রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা হলে প্লেনারিতে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের প্রধান ডঃ পি.কে. মিশ্র-এর ভাষণ
সুধীবৃন্দ,,
ভারতে আমরা বিপর্যয় ঝুঁকি কমানোর বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিই। এটি একটি কেন্দ্রীয় জননীতির বিষয়।
বিপর্যয় ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে তহবিল বরাদ্দ আমরা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছি। বিপর্যয় ঝুঁকি পরিচালন চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি বিধানের জন্য আমরা আর্থিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে রয়েছে বিপর্যয় ঝুঁকি নিবারণ, প্রস্তুতি, বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা, পুনরুদ্ধার এবং পুনর্নির্মাণ। বিগত ৫ বছরে (২০২১ থেকে ২০২৫) আমাদের রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারের বিপর্যয় ঝুঁকি নিবারণের ক্ষেত্রে ৬০০ কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যবহারিক সুযোগের সংস্থান রয়েছে। বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে প্রস্তুতি, সাড়াদান এবং বিপর্যয় থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার ৩০০ কোটি বরাদ্দ ডলারের ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
কেবলমাত্র এক দশকের বেশি সময় ঘূর্ণীঝড়ে জীবনহানি আমরা ২ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছি। এবার আমরা ভূমিধস, বরফধস জনিত বন্যা, ভূমিকম্প, দাবানল, দাবদাহ এবং বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় লাঘবের জন্য উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনাও গড়ে তুলছে।
প্রাথমিক উপযুক্ত সতর্কতা সুযোগ যাতে সকলে পেতে পারেন সে লক্ষ্যেও আমরা কাজ করে চলেছি। সাধারণ সতর্কতা নির্দেশ রূপায়ণের চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা, যাতে বিপর্যয় মোকাবিলার সঙ্গে জড়িত সংস্থা, সংগঠন এবং টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারীরা অগ্রিম সতর্ক হতে পারেন। আঞ্চলিক ভাষায় সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় এই সতর্ক বার্তা যাতে দেশের ১৩০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে, এর মাধ্যমে তা সুনিশ্চিত করা হবে। ‘২০২৭ সালের মধ্যে সকলের কাছে প্রাথমিক সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া’ রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিবের এই উদ্যোগের আমরা সাধুবাদ জানাই। বিশ্বজনীন এই লক্ষ্যে সঠিক সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আমাদের কর্মপ্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
সুধীবৃন্দ,,
ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ সদস্যবৃন্দ বিপর্যয় ঝুঁকি নিবারণের স্বার্থে একটি কর্মীগোষ্ঠী গঠন করতে সম্মত হয়েছে। জি২০ কর্মগোষ্ঠী যে ৫টি অগ্রাধিকারের এলাকা চিহ্নিত করেছে তা হল- সকলের জন্য প্রাথমিক সতর্কতা, সুসংগঠিত পরিকাঠামো, বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্র উন্নত করা, অনেক সুসংহতভাবে বিপর্যয় মোকাবিলা করা এবং এক্ষেত্রে একটি পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থা গড়ে তোলা। বিশ্বজুড়ে সেন্ডাই লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে এই সমস্ত পদক্ষেপ বিশেষ শক্তি প্রদান করবে।
এছাড়াও বিপর্যয় নিরোধক পরিকাঠামো জোট যার দায়িত্বভার বর্তমানে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চালিয়ে আসছে তা পরিকল্পনা, নকশা প্রস্তুত এবং একবিংশ শতাব্দীর পরিকাঠামো ব্যবস্থাকে মজবুত করার লক্ষ্যে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি হল দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগ ক্ষেত্র। তা যদি বিপর্যয় নিরোধক শক্ত পরিকাঠামোর ওপর গড়ে ওঠে এবং সুচারুভাবে পরিচালিত হয় তাহলে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে সহনশীল ভূমিকা নিতে পারে।
সুধীবৃন্দ,,
তুরস্কে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে উদ্ধার হওয়া এক ব্যক্তির মর্মন্তুদ বিবরণী আজ সকালে আমরা শুনলাম।
এক্ষেত্রে বলতে হয় বসুধৈব কুটুম্বকম-এর যে ভাবাদর্শ যা সারা বিশ্বকে সুসমন্বিত এক বৃহৎ পরিবার হিসেবে দেখতে শেখায়। ভারত সরকার তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভূমিকম্প কবলিতদের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য পাঠিয়েছে। ত্রাণ ও উদ্ধারে বিশেষ দল এছাড়াও তাদের চিকিৎসা ও সুশ্রুসার জন্য চিকিৎসা ত্রাণ সামগ্রী ও ডাক্তারদের পাঠায়। বিশ্বজনীন মানবতার ক্ষেত্রে এটা প্রকৃতই এক নিদর্শন স্বরুপ।
সব শেষে সুধীবৃন্দ, সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে নিজের দেশ বা দেশের বাইরেও যে কোনোরকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রয়াসের সঙ্গে যুক্ত হতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। যার অর্থ হল, ‘কাউকে পিছনে ফেলে নয়, কোনো জায়গাকে পিছনে ফেলে নয়, কোনো পরিমন্ডলকে পিছনে ফেলে নয়।’