Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ব্লুমবার্গ ইন্ডিয়া অর্থনৈতিক ফোরাম – ২০১৬ : প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

ব্লুমবার্গ ইন্ডিয়া অর্থনৈতিক ফোরাম – ২০১৬ : প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


মিঃ মিকলথোয়েট,

বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ,

ভদ্র মহোদয় ও ভদ্র মহোদয়াগণ,

ভারতে ব্লুমবার্গের ২০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে আজ এখানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি আনন্দিত। এই সময়কালে ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে ব্লুমবার্গের কাছ থেকে আমরা বুদ্ধিদীপ্ত মতামত ও বিশ্লেষণ লাভ করেছি। আর্থিক ক্ষেত্রে তা হয়ে উঠেছে এক অতি প্রয়োজনীয় বিষয়।

এছাড়াও, স্মার্ট সিটি কর্মসূচির নক্‌শা রচনায় মিঃ মাইকেল ব্লুমবার্গের কাছ থেকে যে সমস্ত মূল্যবান পরামর্শ লাভ করেছি সেজন্য আমি তাঁর কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। বিশ্বের অন্যতম এক প্রধান শহরের মেয়র হিসেবে মিঃ ব্লুমবার্গের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে একটি শহর ভালো করে গড়ে তোলার বিষয়ে। আমাদের স্মার্ট সিটি কর্মসূচির নক্‌শা তৈরির বিষয়টি সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর মতামতকে অনুসরণ করে। এই কর্মসূচির আওতায় ১০০টি শহর গড়ে তোলার ব্যাপারে আমরা বিশেষভাবে আশাবাদী। সারা দেশে নগরোন্নয়নের ক্ষেত্রে এই শহরগুলি হয়ে উঠবে অনুসরণযোগ্য এক আদর্শ।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে ভারতের অবদানকে ঘিরে বিশ্বের প্রত্যাশা এখন প্রচুর। যদি সময় বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তা হলে ভারত কিভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চায় সে সম্পর্কে কিছু কথা আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই।

তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর আমি আমার বক্তব্য রাখবো। প্রথমত, আমার আলোচনার বিষয় হবে ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। দ্বিতীয়ত, কয়েকটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং নীতিগত সংস্কারের একটি রেখাচিত্র আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, যা থেকে উপলব্ধি করা যাবে এই অগ্রগতি সম্ভব করে তোলা এবং তা নিরন্তর রাখার কারণগুলি। আমার তৃতীয় আলোচ্য বিষয় হবে, অর্থনৈতিক বিকাশের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক – কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।

বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই যে, বিশ্ব অর্থনীতির একটি উজ্জ্বলতম কেন্দ্রবিন্দু হল ভারত। একদিকে আমরা যেমন মুদ্রাস্ফীতির হার কমিয়ে আনতে পেরেছি, অন্যদিকে তেমনই লেনদেনের ক্ষেত্রে চলতি অ্যাকাউন্টে ঘটতির পরিমাণও আমরা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পেরেছি। এছাড়াও, উন্নয়নের গতিকেও আমরা রাখতে পেরেছি উর্ধ্বে। এই সমস্তই সম্ভব হয়ে উঠেছে দৈববশে নয়, বরং ভালো নীতির সুবাদে। বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা যাক :-

• ২০০৮ থেকে ২০০৯-এর মধ্যে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৪৭ ডলার থেকে দ্রুত নেমে আসে ৫০ ডলারেরও নীচে। ২০১৪ এবং ২০১৫’র তুলনায় এই সময়ে দাম নেমে যায় দ্রুততর গতিতে। তা সত্ত্বেও ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ভারতের আর্থিক ঘাটতি, চলতি হিসাব খাতে ঘাটতি এবং মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল খুবই খারাপ অবস্থায়। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এই তিনটি ক্ষেত্রই আবার উন্নত হয়ে উঠেছে।

• বিকাশশীল অন্যান্য বহু অর্থনীতিই আমদানিকৃত তেলের ওপর নির্ভরশীল। তেলের মূল্য পরিস্থিতি যদি সাফল্যের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতো, তা হলে ঐ সমস্ত দেশের ক্ষেত্রে তার ফল হতো একই রকম। কিন্তু, বাস্তবে তা হয়নি।

