Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১০৩তম অধিবেশনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১০৩তম অধিবেশনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১০৩তম অধিবেশনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১০৩তম অধিবেশনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১০৩তম অধিবেশনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১০৩তম অধিবেশনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১০৩তম অধিবেশনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী


মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০৩তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজ্ঞান কংগ্রেসের এ বছরের আলোচ্য বিষয় ‘ভারতে দেশীয় উদ্ভাবনের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ’। এই উপলক্ষে ২০১৫-১৬ সালের জন্য ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের পুরস্কারগুলিও প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কৃতি গবেষক ও বিজ্ঞানীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ভারতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে তাঁদের কাজকর্মের সুবাদেই। এই প্রসঙ্গে মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ অবদানের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতের বিশিষ্ট দার্শনিক তথা দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ডঃ রাধাকৃষ্ণন এবং ভারতরত্ন অধ্যাপক সি এন আর রাও এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গেই এক সময় যুক্ত ছিলেন। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস এবং মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সূচনা প্রায় সমসাময়িক বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তখন ভারতের নবজাগরণের যুগ। শুধুমাত্র মুক্তি বা স্বাধীনতাই নয়, ভারতে মানুষের অগ্রগতির লক্ষ্যেও তা ছিল এক গভীর অনুসন্ধান। শুধুমাত্র স্বাধীন ভারত গড়ে তোলাই ঐ নবজাগরণের মুহূর্তে একমাত্র স্বপ্ন ছিল না। সেইসঙ্গে, মানবসম্পদ, বৈজ্ঞানিক সামর্থ্য এবং শিল্পোন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশকে বলশালী করে তোলাও ছিল ঐ সময়ের এক ঐকান্তিক বাসনা। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তাই ভারতের এক মহান প্রজন্মের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। একইসঙ্গে ভারতে বর্তমানে সূচিত হয়েছে সুযোগ ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আর এক বিপ্লবের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবকল্যাণ এবং অর্থনৈতিক বিকাশের যে লক্ষ্য আমরা স্থির করেছি তার দ্রুত বাস্তবায়নে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ওপর আমরা নির্ভরশীল। বিশ্বের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে মানুষের অনুসন্ধিৎসা, জ্ঞানান্বেষণ এবং মানবজীবনের বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলার মধ্য দিয়ে। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আব্দুল কালামের মধ্যে এক্ষেত্রে ছিল বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দীপনা। বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার মধ্যেই তিনি অতিবাহিত করে গেছেন তাঁর জীবন। সমগ্র মানবজাতির জন্য ছিল তাঁর অপরিসীম উদ্বেগ ও গভীর মমতাবোধ। তাঁর কাছে বিজ্ঞান ছিল দুর্বল, বঞ্চিত এবং যুবসমাজের জীবনে রূপান্তরের লক্ষ্যে এক হাতিয়ার বিশেষ। তাঁর জীবনের লক্ষ্যই ছিল স্বনির্ভর এক ভারত গড়ে তোলা যার মধ্যে নিহিত থাকবে শক্তি ও দেশবাসীর প্রতি সহমর্মিতা। বর্তমান বিজ্ঞান কংগ্রেসের মূল বিষয়টি তাই ডঃ কালামের জীবনদর্শনের প্রতি এক শ্রদ্ধার্ঘ্য বিশেষ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধ্যাপক রাও ও রাষ্ট্রপতি কালামের মতো মহান নেতা এবং আপনাদের মতো বিজ্ঞানীরাই বহু বছর ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতকে এক অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছেন। ক্ষুদ্র অণু-পরমাণু থেকে বিশাল মহাকাশ পর্যন্ত বিধৃত আমাদের সাফল্য। খাদ্য ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নিরাপত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও আমরা সফল। বিশ্ববাসীর জন্য উন্নততর জীবনযাপনের আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে আমাদের কণ্ঠেই। এইভাবে মানুষের মধ্যে আশা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রচেষ্টাকেও উত্তরোত্তর জোরদার করে তুলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর কাছে সুশাসনের অর্থ শুধুমাত্র নীতি প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণমাত্র নয়, কিংবা স্বচ্ছতা বা দায়িত্বশীলতাও নয়, সুশাসনের অর্থ এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সমন্বয়সাধন। দেশের ডিজিটাল নেটওয়ার্ক সরকারি পরিষেবার মান যেমন উন্নত করেছে, তেমনই দরিদ্র মানুষের স্বার্থে সামাজিক কল্যাণেও তা সফল হয়েছে। দেশের প্রথম জাতীয় মহাকাশ সম্মেলনে চিহ্নিত হয়েছে ১৭০টি বিষয় যা আমাদের শাসন ব্যবস্থা, উন্নয়ন এবং সংরক্ষণের ক্ষেত্রগুলির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’ আন্দোলন দেশে উদ্ভাবন ও শিল্পোদ্যোগকে যেমন উৎসাহিত করবে, অন্যদিকে তেমনই প্রযুক্তির প্রয়োগ ও উদ্ভাবন সেইভাবে প্রাণ সঞ্চার করবে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতার নীতিতে অবিচল থেকে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ককে আমরা এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছি। এইভাবেই কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে ঘনিষ্ঠতর সহযোগিতা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও। বিজ্ঞানের জন্য সম্পদ আহরণের মাত্রাও আমরা ক্রমশ বাড়িয়ে তুলব এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার প্রয়োগও সম্ভব করে তুলব। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশাসন এবং বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার মানের উন্নয়নেও আমরা সতত সচেষ্ট রয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র উদ্ভাবনই আমাদের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একমাত্র লক্ষ্য নয়, বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও উদ্ভাবনের রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু উদ্ভাবন সম্পর্কে চিন্তাভাবনার দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকারের একার নয়, এ দায়িত্ব সকলের। বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিরও।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমিত সহায়সম্পদ এবং প্রতিযোগিতার আবহে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি আমাদের অবশ্যই সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। বিশেষত ভারতের মতো একটি দেশে যেখানে চ্যালেঞ্জ রয়েছে প্রচুর এবং সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে অফুরন্ত সেখানে স্বাস্থ্য, ক্ষুধা, জ্বালানি ও অর্থনীতির মতো ক্ষেত্রগুলিতে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলি আমাদের চিহ্নিত করতে হবে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করেই।

শ্রী মোদি বলেন, ২০১৫-তে দুটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে বিশ্ব আঙ্গিনায়। গত সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রসঙ্ঘে গৃহীত হয়েছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি। ঐ সময়কালের মধ্যে দারিদ্র্য নির্মূল করা এবং অর্থনৈতিক বিকাশ তথা প্রগতিকে অগ্রাধিকারের শীর্ষে রাখার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে এই কর্মসূচি। আমাদের পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতাকে অক্ষত ও অক্ষুণ্ণ রাখার অঙ্গীকারও গ্রহণ করা হয়েছে একইসঙ্গে। অন্যদিকে, গত নভেম্বরে প্যারিসে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সমবেত হয়েছিলেন এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরের অঙ্গীকার নিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যার মোকাবিলায় এই সিদ্ধান্ত ছিল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রেও উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিকে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার কাজে যুক্ত করতে পেরে আমরা সাফল্য অর্জন করেছি। শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেই আমরা সন্তুষ্ট থাকতে পারি না। বিশুদ্ধ জ্বালানির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতেও আমাদের প্রচেষ্টাকে অপ্রতিহত রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার জন্যই শুধুমাত্র উদ্ভাবন জরুরি নয়, উদ্ভাবনের প্রয়োজন জলবায়ুর প্রতি সুবিচারের লক্ষ্যেও।