Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

বেঙ্গালুরু টেক সামিট – এ, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

বেঙ্গালুরু টেক সামিট – এ, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি, ১৯ নভেম্বর, ২০২০
 
নমস্কার,
 
আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মী শ্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জি, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বি এস ইয়াদুরিয়াপ্পা জি এবং প্রযুক্তি জগতে আমার প্রিয় বন্ধুরা, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির শীর্ষ সম্মেলন প্রযুক্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী।   
 
বন্ধুগণ, পাঁচ বছর আগে আমরা ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের সূত্রপাত করেছিলাম। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এখন শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগ হিসাবেই ডিজিটাল ইন্ডিয়া সীমাবদ্ধ নেই। ডিজিটাল ইন্ডিয়া জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে দরিদ্র, প্রান্তিক মানুষ এবং যাঁরা সরকারে রয়েছেন তাঁদের কাছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়াকে ধন্যবাদ, কারণ, আমাদের দেশ এর মাধ্যমেই মানব-কেন্দ্রিক উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছে। আমাদের নাগরিকদের জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনা হয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। এর সুফল আপনারা প্রত্যেকে দেখতে পাচ্ছেন।
 
আমাদের সরকার সফলভাবে ডিজিটাল ও প্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বাজার গড়ে তুলতে পেরেছে। সমস্ত প্রকল্পের মূলে রয়েছে প্রযুক্তি। আমাদের প্রশাসনিক মডেলে প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আমরা মানুষের মর্যাদা বাড়াতে পেরেছি প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে। লক্ষ লক্ষ কৃষক মাত্র একটা ক্লিকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউনের সময় ভারতের দরিদ্র মানুষেরা যাতে যথাযথ ও দ্রুত সাহায্য পান, প্রযুক্তি তা নিশ্চিত করেছে। এই সহায়তা অতুলনীয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা ౼আয়ুষ্মান ভারত,  প্রযুক্তির কারণেই সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ভারতের দরিদ্র মানুষরা এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হচ্ছেন। এখন ভালো ও আয়ত্তের মধ্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে পাওয়া কোনও সমস্যাই নয়।
 
ভালো ও দক্ষ পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের সরকার তথ্য  বিশ্লেষণের ক্ষমতাকে প্রয়োগ করেছে। ভারতে ২৫ বছর আগে ইন্টারনেট এসেছে। রিপোর্ট অনুসারে দেশে ৭৫ কোটি ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনারা কি জানেন, এর মধ্যে অর্ধেক সংযোগই গত চার বছরে দেওয়া হয়েছে? আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প আজ ফাইলের  ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে দ্রুতগতিতে মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন ঘটাতে পারছে তার মূলে রয়েছে প্রযুক্তি। আজ আমরা যখন দরিদ্র মানুষের জন্য দ্রুতগতিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি, তার জন্য প্রযুক্তির অবদান রয়েছে। আজ যখন আমরা প্রায় সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, সেখানেও প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আজ যখন টোল বুথগুলিতে দ্রুত গাড়ি চলাচল করছে, তার পেছনেও প্রযুক্তি রয়েছে। প্রযুক্তি-ই আমাদের সেই আস্থা যুগিয়েছে যে, খুব কম সময়েই আমরা বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকাকরণের কাজ করতে পারবো। 
 
বন্ধুগণ, যখন প্রযুক্তির কথা আসে, তখন শেখা ও উন্নয়ন মিলেমিশে যায়। এই উদ্যোগের কারণে ভারতে প্রচুর ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতে হ্যাকথনের একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। আমি নিজেও এ ধরনের কয়েকটি হ্যাকাথনে যোগ দিয়েছি। আমাদের তরুণ প্রজন্মের বন্ধুরা একসঙ্গে বসে আমাদের দেশের এবং গ্রহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করেছে। এই ধরনের হ্যাকাথন সিঙ্গাপুর ও আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গেও আয়োজিত হচ্ছে। আমাদের প্রাণবন্ত স্টার্ট আপ গোষ্ঠীর দক্ষতা ও সাফল্য এখন বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত। ভারত সরকার তাদের সবরকমের সাহায্য করছে। 
 