• বিশ্ব বাণিজ্য বা তার অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা খুব একটা সৌভাগ্যের অধিকারী হতে পারিনি; বরং উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতির হার ছিল খুবই কম। তাই, রপ্তানি বৃদ্ধির দিক থেকে কোনও রকম সাহায্য আমরা তা থেকে লাভ করিনি।

• বৃষ্টিপাত বা আবহাওয়া কোনও দিক থেকেই অনুকূল পরিবেশ আমাদের ছিল না। ২০১৪ এবং ২০১৫ দুটি বছরেই আমরা খরা পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। অ-সময়ে শিলাবৃষ্টি ছিল আরেকটি প্রতিকূল ঘটনা। কিন্তু, তা সত্ত্বেও ২০০৯-১০ অর্থ বছরের তুলনায় দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল বেশি এবং মুদ্রাস্ফীতির হারও ছিল কম।

বিশ্ব অগ্রগতির শীর্ষে পৌঁছনো ভারতের ক্ষেত্রে এক অস্বাভাবিক ঘটনা। স্পষ্টতই অনেকেই তা মেনে নিতে পারছেন না। তাই, আমাদের এই সাফল্যকে ছোট করে দেখতে এবং দেখাতে তাঁরা নানা ধরণের অবাস্তব এবং কাল্পনিক মতবাদ প্রচার করে চলেছেন। কিন্তু, প্রকৃত সত্য হল এই যে, ভারতের কষ্টার্জিত অর্থনৈতিক সাফল্যের মূলে রয়েছে দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নীতি এবং সফল ব্যবস্থাপনা। আমাদের নীতিগুলির কথা পরে আমি ব্যাখ্যা করবো। কিন্তু, এখন একটি বিষয়কে আমি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে চাই, তা হল – আর্থিক সংহতি। বিগত দুটি আর্থিক বছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল উচ্চাকাঙ্খামূলক। মূলধনী খাতে ব্যয় বৃদ্ধির সময়েও ঘাটতির মাত্রাকে আমরা কমিয়ে আনতে পেরেছি। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশক্রমে কর রাজস্বের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ভাগে নজিরবিহীন এক কাটছাঁট সত্ত্বেও ঘাটতির পরিমাণ আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আর্থিক ঘাটতিকে জি ডি পি’র ৩.৫ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা আমরা স্থির করেছি। গত ৪০ বছরে এই হার হবে সবচেয়ে কম।

আমাদের অগ্রগতির এই হার এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে বিশ্বের প্রধান প্রধান অর্থনীতিগুলি। তবে, অনেকেই এখন সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন, যাঁদের মতে, অগ্রগতির এই হার সঠিক নয় বলেই তাঁরা মনে করেন। তবে, কিছু প্রকৃত সত্যের অবতারণার মাধ্যমে আমি বোধ হয় তাঁদের এই দ্বিধা বা সংশয় দূর করতে পারবো।

প্রথমেই ঋণ পরিস্থিতির দিকে তাকানো যাক। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে দেশে ঋণ সহায়তা দানের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫’র ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬’র ফেব্রুয়ারি এই এক বছরের মধ্যে ঋণ সহায়তা দানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১১.৫ শতাংশ। বিভিন্ন কর্পোরেট ক্ষেত্রে দেশীয় এবং বিদেশি ঋণ সংগ্রহের বিষয়টি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।

ক্রেডিট রেটিং-এর ক্ষেত্রেও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ এবং ২০১৪’তে যে সমস্ত সংস্থার ক্রেডিট রেটিং ছিল বেশ কম, সেগুলির সংখ্যা ক্রেডিট রেটিং-এর দিক থেকে উন্নত সংস্থাগুলির তুলনায় ছিল অনেক বেশি। কিন্তু, এই পরিস্থিতি এখন আমূল বদলে গেছে। উচ্চ ক্রেডিট যুক্ত শিল্প সংস্থার সংখ্যা এখন ওপরের দিকে। তুলনায় কম ক্রেডিট রেটিং যুক্ত সংস্থার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রথমার্ধে কম ক্রেডিট রেটিং প্রাপ্ত সংস্থা পিছু উন্নত ক্রেডিটের সংস্থার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় দ্বিগুণ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই হার সব থেকে বেশি বলে জানা গেছে।

