ্ঞানকে নতুনভাবে এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংজ্ঞায়িত করার জন্য আমি আহ্বান জানাব দেশের বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে, কারণ তা আমাদের ঐতিহ্য ও বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার এই অমৃতকালে আমাদের গবেষণা ও অনুসন্ধান প্রচেষ্টার মূল্যবান সম্পদকে আমরা আরও বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করে যাব।

শ্রী মোদী বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতের মহাকাশ শিল্পে বিনিয়োগের মাত্রা বর্তমানের ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে আগামীদিনে ১৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়া অসম্ভব কিছু নয় বরং, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তা বাস্তব হতে চলেছে কারণ মহাকাশ ক্ষেত্রের সমস্ত প্রচেষ্টার সঙ্গে নিরলসভাবে যুক্ত রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেইসঙ্গে যুক্ত রয়েছে দেশের তরুণ ও যুব সমাজের শক্তি। গত চার বছরে ভারতে মহাকাশ সম্পর্কিত স্টার্ট-আপ-এর সংখ্যা ৪ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫০টিতে। চন্দ্রায়ন মিশনের সাফল্য সম্পর্কে এক ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য দেশের ছাত্রছাত্রীদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে MyGov পোর্টালটিতে এই ক্যুইজের আয়োজন করা হবে।

একুশ শতকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের নবীনতম প্রতিভা হল ভারত। অতলস্পর্শী সমুদ্র থেকে সুউচ্চ মহাকাশ পর্যন্ত অনেক কিছুই করার রয়েছে দেশের তরুণ প্রজন্মের। তাদের কাছে দেশ এখন নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার একের পর এক উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে দেশের বিজ্ঞানীরা হলেন ‘রোলমডেল’ বিশেষ, কারণ তাঁদের গবেষণা এবং বছরের পর বছর ধরে নিরলস পরিশ্রম একথাই প্রমাণিত করেছে যে মানসিক দিক দিয়ে প্রস্তুত থাকলে সব কাজেই সাফল্য আসতে বাধ্য।

পরিশেষে শ্রী মোদী বলেন, সমগ্র দেশের আস্থা রয়েছে আমাদের বিজ্ঞানীদের ওপর। এইভাবেই জনসাধারণের আশীর্বাদ নিয়ে ভারত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্বদানের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে। এইভাবেই সমান শক্তি ও উৎসাহ নিয়ে উদ্ভাবন প্রচেষ্টাতেও সামিল হয়েছি আমরা যা উন্নত ভারত গঠনের স্বপ্নকে আগামীদিনে সফল করে তুলবে বলেই তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।

 

AC/SKD/DM/