বন্ধুগণ, আমরা প্রায়ই একটা কথা শুনি যে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেরা প্রতিভা বেড়িয়ে আসে। ভারতে প্রযুক্তিবিদদের জন্য এটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। উপভোক্তারা যখন কোনও জিনিসের দাবি জানান বা যখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও কাজ করতে হয়, আপনারা দেখবেন, সেই সময় কিছু প্রতিভা বেরিয়ে আসে, যাঁদেরকে আপনারা এর আগে চিনতেন না। বিশ্ব জুড়ে লকডাউন, যাতায়াতের বিধিনিষেধের ফলে মানুষ তাঁদের কর্মস্থলে না গিয়ে বাড়িতে রয়েছেন। এই সময়ে আমাদের প্রযুক্তি ক্ষেত্রের প্রাণবন্ততা প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের প্রযুক্তিবিদরা প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়ি থেকে বা যে কোনও জায়গা থেকে কাজ করার জন্য প্রযুক্তিগত সমাধান খুঁজে বের করেছেন। প্রযুক্তি ক্ষেত্র এ ধরনের লোকেদের এক জায়গায় জড়ো করে উদ্ভাবনের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। 
 
কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের পথভ্রষ্ঠ করেছে কিন্তু চলার পথকে শেষ করেনি। আজ যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে, গোটা দশকে তা কখনও করা হয়নি। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। যে কোনও জায়গা থেকে কাজ করা এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাজার-হাট করা এরকম আরও অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির বিপুল ব্যবহার আমরা দেখতে পাবো। যেহেতু, প্রযুক্তি জগতের কিছু উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমার সরাসরি যোগাযোগের সৌভাগ্য হয়েছে, তাই  আমি অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে বলতে পারি, আপনাদের বিভিন্ন উদ্যোগকে ধন্যবাদ। উন্নত মানের প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যক্তিগত ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে যোগাযোগের অভিজ্ঞতার সুযোগ ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। আমরা এই প্রযুক্তিগুলিকে আরও বেশি করে যাতে ব্যবহার করা যায়, তা নিশ্চিত করবো। 
 
বন্ধুগণ, শিল্প যুগের সাফল্য এখন অতীত, আমরা এখন তথ্য যুগের মাঝ পর্যায়ে রয়েছি। আগে যেমন ভাবা হয়েছিল, এখন তারচেয়েও দ্রুতগতিতে ভবিষ্যৎ আমাদের কাছে চলে আসছে। শিল্প যুগে পরিবর্তন ছিল সময়োচিত। কিন্তু তথ্য যুগে পরিবর্তন বিপুল ও ব্যাপকভাবে হচ্ছে। শিল্প যুগে সবকিছু দ্রুতগতিতে হ’ত, তথ্যের যুগে দ্রুতগতিতে বিবেচ্য নয়, শ্রেষ্ঠ জিনিস পাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। যে কেউ যখন খুশি এমন একটি পণ্য তৈরি করতে পারেন, যা বর্তমান বাজার ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করবে।    
 
শিল্প যুগে সীমান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু তথ্য যুগ সীমানাকে অতিক্রম করেছে। শিল্প যুগে কাঁচামাল পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। খুব কম মানুষই সেগুলি পেতেন। তথ্য যুগে যেহেতু তথ্যই হ’ল মূল কাঁচামাল এবং তা আমাদের সকলের সামনে সর্বত্র রয়েছে। তাই, যে কেউ এই তথ্য পেতে পারেন। ভারত তথ্য যুগের নিরিখে যথেষ্টই এগিয়ে আছে। আমাদের দেশের সেরা প্রতিভা আছে এবং সবচেয়ে বড় বাজার রয়েছে। আমাদের স্থানীয় প্রযুক্তি বিশারদদের আন্তর্জাতিক বাজারে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। ভারত হ’ল আদর্শ একটি জায়গা, তাই সময় এসেছে ভারতে যে প্রযুক্তি তৈরি করা হবে, তা সারা বিশ্বে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিতে হবে।  
 