বর্তমানে কম রেটিং যুক্ত সংস্থাগুলির অবস্থা উন্নততর হয়ে উঠেছে। কম রেটিং যুক্ত সংস্থার তুলনায় বেশি রেটিং-এর সংস্থার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক অনেক গুণে। বড় বড় শিল্প সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে কম রেটিং যুক্ত শিল্প সংস্থার তুলনায় বেশি রেটিং প্রাপ্ত শিল্প সংস্থার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.৮ গুণ। বড় বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছ থেকে বকেয়া প্রাপ্য আদায়ের জন্য সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে।

এবার আমি বিনিয়োগের প্রসঙ্গে আসি। বর্তমান অর্থ বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই সময়কালে ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ এ যাবৎকালের মধ্যে এক সর্বোচ্চ রেকর্ড। কিন্তু আমার মনে হয়, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে নাটকীয়ভাবে। ২০১৪’র অক্টোবর থেকে ২০১৫’র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৪ মিলিয়ন ডলার। যা কিনা ২০১৩’র অক্টোবর থেকে ২০১৪’র সেপ্টেম্বর প্রর্যন্ত ছিল মাত্র ১ মিলিয়ন ডলার। আবার চিনির ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ মিলিয়ন ডলারে। কৃষি সহায়ক সাজসরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮ মিলিয়ন ডলার থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ মিলিয়ন ডলার। এই সবকটি ক্ষেত্রই গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ এই ক্ষেত্রগুলিতে যেভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে তাতে আমি বিশেষভাবে উৎসাহিত।

২০১৫’র সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নির্মাণ সংক্রান্ত কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১৬ শতাংশ। অন্যদিকে, কম্প্যুটার সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ২৮৫ শতাংশ। স্বয়ংক্রিয় যানশিল্পে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৭১ শতাংশ। সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতি যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত ক্ষেত্রগুলিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করেছে এই ঘটনা তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বিশ্বব্যাপী রপ্তানি বাণিজ্যের পরিবেশ প্রতিকূল থাকার ফলে উৎপাদন শিল্পের ফল হয়ে উঠেছে অস্থির। তবে, উৎপাদনের কয়েকটি প্রধান প্রধান ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতির ঘটনা আমরা লক্ষ্য করেছি। মোটরগাড়ি উৎপাদনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.৬ শতাংশ হারে। ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রে এটি হল এক বিশেষ সূচক। পোশাক শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৮.৭ শতাংশ। এই ক্ষেত্রটিতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে বিরাট। আসবাবপত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৫৭ শতাংশ। ফ্ল্যাট ও ঘরবাড়ি কেনার ক্ষেত্রে মানুষ যে আরও বেশি করে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এই ঘটনা তারই প্রমাণ।

এবার ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টিপাত করি। কৃষির কথাই ধরা যাক। অতীতে কৃষি উৎপাদনের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো, কৃষকের আয় বা উপার্জনের ওপর নয়। আমি জোর দিয়েছি আগামী ২০২২ সালের মধ্যে কৃষিজীবী মানুষের আয় দ্বিগুণ করে তোলার ওপর। যদিও আমি এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছি, তবুও এটি শুধুমাত্র একটি চ্যালেঞ্জই নয়। উন্নত কৃৎকৌশল, সুপরিকল্পিত কর্মসূচি, পর্যাপ্ত সহায়সম্পদ এবং দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থায় রূপায়ণের মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্যমাত্রায় উপনীত হওয়া সম্ভব। যেহেতু, দেশের মোট জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল তাই কৃষকদের আয় ও উপার্জন দ্বিগুণ করে তোলা সম্ভব বলে তা থেকে বিশেষভাবে উপকৃত হবে অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিও।

আমাদের প্রকৌশল সম্পর্কে দু-চার কথা বলা যেতে পারে :

• প্রথমত, ব্যাপক বাজেট সংস্থানের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থার ওপর আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি। সেচ ও জল সংরক্ষণ এই দুটি বিষয়কে যুক্ত করে সেচ ব্যবস্থার প্রসারে আমরা এক সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করেছি। আমাদের লক্ষ্য হল – ‘প্রতিটি জলবিন্দুর বিনিময়ে অধিকতর শস্য উৎপাদন’।

