মাননীয়প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং, আমার শ্রদ্ধাভাজন ব্রিক্স সহকর্মীবৃন্দ, এবং
বিশিষ্টনেতৃবৃন্দ,
আপনাদেরসকলের সঙ্গে আজ এখানে মিলিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। যে সমস্ত দেশের আজ আপনারা এখানেপ্রতিনিধিত্ব করছেনতারা সকলেই ভারতের ঘনিষ্ঠ ও মূল্যবান বন্ধু-রাষ্ট্র।নিরন্তর ওসুসংবদ্ধ উন্নয়নের লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্ত বিষয়কে আমরা অগ্রাধিকারদিয়েছি, তার বিভিন্ন প্রেক্ষিত নিয়ে আমি আলোচনা করতে আগ্রহী। এ ধরনের আলাপ-আলোচনারউদ্দেশ্যে আমাদের সকলকে এখানে একত্রিত হওয়ার সুযোগদানের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাইপ্রেসিডেন্ট জি জিনপিং-কে।
মাননীয়নেতৃবৃন্দ,
রাষ্ট্রসঙ্ঘের২০৩০-এর লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ এবং এর আওতায় ১৭টি নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাস্থির করার পর অতিক্রান্ত হয়েছে দুটি বছর।আমরা লক্ষ্য করেছি যে এই সময়কালে নির্দিষ্টলক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য সমবেত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সদ্যসমাপ্ত জুলাই মাসে নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যগুলি সম্পর্কে এক জাতীয় পর্যালোচনার কাজভারত সম্পূর্ণ করেছে। আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচির মূল মন্ত্রই হল – “সব কা সাথ, সব কাবিকাশ”, অর্থাৎ, সমবেত প্রচেষ্টা, অন্তর্ভুক্তিমূলক বিকাশ। প্রত্যেকটি নিরন্তরউন্নয়নের লক্ষ্যকে আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন কর্মসূচি ও প্রকল্প অনুযায়ী আমরা স্থিরকরেছি রাজ্য তথা যুক্তরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলিসম্পর্কে সংসদীয় আলোচনা ও বিতর্কেরও আয়োজন করা হয় আমাদের দেশের সংসদে। সুনির্দিষ্টএক মেয়াদের মধ্যে এই লক্ষ্য পূরণের তাগিদেরূপায়িত হচ্ছে আমাদের এই কর্মসূচিগুলি।একটিমাত্র দৃষ্টান্তআমি এই প্রসঙ্গে তুলে ধরতে চাই। ব্যাঙ্কের সুযোগ-সুবিধা থেকেবঞ্চিত মানুষের কাছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা যেমনসচেষ্ট হয়েছি, অন্যদিকে তেমনই ব্যবস্থা করেছি প্রত্যেকের জন্যই একটি করেবায়োমেট্রিক পরিচয়পত্রের। এছাড়াও, মোবাইল ফোনের সাহায্যে এক উদ্ভাবনী পদ্ধতিঅবলম্বন করে প্রত্যক্ষ সুফল হস্তান্তরেরসুযোগ আমরা এই প্রথম পৌঁছে দিয়েছি দেশের ৩৬কোটি নাগরিকের কাছে।
মাননীয়নেতৃবৃন্দ,
দেশে আমরাযেভাবে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সেই একই ধরনের প্রচেষ্টা এক বলিষ্ঠআন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গড়ে উঠুক এটাই আমাদের লক্ষ্য। এজন্যআমাদের পক্ষ থেকে যা কিছু করণীয় তা করার জন্যও আমরা এখন প্রস্তুত। প্রতিবেশীবিকাশশীল দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার এক সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে ভারতের। উন্নয়নেরক্ষেত্রে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের পাশাপাশি, এই সহযোগিতা আমরা অব্যাহতরেখেছি। প্রতিটি পদক্ষেপেই আমাদের সম্পদ ও অভিজ্ঞতা আমরা ভাগ করে নিয়েছি বিভিন্নক্ষেত্রে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করে তোলা থেকে শুরু করে সাধারণমানুষের কল্যাণে উচ্চ প্রযুক্তির সাহায্যে সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করা –সর্বত্রই আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতাকে আমরা ভাগ করে নিয়েছি অন্যের সঙ্গে। এ বছরেরপ্রথম দিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, যোগাযোগ এবং বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে আগ্রহীআঞ্চলিক সহযোগীদেশগুলির কল্যাণে আমরা উৎক্ষেপণ করেছি দক্ষিণ এশীয় উপগ্রহ।