বন্ধুগণ, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন শিল্পকে মুক্ত করাই আমাদের অন্যতম নীতি। আপনারা হয়তো সম্প্রতি শুনেছেন, তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে অনেক বাধ্যবাধতাকে আমরা সরিয়ে দিয়েছি। এছাড়াও, প্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদেরকে আমরা ভবিষ্যৎ নীতি প্রণয়নের জন্য ব্যবহার করছি। আপনারা সকলেই এই শিল্পের চালিকাশক্তি। আচ্ছা, আমরা কি আমাদের উদ্ভাবনগুলিকে সচেতনভাবে আরও অত্যাধুনিক করে তুলতে পারি না? আমাদের এমন একটি পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যেখানে সম্ভাবনাময় বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা যায়। যেমন ধরুন, মাছ অনেকেই ধরতে পারেন, কিন্তু তাঁদেরকে এমন কিছু প্রশিক্ষণ দিতে হবে, তার মাধ্যমে তাঁরা মাছ ভর্তি একটি হ্রদ থেকে সহজেই জাল ফেলে মাছ ধরতে পারবেন।  
 
এরকমই এর একটি উদাহরণ হ’ল – ইউপিআই। প্রথাগত পদ্ধতিতে আমরা ডিজিটাল লেনদেনের জন্য বিভিন্ন পন্থা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছি। কিন্তু ভারতে আমরা ইউপিআই ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, যেখানে প্রত্যেকেই তার ডিজিটাল লেনদেনের প্রক্রিয়াকে যুক্ত করতে পারেন। এর ফলে, অনেক প্রক্রিয়া লাভবান হয়েছে। গত মাসে ২০০ কোটি লেনদেন হয়েছে। আমরা ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশনেও এরকমই কিছু করার চেষ্টা করছি। আপনারা হয়তো কেউ কেউ স্বামীত্ব প্রকল্পের কথা শুনেছেন। এই উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের গ্রামাঞ্চলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে জমির অধিকার দেওয়া হচ্ছে। এই কাজটি করার ক্ষেত্রে ড্রোন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে, বিবাদ নিষ্পত্তি যেমন হবে, তেমনই মানুষের ক্ষমতায়ন হবে। যখন সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হবে, তখন প্রযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধি যাতে আসে, তা নিশ্চিত করা হবে। 
 
বন্ধুগণ, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও প্রযুক্তি দ্রুত হারে ব্যবহার করা হচ্ছে। অতীতে, যাঁর ভালো হাতি বা ঘোড়া রয়েছে – তার মাধ্যমে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি নির্ধারিত হ’ত। এর পর এলো আগ্নেয়াস্ত্রের যুগ। আর এখন আন্তর্জাতিক সংঘাতে প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ড্রোন, ইউএভি সহ সফটওয়্যার – এর মাধ্যমে প্রযুক্তি নতুন যুগের সৃষ্টি করেছে।  
 
বন্ধুগণ, প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার, তথ্যের সুরক্ষা এবং সাইবার নিরাপত্তা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইবার নিরাপত্তা সমাধানে আমাদের তরুণ সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। সাইবার আক্রমণ ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাঁরা ডিজিটাল নানা সুরক্ষা কবচ গড়ে তুলছেন। আজ আমাদের আর্থিক প্রযুক্তি ক্ষেত্র খুব ভালো কাজ করছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ সঙ্কোচহীনভাবে লেনদেন করছেন। এর কারণ, জনসাধারণের আস্থা আরও বেড়েছে, যা খুবই জরুরি। একটি শক্তিশালী তথ্য সম্পর্কিত প্রশাসনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা অগ্রাধিকারের তালিকাভুক্ত হয়েছে।  
 
বন্ধুগণ, আমি আজ মূলত তথ্য প্রযুক্তি নিয়েই কথা বললাম। কিন্তু বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রেও উদ্ভাবনের প্রয়োজন এবং সুযোগও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জীব বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং – সবক্ষেত্রেই উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভারত উদ্ভাবনের বিষয়ে যথেষ্টই এগিয়ে রয়েছে। কারণ, আমাদের যুবসম্প্রদায়ের প্রতিভা ও উৎসাহ অপরিসীম। 
 
বন্ধুগণ, আমাদের যুবসম্প্রদায় ও প্রযুক্তির সম্ভাবনা সীমাহীন। তাঁদের সবচেয়ে ভালো কিছু দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। আমি নিশ্চিত যে, তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্র আমাদের গর্বিত করবে। 
 
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
 
***
 
 
CG/CB/SB