ফরাসি প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি শ্রী ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর আমন্ত্রণে ২২ এবং ২৩শে অগাস্ট প্যারিসে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ও বিয়ারিৎস-এ ২৫ এবং ২৬শে অগাস্ট ফ্রান্সের নেতৃত্বে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ফ্রান্সে সরকারি সফর করছেন।
১৯৯৮ সাল থেকে ভারত এবং ফ্রান্স কৌশলগত ক্ষেত্রে অংশীদার। বিশ্বাস, সহমত এবং সকল ক্ষেত্রে সাদৃশ্যই এই সম্পর্কের ভিত্তি। পারস্পরিক আস্থা অর্জনের মাধ্যমে ভারত ও ফ্রান্স কৌশলগত অংশীদার এবং এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে একটি গঠনমূলক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যা দ্বিপাক্ষিক স্তরে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরও বিকশিত হয়েছে। এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে দু’দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরও নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং আর্থিক সম্পর্কের মাধ্যমে উভয় দেশের প্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভারত-ফ্রান্স প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য কমিটি (এইটিসি) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়ে একযোগে কাজ করে চলেছে যার ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি উপকৃত হবে। ফরাসি এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলি বিভিন্ন বাণিজ্যিক এবং বিনিয়োগগত বিষয়ে নানা সমস্যা সমাধানের জন্য যৌথভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। ফ্রান্স এবং ভারতের আর্থিক বার্তালাপ আরও সফল করার লক্ষ্যে দুটি দেশ উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০১৮ সালে রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রঁর ভারত সফরের সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ভারত এবং ফ্রান্স একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমাদের গ্রহ এবং মানবজাতির বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় তারা সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে ভারত মহাকাশে মানুষ পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় নভোচরদের ফ্রান্স চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ দেবে। সামুদ্রিক ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করার ওপর স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তকে দুই নেতা স্বাগত জানিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার মোকাবিলায় ‘তৃষ্ণা’ যৌথ প্রকল্প এবং ওশ্যনস্যাট-৩ কৃত্রিম উপগ্রহে ‘অ্যারগোজ’-এর ব্যবস্থা করার বিষয়গুলিতে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার মোকাবিলায় এবং মহাকাশ কর্মসূচির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উভয় নেতা একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মুক্ত, নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ সাইবার জগতের মাধ্যমে আর্থিক এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের লক্ষ্যে দুই দেশ সহমত হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমস্ত আইন প্রযোজ্য হবে। ভারত-ফ্রান্স দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে উভয় নেতা সাইবার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রচনা করেছেন। এর মাধ্যমে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গণনা, কৃত্রিম মেধার মতো বিভিন্ন কৌশলগত ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
এনপিসিআইএল এবং ইডিএফ-এর মধ্যে আলোচনার অগ্রগতি হওয়ায় উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে, ভারতের মহারাষ্ট্রের জইতাপুরে ছ’টি পারমানবিক চুল্লি নির্মাণে ২০১৮ সালে যে চুক্তি হয়েছিল তা বাস্তবায়িত হবে। দুই পক্ষের মধ্যে সিএলএনডি আইন মেনে ভারতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত বাণিজ্যিক দিকটি নিয়ে আলোচনা অগ্রসর হচ্ছে। উভয় পক্ষই এই আলোচনা দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন। ভারতের আনবিক শক্তি দপ্তর এবং ফ্রান্সের বিকল্প শক্তি ও আনবিক শক্তি কমিশনের মধ্যে সমঝোতাপত্রকে উভয় নেতাই স্বাগত জানিয়েছেন। এর ফলে, ২০১৯-এর জানুয়ারিতে সহযোগিতার জন্য যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা ভাবা আনবিক গবেষণা কেন্দ্র (বিএআরসি) এবং ফ্রান্সের আনবিক শক্তি কমিশন (সিইএ) আগামী পাঁচ বছরে ‘লাইট ওয়াটার’ চুল্লি নির্মাণ করবে। আন্তর্জাতিক তাপ-আনবিক পরীক্ষামূলক চুল্লি (আইটিইআর) এবং আনবিক গবেষণায় ইউরোপীয় কাউন্সিল (সিইআরএন)-এর বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে দুটি দেশ একযোগে কাজ করবে।
প্রতিরক্ষায় অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছে। ‘বরুণ’ নৌ-মহড়া এবং ‘গডুর’ বিমান মহড়ার পর পরবর্তী পর্যায়ে ‘শক্তি’ মহড়াটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করে চলেছে।