ভারতীয়কারিগরি তথা অর্থনৈতিক সহযোগিতা হল ভারতের অন্যতম একটি প্রধান কর্মসূচিযা অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়কাল ধরে এশিয়া, আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা,ক্যারিবিয়ান এবং প্রশান্ত মহাসাগরের ১৬১টি সহযোগী দেশের কাছে পৌঁছে দিয়েছেদক্ষতাবিকাশ ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা। শুধুমাত্র আফ্রিকা থেকেই বিগত দশকটিতে২৫ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী ভারতে প্রশিক্ষণ লাভ করেছে আইটিইসি বৃত্তির জন্য।২০১৫-তে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ভারত-আফ্রিকা ফোরাম শীর্ষ বৈঠকে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই আইটিইসিবৃত্তির সংখ্যা দ্বিগুণ অর্থাৎ৫০ হাজারে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি।ঐ শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেয় আফ্রিকার ৫৪টি দেশ। আফ্রিকার ‘সোলার মামাজ’ প্রশিক্ষণ লাভকরে ভারতেই যা এখন আফ্রিকা মহাদেশের হাজার হাজার বাসস্থানে আলোর সুযোগ পৌঁছেদিচ্ছে। আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের ক্রমপ্রসারমান সহযোগিতার সম্পর্ক এতটাই নিবিড় যে এইপ্রথম আফ্রিকার বাইরে আফ্রিকা উন্নয়ন ব্যাঙ্কের প্রথম বার্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলভারতেএ বছরের গোড়ার দিকে।পারস্পরিক অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে যে সমস্ত প্রকল্প আমরাবাস্তবায়িত করে চলেছি, তা বিশ্বের বহু দেশের মানুষের কাছেই পৌঁছে দিচ্ছে জল,বিদ্যুৎ, সড়ক, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, টেলি-মেডিসিন এবং প্রাথমিক পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা।আমাদের এই সমস্ত প্রচেষ্টার মধ্যে কোনরকম গূঢ় উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় নেই। আমাদেরলক্ষ্য হল, আমাদের সহযোগী দেশগুলির চাহিদা ও অগ্রাধিকারগুলিকে ভিত্তি করে সহযোগিতাপ্রসারের এক বিশেষ আদর্শকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।
মাননীয়নেতৃবৃন্দ,
যে দেশগুলিআজ এখানে প্রতিনিধিত্ব করছে, বিশ্বের মানবজাতির প্রায় অর্ধাংশেরই তা বসবাসভূমি।আমরা যা কিছুই করি না কেন, তা বিশেষভাবে প্রভাবিত করবে সমগ্র বিশ্ব জগৎকে। সুতরাং,আমাদের মূল কর্তব্যই হল একটু একটু করে এক উন্নততর বিশ্ব গড়ে তোলা আমাদের এই ব্রিক্সপ্রচেষ্টার মাধ্যমেই। পরবর্তী ১০ বছরকে এক সুবর্ণ দশকে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রেব্রিক্স যে এক বিশেষ চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করে চলেছে, গতকালই আমি একথারউল্লেখ করেছিলাম আমার বক্তব্যের মধ্যে। আমাদের সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি, নীতি এবংইতিবাচক কাজকর্মের মধ্য দিয়ে ১০টি মহান প্রতিশ্রুতি পালনের প্রস্তাব আমি আপনাদেরকাছে পেশ করছি :
1. এক সুরক্ষিত বিশ্ব ব্যবস্থা সম্ভব করেতোলা। এজন্য প্রয়োজন সংগঠিতভাবে এবং সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে সন্ত্রাস মোকাবিলা,সাইবার নিরাপত্তা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা- এই তিনটি বিষয়কে লক্ষ্য করে সর্বতোভাবেপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