• দ্বিতীয়ত, উন্নতমানের শস্যবীজ এবং দক্ষতার সঙ্গে সার ব্যবহারের ওপর আমরা জোর দিয়েছি। মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমরা চালু করেছি ‘সয়েল হেলথ কার্ড’, যার সাহায্যে মাঠের প্রকৃত অবস্থা পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর ফলে, উৎপাদন ব্যয় যেমন হ্রাস পাবে, কৃষকের নিট আয় বা উপার্জনও অনুরূপভাবে বৃদ্ধি পাবে।

• তৃতীয়ত, উৎপাদিত ফসলের একটা বড় অংশ ক্রেতা বা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছনোর আগেই নষ্ট হয়। পচনশীল শস্যের ক্ষেত্রে পরিবহণের সময়েই তা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু যে সমস্ত শস্য পচনশীল নয়, সেগুলি নষ্ট হয় গুদামজাত করার সময়ে। শস্য মজুতের পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে এবং হিমঘর তৈরির বিষয়টিকে জোরদার করে তুলতে আমরা বড় অঙ্কের বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি। এর ফলে, মাঠ থেকে ফসল তোলার পরবর্তীকালে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে খাদ্যশস্য বাঁচানো সম্ভব হবে।

• চতুর্থত, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মূল্য সংযোজনের কাজ শুরু করছি আমরা। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কোকাকোলা সংস্থা সম্প্রতি তাদের তৈরি কয়েকটি ঠান্ডা পানীয়’তে ফলের রস যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

• পঞ্চমত, একটি জাতীয় কৃষি বাজার গঠনের মাধ্যমে যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি আমরা দূর করার চেষ্টা করেছি। ৫৮৫টি নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজারে আমরা একটি বৈদ্যুতিন বিপণন মঞ্চ চালু করতে চলেছি। বিক্রয় মূল্যের বৃহত্তর অংশ যাতে কৃষকদের হাতে গিয়ে পৌঁছয় এবং মধ্যবর্তী দালালদের সংখ্যা যাতে কমিয়ে আনা যায় তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এবারের বাজেটে এই একই উদ্দেশ্যে দেশের খাদ্য উৎপাদন ক্ষেত্রেও আমরা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সূচনা করার প্রস্তাব রেখেছি।

• ষষ্ঠত, আমরা চালু করেছি ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’। এটি হল সারা দেশের একটি শস্য বিমা কর্মসূচি। এর আওতায় স্বল্প ব্যয়ে অনিবার্য পরিস্থিতিজনিত ঝুঁকির হাত থেকে কৃষকদের রক্ষা করার লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। প্রতিকূল জলহাওয়া পরিস্থিতিতে তাঁদের আয় ও উপার্জন যাতে সুরক্ষিত থাকে এই কর্মসূচির মাধ্যমে তা নিশ্চিত করে তোলা হবে।

• সপ্তমত, কৃষি সহায়ক বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে উপার্জন বৃদ্ধির প্রস্তাব রেখেছি আমরা। হাঁস-মুরগী পালন, মৌমাছি পালন, পুকুর ও জলাশয়ে মৎস্যচাষ ইত্যাদির মাধ্যমে যেমন আয় ও উপার্জন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে, অন্যদিকে তেমনই অ-কৃষিযোগ্য জমিকে, বিশেষত জমির সীমানা বা আলগুলিতে গাছ রোপণ এবং সৌরশক্তি আহরণের জন্য সেল বসানোর কাজে উৎসাহিত করে তুলছি কৃষিজীবী মানুষদের।

কতকগুলি বিষয়ের ওপর বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি আমরা :

• উৎপাদন বৃদ্ধি

• সহায়ক উপকরণের দক্ষ ব্যবহার

• ফসল তোলার পরবর্তী পর্যায়ে শস্য ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস

• আরও বেশি করে মূল্য সংযোজন

• বাজারে লাভের মাত্রাকে বাস্তবসম্মত করে তোলা

• ঝুঁকির মাত্রা হ্রাস এবং

• কৃষি সহায়ক কর্মপ্রচেষ্টা

কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা আর্জনে আমরা যে সফল হতে চলেছি, সে সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে আমার। ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থা ক্ষেত্রের প্রবাদ পুরুষ ডঃ এম এস স্বামীনাথন এ বিষয়ে যে আমার সঙ্গে একমত, তা সত্যিই আনন্দের কথা। তিনি আমাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কৃষক-বান্ধব বাজেট পেশের জন্য। কৃষকদের উপার্জন বৃদ্ধির ওপর আমরা যে গুরুত্ব আরোপ করেছি তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য আমি এখানে তুলে ধরতে চাই :