সামরিক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ভারত এবং ফ্রান্স কৌশলগত অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। এ বছরেই রাফায়েল যুদ্ধ বিমানগুলির প্রথম কিস্তির ফ্রান্স ভারতের হাতে তুলে দেবে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উভয় দেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণ সংস্থাগুলি একযোগে কাজ করে চলেছে। ফ্রান্সের সামরিক এবং বিমান চলাচল ক্ষেত্রের জন্য ভারত অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ থেকে উৎপাদিত সামগ্রী রপ্তানি করছে।
উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ওপর দুটি দেশ সহমত হয়েছে। দূতাবাস পর্যায়ে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যটন ক্ষেত্রের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ফ্রান্সে ৭ লক্ষ ভারতীয় পর্যটক সফর করেছেন। ২০১৭ সালের নিরিখে যা ১৭ শতাংশ বেশি। ২.৫ লক্ষেরও ফরাসি পর্যটক এই সময় ভারত সফর করেছেন।
শিক্ষা সহযোগিতার অন্যতম একটি ক্ষেত্র। উভয় দেশের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের যাওয়া-আসায় দু’পক্ষ সন্তোষ ব্যক্ত করেছে। ভারতে বিভিন্ন স্কুলে ফরাসি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৮ সালে দু’দেশের মধ্যে ছাত্রছাত্রী বিনিময় যেখানে ১০ হাজার ধার্য করা হয়েছিল, ২০২৫ সালের মধ্যে তার পরিমাণ বাড়িয়ে ২০ হাজার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আগামী অক্টোবরে ফ্রান্সের লিওঁ-তে দ্বিতীয় জ্ঞান শিখর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে বিমান চলাচল, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, পরিবেশ-বান্ধব রসায়ন, স্মার্ট সিটি, কৃষি, সামুদ্রিক বিজ্ঞান এবং কৃত্রিম মেধা নিয়ে এই সম্মেলনে আলোচনা হবে। দক্ষতা বিকাশের লক্ষ্যে উভয় দেশ সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষর করেছে।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্যে বেশ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ২০২০-র প্যারিস আন্তর্জাতিক বইমেলায় ভারত সম্মানিত দেশের মর্যাদা পাচ্ছে এবং আগামী জানুয়ারিতে ফরাসি শিল্পী গেঁরার্ড গারাউস্তের শিল্পকর্ম দিল্লির ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মর্ডার্ন আর্টে প্রদর্শিত হবে। ২০২১-এ ভারতীয় শিল্পী সৈয়দ হায়দার রেজার শিল্পকর্ম মুসে নাসিওনাল দ্য আর্ট মদার্নে-তে ২০২১ সালে প্রদর্শিত হবে। ২০২১-২২ সালে ভারত ফ্রান্সে ‘নমস্তে ফ্রঁসে’ আয়োজন করবে। চলচ্চিত্র, ভিডিও গেম সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের নানা প্রকল্প নির্মাণ এবং সেগুলির বন্টনের ওপর উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি, দুই দেশে চলচ্চিত্রের শ্যুটিং করার ক্ষেত্রেও সহযোগিতার বাতাবরণ তৈরি করা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দুটি দেশ তাদের অঙ্গীকার আবারও ব্যক্ত করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর যে শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছেন তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উভয় দেশ সহমত হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কনভেনশন (ইউএনএফসিসিসি) ও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুটি দেশ সম্মত হয়েছে।
বিশ্ব জুড়ে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার মোকাবিলায় জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলের প্রতিবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সমস্ত বিকাশশীল রাষ্ট্রগুলির জন্য স্বচ্ছ পরিবেশ তহবিল গঠন করার লক্ষ্যে ইউএনএফসিসিসি ও প্যারিস চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে উভয় দেশ গুরুত্ব আরোপ করেছে। ২০২০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি কৌশল বাস্তবায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের আওতায় ভারত এবং ফ্রান্স একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলায় গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসের জন্য বিয়াররিৎস-এ জি-৭ শিখর সম্মেলন ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিবের পরিবেশ সংক্রান্ত সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলি ভারত এবং ফ্রান্স সমর্থন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাইড্রোফ্লুরোকার্বন হ্রাস করার জন্য মন্ট্রিয়েল প্রোটোকলের কিগালি সংশোধনী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উভয় দেশ একযোগে কাজ করার পরিকল্পনা করেছে।