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে জাতীয় বিনিয়োগ দ্বিগুণ করে তোলার সঙ্কল্প আমরা গ্রহণ করেছি। আমরা গড়ে তুলতে চাই এমন এক বিশ্ব অংশীদারিত্ব যার মধ্যে সরকারের দায়বদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত থাকবে বেসরকারি ক্ষেত্রের উদ্ভাবনী কার্যক্ষমতা। পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি শক্তিকে আরও ব্যয়সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যেও প্রয়োজন উদ্ভাবনী শক্তির। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১৭৫ গিগাওয়াট পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে এই উদ্ভাবনী শক্তির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানিকে আরও বিশুদ্ধ করে তোলার দায়িত্ব আমরা পালন করব। মহাসাগরের ঢেউ থেকে ভূ-তাপ নির্গত শক্তিকে ব্যবহার করে আমরা নতুন নতুন বিকল্প জ্বালানি শক্তি উদ্ভাবনে সচেষ্ট থাকব। প্যারিসে ভারত এক আন্তর্জাতিক সৌর সমঝোতার সূচনা করে সৌরশক্তি সমৃদ্ধ দেশগুলির মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে। বিশুদ্ধ জ্বালানিকে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার লক্ষ্যেও এক কার্যকর হাতিয়ার রূপে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে জলবায়ুর পক্ষে সহনশীল কৃষি ব্যবস্থার বিকাশে। পৃথিবীর জল-হাওয়া, জীববৈচিত্র্য, হিমবাহ, সমুদ্র – সর্বত্রই জলবায়ুর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে আগাম সতর্কতাদান ব্যবস্থাকেও করে তুলতে হবে আরও জোরদার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত নগরায়নের চ্যালেঞ্জ আমাদের গ্রহণ করতে হবে। এক নিরন্তর বিশ্বসংসার গড়ে তোলার কাজে তা একান্ত জরুরি। কারণ, মানব ইতিহাসে এই প্রথমবার আমরা প্রবেশ করেছি নগরায়নের এক শতকে। এই শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়কালে বিশ্বের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই হবেন নগরবাসী। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই বাস করবেন শহরাঞ্চলে। আর এই লক্ষ্যেই আমি গুরুত্ব আরোপ করেছি ‘স্মার্ট নগরী’ গড়ে তোলার ওপর। আমাদের লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজন বলিষ্ঠ নীতি যেজন্য আমাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ। নগর পরিকল্পনার কাজে গড়ে তুলতে হবে উন্নততর বৈজ্ঞানিক পন্থা-পদ্ধতি। একইসঙ্গে, সংবেদনশীল থাকতে হবে ঐতিহ্য ও পরিবেশের প্রতিও। কঠিন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনাও আমাদের কর্মপ্রচেষ্টার আরেকটি দিক। বর্জ্য থেকে একদিকে যেমন আমরা গৃহ নির্মাণের মাল-মশলা তথা সরঞ্জাম তৈরি করতে পারি, অন্যদিকে তা থেকে আমরা আহরণ করতে পারি জ্বালানি শক্তি। নির্মল পরিবেশে আমাদের শিশুরা যাতে শহরাঞ্চলে স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই। আর এজন্য আমাদের প্রয়োজন বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তিকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর ৭০ শতাংশ অঞ্চলেই রয়েছে মহাসাগর। মহাসমুদ্রের উপকূল রেখার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে বাস মানবজাতির ৪০ শতাংশের। বিশ্বের বড় বড় শহরগুলির ৬০ শতাংশই গড়ে উঠেছে এই উপকূল রেখাকে অবলম্বন করে। ভারতের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে সমুদ্র তথা মহাসাগরেরও রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই কারণেই সমুদ্র অর্থনীতি তথা ‘নীল অর্থনীতি’র দিকে আমরা আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছি। সমুদ্র বিজ্ঞানের উন্নয়নেও আমাদের বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা থাকবে অব্যাহত। একইসঙ্গে যুক্ত হবে সামুদ্রিক প্রাণী সম্পর্কে গবেষণা ও জৈবপ্রযুক্তি উন্নয়নের কাজ। সমুদ্র বিজ্ঞান এবং ‘নীল অর্থনীতি’ সম্পর্কে চিন্তাভাবনার ফলশ্রুতিতে আমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছি বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে। এ বছরই আমরা নয়াদিল্লিতে আয়োজন করতে চলেছি ‘সমুদ্র অর্থনীতি ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় রাষ্ট্র’ সম্পর্কে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র তথা মহাসাগরের মতোই নদ-নদীও মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে রয়েছে। সভ্যতার বিকাশ ও বিবর্তন ঘটেছে নদ-নদীর মধ্য দিয়েই। তাই, আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সমুদ্রের এই ভূমিকা থাকবে অক্ষয় ও অব্যয় হয়ে। আমাদের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা, ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার – এ সমস্ত কিছুর জন্যই প্রয়োজন নদ-নদীর সংস্কার ও পুনরুজ্জীবন। কারণ, নদী হল প্রকৃতির অন্তরাত্মা। এক্ষেত্রে প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনী শক্তির। প্রকৃতির সঙ্গে মানবতার সমন্বয়ের পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে সুপ্রাচীন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অনন্ত সম্ভাবনাকেও আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সুপ্রাচীন এই জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মতো মানুষের অভিজ্ঞতা এবং প্রকৃতি অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে আবর্তিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণা। সুপ্রাচীন এই জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং আধুনিক বিজ্ঞানের মধ্যে সমস্ত দূরত্ব ঘুচিয়ে আনতে হবে আমাদেরই যাতে ভবিষ্যতের লক্ষ্যে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের স্থায়ী সমাধানের পথ আমরা খুঁজে পেতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাস্থ্য পরিচর্যার ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির সঙ্গে যোগ-চিকিৎসার মতো প্রাচীন পদ্ধতির সমন্বয় ঘটিয়ে মানুষের সুস্থ থাকা ও ভালো থাকার বাসনাকে আমাদের পূরণ করতেই হবে। বিশেষ করে, মানুষের জীবনযাত্রা তথা জীবনশৈলীর সঙ্গে যে রোগ-ব্যাধিগুলির সম্পর্ক রয়েছে তার মোকাবিলায় আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পাঁচটি বিষয় আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে। প্রথম বিষয়টি হল অর্থনীতি যেখানে আমরা অনুসন্ধান করব ব্যয়সাশ্রয়ী এক স্থায়ী সমাধানের উপায়। দ্বিতীয় বিষয়টি হল পরিবেশ। বাতাসে কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে এনে পরিবেশকে আরও নির্মল ও পরিচ্ছন্ন করে তুলতে হবে। তৃতীয় বিষয়টি হল জ্বালানি শক্তি। আমাদের সমৃদ্ধির সঙ্গে জ্বালানি শক্তির নিবিড় যোগ রয়েছে সত্যি কথা, কিন্তু এই জ্বালানি শক্তিকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে পৃথিবীতে নীল আকাশ ও সবুজ ভূ-প্রকৃতি আমরা নিশ্চিত করে তুলতে পারি। চতুর্থ বিষয়টি হল অনুভব তথা অনুভূতি। সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলিকে অনুধাবন করে আমাদের সেইমতো এগিয়ে যেতে হবে। পঞ্চম তথা সর্বশেষ বিষয়টি হল সমতা। উন্নয়ন এবং দুর্বলতর মানুষের কল্যাণের বিষয়টিকে নিশ্চিত করে তুলতে হবে সমন্বয়সাধনের মনোভাব ও মানসিকতা নিয়ে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বছরটি বিজ্ঞান-ইতিহাসের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনার শতবার্ষিকীর মুহূর্ত। আজ থেকে ১০০ বছর আগে বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন আপেক্ষিকতাবাদ সম্পর্কে তাঁর মতবাদ প্রকাশ করেছিলেন। তাই আজকের দিনটিতে তাঁর সেই মানবদরদী দর্শনের কথা আমাদের অবশ্যই স্মরণ করতে হবে। কারণ তিনি বলেছিলেন, প্রযুক্তিগত সমস্ত উদ্যোগের মূল কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকা উচিত মানুষের জন্য চিন্তাভাবনা এবং তার জন্য ভবিষ্যতের পন্থা নির্ধারণ।

PG/SKD/DM