“সার্বিকভাবে বাজেটকে চেষ্টা করা হয়েছে কৃষক-অনুকূল করে তোলার। সহায়সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে তা সম্ভব করে তোলার। কৃষির রূপান্তরের লক্ষ্যে বীজ বপন করা হয়েছে, যাতে দেশের যুবসমাজকে কৃষির প্রতি আকৃষ্ট করে তোলা যায় এবং তাঁদের এর সঙ্গে যুক্ত রাখা যায়। কৃষি ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের অভ্যুদয় হতে চলেছে”।

আমাদের অগ্রগতির মূলে যে সমস্ত নীতি ও কর্মসূচি কাজ করে চলেছে তাঁর কয়েকটি সম্পর্কে এবার আমি কিছু বক্তব্য রাখতে চাই। আমার লক্ষ্য হল – “সংস্কার থেকে রূপান্তর’। একথা আমি আগেও বলেছি। সংস্কারের লক্ষ্য হল, সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে রূপান্তর সম্ভব করে তোলা। প্রশাসনিক সংস্কার এবং তার রূপায়ণে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর কথা দিয়েই আমি শুরু করতে চাই।

ভারতের মতো একটি দেশে সমস্যা রয়েছে প্রচুর। তুলনায় সহায়সম্পদের মাত্রা অপ্রতুল। তাই, প্রাপ্ত সহায়সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব করে তুলতে হবে দক্ষতর রূপায়ণের মাধ্যমে। শুধুমাত্র নীতি ঘোষণা কিংবা তথাকথিত নীতির কথা বলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। এমনকি, নীতি সংস্কারের থেকেও বেশি জরুরি রূপায়ণের প্রকৃতিতে পরিবর্তন ঘটানো। বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা যাক। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন চালু হয় ২০১৩ সালে। কিন্তু অধিকাংশ রাজ্যেই তা বলবৎ করা হয়নি। মহত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ কর্মসূচিতে যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তার অনেকটাই দালাল, মধ্যসত্ত্বভোগী এবং স্বচ্ছল পরিবারগুলির হাতে পৌঁছেছে। যদিও খাতায়-কলমে অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি নথিভুক্ত হয়েছে যথাযথভাবে।

কিন্তু আমরা এখন খাদ্য নিরাপত্তা আইন চালু করছি দেশ জুড়ে। কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ কর্মসূচিতে যে সমস্ত ফাঁকফোকর ছিল, তা আমরা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে পেরেছি। শুধু তাই নয়, যাঁদের জন্য অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, সুফল যাতে তাঁদের হাতেই পৌঁছয় সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করছি। যে স্থায়ী সহায়সম্পদ গড়ে তোলার দিকে আমরা নজর দিয়েছি, তাতে উপকৃত হবেন দেশের জনসাধারণ, দালালরা নয়। আবার, শুধুমাত্র আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুফলের কথা ঘোষণা করেই আমরা থেমে থাকছি না, বরং এই কাজ আমরা বাস্তবে সম্ভব করে তুলেছি। দেশের ২০ কোটি মানুষকে আমরা যুক্ত করতে পেরেছি ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার সঙ্গে।