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সৌর জোটের বিভিন্ন উদ্যোগে উভয় দেশ সন্তোষ ব্যক্ত করেছে। বিশ্বব্যাঙ্ক এবং ফরাসি উন্নয়ন সংস্থার (এফডিএ) সৌরশক্তি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে ভারতের সৌরশক্তি নিগমকে পেমেন্ট সিকিউরিটি মেকানিজম গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আফ্রিকার দেশগুলিতে সৌরশক্তির মাধ্যমে জলসেচ এবং গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য ত্রিপাক্ষিক বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চাদ-এ সৌরশক্তি ব্যবহারের জন্য ফটোভল্টেইক কোষের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান।
জীববৈচিত্র্য ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে জি-৭ শিখর সম্মেলনে ভারত এবং ফ্রান্স আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মহাসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। দুটি দেশ এই কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামুদ্রিক সম্পদে স্থিতিশীল ব্যবহারের লক্ষ্যে তারা একযোগে কাজ করবে। এছাড়া, ‘ব্লু ইকনমি’ এবং উপকূলীয় ভারসাম্য বজায় রাখার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ধরিত্রী মাতাকে রক্ষার জন্য দারিদ্র্য, অসাম্য ও খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় আগামী ২-১৩ই সেপ্টেম্বর নতুন দিল্লিতে মরুকরণ প্রতিরোধে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।
স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষিপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিতে জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির পরিবেশ মন্ত্রীরা মেৎস-এ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা রূপায়ণের ক্ষেত্রে উভয় দেশ একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
সীমান্তের অন্য প্রান্ত থেকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ইন্ধন এবং সবরকমের জঙ্গি কার্যকলাপকে উভয় নেতৃবৃন্দের তরফে নিন্দা করা হয়েছে। ধর্ম, জাতীয়তাবাদ এবং গোষ্ঠীর সঙ্গে জঙ্গিবাদকে জড়িয়ে যে কোনরকমের কার্যকলাপ প্রতিরোধে দুটি দেশ সহমত ব্যক্ত করেছে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২,৪৬২ সিদ্ধান্তটি অনুমোদনের জন্য তাঁরা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সমস্ত রাষ্ট্রগুলিকে আহ্বান জানিয়েছেন। গত ২৮শে মার্চ সন্ত্রাসবাদীদের অর্থ সাহায্য বন্ধ করার জন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের ওপর তাঁরা গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আল কায়েদা, দায়েশ / আইএসআইএস, জঈশ-ই-মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন, লস্কর-ই-তৈবার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপ বন্ধ করতে এবং তারা যে অর্থ সাহায্য পেয়ে আসছে তা আটকাতে উভয় দেশ সমস্ত রাষ্ট্রের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়েছে।
চরমপন্থার মোকাবিলায়, বিশেষ করে অনলাইনের মাধ্যমে চরমপন্থীদের নানা কার্যকলাপ প্রতিরোধে দুটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নৌ-যাত্রা নিরাপদ করতে ২০১৮-র মার্চে রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রঁর ভারতে সরকারি সফরের সময় যে যৌথ অংশীদারিত্ব ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ভারত এবং ফ্রান্স সংশ্লিষ্ট সকলকে স্বাগত জানিয়েছে।
ফ্রান্স এবং ভারত গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী। একুশ শতকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় দুটি দেশ আরও সংস্কারের পক্ষে মত প্রকাশ করে। এই কারণেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ লাভের জন্য উভয় দেশ পরিষদের সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আধুনিকীকরণ ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বিভিন্ন নীতি রূপায়ণের জন্য দুটি দেশ সহমত হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভারত এবং ফ্রান্সের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আসছে। ফ্রান্স এবং ভারত বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে বিভিন্ন কৌশলগত অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত এবং ফ্রান্স একযোগে কাজ করবে। আফগানিস্তানে আফগানদের নেতৃত্বে, তাঁদের নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিকভাবে সমস্ত সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে উভয় দেশ তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। আফগানিস্তান যেন জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত না হয় সেই লক্ষ্যে সে দেশে সঠিক সময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনার ওপর তারা গুরুত্ব আরোপ করেছে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২,২৩১ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইরানের আনবিক কর্মসূচির প্রসঙ্গে ভারত এবং ফ্রান্স আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তি এবং নিরাপত্তা মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে দুই দেশ একযোগে কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
CG/CB/DM/