Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

বর্তমান যুগে মহাত্মা গান্ধীর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ইকোসক চেম্বার্স-এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস,

রাষ্ট্রপতি মুন,

প্রধানমন্ত্রী লি,

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,

প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস,

প্রধানমন্ত্রী আর্ডেন,

প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং,

ভদ্রমহোদয়গণ, বন্ধুরা,

আজ আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি মহাত্মা গান্ধীর জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী উপলক্ষে বর্তমান সময়ে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য।

আমি সকল বিশিষ্ট অতিথিদের এখানে স্বাগত জানাই।

মহাত্মা গান্ধীর জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশের জন্য আমি রাষ্ট্রসঙ্ঘকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।

গান্ধীজি ছিলেন ভারতীয়, কিন্তু তিনি কেবল ভারতের একার নন। আজ এই আলোচনার মঞ্চ তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ইতিহাসে এরকম ঘটনা কখনও দেখা যায়নি যখন একজন ব্যক্তি, যার সঙ্গে প্রশাসনের দূরদুরান্ত পর্যন্ত কোন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু বিশ্বাস ও অহিংসার ওপর নির্ভর করে তিনি শতাব্দী প্রাচীন সাম্রাজ্যবাদের কেবল ভিতই নাড়িয়ে দেননি, বরং দেশপ্রেমীদের মধ্যে স্বাধীনতাবোধের মানসিকতার বীজ ভরে দিতে পেরেছিলেন।

মহাত্মা গান্ধী ঠিক এরকমই একজন মানুষ ছিলেন। ক্ষমতা থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও তিনি বর্তমান সময়েও কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে রাজত্ব করছেন।

আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না, যাঁদের সঙ্গে মহাত্মার কখনও দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি, তাঁদেরকেও তিনি প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন। সেইসব ব্যক্তিরা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রই হন বা নেলসন ম্যান্ডেলাই হন। এঁদের আদর্শের মূল ভিত্তিই ছিল মহাত্মা গান্ধী। আর এটাই ছিল গান্ধীজির আদর্শ।

বন্ধুগণ,

আজ গণতন্তের সংজ্ঞা সীমাবদ্ধ হয়েছে, যেখানে মানুষ তাঁদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবেন এবং সেই সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী গণতন্ত্রের প্রকৃত ক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি সঠিক দিশা দেখিয়েছিলেন যেখানে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল নন, নিজেদেরকেই আত্মনির্ভর করবেন।

বন্ধুগণ,

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মহাত্মা গান্ধীই ছিলেন মূল কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য আমরা যদি একথা ভাবি যে তিনি যদি কোন স্বাধীন দেশে জন্ম নিতেন, তাহলে তাঁর কর্মপরিধি কি হত?

তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে লড়াই করেছেন, এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু, গান্ধীজির কর্মজীবনকে এটুকুর মধ্যে সীমিত রাখা যায় না।

মহাত্মা গান্ধী এমন এক সামাজিক ব্যবস্থার অগ্রদূত ছিলেন যে ব্যবস্থা সরকারের ওপর নির্ভরশীল নয়।

মহাত্মা গান্ধী পরিবর্তন এনেছিলেন, এটা সর্বজনবিদিত। কিন্তু একথা বলা যেতেই পারে যে তিনি সাধারণ মানুষের অন্তরের শক্তিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন এবং তাদের মানসিকতায় পরিবর্তনের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

গান্ধীজি যদি কেবল স্বাধীনতা সংগ্রামেই যুক্ত না থাকতেন তাহলে তাঁর কর্মপরিধি স্বরাজ ও স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে আরও অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারত।

গান্ধীজির এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলি বড় বড় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠছে। ভারত আজ যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন, সেই প্রেক্ষিতে গান্ধীজির এই দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

বিগত পাঁচ বছরে আমরা জনগণের অংশগ্রহণে অগ্রাধিকার দিয়েছি। স্বচ্ছ ভারত অভিযান হোক বা ডিজিটাল ইন্ডিয়া, মানুষ এখন নিজেরাই এই অভিযানগুলিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।

বন্ধুগণ,

মহাত্মা গান্ধী একথা প্রায়শই বলতেন যে, তাঁর জীবনকর্মই তাঁর বার্তা। গান্ধীজি কখনই তাঁর জীবনকর্মের মধ্য দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেননি। কিন্তু পক্ষান্তরে তাঁর জীবনকর্মই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। আজ আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন আমাদের উদ্দেশ্যই হল কিভাবে অন্যকে প্রভাবিত করা যায়। কিন্তু গান্ধীজির আদর্শ ছিল কিভাবে অন্যকে অনুপ্রাণিত করা যায়।

গণতন্ত্রের প্রতি গান্ধীজির সততা ও মূল্যবোধ কতখানি ছিল আমি সে সম্পর্কে একটি ঘটনার কথা আপনাদের বলতে চাই। কয়েক বছর আগে আমি ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করেছিলাম তখন তিনি গভীর আবেগের সঙ্গে আমাকে একটি রুমাল দেখিয়েছিলেন। এই রুমালটি খাদির। গান্ধীজি এলিজাবেথের বিয়ের সময় উপহারস্বরূপ তাঁকে এই রুমাল দিয়েছিলেন।

আপনারা কল্পনা করুন, একদিকে যাঁর সঙ্গে গান্ধীজির নৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল, অন্যদিকে তাঁর সঙ্গেই ছিল আবেগের সম্পর্ক। গান্ধীজি সর্বদাই চেয়েছেন যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে, তাঁদের কল্যাণ ও তাঁদের সম্মান। এমনকি, স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁদের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছেন, তাঁদের প্রতিও ছিল একই ধরনের সমবেদনা।

বন্ধুগণ,

গান্ধীজির মনযোগ আকর্ষণকারী যে সাতটি বিপথগামী নীতির প্রতি আমাদের প্রত্যেকের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন তা হল –

কর্মসম্পাদন ছাড়াই সম্পদ

নীতিবোধ ছাড়াই চরিতার্থ সাধন

বৈশিষ্ট্য ছাড়াই জ্ঞান

নৈতিকতা ছাড়াই ব্যবসায়িক কাজকর্ম

মানবতা ছাড়াই বিজ্ঞান

বলিদান ছাড়াই ধর্ম

নীতি ছাড়াই রাজনীতি

জলবায়ু পরিবর্তন বা সন্ত্রাস, দুর্নীতি বা স্বার্থপর সমাজ-জীবন – প্রায় সর্বক্ষেত্রেই গান্ধীজির এই মূল্যবোধগুলিই মানবতার সুরক্ষায় দিশা দেখায়।

আমার বিশ্বাস গান্ধীজির দেখানো এই পথগুলি একজন অনুপ্রাণিত মানুষকে এক উন্নততর ও উজ্জ্বল বিশ্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

আমার ধারণা মানবতা যতদিন বেঁচে থাকবে, গান্ধীজির আদর্শগুলিও প্রভাবিত হতে থাকবে। গান্ধীজির প্রেরণা ও প্রাসঙ্গিকতাও আমাদের মধ্যে বহাল থাকবে।

আরও একবার আমি আপনাদের সকলকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই।

ধন্যবাদ!

CG/BD/DM