মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল,
ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ,
আপনাদের বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
গত সপ্তাহটি ছিল বেলজিয়ামের পক্ষে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। গত ৮ দিনে বেলজিয়ামবাসী যে গভীর দুঃখ ও যন্ত্রণা অনুভব করেছেন, আমরা সকলেই তার সমব্যথী। গত সপ্তাহে ব্রাসেলস-এ সন্ত্রাসের ঘটনায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের জানাই আমার গভীর সমবেদনা। এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সত্ত্বেও আপনারা যেভাবে আমাকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছেন এবং আমার জন্য সময় ব্যয় করেছেন, আমি তার প্রশংসা না করে পারছি না। সন্ত্রাসের মতো সাধারণ একটি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আমাদের সমবেত প্রচেষ্টার অঙ্গ হিসেবে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তির আলোচনা আমরা পুনরায় শুরু করতে পারি। সাজাপ্রাপ্ত বন্দী অপরাধীদের বিনিময় ও প্রত্যর্পণের বিষয়টিতেও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বন্ধুগণ,
আমাদের এই দুটি দেশের মধ্যে রয়েছে মৈত্রী সম্পর্কের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। আজ থেকে ১০০ বছর আগে ১ লক্ষ ৩০ হাজারেরও বেশি ভারতীয় সেনা বেলজিয়ামের মাটিতে এখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামিল হয়েছিল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে। ঐ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৯ হাজারেরও বেশি ভারতীয় সেনা। ভারত-বেলজিয়াম কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০তম বার্ষিকী উদযাপিত হবে আগামী বছর। আমাদের মৈত্রী সম্পর্কের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উদযাপনের মূহুর্তে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছি বেলজিয়ামের মহামান্য রাজা কিং
২
ফিলিপ’কে আগামী বছর ভারতে স্বাগত জানানোর লক্ষ্যে। একই সঙ্গে, দুটি দেশেই পালিত হবে এক যৌথ কর্মসূচি। আমাদের মৈত্রী সম্পর্কের সমগ্র বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলেছি প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল-এর সঙ্গে। দ্বিপাক্ষিক বিদেশ নীতি সংক্রান্ত শলাপরামর্শের মাধ্যমে আমাদের এই অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আরও উন্নত হয়ে উঠবে বলে আমরা আশাবাদী।
বন্ধুগণ,
বর্তমান বিশ্বে ভারত হল এক উজ্জ্বলতম অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দেশ। বৃহদায়তন অর্থনীতি সম্পর্কে আমাদের রয়েছে এক বলিষ্ঠ নীতি, যার সাহায্যে উন্নয়নের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ শতাংশেরও বেশি হারে। দ্রুততম গতিতে বেড়ে ওঠা বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম কেন্দ্র হল ভারত। বেলজিয়ামের দক্ষতা ও ক্ষমতা এবং ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি একত্রে দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধার সম্ভাবনাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আজ সকালের দিকে বেলজিয়ামের সি ই ও’দের সঙ্গে এক ফলপ্রসূ আলোচনায় এদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলাম আমিও। ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’ এবং ‘স্কিল ইন্ডিয়া’র মতো ভারতের উচ্চাকাঙ্খামূলক প্রকল্পগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য আমি সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছি বেলজিয়ামের সরকার ও শিল্পপতিদের। ভারতে নির্মাণ ও উৎপাদনের সুযোগ গ্রহণ করে বেলজিয়ামের বাণিজ্য সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে এক বিশেষ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে। পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণে এক লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ভারতের। বিশেষত, রেল ও বন্দর প্রকল্পগুলিতে এবং ১০০’রও বেশি স্মার্ট নগরী গড়ে তোলার কাজে বিনিয়োগের প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে বেলজিয়ামের সংস্থাগুলির। এই অংশীদারিত্ব শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতাকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করতে পারে। ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্ভাবনার বাস্তব চিত্রটি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী মিশেল’কে আমি ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। একই আমন্ত্রণ আমি জানিয়েছি বেলজিয়ামের শিল্প সংস্থাগুলিকেও। স্পষ্টতই শুধুমাত্র হীরক খন্ডই আমাদের এই সম্পর্ককে উজ্জ্বল করে তুলতে পারে না।
জলবায়ু পরিবর্তন মানবজাতির কাছে এক বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী মিশেল-এর সঙ্গে আমিও সম্মতি জানিয়েছি। বর্জ্য থেকে জ্বালানি আহরণ, বায়ুশক্তির সাহায্যে ক্ষুদ্র টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বাতাসে দূষণের মাত্রা
৩
পুরোপুরিভাবে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও আমরা পরস্পরের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বজায় রেখে চলব। উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্ষেত্রগুলির অন্যতম হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং উচ্চ কারিগরি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এই ক্ষেত্রগুলিতে বেলজিয়ামের সাহায্য ও সহযোগিতাকে স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত। কিছুক্ষণ আগেই প্রধানমন্ত্রী মিশেল এবং আমি যুগ্মভাবে ভারতের বৃহত্তম অপটিক্যাল টেলিস্কোপটিকে দূরসংবেদী ব্যবস্থায় সক্রিয় করে তুলতে পেরেছি। দু’দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক কতদূর এগিয়ে যেতে পারে এই ঘটনা তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, শ্রুতি তথা দৃশ্য মাধ্যমের উপযোগী পণ্য উৎপাদন, পর্যটন, জৈব প্রযুক্তি এবং বন্দর ও জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারেও আমরা এগিয়ে গেছি।
বন্ধুগণ,
আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই ত্রয়োদশ ভারত-ইউরোপীয় ইউনিয়ন শীর্ষ বৈঠকে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিলিত হ আমি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হল আমাদের শক্তিশালী কৌশলগত অংশীদারদের অন্যতম। ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব এই শীর্ষ বৈঠকে। ভারত ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে ভারতের বলিষ্ঠ অর্থনীতির সুফল ভোগ করতে পারবে বেলজিয়াম সহ ইউরোপের সবকটি দেশ।
প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল যেভাবে আমাকে স্বাগত ও আপ্যায়ন জানিয়েছেন এবং সময় ব্যয় করেছেন সেজন্য আমি আবার তাঁর কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। ভারতে তাঁকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ।
PG/SKD/SB
Combination of Belgian capacities & India's economic growth can create wonderful opportunities & benefit the world. https://t.co/s9lDufn1Eh
— Narendra Modi (@narendramodi) March 30, 2016