2. এক সবুজ বিশ্ব পরিবেশ গঠন। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আমাদের সমষ্টিগতভাবেসচেষ্ট হতে হবে। জোরদার করে তুলতে হবে আন্তর্জাতিক সৌর সমঝোতার মতো একটিকর্মসূচিকে।
3. অধিকতর শক্তি ও ক্ষমতাসম্পন্নএক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা। অর্থনীতিরবিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কার্যকারিতারপ্রসারের লক্ষ্যে যথোপযুক্ত প্রযুক্তি গ্রহণএজন্য একান্ত প্রয়োজন।
4. এক অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গড়ে তোলা। সাধারণ মানুষকে ব্যাঙ্ক ও আর্থিকক্ষেত্র সহঅর্থনৈতিক মূলস্রোতে এজন্য সামিল করতে হবে।
5. ডিজিটাল বিশ্ব গঠনের স্বপ্নকে সফল করে তোলা। আমাদের অর্থনীতির ভেতরে এবংবাইরে যে সমস্ত ব্যবস্থা এখনও ডিজিটাল প্রযুক্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত, সেগুলিকে প্রযুক্তিরআওতায় নিয়ে আসতে হবে।
6. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দক্ষতার প্রসার। কোটি কোটি যুবক-যুবতীকে ভবিষ্যৎপ্রজন্মের উপযোগী দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করে তোলা প্রয়োজন।
7. সুস্থ বিশ্ব গঠন। রোগ-ব্যাধি নির্মূলকরণে এবং সুলভ স্বাস্থ্য ব্যবস্থারসুযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে এক সুস্থ বিশ্ব আমরা গড়ে তুলতে পারি।
8. সমতার ভিত্তিতে বিশ্বকে নতুন করে রূপ দেওয়া। লিঙ্গের ক্ষেত্রে সমতারক্ষার পাশাপাশি সকলের জন্যই সমান সুযোগের ব্যবস্থা করা।
9. পরস্পর সংযুক্ত এক বিশ্ব শৃঙ্খল। পণ্য ও পরিষেবার যোগান বৃদ্ধি এবংমানবসম্পদের বিনিময় সফরসূচির মাধ্যমে এই শৃঙ্খল গড়ে তোলার সম্ভব।
10. বিশ্ব সম্প্রীতি। মতাদর্শ, ব্যবহারিক আচার-আচরণ এবং ঐতিহ্য – এইবিষয়গুলির ওপর এজন্য জোর দিতে হবে। কারণ, প্রকৃতির সঙ্গে শান্তি ও সম্প্রীতিপূর্ণসহাবস্থানের মূলে রয়েছে এই বৈশিষ্ট্যগুলি।
আমাদের কার্যসূচিরএই বিশেষ বিশেষ দিকগুলি অনুসরণ করে এবং সেইমতো আমাদের কর্মপ্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেনিজের নিজের দেশের কল্যাণসাধন ছাড়াও বিশ্ব মানবতার কল্যাণেও প্রত্যক্ষভাবে আমরাঅবদান সৃষ্টি করতে পারি। প্রতিটি দেশের জাতীয় প্রচেষ্টায় সমর্থন ও সহযোগিতাপ্রসারের জন্য ভারত সর্বদাই প্রস্তুত সঙ্কল্পবদ্ধ এক অংশীদার হিসেবে। এই বিশেষলক্ষ্যে একযোগে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমি বিশেষভাবে আগ্রহী। ২০১৭-তে ব্রিক্স-এরচেয়ারম্যান পদ বিশেষ যোগ্যতার সঙ্গেই অলঙ্কৃত করার জন্য আমি প্রশংসা করিপ্রেসিডেন্ট জি-কে। জিয়ামেনের মতো একটি মনোরম শহরে তিনি যেভাবে আমাদের সাদরঅভ্যর্থনা জানিয়েছেন এবং আতিথেয়তার ব্যবস্থা করেছেন, সেজন্যও আমি তাঁর বিশেষপ্রশংসা করি। আমি স্বাগত জানাই প্রেসিডেন্ট জুমাকে। আগামী বছর জোহানেসবার্গে শীর্ষবৈঠকে ভারতের পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি আমি দিয়ে যাচ্ছি।
ধন্যবাদ।
PG/SKD/DM/ ..
Addressed the BRICS Emerging Markets and Developing Countries Dialogue. Sharing my speech. https://t.co/0Oed2c4igl
— Narendra Modi (@narendramodi) September 5, 2017
Emphasised on India’s commitment & endeavours towards expanding developmental cooperation with other nations, particularly Africa.
— Narendra Modi (@narendramodi) September 5, 2017