সাধারণভাবে কর্মসূচি রূপায়ণের কাজে এবং বিশেষভাবে দুর্নীতি রোধের ক্ষেত্রে আমরা যে রেকর্ড স্থাপন করতে পেরেছি তা এখন কারও কাছে অজানা নয়। তাই, আমি সংক্ষেপে বিষয়টি তুলে ধরতে চাই। কয়লা, খনিজ পদার্থ এবং স্পেকট্রাম বন্টনের ক্ষেত্রে নিলাম ব্যবস্থাকে করে তোলা হয়েছে স্বচ্ছতর। ফলে, বড় অঙ্কের আয়ও সম্ভব হয়েছে। দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করা গেছে। প্রতিদিন সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। বন্দরের কাজকর্মেও ঘটেছে রেকর্ড উন্নতি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা বেশ কয়েকটি নতুন কর্মসূচিও চালু করেছি। থেমে থাকা প্রকল্পগুলির সংখ্যা আমরা কমিয়ে এনেছি। দাভোল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বহুদিন বন্ধ থাকার পর আমাদের সমবেত প্রচেষ্টায় পুনরায় চালু হয়েছে। এখানে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ায় অনেকের রুজি-রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ার হাত থেকে আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণও কমিয়ে আনা গেছে। এবার আমি নীতি সংস্কার প্রসঙ্গে দু-এক কথা বলতে চাই। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মুদ্রাস্ফীতির হার স্থায়ীভাবে কমিয়ে আনার কথা আমি উল্লেখ করেছি। আর্থিক নীতিকে শক্তিশালী করে তুলতে আমরা যে সমস্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি তার ফলশ্রুতিতেই তা সম্ভব হয়ে উঠেছে। গত বছর ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-এর সঙ্গে আমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছি এক আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলার বিষয়ে।

এ বছর অর্থ বিলে আমরা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-এর সংশোধনের প্রস্তাব এনেছি। সংশোধনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে একটি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে পারবে। এছাড়া, আর্থিক নীতি সংক্রান্ত এক কমিটির মাধ্যমে অর্থ সংক্রান্ত নীতিও স্থির করতে পারবে। এই কমিটিতে সরকারের পক্ষ থেকে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। এই সংস্কারের মাধ্যমে অর্থ সংক্রান্ত নীতির ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখা হবে মুদ্রাস্ফীতির দিকে এবং এক প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু করা যাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের কাজে। উন্নত কয়েকটি দেশের তুলনায় ভারতে যে এই কাজ আরও জোরদার হয়ে উঠবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর্থিক সংহতি রক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক দূরদৃষ্টি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে বৃহৎ অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি আমাদের এক বলিষ্ঠ অঙ্গীকার।

আমরা আরেকটি বড় ধরণের নীতিগত সংস্কার প্রচেষ্টার উদ্যোগ নিয়েছি পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রে। নতুন হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধান সম্পর্কিত লাইসেন্স নীতির আওতায় মূল্য নির্ধারণ এবং বিপণনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বাধীনতা পাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া, রাজস্ব ভাগের ক্ষেত্রেও এক স্বচ্ছ উপায় বা পদ্ধতি খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। এর ফলে, বিভিন্ন পর্যায়ে আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণকে দূর করা সম্ভব হয়ে উঠবে। বর্তমানে চালু যে সমস্ত প্রকল্পগুলির কাজ খুব বেশি এগোয়নি, সেখানেও আমরা বিপণন ও মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

সংসদে অনুমোদিত হয়েছে আবাসন নিয়ন্ত্রণ আইন রচনার প্রস্তাব, যা আবাসনের ক্ষেত্রে এক বড় ধরণের পরিবর্তন সম্ভব করে তুলবে। এর ফলে, ক্রেতাসাধরণের স্বার্থ যেমন সুরক্ষিত থাকবে, তেমনই এক সৎ ও সুস্থ বাতাবরণ সৃষ্টি হবে আবাসন শিল্প ক্ষেত্রে। এই বিলটি বহুদিন মুলতুবি থাকার পর অনুমোদিত হওয়ার ফলে দরিদ্র ও মধ্যবর্তী ক্রেতা এবং আবাসন নির্মাতাদের কর সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা দানেরও প্রস্তাব রূপায়ণ সম্ভব হয়ে উঠবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রে ‘উদয়’ কর্মসূচিটি রাজ্য সরকারগুলির সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত কাঠামোতে স্থায়ীভাবে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। উচ্চাকাঙ্খামূলক লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে এখন যুক্ত হবে প্রকল্প রূপায়ণ সংক্রান্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রসারের বিষয়টি।

এই কর্মসূচির আওতায় লোকসানে চলা বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাগুলির ক্ষতির পরিমাণটি রাজ্য সরকারগুলি তাদের আর্থিক ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে। কিন্তু, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রটিকে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা সম্ভব হবে রাজ্যগুলির পক্ষে। ইতিমধ্যেই ৯টি রাজ্য এ ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে। আরও ৯টি রাজ্যও সম্মত হয়েছে এই চুক্তি সম্পাদনে। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাগুলির মোট ঋণের ৪০ শতাংশেরও বেশি দায় স্বীকার করে নিয়েছে চুক্তিবদ্ধ ৯টি রাজ্য।

পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে সরকারের দ্রুত নীতি সংস্কার সম্পর্কে আপনারা সম্ভবত ইতিমধ্যেই অবহিত। প্রতি বছর ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটেরও কম সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে আমরা এখন উন্নীত হতে চলেছি বছরে ১০ হাজার মেগাওয়াট করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আমাদের একটি প্রকৌশল হিসেবে যখন আমি ১৭৫ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার কথা ঘোষণা করেছিলাম, তখন অনেকেই তা শুনে অবাক হয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার সংশয় ও সন্দেহ প্রকাশও করেছিলেন। তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা এই মাসে যে প্রতিবেদন পেশ করেছে, তাতে জানা গেছে যে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে বিশ্বে কার্বন নির্গমনের হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবস্থায় একটি নতুন আইন অনুমোদন লাভ করেছে সংসদে। এর ফলে, দক্ষ পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টি আরও সহজ হয়ে উঠবে। নৌ-পরিবহণযোগ্য জলপথের সংখ্যা ৫ থেকে উন্নীত হবে ১০৬-এ।

রেল ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এতদিন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতি চালু করা হয়নি। কিন্তু নীতিটির পরিবর্তনের ফলে তা এখন সম্ভব হতে চলেছে। শুধু তাই নয়, বিমা সহ আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সীমাকেও আরও বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। সংস্কারের ফলও ইতিমধ্যে আমরা লাভ করেছি। বিহারে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে স্থাপিত হতে চলেছে দুটি রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা। বিমা ক্ষেত্রে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা কি না প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বিনিয়োগ করা হচ্ছে ১২টি সংস্থায়।

শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রেও বিদেশি বিনিয়োগের সীমা আমরা আরও বাড়িয়ে তুলেছি। এ সমস্ত সংস্কার প্রচেষ্টা সম্পর্কে আপনারা অবহিত রয়েছেন বলেই আমার ধারণা। আপনাদের আলোচ্য সূচিতে ‘নতুন অর্থনীতি’র বিষয়টি যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তা আমি লক্ষ্য করেছি।

পরিশেষে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমরা যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি সেই প্রসঙ্গে কিছু বক্তব্য রাখছি। এই বিষয়টি রয়েছে আমার অগ্রাধিকারের তালিকায়। ভারতে মূলধনী সহায়সম্পদের পরিমাণ সীমিত। কিন্তু, শ্রমশক্তি রয়েছে প্রচুর। তা সত্ত্বেও কর্পোরেট কর কাঠামো মূলধন-কেন্দ্রিক উৎপাদন সম্পর্কেই বেশি আগ্রহী। শ্রমশক্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও সামাজিক সুরক্ষা কিংবা প্রথাগত কর্মসংস্থান ছাড়া অস্থায়ী কর্মসংস্থানের প্রবণতাই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি আমরা।

প্রথমত, কোনও সংস্থা যদি কর সংক্রান্ত অডিটের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমশক্তি বৃদ্ধি করতে চায়, তিন বছরের জন্য তাঁদের ৩০ শতাংশ কর ছাড় দেওয়া হবে। এর আগে এই সুযোগ লাভ করতো কয়েকটি মাত্র শিল্প সংস্থা। নানা ধরণের নিয়ন্ত্রণবিধির ফলে তা বিশেষ কার্যকরও করা যেত না। কিন্তু এখন পরিষেবা সহ সবকটি ক্ষেত্রে এই সুযোগ সম্প্রসারিত হবে। যে সমস্ত শিল্প সংস্থায় কর্মীদের মাসিক বেতন ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সেখানে এই বিশেষ সুযোগটি সম্প্রসারিত হবে এখন থেকে।

দ্বিতীয়ত, কর্মচারী ভবিষ্যনিধি তহবিলে যাঁরা নতুন করে যুক্ত হতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রে তিন বছর ধরে পেনশনের একটি অংশ ঐ তহবিলে যোগ করার দায়িত্ব নেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে। মাসিক ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনভোগীদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য ও কার্যকর হবে। এই ব্যবস্থায় লক্ষ লক্ষ বেকার এবং অস্থায়ী কর্মী উপকৃত হবেন বলে আমরা আশা করছি।

সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে দুর্নীতি দূর করতে নীচু তলার এবং মাঝারি পর্যায়ের পদগুলিতে নিয়োগের জন্য সাক্ষাৎকার প্রথা আমরা তুলে দিয়েছি। এক স্বচ্ছ পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রার্থীদের এখন থেকে নিয়োগ করা হবে।

আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল কলেজগুলিতে ভর্তির জন্য সরকার যে পরীক্ষা নিয়ে থাকে তার ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তি এখন সম্ভব হচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলিতেও। সরকার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি চাকরিতে নিয়োগের জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এতদিন পর্যন্ত পরীক্ষার ফলাফল সরকারের কাছেই রাখা থাকতো। কিন্তু, এখন থেকে আমরা তা প্রার্থীর সম্মতিসাপেক্ষে বিভিন্ন নিয়োগকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেব। এর ফলে, বেসরকারি ক্ষেত্রের নিয়োগকর্তাদের কাছে প্রার্থীদের বিশদ বিবরণ সহ পরিসংখ্যানগত বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকবে, যার সুবাদে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে উঠবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’র অগ্রগতি সম্পর্কেও আপনারা অবহিত বলে মনে করি। এ বছর ৩১ মিলিয়ন ঋণের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে এর আওতায়, যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার। আনন্দের বিষয়, আবেদনকারীদের মধ্যে ৭৭ শতাংশই হলেন শিল্পোদ্যোগ স্থাপনে উৎসাহী মহিলা প্রার্থী। এঁদের মধ্যে আবার ২২ শতাংশ তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত।

দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমার সরকারের প্রচেষ্টার কথাও এখন কারও অজানা নয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে দুটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। আমাদের লক্ষ্য হল উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষমতায়ন, যাতে তারা উচ্চতম মানে পৌঁছতে পারে। সূচনায় ১০টি সরকারি এবং ১০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা এই কাজে সাহায্য করবো, যাতে তারা বিশ্ব মানের শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্র রূপে গড়ে উঠতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং সর্বভারতীয় কারিগরি শিক্ষা পরিষদের মতো পৃথক নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে তোলা হবে তাদের জন্য। শিক্ষাদান, প্রশাসন এবং অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের দেওয়া হবে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন। ১০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা আগামী পাঁচ বছরে যোগান দেবো অতিরিক্ত সহায়সম্পদ। এর ফলে, সাধারণ ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিশ্ব মানের পঠন-পাঠনের সুযোগ পাবে। এক নতুন যাত্রাপথের সূচনা হবে এভাবেই।

স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রেও আরেকটি উদ্যোগ গ্রহণ করছি আমরা। আজকের জ্ঞান অর্থনীতির মূলে রয়েছে প্রাক্তনীদের গুণগত মান। শিক্ষার মান সম্ভব করে তোলার বিষয়টি সরকারের এক প্রাথমিক উদ্দেশ্য। এই বিষয়টিকে সম্ভব করে তুলতে সহায়সম্পদের বেশ কিছু অংশ আমরা শিক্ষার মানোন্নয়নের কাজে লাগাতে আগ্রহী। সর্ব শিক্ষা অভিযানের আওতায় এই ব্যবস্থা আমরা সম্ভব করে তুলতে চাই। আপনারা সকলেই আমাদের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবেন বলেই আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি।

ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ, অনেকগুলি পদক্ষেপই আমরা গ্রহণ করেছি। আরও অনেক ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণের কাজ এখনও বাকি থেকে গেছে। কতকগুলির সুফল ইতিমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করেছি। এ পর্যন্ত যে সাফল্য আমরা অর্জন করেছি তা আমার মনে এই আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে যে জনসাধারণের সমর্থনকে সঙ্গী করে ভারত রূপান্তরের কাজে সফল আমরা হবই।

আমি জানি যে এই কাজ খুবই কঠিন।

কিন্তু, এ কাজ যে করা সম্ভব সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এই কাজ করা সম্ভব।

ধন্যবাদ।

PG/SKD/SB/S